www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অপ্রাকৃত

আজকে আমি আপনাদের একটা সুন্দর গল্প শোনাবো। এটা আমার গল্প হলেও সত্যি সিরিজের একটি ছোট গল্প। নাম "অপ্রাকৃত"।

আগামীকাল লক্ষী পুজো অর্থাৎ কোজাগরী রাত, আমাদের বাড়িতে পরম্পরা গত ভাবে প্রতিবছর অত্যন্ত ধুমধাম এর সহিত এই লক্ষী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তাই অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারেও রাত সাড়ে তিনটায় বেড়িয়ে পরলাম ফুল কুড়াতে। যদিও এটাকে ঠিক ফুল কুড়ানো বলা যায় না, ফুল চুরি শব্দটাই সঠিক হবে। সঙ্গে মামাতো ভাই দীপাঞ্জন, ডাক নাম চিন্টু। গেইট খোলে দশ কদম এগোতেই জ্যোৎস্নার আলোতে স্পষ্ট দেখতে পেলাম, আমাদের পাড়ার বৃষভ যাকে আমরা নিঞ্জা বলেই ডাকি তার অদ্ভুত সব কাণ্ড কারখানার জন্য, সে রাস্তার এক ধারে পরে আছে আর মুখ দিয়ে অস্পষ্ট ভাবে ঘোঁ ঘোঁ শব্দ বেড়োচ্ছে, হাতে ফ্ল্যাস লাইট জ্বালানো অবস্থায় মোবাইলটাও রয়েছে। তারাহুরো করে দুজনে ধরাধরি করে গেইটের ভেতরে নিয়ে এসে বাড়ির সবাইকে জাগিয়ে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিলে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠে সে । সকলের উৎসুক দৃষ্টির সমাধান দিতে গিয়ে নিঞ্জা যা বললো তাতে আমাদেরও চোখ কপালে উঠার অবস্থা। রাজ্যের বাইড়ে থেকে ফিরে আসার ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ের পরে আসায় অনেক রাত হয়ে গেলেও ষ্টেশনে নেমে একটা গাড়ি পেয়ে যাওয়ায় সে এসে রাত তিনটায় মেইন রোডে নেমে জ্যোৎস্নার আলো থাকা স্বত্বেও মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমাদের বাড়ি থেকে মেইন রোড প্রায় আধা কিলোমিটার, নিঞ্জাদের বাড়ি আরও ভিতরে। এতটুকু অব্দি সব ঠিকঠাক থাকলেও তারপরেই শুরু হয় আসল ঘটনা। বলে রাখা ভাল, মেইন রোডে যেখানে গাড়ি থেকে নামতে হয় সেখানে যেমন একটা পুরাতন বটগাছ রয়েছে তার চাইতে আরও অনেক বেশী পুরাতন আরেকটি বটগাছ আমাদের বাড়ির কাছাকাছি রয়েছে। এই দুই বটগাছের মাঝামাঝি হাই স্কুলের মাঠে আরেকটা বটগাছ ছিল, সেইটাকে নিয়েই ছিল হাজার হাজার রহস্য গল্প ও গুজব, যদিও সেই গাছটি এখন আর নেই কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর রেখে যাওয়া ভয়ানক সব ভুতের গল্প। এই কারনেই রাতে একা এদিক দিয়ে আসলেই গা ছমছম করে। আর সেই রাত যদি গভীর রাত হয় তাহলে তো কথাই নেই। একটু ভুমিকা জানিয়ে রাখলাম নিঞ্জার মনের অবস্থা বুজাতে। যাইহোক, রাতে যখন নিঞ্জা আসছিল, হঠাৎ করে মনে হল সামনের দিক থেকে কিছু একটা আসছে, টের পেয়েই তার যেমন পা কাঁপছিল, গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল তার মাঝেই কি আসছে সেটা দেখার আগ্রহও ছিল। বস্তুটা যখন আস্তে আস্তে কাছের দিকে আসছিল সে দেখতে পায় চোখ, মুখ, নাক, কান, গলা কিচ্ছু নেই কিন্তু একটা প্রানী আসছে যা অনেকটা শেয়াল কুকুর সাইজের হবে ; সেই দৃশ্য দেখেই ভিরমি খেয়ে যায় নিঞ্জা। এমন সাহসী ছেলে হয়েও যখন ভয়ে ভিরমি খায় তাহলে একটা বিরাট কিছু সত্যতা থাকবে এই ধারণা আমাদের সকলেরই ছিল কিন্তু কি সেই সত্যতা তা জানতে যখন চারপাশে একটা মৃদু গুঞ্জন শুরু হয় ঠিক সেই সময়ে নিঞ্জা হঠাৎ বলে সে নাকি সেই দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করছিল, এমন সময়েই আর...। আমরা হুমরি খেয়ে তার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে এত বড় একটা অদ্ভুত, অবাস্তব ও অপ্রাকৃত ঘটনার সত্যতা আবিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম এবং মোবাইলের গ্যালারি ঘেটে যা পেলাম তা দেখে কিন্তু থ বনে গেলাম বটে। যদিও অন্ধকারে এতটা বুজা যায় না তবে এটুক দেখা যাচ্ছে, একটা প্রানী সত্যি সত্যিই যার চোখ, মুখ, কান কিচ্ছুটি নেই কিন্তু এগিয়ে আসছে, একটু রেকর্ডের পরেই ভিডিওটা স্থির হয়ে যায় মানে বুজাই যায় তার পরেই সে ভিরমি খেয়ে গেছে কিন্তু এই ভিডিওতে যদিও এটা বুজা যায় যে নিঞ্জা একটা কিছু দেখেছে কিন্তু কি দেখেছে সেটা বুজা দায়। এই সব ঝুটঝামেলা করতে করতেই ভোরের আলো উঁকি দিয়েছে, সূর্যের আলো আসি আসি করছে এবং ততক্ষনে নিঞ্জার মা বাবা সহ আরো কিছু প্রতিবেশী খবর পেয়ে ছুটে এসেছে। যদিও আমাদের আর ফুল চুরি হলনা তবে প্রানীটা কি (!) সেই জিঘাংসা মন থেকে দূরে যাচ্ছিলই না ঠিক সেই সময়ে চিন্টু বাড়ির বাইড়ে থেকে আমাকে খুব জোরে জোরে ডাকছিল। আমি জানি সে সিগারেট খেতে সকলের চোখের আড়ালে আমাদের বাড়ির পাশের বটগাছটার দিকে গিয়েছিল, তাই তার ডাক শোনেও খুব একটা পাত্তা দিচ্ছিলাম না কিন্তু ডাকের রকম ফের দেখে সাড়া দিয়ে এগিয়ে যেতেই হল। কাছাকাছি যেতেই আঙুলের ঈশারায় আমকে দেখাল, আমি একটা অস্বস্তিকর আওয়াজ পেয়ে সেদিকে তাকাতেই ভোরের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম একটা কুকুর হয়ত চুরি করে কিছু খেতে গিয়ে হাড়ির মধ্যে মাথা ঢুকে যায়, এখন এই অবস্থায় এটি পাগলের মতো এদিক সেদিক ঘুরছে এবং মাঝে মধ্যে গড়িয়ে পড়ে সেই হাড়ি ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। এবারে নিঞ্জার মুখের বিবরণ আর অস্পষ্ট ভিডিওর কথা মিলিয়ে এক ঝটকায় মনে হয়ে গেল এই সেই অদ্ভুত প্রাণী, এই সেই অপ্রাকৃত দেহ-ধারণার ভুত। অত:পর, সকলে মিলে সেই কুকুরটাকে পাকরাও করে বহু কষ্টে হাড়ি কেটে তার জীবন বাঁচানো হল আর নিঞ্জাকে তার ভুতের ভয় তাড়ানোর ঔষধ খাওয়ানো হল। পরে রইল হাড়ি আর পরে রইল এক অনন্য স্মৃতি। আমরা আবার আমাদের বাড়ির লক্ষী পূজোয় ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/১০/২০২৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast