www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সম্পর্ক

সম্পর্ক
অফিসে যাওয়ার পথে হঠাৎ করে যে স্কুল ছাত্রটাকে দুর্ঘটনার কবলে পরতে দেখে সাজো হন্তদন্ত হয়ে নিজের অফিসের কথা ভুলে , মোট্র সাইকেল ফেলে আহতকে নিয়ে গাড়ি করে হাসপাতালের দিকে উদ্বিগ্ন হয়ে ছুটে গেল , তাকে কি সে চেনে ? ছেলেটি কি কোন আত্মীয় ? নিকট জন ? নানান প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে, প্রশ্ন কিছু সাজোর বুকেও বটে । কে সে ! ছেলেটার পায়ে একটু রক্ত দেখে কেন এতটা উদ্বেগ ! হ্যাঁ, ছেলেটাকে সে চেনে বটে । সম্পর্কটা কি হবে বাংলা ও বাঙালীর মারপ্যাঁচে এখনো ঠিক করে উঠতে পারে নি সাজো । তবে একটা গভিড় টান অনুভব করে সে, রক্ত এবং রক্তের বাইড়ের সম্পর্কের বিভেদ এখানে তুচ্ছ । কেননা এই ছেলেটা যে নড়ি ছিঁড়ে পৃথিবীর আলো দেখেছে সেই নাড়ির পরতে পরতে যে সাজোর বিচরণ ছিল অবাধে ।
এবারে আসা যাক বিগত কিছু বছর আগের স্মৃতিপটে । সাজোর যখন বয়েস ঊনত্রিশ, মা-বাবার পছন্দের লাল টুকটুকে পুতুলের মতো দেখতে একটা বউ এনেছিল ঘরে । একেবারে দশগ্রাম প্রচার করে বাদ্যি বাজিয়ে, আলোয় রাঙ্গিয়ে , বাড়ি ভর্ত্তি আত্মীয় স্বজনের ভীরে সাজোর দাম্পত্য জীবনের শুরুটা ছিল অত্যন্ত আনন্দের । স্বপ্ন দেখা জীবন যেমন তেমনি ছিল শুরুর কয়েকটা বছর । যেমন সুন্দরী স্ত্রী তেমনি তার আচার ব্যবহার । এক কথায় রূপেগুনে মুগ্ধতার পরম তৃপ্তি নিয়ে বিয়ের বছর দুয়েকের মাথায় সাজোর বাবা দুরারোগ্য ব্যধিতে ইহলোক ত্যাগ করেন । তার পরেই যেন সাজোর জীবনের মোড় ঘুরে যায় আরোও । চাকুরীর প্রমোশান, বদলিতে শহরাঞ্চলে নতুন বাড়ি করে শুরু হয় জীবনের আরেক প্রস্থ উন্নয়ন । স্ত্রী ও বিধবা মা’কে নিয়ে সাজোর জীবনের এই পর্বে ধীরে ধীরে আকাশের কোণে এক টুকরো মেঘ কালো হতে শুরু করে । একটা সন্তানের আকুল আকুতি সেই সঙ্গে বিধবা মায়ের নাতিনাতনি দেখার চরম প্রত্যাশার বিফলতা দিনে দিনে সাজোকে জীবনের অন্য অধ্যায়ের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে । যে স্বামীটা রোজ অফিস সেরে সোজা ঘরে ফিরতেন, মৃদু আলোয় রবীন্দ্র সঙ্গীতের রোমান্টিক আবহ তোইরী করতেন, আদরে যত্নে খেয়ালে স্ত্রীকে একেবারে ভরিয়ে রাখতেন সেই কিনা এখন প্রতিরাতে নেশা করে বাড়ি ফিরে অকথ্য গালি গালাজ করে, কথায় কথায় লাল টুকুটুকে বৌয়ের গায়ে হাত তোলে !
এভাবেই সাজোর স্ত্রী অনিরিমার জীবনে দুঃখ নেমে আসে খুব অল্প দিনে । রাতের আঁধার স্বামীর অত্যাচারে যেমন দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছিল ঠিক তেমনি বয়সের ভারে ন্যূজ্ব অথচ কুসংস্কারে পরিপূর্ণ শাশুরীর প্রতিদিনের নিত্যনতুন ঝাড়ফুঁক , পূজা-আর্চ্চা ইত্যাদিতে যতটা না তিতি বিরক্ত তার চাইতে অনেক বেশী অত্যাচারিত হতো শাশুড়ির মুখের তির্যক ভর্ৎসনায় । অনিরিমা শুধু রূপেগুনেই পরিপূর্ণ নয়, শিক্ষায় সাজোর চাইতে কোন অংশেই কম নয়, দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর ভাবে উপভোগ করার একটা গোপন সাজানো বাসনা মনের মধ্যে কাজ করতো বলেই সেই চাকরিবাকরি করতে চায়নি ; এছাড়া অনিরিমার বাবার দিকেও ধনে জনে বেশ আড়ম্বর । এই কারণেই হয়ৎ আত্ম মর্যাদার কাছে নিজেকে বিসর্জন দিতে পারেনি সে, তবে নিঃশর্ত ভাবে স্বামীর বাড়ি ত্যাগ করার আগে ডাক্তারি পরীক্ষায় নিজেকে নির্দোষ প্রমানের চেষ্টা করেছে বার বার কিন্তু আবেগের কাছে বিবেকের দংশন যেভাবে বার বার পরাজিত হয় ঠিক সেভাবেই এখানে বিজ্ঞান পরাজিত হয়েছে স্বামীর পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব আর শাশুরির কুসংস্কারাচ্ছন্ন হীন মানসিকতার কাছে । চোখের জলকে সাক্ষী রেখে সাড়ে চার বছরের সাংসারিক জীবনকে ইতি টেনেছিল অনিরিমা । না কোন মামলা মোকদ্দমা নয়, কোন সামাজিক বিচার পর্যন্ত চায় নি সাজোর স্ত্রী ।গল্পে শোনা স্বাধ্বী জীবনের পরিকল্পনায় অনিরিমা দিনে দিনে সাজানো ঘরটাকে ছেড়ে দিয়ে বাপের বাড়িতে ফিরে গিয়েও প্রতিক্ষার প্রহর গোনছিল, ঝর থেমে আবার কবে নতুন করে শুরু করবে দাম্পত্য জীবনের শেষাংশ, সেখানে নাই বা রইল কোন নাড়ি ছেঁড়া ধন সন্তান কিন্তু যে মানুষটাকে নিয়ে সাত জনম কাটানোর মন্ত্র পাঠে অগ্নি স্বাক্ষীর সাত পাক ঘুরেছে তাকে নিয়েই বাকি জীবনটা হয়তো কাটবে । কিন্তু না, সেটা হতে দিল না, যদিও সাজোর ততটা ইচ্ছে ছিল না কিন্তু বছর না ঘুরতেই সাজোর মায়ের নাতিনাতনির মুখ দেখার অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনে আরেক বার বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছে সজোকে । যদিও বিজ্ঞান নিয়ত ধ্রুব সত্যকে প্রমাণ করে তেমনি আজও সাজো পিতৃত্বের সাধ থেকে বঞ্চিতই রয়েছে তবুও অনিরিমার সমস্ত প্রতিক্ষা, আশা-আকাঙ্খার জলাঞ্জলি হয়েছে । কখনো একা ঘরে, অন্ধকার ঘরে, কখনো আত্মহত্যার চেষ্টা এই উতলা মনের অনিরিমাকে সামলে রাখার জন্যই সকলের অনিচ্ছা স্বত্বেও বাবার বৈষয়িক প্রভাবে আর অনিরিমের নিজের ঈশ্বর প্রদত্ত রূপগুণের মাধুর্যে আরোও একবার সাত পাঁকে বাধা হলো অনিরিমাও । যদিও সাজোর মতো শিক্ষিত ও রূপবান নয় তবে ভালোবাসা ও দায়িত্ব কর্তব্যে একেবারে ষোলয়ানা সম্পুর্ণ একটা মানুষ পেয়েছে সে । ধীরে ধীরে বিগত দিনের শোক কাটিয়ে ধাতস্থ হয়েছে নতুন সংসারে । অনিরিমার উপলব্ধির পরতে পরতে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে রূপায়ন করার প্রচেষ্টায় নতুন সংসারে খুব অল্পদিনের মধ্যেই মায়ের কোল আলো করে একটি পুত্র সন্তান দেখা দিয়েছে । দেখতে হুবহু মায়ের মতো, যেমন গাঁয়ের রং তেমনি তার গড়ন । অনিরিমার দুই শশুর বাড়ির মধ্যে দূরত্ব শুধুমাত্র কয়েক কিলোমিটারের তাই কেউ কারো খবর না জানার কথা নয় । সাজো কিন্তু আজও চোখের জল ফেলে নীরবে, নতুন স্ত্রীকে নিয়ে যাপিত জীবনের ইতিকথা এখানে প্রাসঙ্গিক নয় তবে ভুলে থাকা যায়না যে কথা সেকথা ভুলে কি করে ! প্রথম জীবন, প্রথম প্রেম, প্রথম তৃপ্তি,ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে ভারাক্রান্ত জীবনটাকে ঠ্যালে ঠ্যালে গোপনে অনুসরণ করে করে যেটুকু রস আহরণ করেছে সাজো, সেই টূকুর প্রাপ্তি এই আজকের আহত ছেলেটা । যদিও দুর্ঘটনাটা এতটা মারাত্মক নয় তবুও ছেলেটাকে ব্যথা পেতে দেখেই আৎকে উঠে সাজো, বুকের ভেতরে একটা মোচড় অনুভব করে সে । বুক থেকে একটা কান্না দলা পাকিয়ে গলা পর্যন্ত উঠে থেমে যায় । কে সে ! কে এই ছেলেটা ! কি তার সম্পর্ক ! যদি অনিরিমা সামনে আসে কি বলবে তাকে ? এভাবেই সম্পর্কের বেড়াজাল এখন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে সাজোকে ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৬/০৯/২০২৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast