www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কেতকী ৮

জীবনের দর্শন যেখানে গৌণ, বাস্তব প্রকট, সেখানে অচৈতন্য দেহের মধ্যে যে প্রাণের লেশ থাকে, সেই লেশটুকুর শেষ অস্তিত্ব আরেকবার জেগে উঠার চেষ্টা করে । কেতকী যেন গভীর ঘুমের ঘোরে অলকানন্দ বাবুর গলার আওয়াজ শোনে কেঁপে উঠলেন । শরীরের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে মুদে যাওয়া চোখের পাতা টেনে খোলার চেষ্টা করলেন, খোলতে পারলেন না , নাকি খোলে আবার নিজে থেকে মুদে গেল আঁখি পল্লব বুজা গেল না । আপাততঃ, অচৈতন্য কেতকীর নিথর দেহ (!) বিছানায় ভাল করে শুইয়ে দিলেন মেসোমশাই ; চোখে মুখে জলের ছটা দিয়ে মুখটা ভাল করে মুছে দিলেন । অন্যদের উদ্দেশ্য করে বললেন, কিছু না, এমনিতেই সারাদিনের ধকল সইতে পারে নি, ভ্যাঁপসা গরম , শহরের মেয়ে, এসব সহ্য করতে পারে না । তোমরা তাকে একটু একা থাকতে দাও । দেখবে কিছুক্ষণ পরে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে । এই বলে অলকা নন্দ বাবু ঘর ছেড়ে চলে গেলেন । এবারে ভিড়টা একটা কমানোর চেষ্টা করছে সব্বাই, কিন্তু কমছে না, একটা চাপা গুঞ্জন, বউকে এক গ্লাস গরম দুধ দাও, মাথায় জল দাও, হাওয়া দাও ইত্যাদি ইত্যাদি ।

কেতকীর কর্ণকূহর কিন্তু সজাগ, সজীব । সব শোনতে পাচ্ছিল, বুজতে পারছিল, পরিবেশটা বোধগম্য হচ্ছিল শুধু মুখ খোলে কিছু বলার মতো শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছে সে, চোখ খোলে দেখার মতো সাহসটুকু যেন আর অবশিষ্ট নেই । তবে বিস্ময়ের শেষ নেই কেতকীর । কি হল ! মেসোমশাই কি তবে চিনতে পারে নি কেতকীকে ! নাকি, চিনতে হবে এমন করে লক্ষ্য করেনি ! এমনওতো হতে পারে, মেসোমশাই ঠিকই চিনতে পেরেছে, কিন্তু এই অবস্থায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চুপ চাপ চলে গেছেন এখান থেকে ! হতেই পারে, আরো অনেক কিছু হতে পারে ।

এরকম হাজার প্রশ্নের মেঘ যেন ভেলা হয়ে আকাশে উড়ছে । বাতাসে দোল খাচ্ছে । এই মেঘের ভেলার বুক চিরে কখনো দেখা দিচ্ছে আকাশের বুকে তারা হয়ে জ্বলতে থাকা কেতকীর মা, কখনো আবার শাদা শাড়ির শুভ্র বিমলা নারীর প্রতিচ্ছবি । জীবনের দর্শন জ্ঞানের অনুধাবন করতে গিয়ে কেতকী বার বার হোঁচট খায় সমুদ্রের তীরে, পাঁচতারা হোটেলের নীরব কক্ষের কোমল মখমলে । হোঁচট খায় বিমানের বাসর ঘরের চৌকাঠে ।ঘুরেফিরে চোখের সামনে ভেসে উঠে অলকানন্দ বাবুদের মুখ । যে মুখের গহ্বরে বিরাজ করে লক্ষ কোটির সুখ, আভিজাত্যের অভিরূপ । আর চোখ খোলে কেতকী যখন বিমানের ক্রোরে , তখন বুজি শিরা উপশিরার উপলব্ধি লোপ পায় এসে তার বাহুডোরে । পৃথিবীর প্রকৃতি এভাবেই স্নাত হয় বার বার অতীতকে ধুয়ে মুছে ।
-------------------- স মা প্ত -------------------------
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২২২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০৬/২০২৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অভিনব
  • গল্প বলার ও লেখার ঢং বেশ মার্জিত। পড়তে ভাল লাগলো। আরো ভাল লাগলো কেতকির প্রতি সহানুভূতির দৃশ্য। ধন্যবাদ প্রিয় গল্পকার॥ ভাল থাকুন নিরাপদ থাকুন।
  • ফয়জুল মহী ০১/০৭/২০২৩
    অনন্য প্রকাশ
  • দারুণ
 
Quantcast