www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কেতকী ৭

সন্ধ্যে পেড়িয়ে এখন রাত । চারিদিক আঁধারে গ্রাস করে নিয়েছে । সম্ভবতঃ সপ্তমীর চাঁদ হবে । এখনো আকাশে উঁকি দেয়নি ।বাড়ির সীমান্তের এপাড় কিংবা ওপাড় দু-দিকেই জোনাকিরা জ্বলছে । আলোর বিন্যাসের এই চমৎকার রূপ দেখে মুগ্ধতায় নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেড়িয়ে পরল,"বাহ , অপরূপ " ।অলকা নন্দ বাবুর মাথা ব্যাথাটা এখন অনেকটাই কমে এসেছে , খোলা হাওয়ায় ফুরফুরে অনুভূতি পেতেই বাড়ির বাইড়ে এই পুকুর পাড়ে এসে বসেছিলেন । আকাশে টুকরো টুকরো মেঘের মেলা । বৃষ্টি নেই অথচ একটা মিষ্টি হাওয়া শিরশির করে বইছে, শীতল পরশে গা জুড়িয়ে যায় যেন । সকাল সকাল লোভ সামলাতে না পেরে এক বাটি পাঁঠার মাংস নিয়ে গিয়ে বসেছিলেন একান্তে, যদিও বিমানের বাবাকে ডেকেছিলেন, কিন্তু বিবেক বিবেচনায় বেশীক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেনি তিনি । কোলকাতা থেকে নিয়ে আসা শখের প্রিয় ব্র্যান্ড 'ব্ল্যাক ডগ' একাই সাবার করে দিলেন । একেই উচ্চচাপের ভুক্তভোগী অলকানন্দবাবু তার উপরে পাঁঠা ! আজকে আর অন্য দিনের মতো সোজা সুস্থ থাকতে পারলেন না । মাথা ভার হয়ে আস্তে আস্তে যখন দেহমন বেসামাল হয়ে আসছিল তখন তিনি তার সহধর্মিনীর সহযোগিতায় বিছানা নিতে বাধ্য হয়েছিলেন । একটানা ছয়/সাত ঘণ্টা ঘুমানোর পর এখন নিজেকে বেশ ফুরফুরে লাগছে । মনের মধ্যে খানিকটা অনুতাপ এসেছিল বটে তবে তেমন পাত্তা দিলেন না অলকা নন্দ বাবু । কেননা আমন্ত্রিত অথিতি কাউকেই তিনি তেমন বেশী চিনেন না বা জানেন না আর তাছাড়া সকলের সামনেই যে বড়লোক আত্মীয় হিসেবে পরিচিত হতে হয় এই ধকলটা নিতে পারেন না তিনি ।তাই আকাশের কোনে উঁকি দেয়া চাঁদ এখন তার ভীষণ ভালো লাগছে, ভালো লাগছে নীরবতা । সবাই যে যার মতো করে অনুষ্ঠান শেষের পরিপাটি করে নিচ্ছে । সম্ভবতঃ কাজের লোক, এক গাদা হাড়ি বাসন নিয়ে এসে অন্ধকার ঘাটে নামছে , এই দেখে অলকা নন্দ বাবু বাড়ির দিকে ফিরে গেলেন ।

ভারী বেনারসীটা গা থেকে দূরে সরিয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাচলো কেতকী । এবারে মুখের চকচকা মেকআপের বিদায়ের পালা । যদিও বিস্মৃতি বার বার বলছিল, "থাক না বৌদি, বাসর ঘরে যাবে, দাদা তোমায় আজকে আবার নতুন করে দেখবে !" কেতকী অবশ্য পাত্তা দেয়নি, মুখে ফেইস ওয়াস মাখতে মাখতে জবাব দিয়েছে সে,"তোমার দাদা কি আমায় আজকে নতুন দেখবে ! আর আমি কি এমনিতে কম সুন্দরী নাকি ! মেকআপ থাকতে হবে কেন ?" এমনি করেই সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত বাড়ছে, বাড়ছে কেতকীর মনের মধ্যে জ্বলতে থাকা শঙ্কা । এতবড় ঝড়ের সাঁজ, আকাশে এতো মেঘ অথচ ঝড়বৃষ্টি হবেনা ! এই শঙ্কাটা কেতকীর সমস্ত সুখ, আহ্লাদ, উৎসাহ, উদ্দীপনা সবকিছুকে ছারখার করে দিচ্ছে । এক সময় মনে সাহস এনে বিস্মৃতিকে জিজ্ঞেস ক্রল,"মেসোমশাইকে তো দেখলাম না একবারও ! উনি কোথায় ?" বিস্মৃতি হালকা ভাবে উত্তর দিলো ,"পাপা'র মাথা ব্যাথা, পাপা এমনই করে ।" আগ বাড়িয়ে যদিও আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি কেতকী, কিন্তু উত্তরটা পছন্দ হয়নি তার, যে অনুষ্ঠানের জন্য এতদূর থেকে আসা সেই অনুষ্ঠানে মাথা ব্যাথার ঠুনকো অজুহাত মেনে নেওয়া যায়না , এখানেই যেন মনের শঙ্কা আরো দ্বিগুণ হয়ে যায় । কিছুই ভাল লাগছে না তার । অতীত ভবিষ্যতের এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে এ কোন দ্বন্দ্বে ঝরিয়ে গেল কেতকী ! কি হতে পারে সুন্দর ভবিষ্যতের পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ ! না, আর ভাবতে পারছে না সে । গা টা বমি বমি করছে, মাথার চিন চিন ব্যাথাটা প্রকট আকার ধারন করছে এবার । হাত পা কাঁপছে, চোখের সামনে লাখো লাখো ঝিঁঝিঁ পোকার নৃত্য যেন চলছে অবিরত । এভাবেই এক সময়ে অচৈতন্যের মতো বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন কেতকী । বাড়িশুদ্ধ মানুষের দৌড়দৌড়ি, হুটোপুটি চলছে । নতুন বউ অজ্ঞান হয়েছে । কেন হয়েছে ! অসুস্থ ! সবাই যখন ভিড় করছে তখন পেছন থেকে হাঁক ছাড়লেন অলকা নন্দ বাবু , "সবাই সরে দাড়াও , একটু বাতাস লাগতে দাও, আমি দেখছি কি হয়েছে বউমার ।"

............চলবে ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৫১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/০৬/২০২৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast