কেতকী - ৫
দেখতে দেখতে নারী জীবনের সেই বিশেষ দিন সেই বিশেষ রাতের লগন চলে এলো । আজ চতুর্থমঙ্গল । যদিও বিমানের মা বেশ কয়েকবার চাদ্দি বিয়া, চাদ্দি বিয়া বলছিল ; কিন্তু কেতকী যেহেতু এখনোও এই অঞ্চলের ভাষা্ ঠিকমতো বুজতে পারে না তাই ওসব নিয়ে মাথা ঘামায় না তবে এখানকার আঞ্চলিক রীতি অনুসারে আজকেই হবে তাদের বাসর রাত সে কথাটা ঠোঁটের কোণে রহস্যের হাসি রেখে জানিয়ে দিয়ে গেছে বেশ কজন আত্মীয়া । বাড়ি ভরতি লোকজন, আত্মীয় স্বজন, সবাই যে যার মতো ব্যস্ত, কেউ আপ্যায়নে, কেউ আদান প্রদানে আবার কেউ কেউ লুকিয়ে চুরিয়ে কিছু কিছু ভোজনে । এভাবেই চারিদিকে হৈ হুল্লোড়ে সরগরম হয়ে আছে বিমানদের বাড়ি । কিন্তু কেতকীর মনে গতকাল থেকে খুব একটা শান্তি নেই, গত কয়েকটা দিন যেভাবে সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে এই সংসারের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে দিয়েছিল, আজকে যেন কোথাও একটা খটকা লাগছে । আর কিছুক্ষণের মধ্যেই কেতকীর নববধূ রূপ ফোটে উঠবে রজনীগন্ধা আর গোলাপে সাজানো অস্থায়ী মঞ্চে, চোখ ধাঁধানো আলোক ঝলমল উঠানের কোন এক কোণে যেন এক টুকরো আঁধার এসে বাসা বেঁধেছে গতকাল । গতকাল তিনটে কুড়ির ফ্লাইটে ঠিক সময়েই এসে পৌছে গেছেন বিমানের মেসোমশাই, মাসিমনি আর একটা ১৩/১৪ বছরের মেসতুতো বোন । ওরা আসাতেই যেন এই বাড়ির প্রাণচঞ্চলতা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে । মেসোমশাই অলকানন্দ রায় যেমন শিক্ষিত, ভদ্র তেমনি বড়লোক । দুহাতে পয়সা খরচ করেন । বিয়ে বাড়িতে আসার সময়েও সকলের জন্যই কিছু না কিছু উপহার নিয়ে এসেছেন । কেতকীর শাশুরীমা তো গতকালই গদগদ হয়ে উনার জন্য আনা তাঁত বেনারসী একেবারে ভাঁজ খোলে দেখিয়ে গেলেন, বলে গেলেন নতুন বউয়ের জন্য নাকি অনেক দামী গয়না এনেছে কিন্তু আজকে কিছুতেই দেখাবে না, বিমানের জন্যও একটা স্বর্ণের আংটি নিয়ে এসেছেন ।মেসোমশাই গতকাল এসেছেন বৈকি, এ ঘরেও এসেছেন, ঘোমটা টেনে প্রণাম করেছে কেতকী এটুকুই সার, চেহেরার দিকে মুখ তোলে তাকানো হয়নি তার । নতুন বৌ বলে কথা ।তবে অলকানন্দ বাবু যে সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী একজন সুপূরুষ সেটুকু বুজতে পেরেছে সে । প্রণামের সময়ে "থাক থাক মা, ভাল থেকো , তোমাদের মঙ্গল কামনা করি ঈশ্বরে" এই বলে মাথায় হাত রেখেছিল । হাতের স্পর্শে কেতকীর বুকের কোনে কোথায় যেন একটা মোচর দিয়ে উঠলো, গায়ের রোম কাঁটা দিল, রোমকূপের স্বেদগ্রন্থিতে ক্ষণিকে বাণ ডাকল যেন ।মাসিমনিও কম যায় না, যেমন গায়ের রং তেমনি দেহের উজন, আভিজাত্য যেন ঠিকরে ঠিকরে বেড়োচ্ছে, গায়ের গয়নার ভরম দেখলেই বুজা যায়, অর্থের অহংকারে মাসিমনির পা যেন মাটি ছোঁয় না এবং মেয়েটাও বেশ মিষ্টি, যেমন দেখতে তেমনি কথা বার্তায় । বেশ মিশুকে, একেবারে গায়ের সাথে মিশে গিয়ে যেন হৃদয়ের লেন দেন করে সে । এরই মধ্যে কথায় কথায় জানা হয়ে গেছে, বিস্মৃতা পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত বাংলা সিরিয়ালে অভিনয় করে, বেশ সুনাম রয়েছে তার, ইতিমধ্যে কয়েকটা এওয়ার্ড এসে গেছে তার ঝুলিতে ।এই মেসোমশাই অলকানন্দ বাবুকে কোথায় যে দেখেছে, কি ভাবে যে পরিচিত সেই কথাটা প্রথমে মনে করতে পারছিল না কেতকী কিন্তু আজকে আর এ বিষয়ে মনে কোন দ্বন্দ্ব নেই । এই সুঠাম দেহ একান্তই পরিচিত , পরিচিত গায়ের গন্ধ । দরাজ দিলের মানুষ অলকানন্দ বাবুর বাহুডোরে রাত্রি যাপন বেশী দিনের অতীত নয় । মাস তিনেক আগে সমুদ্র সৈকতের নোনা হাওয়ায় বিকেলের মিষ্টি রোদে লম্বা ছায়া সাক্ষী রেখে পাশাপাশি হেটেছে দুজন । দুই রাত্র তিন দিনের ব্যাবসায়িক চুক্তি, অর্থের মাপকাঠিতে অর্ধ লক্ষের গণ্ডি পেরিয়ে কেতকীর নিজস্ব সীমানা লঙ্ঘিত হয়েছে বার বার কয়েক বার । শেষ তনূ পরশের সময় কালে বার বার আগামীর সূচীপত্র ছাপাতে চেয়েছিল অলকানন্দ বাবু, নিশ্চিত ক্যালেন্ডারের দিন তারিখ না হলেও আশ্বাসটুকু দিয়েছিল কেতকীও । আরোও বেশী কিছু উপঢৌকনের প্রত্যাশা আর পারিশ্রমিকের লোভে পরবর্তী সাক্ষাতে এক প্রস্থ বেশী সুখ বিলিয়ে দেয়ার শপথ করতে কসুর করেনি সে নিজে ।
দুঃসময়ের ঠিকানা বুজি এভাবেই লেখা থাকে ! সারা পৃথিবীর লক্ষ কোটি মানুষের ভীরে এই অলকানন্দ বাবু হলেন গিয়ে বিমানের মেসোমশাই ।কেতকীর ভাবনার সাগরের পরিসীমা আস্তে আস্তে দিগন্ত পেড়িয়ে মহাশূন্যের অনন্ত আঁধারে হাতড়াচ্ছে এখন । এমনি সময়ে পেছন থেকে একেবারে জড়িয়ে ধরলো বিস্মৃতা, বললো, 'বৌদি আজকে তোমার ব্রাইডাল মেকআপ আমার হাতের জাদুতে ফুটিয়ে তুলব অনন্য করে "।কেতকী পেছন ফিরে সম্মতি সূচক ঘাড় নেড়ে পাশের ঘরের দিকে সরে গেলো ধীরে ধীরে । এক আকাশ দুশ্চিন্তা আর দুর্ভাবনায় আজকের এই স্মরণীয় দিন কতটা স্মরণে রাখার মতো হবে কে-ই বা জানে ! একটা পাহাড়ের মতো ভারী চাপ বুকের মধ্যে রেখেই ধীরে ধীরে ধাতস্থ হওয়ার চেষ্টা করছে কেতকী । মনের মধ্যে হাজার প্রশ্নের আনাগোনা । অলকানন্দ বাবু কেতকীর চেহারা দেখে চিনে ফেললে কি রিয়্যাক্ট করবেন ! হাটে হাড়ি ভাঙ্গার মতো উনি কি সকলের সামনে উন্মুক্ত করে দেবেন কেতকীর যাপিত জীবনের ইতি কথা ! না কি চিনবেন না ! না কি চিনেও নিজের সম্ভ্রম রক্ষার্থে না চেনার ভান করবেন ! কি করবেন অলকানন্দ বাবু !
-----চলবে ।
দুঃসময়ের ঠিকানা বুজি এভাবেই লেখা থাকে ! সারা পৃথিবীর লক্ষ কোটি মানুষের ভীরে এই অলকানন্দ বাবু হলেন গিয়ে বিমানের মেসোমশাই ।কেতকীর ভাবনার সাগরের পরিসীমা আস্তে আস্তে দিগন্ত পেড়িয়ে মহাশূন্যের অনন্ত আঁধারে হাতড়াচ্ছে এখন । এমনি সময়ে পেছন থেকে একেবারে জড়িয়ে ধরলো বিস্মৃতা, বললো, 'বৌদি আজকে তোমার ব্রাইডাল মেকআপ আমার হাতের জাদুতে ফুটিয়ে তুলব অনন্য করে "।কেতকী পেছন ফিরে সম্মতি সূচক ঘাড় নেড়ে পাশের ঘরের দিকে সরে গেলো ধীরে ধীরে । এক আকাশ দুশ্চিন্তা আর দুর্ভাবনায় আজকের এই স্মরণীয় দিন কতটা স্মরণে রাখার মতো হবে কে-ই বা জানে ! একটা পাহাড়ের মতো ভারী চাপ বুকের মধ্যে রেখেই ধীরে ধীরে ধাতস্থ হওয়ার চেষ্টা করছে কেতকী । মনের মধ্যে হাজার প্রশ্নের আনাগোনা । অলকানন্দ বাবু কেতকীর চেহারা দেখে চিনে ফেললে কি রিয়্যাক্ট করবেন ! হাটে হাড়ি ভাঙ্গার মতো উনি কি সকলের সামনে উন্মুক্ত করে দেবেন কেতকীর যাপিত জীবনের ইতি কথা ! না কি চিনবেন না ! না কি চিনেও নিজের সম্ভ্রম রক্ষার্থে না চেনার ভান করবেন ! কি করবেন অলকানন্দ বাবু !
-----চলবে ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ১৫/০৬/২০২৩অনন্য
-
ফয়জুল মহী ১৫/০৬/২০২৩চমৎকার প্রকাশ পেল
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ১৫/০৬/২০২৩অনেক সুন্দর!