কেতকী ৪
জীবনের আঠারোটা বসন্ত পেরিয়ে কেতকী এখন রূপে গুণে পরিপূর্ণা এক নারী । আকাশের তারার ভীরে যে তারাটা কেতকীর মা, সেঁ যেমন স্নিগ্ধ, কোমল, অপরূপ এক ললনা , কেতকীও কম যায়না ! বৃষ্টির আগে মেঘলা আকাশে সূর্যের আলোর বিকিরণে পৃথিবীতে যে মোহময় আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণ হয়, পৃথিবী যেমন সেজে উঠে এক মনমুগ্ধকর স্বর্ণালী আভায় ঠিক তেমনি যেন কেতকীর রূপ । যখন যেখানেই দেখা যায়, দেখলেই মনে হয় এক্ষুনি স্নানটা সেরে শরীরের সমস্ত ক্লান্তি ঝেড়ে সকালের প্রথম সূর্যোদয়ের রূপ যেন গায়ে মেখে বেড়ায় সারাবেলা । দুধে আলতা গায়ের রং, পুরুষ্ট নিতম্ব, সুডৌল বক্ষযুগ্ল , হালকা খয়েরি রঙের গভীর চোখ আর রক্ত গোলাপের মতো ঠোঁট সব কিছুই কেতকী অমূল্য সম্পদের মতোই সযত্নে আগলে রেখে দিনে দিনে বেড়ে উঠেছে ।এই অমূল্য সম্পদের মূল্য দেয়ার জন্য এই দুনিয়ার প্রতিটি পুরুষ মানুষই যেন প্রস্তুত ! বয়সের হেরফের থাকে, স্বাস্থ্যের হেরফের থাকে, অর্থ বিনিয়োগের হেরফের থাকে কিংবা সম্পর্কের হেরফের থাকে, কিন্তু উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য সবারই এক । যেনতেন প্রকারেণ কেতকীর এই রূপকে চেটেপুটে খাওয়ার ধান্দা । নিজেকে, নিজের এই সম্পদগুলোকে রক্ষা করতে করতে এক সময়ে সে হাপিয়ে উঠে । বিরক্তির শেষ সীমানায় এসে সমাজকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে নিজেকে সঁপে দিতে শুরু করে অর্থের কদরে । তবে সেই সঁপে দেওয়াকে কোনদিনই নিজের সামাজিক সংযমে অবস্থানের বাইড়ে যেতে দেয়নি কেতকী ।এতটুকুতেই যখন ধনদেবী তুষ্ট থাকেন তখনই বিমানদের মতো অতি সাধারন পুরুষ অসাধারন হয়ে উঠে কেতকীদের চোখে । টাকাপয়সা সেখানে ধর্তব্য বিষয় থাকে না, সামাজিক মর্যাদার খোলস যাদের চেনা হয়ে যায় তাদের কাছে সমাজের এই অতি সাধারন পুরুষগুলোর সম্মান হয় দেবতুল্য ।কেতকীর জীবন চলার চড়াই-উৎরাই পথে ঠাঠা রুদ্দোরে একমুঠো ছায়া হয়ে এসেছে বিমান ।তাই সে আজ নির্দ্ধিধায় বিমানের সহচরী , সহধর্মিনী ।
আগামী পরশু বিমান কেতকীর চতুর্থ মঙ্গল অনুষ্ঠান । বাড়ি ঘরে বিরাট ব্যস্ততা , উঠান প্যান্ডেলে ঢাকা পরছে, দু-একজন আত্মীয়া এখন থেকেই আসতে শুরু করেছে , ওরা সম্ভবতঃ বিমানের খুড়তুতো জেঠতুতু বোন হবে, তবে এখনো সকলের সাথে সেই ভাবে পরিচয় হয়নি ।বিমান যখন নিমন্ত্রিত আত্মীয়ের নামের তালিকাটা আরেকবার পরখ করে দেখছিল, কেতকী পাশেই ছিল, এমন সময়ে বিমানের মা এসে বিমানকে গদগদ ভঙ্গিতে জানাল, "বৌভাতের দিনে আমার মেজদাও আসবে কলিকাতা থেকে, তুই তো চিনিসই তাকে, কি ভাল খবর ! তাই না বল ?" বিমানের চেহারায় একটা তৃপ্তির হাসি দেখা গেল । মা চলে যেতেই বিমান কেতকীকে বলল, মায়ের মেজদা মানে আমাদের মেসোমশাই, কোলকাতা থাকেন, মায়ের খুব ভাব আমার এই মেসোর সঙ্গে ।
হুম, তা মাসি আসবেন তো ? আর কে কে আসবে গো শহর থেকে ? - কেতকীর এই প্রশ্নের জবাব দেবার আগেই বাইরে থেকে বিমানের ডাক আসলো, 'এই আমি এখন যাই, পরে বলবো সব' - বলেই বিমান বেড়িয়ে গেলো ।
কেতকী পুরানো ড্রেসিং টেবিলটার সামনে গেলো । সম্ভবতঃ বিমানের মায়ের বিয়ের টেবিল হবে, রংটা খানিক উঠে গেছে তবে কাঠ এবং আয়না একেবারে অক্ষত । চিরুনিটা হাতে নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে ছোট্ট টেবিলটায় বসে কেতকী একবার নিজেকে দেখলো । দেখলো সিঁথিতে সিঁদুর থাকলে নারীর সৌন্দর্য কেমন ফোটে ! কল্পনায় আকাশের তারামন্ডলীর মায়ের রূপটা চোখে এনে চোখ বুজে কথা বলার চেষ্টা করলো । কথা বলা হলনা, সেই কবে থেকে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে। দীর্ঘদিনের অবকাশে বিনা তারের সংযোগটা বোধহয় ছিন্ন হয়ে গেছে । বেশ কিছুক্ষণ চোখ বুজে রইল, এক ফোটা জল পড়লো রাঙা গাল বেয়ে ।
.........চলবে ।
আগামী পরশু বিমান কেতকীর চতুর্থ মঙ্গল অনুষ্ঠান । বাড়ি ঘরে বিরাট ব্যস্ততা , উঠান প্যান্ডেলে ঢাকা পরছে, দু-একজন আত্মীয়া এখন থেকেই আসতে শুরু করেছে , ওরা সম্ভবতঃ বিমানের খুড়তুতো জেঠতুতু বোন হবে, তবে এখনো সকলের সাথে সেই ভাবে পরিচয় হয়নি ।বিমান যখন নিমন্ত্রিত আত্মীয়ের নামের তালিকাটা আরেকবার পরখ করে দেখছিল, কেতকী পাশেই ছিল, এমন সময়ে বিমানের মা এসে বিমানকে গদগদ ভঙ্গিতে জানাল, "বৌভাতের দিনে আমার মেজদাও আসবে কলিকাতা থেকে, তুই তো চিনিসই তাকে, কি ভাল খবর ! তাই না বল ?" বিমানের চেহারায় একটা তৃপ্তির হাসি দেখা গেল । মা চলে যেতেই বিমান কেতকীকে বলল, মায়ের মেজদা মানে আমাদের মেসোমশাই, কোলকাতা থাকেন, মায়ের খুব ভাব আমার এই মেসোর সঙ্গে ।
হুম, তা মাসি আসবেন তো ? আর কে কে আসবে গো শহর থেকে ? - কেতকীর এই প্রশ্নের জবাব দেবার আগেই বাইরে থেকে বিমানের ডাক আসলো, 'এই আমি এখন যাই, পরে বলবো সব' - বলেই বিমান বেড়িয়ে গেলো ।
কেতকী পুরানো ড্রেসিং টেবিলটার সামনে গেলো । সম্ভবতঃ বিমানের মায়ের বিয়ের টেবিল হবে, রংটা খানিক উঠে গেছে তবে কাঠ এবং আয়না একেবারে অক্ষত । চিরুনিটা হাতে নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে ছোট্ট টেবিলটায় বসে কেতকী একবার নিজেকে দেখলো । দেখলো সিঁথিতে সিঁদুর থাকলে নারীর সৌন্দর্য কেমন ফোটে ! কল্পনায় আকাশের তারামন্ডলীর মায়ের রূপটা চোখে এনে চোখ বুজে কথা বলার চেষ্টা করলো । কথা বলা হলনা, সেই কবে থেকে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে। দীর্ঘদিনের অবকাশে বিনা তারের সংযোগটা বোধহয় ছিন্ন হয়ে গেছে । বেশ কিছুক্ষণ চোখ বুজে রইল, এক ফোটা জল পড়লো রাঙা গাল বেয়ে ।
.........চলবে ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী ২৫/০৫/২০২৩খুব ভালো লাগলো
-
মোঃ জাকির হোসেন জয় ০১/০৫/২০২৩ভালো লাগলো।
-
এ কে সুমন ০১/০৫/২০২৩অপেক্ষায় রইলাম প্রিয়
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২৭/০৪/২০২৩দারুণ