কেতকী ৩
এই তো গেল কেতকী আর বিমানের সাদাসিধা প্রেমের সংক্ষিপ্ত গল্প । এখানেই যদি গল্পটাকে শেষ করা যেতো, তবে কিন্তু বেশ মিষ্টি মধুর একটা সম্পর্কের উপাখ্যানে ইতি টানা যেতো । কিন্তু এই ইতির পেছনে কি পরে থাকতো না বেশ কিছু প্রশ্ন ! এই কেতকী চরিত্রের সৃষ্টিটা কিন্তু একটা সুন্দর শিউলী ঝরা শরতের সকালের মতোই স্নিগ্ধতায় ভরা । এই স্নিগ্ধ কোমল জীবনের কোন প্রান্তে কি এতটুকু আঁচর নেই ! তাহলে কেতকীর স্নানের সময়ে পিঠের মধ্যে কি দেখেছিল বিমান ! আর বিমান নামে যে একটা নিষ্পাপ, নিষ্কলঙ্ক, নির্মল নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের এক আকাশ স্বপ্নে ভরা জীবন যুদ্ধের পেছনের সারির সৈনিকের মতো একমাত্র ছেলের রূপক হিসেবে ছবিটা আঁকা হচ্ছে, তার প্রেমের অতীত ভবিষ্যৎ ছাড়া এত সুন্দর একটা অসমাপ্ত কাহিনী দিয়ে নিশ্চই শেষ করাটা উচিৎ হবে না ! না শেষ হবেও না, শেষ হতে পারে না । যেমন করে একটা দিন গত হয়ে রাত নামলেই ঘড়ির কাটার হিসেবে দিন শেষ হয় না, রাত এবং দিন মিলিয়েই অর্থাৎ চব্বিশ ঘণ্টার আঁধার আলো মিলিয়েই যেমন দিন হয় তেমনি কেতকীর জীবনের আলোর দিকটা হয়ত আমাদের দেখা হয়েছে, তবে কিছুটা কিন্তু আঁধার ! আঁধার আছে, আঁধার আছে বলেই কেতকী কলমে এসেছে, আর পাঁচটা মেয়ের মতো সাধারন মেয়ে নয় সে । তার জীবনের বৃত্তান্তেও মা-বাবা-ভাই-বোন-আত্মীয়-স্বজন ইত্যাদি সমস্ত কিছুই আছে । আছে একটা ফুটফুটে শৈশব, ষ্ট্রাগল ভরা কৈশোর । দুঃখ-বেদনা, সুখ-আহ্লাদ আর সকলের যেমন থাকে, কেতকীরও ছিল । তফাৎটা হলো, সাধারণের বলার সাধ্য থাকে, তার নেই অথবা সাধ্য থাকলেও স্বাধীনতা নেই । কেননা এই শৈশব আর কৈশোরে এত বেশী কাঁদা যে এখানে নামলেই বিপদ , তাই কেতকী কোন ভাবেই আর সেই দিনগুলিকে মনে করতে চায় না , ফিরিয়ে আনতে চায় না সেই ক্লেদাক্ত জীবনের ছিঁটে ফোঁটাও ।এ কারণেই জীবনের এত বড় চরম সত্যকেও লুকাতে এতটুকু কুণ্ঠাবোধ করে না কেতকী । যদি কেউ তার সেই পোড়া ঘাঁয়ে নুন ছিটাতে চায় তবে শুধু বিরক্তিই নয় , যে কোন সম্পর্কের শেষ টানতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না সে । আজকে বিমানকে জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়ার পেছনে এটিও একটি বড় কারন ; কেননা বিমান কোনদিন কেতকীর অতীত নিয়ে কথা বলেনি, যদিও বলতে চায়নি এমটাও না, তবে কেতকীর পছন্দ নয় বলে আর সেদিকে এগোনোর চেষ্টা করেনি সে ।
কেতকী মুর্শিদাবাদের একটি আধা শহুরে গ্রামের মেয়ে । খুব ছোটবেলা, যখন সে আদো আদো কথা বলতে শিখেছে, মা'কে মা বলে ডাকতে শিখেছে, বাবা'কে বাবা বলে, বড় ভাইকে বদ্দা বলে ঠিক সেই সময়ে আচমকা পরিষ্কার আকাশে মেঘের ঘনঘটার মতো করে মা অসুস্থ হল, ভীষন ঝড়ে যেমন পৃথিবী তছনছ হয়ে যায় এমনি করেই কেতকীর জীবনকে তছনছ করে দিয়ে কেতকীর মা চলে গেলেন তারার দেশে । সেই থেকে রাতের আকাশে মা থাকেন, শুধুমাত্র জলভরা চোখে আকাশের দিকে তাকালেই মা'কে দেখতে পেতো সে। প্রকৃতির নিয়মে সব কিছুকে পেছনে ঠ্যালে দিয়ে কেতকী বড় হতে থাকে । খুব বেশীদিন দেরী করেনি বাবা, পাড়াপড়শি আত্মীয় স্বজনের পরামর্শে ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে দেখাশোনা করার জন্য আরেকটা নতুন মা নিয়ে এসেছিল কেতকীর বাবা । প্রথম প্রথম খুব আদর পেতো সে কিন্তু বেশীদিন সেই আদর কপালে সইল না , নতুন মায়ের কোলে আরেকটা বোন আসতেই কেতকীর জীবনে নেমে আসে সেই ঝড়ো রাতের তছনছ ভরা জীবনের অবশিষ্টাংশ । ছ' সাত বছর বয়স থেকেই কেতকী সৎ মায়ের সংসারের সমস্ত কাজকর্ম করতে শিখে নিয়েছিল । যদিও বাবার পরম স্নেহ আর বড় ভাইয়ের আদরে প্রতি রাতেই কেতকী ভুলে যেতো সারাদিনের খাটুনি আর গঞ্জনার কথা । রাতের বেলায় বাবার ক্লান্ত শ্রান্ত মুখখানার দিকে চেয়ে কেতকী কোনদিনই বাবার কাছে বলতে পারেনি সৎ মায়ের দেয়া সারাদিনের দুঃসহ যন্ত্রণার কথা ।বড় ভাই যখন তার চেয়েও বেশী অত্যাচারে অতিষ্ঠ থাকতো তখন থেকেই ভাইয়ের কাছে বলা তো দুরের কথা বরঞ্চ ভাইকে কিভাবে বাঁচানো যায় সেই চেষ্টায় নিমজ্জিত থাকতো কেতকী ।এভাবেই দুঃখের সাগরে ভেসে ভেসে একটা সময়ে কেতকী সুন্দর দেহ আর সুশ্রী চেহারা নিয়ে মাধ্যমিকে ভাল ফল করে আরেকটু ভাল পড়াশোনার বাহানায় কোলকাতা শহরে আসার সুযোগ পেয়ে যায় । যদিও কেতকী জানে, শুধুমাত্র পড়াশোনার জন্যই বাবা তাকে বাড়ির বাইড়ে পাঠায় নি, পাঠিয়েছে সৎ মায়ের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাতে । বাবা বলে কথা, কেতকী না বললেও বাবা জানতো না এমন নয়, তবে মুখ ফুটে খুব বেশী কিছু বলতেন না । ভাইকে বাবার সাথে ব্যাবসায় বসিয়ে দিয়েছিল আরো আগে থেকেই । সেই যে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসা, তারপর হোষ্টেলের জীবন তদুপরি বাবা-ভাইয়ের একটা পরোক্ষ অবজ্ঞা সব মিলিয়ে আজকের এই কেতকী । তবে এখানেও যদি গল্পটার শেষ হতো তবে বোধহয় সাদামাটা প্রেমের সুন্দর পরিণতির কথা ভাবতে ভাবতে পাঠককুল চায়ের কাপে চুমু দিতেন । কিন্তু এখানেও যে শেষ নয় ।
...............চলবে ।
কেতকী মুর্শিদাবাদের একটি আধা শহুরে গ্রামের মেয়ে । খুব ছোটবেলা, যখন সে আদো আদো কথা বলতে শিখেছে, মা'কে মা বলে ডাকতে শিখেছে, বাবা'কে বাবা বলে, বড় ভাইকে বদ্দা বলে ঠিক সেই সময়ে আচমকা পরিষ্কার আকাশে মেঘের ঘনঘটার মতো করে মা অসুস্থ হল, ভীষন ঝড়ে যেমন পৃথিবী তছনছ হয়ে যায় এমনি করেই কেতকীর জীবনকে তছনছ করে দিয়ে কেতকীর মা চলে গেলেন তারার দেশে । সেই থেকে রাতের আকাশে মা থাকেন, শুধুমাত্র জলভরা চোখে আকাশের দিকে তাকালেই মা'কে দেখতে পেতো সে। প্রকৃতির নিয়মে সব কিছুকে পেছনে ঠ্যালে দিয়ে কেতকী বড় হতে থাকে । খুব বেশীদিন দেরী করেনি বাবা, পাড়াপড়শি আত্মীয় স্বজনের পরামর্শে ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে দেখাশোনা করার জন্য আরেকটা নতুন মা নিয়ে এসেছিল কেতকীর বাবা । প্রথম প্রথম খুব আদর পেতো সে কিন্তু বেশীদিন সেই আদর কপালে সইল না , নতুন মায়ের কোলে আরেকটা বোন আসতেই কেতকীর জীবনে নেমে আসে সেই ঝড়ো রাতের তছনছ ভরা জীবনের অবশিষ্টাংশ । ছ' সাত বছর বয়স থেকেই কেতকী সৎ মায়ের সংসারের সমস্ত কাজকর্ম করতে শিখে নিয়েছিল । যদিও বাবার পরম স্নেহ আর বড় ভাইয়ের আদরে প্রতি রাতেই কেতকী ভুলে যেতো সারাদিনের খাটুনি আর গঞ্জনার কথা । রাতের বেলায় বাবার ক্লান্ত শ্রান্ত মুখখানার দিকে চেয়ে কেতকী কোনদিনই বাবার কাছে বলতে পারেনি সৎ মায়ের দেয়া সারাদিনের দুঃসহ যন্ত্রণার কথা ।বড় ভাই যখন তার চেয়েও বেশী অত্যাচারে অতিষ্ঠ থাকতো তখন থেকেই ভাইয়ের কাছে বলা তো দুরের কথা বরঞ্চ ভাইকে কিভাবে বাঁচানো যায় সেই চেষ্টায় নিমজ্জিত থাকতো কেতকী ।এভাবেই দুঃখের সাগরে ভেসে ভেসে একটা সময়ে কেতকী সুন্দর দেহ আর সুশ্রী চেহারা নিয়ে মাধ্যমিকে ভাল ফল করে আরেকটু ভাল পড়াশোনার বাহানায় কোলকাতা শহরে আসার সুযোগ পেয়ে যায় । যদিও কেতকী জানে, শুধুমাত্র পড়াশোনার জন্যই বাবা তাকে বাড়ির বাইড়ে পাঠায় নি, পাঠিয়েছে সৎ মায়ের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাতে । বাবা বলে কথা, কেতকী না বললেও বাবা জানতো না এমন নয়, তবে মুখ ফুটে খুব বেশী কিছু বলতেন না । ভাইকে বাবার সাথে ব্যাবসায় বসিয়ে দিয়েছিল আরো আগে থেকেই । সেই যে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসা, তারপর হোষ্টেলের জীবন তদুপরি বাবা-ভাইয়ের একটা পরোক্ষ অবজ্ঞা সব মিলিয়ে আজকের এই কেতকী । তবে এখানেও যদি গল্পটার শেষ হতো তবে বোধহয় সাদামাটা প্রেমের সুন্দর পরিণতির কথা ভাবতে ভাবতে পাঠককুল চায়ের কাপে চুমু দিতেন । কিন্তু এখানেও যে শেষ নয় ।
...............চলবে ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
তাবেরী ০৯/০৫/২০২৩চমৎকার।
-
শুভজিৎ বিশ্বাস ১৭/০৪/২০২৩বেশ সুন্দর লিখেছেন
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৫/০৪/২০২৩অপূর্ব
-
এম,এ,মতিন ১১/০৪/২০২৩মুগ্ধতা রেখে গেলাম। খুবই সুন্দর লেখা। অনেক অনেক ভালোবাসা প্রিয় কবি।
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২৬/০৩/২০২৩সুন্দর লেখা
-
ফয়জুল মহী ২৬/০৩/২০২৩চমৎকার
ভালো লাগলো পাঠে।