কেতকী
বিমানদের পাড়ায় আজ বড্ড শোরগোল । চারিদিকে হৈ হৈ রব পরে গেছে । দেখ গিয়ে, শিবম'দার ছেলে কি বউ এনেছে ! যেমন গায়ের রং তেমনি গড়ন ! যেনো সাক্ষাৎ সরস্বতী ! যে যায় সে-ই তাকিয়ে থাকে, সহসা চোখ ফেরানো যায় না , বাড়ি ফেরার টান থাকে না কারো । লাল টুক টুক একটা ডানা কাটা পরী যেন বসে আছে বিমানদের বাড়ান্দায় । এক্ষুনি বউকে ঘরে তোলা যাবে না, অনেক আচার আছে , সেগুলো শেষ করে তবেই বউ ঘরে যাবে তাই বাড়ান্দায় একটা কাঠের চৌকিতে বসে আছে ।পুরহিত মশাই নাকি আসতে আরো সময় নেবে । না, মাথা নত করে বা লজ্জায় অবনত চোখ নয়, চারিদিক দেখছে । সব কিছু নতুন ! সদ্যজাত শিশু ভূমিষ্ঠ হলে যেমন ঠিক তেমনি । প্রথম প্রথম খবরটা শোনে যারা নতুন বউ দেখতে এসেছিল, তাদের কে উঠানে বসার জন্য চেয়ার, জল চৌকি ইত্যাদি দেওয়া হয়েছিল । ভীড় ক্রমশঃ বাড়ছে , এখন আর পাড়া প্রতিবেশীদের আপ্যায়ন করার মতো কিছু নেই । উঠানে দাঁড়ানো বিভিন্ন বয়সের শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা-যুবক-যুবতীদের যেমন উৎসুক দৃষ্টি তেমনি নতুন বউএর দৃষ্টিও যেন কম যায়না । ভিন্ন গ্রহের প্রানীদের মতো সে-ও দেখছে সব্বাইকে । ভীড়ের মধ্যে একটা গুঞ্জন প্রায়ই বেড়ে উঠে আবার বিমানদের বাড়ির কেউ এদিকে আসলেই গুঞ্জনটা থেমে যায় ।বয়স পঞ্চাশের হরি'র মা, এগিয়ে এসে নতুন বউ এর পাশে উপুড় হয়ে বসল । জিজ্ঞেস করল, তোমার না কি গো ? জবাবটা সঙ্গে সঙ্গে না পেলেও হতাশ হয় নি হরির মা । আবার শোধালেন, নতূন বউ তোমার নাম কি ? মৃদু স্বরে এবার উত্তরটা আসল, 'কেতকী' । ভীড়ের গঞ্জনায় নামটা কতটুকু বুজতে পারলো সে জানা গেল না তবে নতুন বউএর সুন্দর চেহারা-গায়ের রং-গড়নের পাশাপাশি গলার স্বর যে সুমধুর সেটা বুজতে বাকী রইল না তার ।আর বেশি কথা বাড়ানোর মতো পরিবেশ নাই বুজে হরির মা দ্রুত কেটে পরল । এই চলে যাওয়াটাকেও অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করলো কেতকী । এখানকার মানুষগুলো যেন ঠিক মানুষ না, অন্য গ্রহ থেকে আসা কিছু প্রাণী, যারা এখনো এই সভ্য সমাজের সঙ্গে নিজেদের ঠিক মতো খাপ খাওয়াতে পারেনি । অথচ এতটাও অজ পাড়া-গাঁ নয় কিন্তু এই বিমানদের গ্রাম , তার পরেও কেন এমন লাগছে ! কেতকী বসে বসে ভাবছে , শুধুমাত্র একটা ভাষার সামান্য পরিবর্তনের জন্যই এমন লাগছে ! নাহ , প্রত্যেকটা মানুষ কেমন অপরিছন্ন, পোষাক-আশাকে ভদ্রতার লেশমাত্র নেই । বুড়িটার গায়ে কি বিচ্ছিরি গন্ধ ! সে যাকগে , কেতকী আজকে নতুন বউ, যদিও বউ নতুন হলেও বিমানের সঙ্গে এই সম্পর্কের বাঁধন বেশ কয়েক বছরের । আজকে সমস্ত দ্বিধাদ্বন্দ ভেঙ্গে নতুন স্বপ্ন নতুন আশায় বুক বেঁধে পাড়ি দিয়েছেন অনেকটা পথ ।লম্বা পথের ভ্রমণ শেষের বিশ্রাম করার সুজোগ নেই, নিয়মের কাছে বাঁধা গ্রামের মানুষের আশ্র্য়-প্রশ্রয় যে এখন খুব দরকার কেতকীর, কেননা তারাই তো হবে এখন তার আপনজন , ভবিষ্যৎ ।ইতিমধ্যে পুরোহিত এসে উঠানের এককোনে চারটে কলাগাছ পুঁতে রীতি নীতির কয়েক প্রস্থ শেষ করে ফেলেছেন । এই পর্বে এসেই খটকা লাগলো । খটকাটা এত সহজে ভাঙ্গবে না সেটা খুব বুজতে পারছে কেতকী । বিমান বার বার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে কিন্তু বিফল প্রচেষ্টার শেষে ফিরে এলো কেতকীর কাছে । এবার কেতকী কি বলবে, কি জবাব দেবে এই প্রশ্নের !
......চলবে ।
......চলবে ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী ২৭/০৫/২০২৩সুন্দর
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২৮/০৪/২০২৩দারুণ
-
ফয়জুল মহী ১১/০৩/২০২৩সুন্দর অনুভূতি প্রকাশ হয়েছে লেখাটিতে।