গল্প হলেও সত্যি - পাষণ্ড ৩
দেখতে দেখতে বেশ কয়েক বছর হল । আর এই কয়েক বছরের গল্প এত অল্প সময়ে বলা যায় ! গুছিয়ে বলার অভ্যেস করি কিন্তু রপ্ত করতে পারি না । ইদানিং তপন আমার কাছে একটু ঘন ঘন আসে । এখন আর বেশী মদ খায় না । রিক্সা চালায়, রোজগার পাতি মন্দ না । একদিন কথায় কথায় বলল সে নাকি ওই বাড়িতে আর থাকবে না । ওখানে তার ভাল লাগে না, বউটা সব সময় কান্না কাটি করে । রিক্সা চালিয়ে অনেক সময় বেশী রাত হলে বউ বাড়িতে ভয় পায় আবার সেও নির্জন পথে ফিরতে ভয় পায় তাই আমাকে একটা ভাল জায়গা মানে আমার বাড়ির আশেপাশে বাড়ি করার মত কোন জায়গা পেলে আমি যেন তাকে জানাই । যদিও আমি তাতে কোন মতেই আগ্রহী না, কেননা আমি যতই উদার মন নিয়ে সম্পর্কটাকে টেনে নিয়ে যাই না কেন, ওদের মতো অমানুষদের জায়গা যে আমার পাড়ায় হতে দেব না এতে আমি নিশ্চিত । যে মানুষ টা শুধু মাত্র মেয়ে হয়েছে বলে একটা নিষ্পাপ শিশুকে গলা টিপে হত্যা করতে পারে, আর যাই হঊক তার মতো মানুষের সংষ্পর্শে থাকাটাতেও একটা পাপবোধ কাজ করে মনের মধ্যে । তবুও "পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়" ভেবেই কিছুটা এড়িয়ে কিছুটা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে চলছি । এরই মধ্যে একদিন এসে জানাল, সে আমার গ্রামেরই এক পাশে দেড় গন্ডা জায়গা কিনে ফেলেছে । আমি রীতিমত স্তম্ভিত, এত সুন্দর জায়গা ! এত টাকা কোথায় পেল ? বিস্তারিত জানলাম, বিয়ের সময়ে পাওয়া বেশ কিছু সম্পদ হাতছাড়া করে, বন্ধন থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করার শর্তে ঋণ নিয়ে একান্তই আন্তরিক ইচ্ছার ফসল সে বুনেছে এবং তার কিছু দিনের মধ্যেই একেবারে একটা ছোট্ট ঘর করে যেই কথা সেই কাজের মতো করে চলে আসলো আমাদের গ্রামে । তার এই তরিঘরি দেখে আমার বিরক্ত লাগতো, আমি অনুযোগ করলেই সে আমাকে বলত, "দাদা, কেইসে ত আমার জেল হইব জানিই, তাই হেরার চিন্তা করি, এইখানে আপনেরার ধারে কাছে রাইখ্যা গেলে আমার চিন্তা করন লাগত না "। এই কথা গূলো শোনলে মনের কোণায় একটা মায়া জন্মাত । খুব তাড়াতারি করেই এক্কেবারে কাগজে পত্রে আমাদের গ্রামের বাসিন্দা হল, নাহ্ ঠিক আমাদের গ্রামের নয়, যদিও আগে একটাই গ্রাম ছিল কিন্তু হালে ঐটা আলাদা গ্রাম । এখন সে ভাল আছে, কাগজ পত্রে ঝক্কি সামলাতে তপনের বউও অনেক সময় অফিসে আসত , দেখে বুজা যায়, এখন ওরা আগের থেকে অনেকটাই ভাল আছে , অভাবের ছাপ নেই চেহারায়, শিশুটার শোক কতটা ভেতরে রয়েছে বাইড়ে থেকে বুজা যায় না । বিধির কি বিধান ! এরই মধ্যে আরেকটা মেয়ে শিশুর পিতা হয়েছে সে । এবারে সে কাঁদেনি , কোন প্রতিক্রিয়াও নেই তার । অনেক দিন যাবৎ তপনের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, আমি আমার কাজে ব্যাস্ত । পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুই বদলে গেছে গত কয়েক মাসে, তাই নিজেকে নিয়েই বেশী ব্যস্ত ছিলাম বটে । এমনি এক দিন সকাল বেলায় একটা ফোন এল, তপনের বউ হাউ মাউ করে কাঁদছে, "দাদা আমার সব শেষ, তাইর বাবা ফাঁসি দিছে, আপনে আইয়া দেইখ্যা যান" । না আমি সেদিনও আর গেলাম না, যাওয়ার মতো মানসিক ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিও অনুকূলে ছিল না । পরে বিস্তারিত জানলাম, পুরান বাড়িতে গিয়ে এক্দিন ভোরে তপন অবশ্যই কাউকে না জানিয়ে আত্মহত্যা করেছে ।
আমি মনে মনে অনেক কিছুই ভাবতে ভাবতে , বিষ্ময় পৃথিবীর বিচিত্র চরিত্র বিশ্লেষন করার চেষ্টা করলাম । কিন্তু কতটা অনুধাবন করতে পারলাম জানি না , তবে অবাক হয়ে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে রাখলাম । এখন তপনের বউ একটা হোটেলে রাধুনির কাজ করে মেয়ে দুটোকে নিয়ে জীবন যাপন করছে । মাঝে মধ্যেই আমাকে ফোন করে, আবার দেখাও হয় । যাপিত জীবনের কথা বলতে বলতে এক সময় বলেই ফেলে, "আমি ত দাদা আপনের কাছে সব কিছুই কই, ক্যারে জানি আপনের কাছে সব কিচ্ছু কইতে আমার কোন লাজ করে না, তাইর বাপের মতই লাগে"। আমার স্বভাব সুলভ হাসি দেখে সে আবার বিদ্রুপ করছি কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরও খোঁজে বটে । গতকাল রাত সাড়ে আটটায় আমাকে ফোন করে বলল,"্দাদা আমারে মাফ কইরেন, আমি বোধহয় আর বালা থাকতাম পারতাম না, আপনেঅ কিছ্ছু করতে পারতেন না, আমিঅ......।"
আমি মনে মনে অনেক কিছুই ভাবতে ভাবতে , বিষ্ময় পৃথিবীর বিচিত্র চরিত্র বিশ্লেষন করার চেষ্টা করলাম । কিন্তু কতটা অনুধাবন করতে পারলাম জানি না , তবে অবাক হয়ে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে রাখলাম । এখন তপনের বউ একটা হোটেলে রাধুনির কাজ করে মেয়ে দুটোকে নিয়ে জীবন যাপন করছে । মাঝে মধ্যেই আমাকে ফোন করে, আবার দেখাও হয় । যাপিত জীবনের কথা বলতে বলতে এক সময় বলেই ফেলে, "আমি ত দাদা আপনের কাছে সব কিছুই কই, ক্যারে জানি আপনের কাছে সব কিচ্ছু কইতে আমার কোন লাজ করে না, তাইর বাপের মতই লাগে"। আমার স্বভাব সুলভ হাসি দেখে সে আবার বিদ্রুপ করছি কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরও খোঁজে বটে । গতকাল রাত সাড়ে আটটায় আমাকে ফোন করে বলল,"্দাদা আমারে মাফ কইরেন, আমি বোধহয় আর বালা থাকতাম পারতাম না, আপনেঅ কিছ্ছু করতে পারতেন না, আমিঅ......।"
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২৮/১১/২০১৯খুব সুন্দর লিখেছেন পরিতোষ বাবু।