গল্প হলেও সত্যি ৪
(গল্প হলেও সত্যি ৩ এর ধারাবাহিক)
একটা মৃদু গুঞ্জন চলছিল তবুও নীরব, মুনির আর মুনিরের মায়ের উদ্বিগ্ন চোখের দিকে যেন তাকানো যাচ্ছিল না । মুনির ছলছল চোখে জিজ্ঞেস করল, “কিতা অইছে আম্মা ?” কথাটা শুনেই মুনিরের শাশুড়ি হাও মাও করে কেঁদে উঠল, “আমার মাইয়া আর নাইরে বাপজান” বলতে বলতে মুনিরের গলায় জরিয়ে ধরল । মুনির কিছু বুজে উঠতে পারেনি, এক পলকে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আছে ।মুনিরের শাশুড়ি বেশ কিছুক্ষণ কেঁদে জামাইয়ের গলা ছেড়ে উঠে দাড়াল, চোখ মুখ মুছে নাতিকে কোলে নিয়ে নিজেকে বেশ শক্ত বা দৃঢ় দেখাতে চাইল । স্পষ্ট কন্ঠে জানান দিল, উনার মেয়ে দীর্ঘ্যদিন যাবত কোন একটা বিদেশ থাকা মানুষের সঙ্গে ফোনে ফোনে সম্পর্ক তৈরী করেছে, যদিও বিয়ের আগে মেয়ে বেশ কয়েকবার তার সাথে দেখা সাক্ষাত করেছে, মা জানলেও বেশী পাত্তা দেয়নি সে কারনেই তারাতারি বিয়ে দিয়ে দিয়েছে । তবুও বিদেশ দেখার স্বপ্ন মেয়ে ছাড়তে পারেনি, কূয়েত যাওয়ার এক অদম্য ইচ্ছা তাকে বার বার এই খারাপ সম্পর্কের দিকে নিয়ে গেছে । মেয়েকে প্রশ্রয় না দিলেও খুব বেশী শাষন করেনি মা ; ফলস্বরূপ মেয়ে তলে তলে গোপনে ঐ বিদেশের লোকটার সঙ্গে গোপন প্রেম করেছে, গত মাস দেড়েক আগেও মেয়ে যখন বাপের বাড়িতে গেছে ঐ লোকটা নাকি দেশেই ছিল, দেখা করেছে, কথা দিয়েছে বিদেশ নিয়ে যাবে । মুনিরের শাশুড়ি এতক্ষন এতগুলি কথা গুছিয়ে কৈফিয়ত দেবার মত করেই বলেছে । সবাই শোনছিল । এবার তার চোয়াল শক্ত, চোখ দুটো একেবারে লাল ।“শুয়রের বাচ্চারে পাইলে জিগাইতাম, আমার মায়ারে তর অত বালা লাগলে আগে নিলিনা না ক্যারে ? অখন আমার এই কাঁচা সোনাডারে ক্যাডা দেখব !” এই কথা বলেই নাতিটাকে মুনিরের মায়ের কোল থেকে একেবারে যেন ছিনিয়ে কোলে তোলে ঘ্রের দিকে চলে গেল । এখন আর কারো কিছু বুজতে বেশী বাকি নেই, গুঞ্জন আস্তে আস্তে গোলমালের মত আওয়াজে পরিনত হতে হতে আবার মিলিয়ে গেল অলিতে গলিতে । উঠানের মানুষগুলো যে যার মত করে বাড়ির দিকে পা বাড়াল, দু একজন মহিলা অবশ্য মুনিরের মায়ের কাছে পানের বাটা খুঁজতে খুঁজতে ঘড়ের দিকেও গেল । মুনিরের শাশুড়ির চাপাকান্না বা আর্তনাদ অথবা রোদন থেকে যতটুকু বুজতে পারলাম তা হল , উনার মেয়ে আজকেই পর পুরুষের সঙ্গে বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে, যাওয়ার আগে মায়ের কাছে নাতির দায়িত্ব অর্পণ করে দিয়ে যাওয়ার জন্যই ফোন টা করেছিল। তবে সমস্ত ঘটনা , পরিকল্পনা যে উনি জানতেন তাতে আর কোন সন্দেহ না থাকায় সকলেই দুরছার করতে করতে চলে গেল ।তবেই সেই থেকে মুনিরের শাশুড়ি কিন্তু আর নিজের বাড়ির দিকে পা বাড়ায়নি । অর্পিত দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে একেবারে একনিষ্ঠ ভাবেই নাতিকে লালন পালন করছিল, দুই বেয়ান আর মুনিরের সংসার যেমন চলার কথা ঠিক তেমন ভাবেই চলছিল ।পাড়াগাঁয়ে যেমনটা হয় , মানুষের মুখে মুখে গল্পগুজবের অন্ত নেই । এরই মধ্যে বছর খানেকের মধ্যে ঘটল এক অঘটন, পাড়ায় রটে গেছে, মুনিরের শাশুড়ি নাকি মা হতে চলেছে । অনেকদিন ধরে মুনিরের মায়ের দেখা পাচ্ছিলাম না, তাই আসল ঘটনাটা জানতেও পারছিলাম না । কেননা, গ্রামে কান পাতলে নানান কথা শোনা যায়, যদিও ইদানিং গ্রাম কিংবা শহর সব মানুষ বেশী বেশী বযক্তি কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে উপোর্যপুরি অভাব অনটনে আরো বেশী প্রভাব ফেলছে পরচর্চা পরনিন্দার উপর । মানুষ এসব আস্তে আস্তে ভুলেই যাচ্ছে যেন । তবুও যেহেতু গ্রাম, সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে গেলে তাস খেলাটা শেষ হলেই পাড়ায় কার বাড়িতে কি হয়েছে না হয়েছে সব জানা যায় । মহিলারা বন্ধনের সাপ্তাহিক ঋণের কিস্তি দিয়ে যখন বাড়ির দিকে ফেরত যায়, কান পাতলেই জানা যায় , কার কার বাড়িতে পরকীয়া বাসা বেঁধেছে । তবুও আমি মুনিরের মায়ের অপেক্ষায় রইলাম ।
একটা মৃদু গুঞ্জন চলছিল তবুও নীরব, মুনির আর মুনিরের মায়ের উদ্বিগ্ন চোখের দিকে যেন তাকানো যাচ্ছিল না । মুনির ছলছল চোখে জিজ্ঞেস করল, “কিতা অইছে আম্মা ?” কথাটা শুনেই মুনিরের শাশুড়ি হাও মাও করে কেঁদে উঠল, “আমার মাইয়া আর নাইরে বাপজান” বলতে বলতে মুনিরের গলায় জরিয়ে ধরল । মুনির কিছু বুজে উঠতে পারেনি, এক পলকে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আছে ।মুনিরের শাশুড়ি বেশ কিছুক্ষণ কেঁদে জামাইয়ের গলা ছেড়ে উঠে দাড়াল, চোখ মুখ মুছে নাতিকে কোলে নিয়ে নিজেকে বেশ শক্ত বা দৃঢ় দেখাতে চাইল । স্পষ্ট কন্ঠে জানান দিল, উনার মেয়ে দীর্ঘ্যদিন যাবত কোন একটা বিদেশ থাকা মানুষের সঙ্গে ফোনে ফোনে সম্পর্ক তৈরী করেছে, যদিও বিয়ের আগে মেয়ে বেশ কয়েকবার তার সাথে দেখা সাক্ষাত করেছে, মা জানলেও বেশী পাত্তা দেয়নি সে কারনেই তারাতারি বিয়ে দিয়ে দিয়েছে । তবুও বিদেশ দেখার স্বপ্ন মেয়ে ছাড়তে পারেনি, কূয়েত যাওয়ার এক অদম্য ইচ্ছা তাকে বার বার এই খারাপ সম্পর্কের দিকে নিয়ে গেছে । মেয়েকে প্রশ্রয় না দিলেও খুব বেশী শাষন করেনি মা ; ফলস্বরূপ মেয়ে তলে তলে গোপনে ঐ বিদেশের লোকটার সঙ্গে গোপন প্রেম করেছে, গত মাস দেড়েক আগেও মেয়ে যখন বাপের বাড়িতে গেছে ঐ লোকটা নাকি দেশেই ছিল, দেখা করেছে, কথা দিয়েছে বিদেশ নিয়ে যাবে । মুনিরের শাশুড়ি এতক্ষন এতগুলি কথা গুছিয়ে কৈফিয়ত দেবার মত করেই বলেছে । সবাই শোনছিল । এবার তার চোয়াল শক্ত, চোখ দুটো একেবারে লাল ।“শুয়রের বাচ্চারে পাইলে জিগাইতাম, আমার মায়ারে তর অত বালা লাগলে আগে নিলিনা না ক্যারে ? অখন আমার এই কাঁচা সোনাডারে ক্যাডা দেখব !” এই কথা বলেই নাতিটাকে মুনিরের মায়ের কোল থেকে একেবারে যেন ছিনিয়ে কোলে তোলে ঘ্রের দিকে চলে গেল । এখন আর কারো কিছু বুজতে বেশী বাকি নেই, গুঞ্জন আস্তে আস্তে গোলমালের মত আওয়াজে পরিনত হতে হতে আবার মিলিয়ে গেল অলিতে গলিতে । উঠানের মানুষগুলো যে যার মত করে বাড়ির দিকে পা বাড়াল, দু একজন মহিলা অবশ্য মুনিরের মায়ের কাছে পানের বাটা খুঁজতে খুঁজতে ঘড়ের দিকেও গেল । মুনিরের শাশুড়ির চাপাকান্না বা আর্তনাদ অথবা রোদন থেকে যতটুকু বুজতে পারলাম তা হল , উনার মেয়ে আজকেই পর পুরুষের সঙ্গে বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে, যাওয়ার আগে মায়ের কাছে নাতির দায়িত্ব অর্পণ করে দিয়ে যাওয়ার জন্যই ফোন টা করেছিল। তবে সমস্ত ঘটনা , পরিকল্পনা যে উনি জানতেন তাতে আর কোন সন্দেহ না থাকায় সকলেই দুরছার করতে করতে চলে গেল ।তবেই সেই থেকে মুনিরের শাশুড়ি কিন্তু আর নিজের বাড়ির দিকে পা বাড়ায়নি । অর্পিত দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে একেবারে একনিষ্ঠ ভাবেই নাতিকে লালন পালন করছিল, দুই বেয়ান আর মুনিরের সংসার যেমন চলার কথা ঠিক তেমন ভাবেই চলছিল ।পাড়াগাঁয়ে যেমনটা হয় , মানুষের মুখে মুখে গল্পগুজবের অন্ত নেই । এরই মধ্যে বছর খানেকের মধ্যে ঘটল এক অঘটন, পাড়ায় রটে গেছে, মুনিরের শাশুড়ি নাকি মা হতে চলেছে । অনেকদিন ধরে মুনিরের মায়ের দেখা পাচ্ছিলাম না, তাই আসল ঘটনাটা জানতেও পারছিলাম না । কেননা, গ্রামে কান পাতলে নানান কথা শোনা যায়, যদিও ইদানিং গ্রাম কিংবা শহর সব মানুষ বেশী বেশী বযক্তি কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে উপোর্যপুরি অভাব অনটনে আরো বেশী প্রভাব ফেলছে পরচর্চা পরনিন্দার উপর । মানুষ এসব আস্তে আস্তে ভুলেই যাচ্ছে যেন । তবুও যেহেতু গ্রাম, সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে গেলে তাস খেলাটা শেষ হলেই পাড়ায় কার বাড়িতে কি হয়েছে না হয়েছে সব জানা যায় । মহিলারা বন্ধনের সাপ্তাহিক ঋণের কিস্তি দিয়ে যখন বাড়ির দিকে ফেরত যায়, কান পাতলেই জানা যায় , কার কার বাড়িতে পরকীয়া বাসা বেঁধেছে । তবুও আমি মুনিরের মায়ের অপেক্ষায় রইলাম ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ০৬/১০/২০১৯অপূর্ব
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৫/১০/২০১৯আচ্ছা, পড়ছি।
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ০৪/১০/২০১৯দারুন লাগলো