মোহনা - ২
শেভ করে স্নান সেরে বেড়িয়ে আসতে আসতে প্রায় ছ'টা বেজে গেল, আজকে একটু বেশী সময় লেগেছে বটে । স্নান-সন্ধ্যা ছাড়া সহসা অস্মিত বেড়োয় না, এটা ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস হয়ে গেছে , ঠাকুমার সঙ্গে নিয়মিত সন্ধ্যারতি করার অভ্যাসটা ঠাকুমার সঙ্গে চলে গেলেও সকালে স্নান টা সেরে ইষ্টভৃতি নিয়মিত করে আসছে । মনের মধ্যে হাজার দ্বিধা দ্বন্দ্ব তৈরী হলেও এখনো পর্যন্ত ঐতিহ্য বা পরম্পরার বিরুদ্ধে যাওয়ার মানষিকতা গড়ে উঠেনি । ইষ্টভৃতি শেষ করে স্ত্রী'র হাতের তৈরী চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, 'আজকে বুজি আর সময়ে পৌছতে পারলাম না।' আক্ষেপ কন্ঠে মেখে স্ত্রী'র অনুতাপ সূচক বাক্য, 'কি এমন কাজ যে তোমার আমি বুজি না, এসব করে কি হবে, যেমন আছি এমনই তো ভাল, জানিনা বাবা...তোমাকে কে বারণ করবে '। অস্মিত আর কথা না বাড়িয়ে সোজা লেদার ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে পায়ে জুতো গলিয়ে বেড়িয়ে গেল । রাস্তায় নামতেই হরিমাধবের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা, 'আরে হরি'দা, চলেন চলেন ভালই হলো, একা হাটতে একদম ভাল্লাগে না, বাইক চালিয়ে চালিয়ে একদম অলস হয়ে গেছি ।' হরিমাধবও হাসি মুখে সঙ্গে সঙ্গে পথ চলতে চলতে কথার রেশ ধরে বলল, ' হ্যাঁ, তোমি তো আবার আজকের সভায় বাইক নিয়ে যাবে না, না হলে কি কম করতে ! কতটাই বা দুরত্ব, চলো চলতে থাকি'। বলতে বলতে দুজনেই দ্রুত বেগে সমান তালে সামনের দিকে এগিয়ে গেল । পথ চলতি অনেকের সঙ্গেই দেখা হল, কারোও সঙ্গে হাই-হ্যালো হল, আবার কাউকে দেখে না দেখার মতো আপন মনে দুজন চলতে চলতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যার কাছাকাছি এসে হরিমাধব অস্মিতকে থামাল,'এবার বাপু আমি দু-টান না দিয়ে ভেতরে যাব না, রবিবার আসলেই আমার সারাটা দিন কষ্টে যায়, আমি হলেম গিয়ে ক্ষেত খামারে কাজ করা লোক, আমি কি পারি ওসব পান-বিড়ি-সিগেরেট ছেড়ে থাকতে !" অস্মিত মোবাইল ফোনটা পকেট থেকে নিয়ে সাইলেন্ট মুডে রাখল, সময়টা দেখে অনেকটা স্বস্ত্বি যেন পেল, এখনো সাতটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকী, খুব দ্রুত পা চালিয়েছে দুজনে । এ সময়ের এই সকাল বেলাটা বেশ মিষ্টি লাগে, হালকা কূয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে আবার নরম রোদ লাগে গায়ে ।শিশিরে ভেজা ঘাসের উপর সূর্যকিরনের সোনালী আভা দেখলেই অষ্মিতের কবি মন জেগে উঠে । কোথায় শিউলী ঝরে জানা নেই কিন্তু একটা মৃদু গন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়ায় । দক্ষিন -পূর্বের সমতল হাওড়টার দিকে এক পানে চেয়েছিল অষ্মিত, হরি মাধবের ডাকে সম্বিৎ ফিরল তার, আবার দুজন এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে । অষ্মিত মনে মনে বেশ অনুতপ্ত হল কেননা গত সপ্তাহে একটি কবিতাও লেখা হয়নি, লেখতে বসেনি, যা নিতান্তি তার স্বভাব বিরুদ্ধ । তাহলে কি চাপ বাড়ছে তার, নাকি দায়িত্ব -কর্তব্য । এভাবেই কি আস্তে আস্তে নিজস্ব জীবন যাপন থেকে দূরে চলে যাচ্ছে সে ! এই ভাবনাটা গভীরতা ছূঁতে চেয়েছিল কিন্তু ততক্ষণে পৌছে গেছে ওরা , যেখানে আগে থেকেই আরো বেশ কিছু মানুষ প্রত্যাশিতভাবেই উপস্থিত রয়েছে । ওরা সকলেই এক মানষিকতায় তৈরী হবার প্রতিজ্ঞা করেছে, সমবেত চেষ্টা চলছে ।
-----ক্রমশ ।
-----ক্রমশ ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ফয়জুল মহী ০২/০৮/২০১৬অপূর্ব,
-
দেবব্রত সান্যাল ২২/১২/২০১৫বানান ভুল অব্যাহত আছে। তাছাড়া পরের কিস্তিটি পড়ার ইচ্ছে হবার মত কোনো উপাদান বর্তমান কিস্তিতে নেই।
-
মোবারক হোসেন ১৯/১২/২০১৫খুব ভাল।
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ১৬/১২/২০১৫বেশ ভাল লাগলো ।
-
জুনায়েদ বি রাহমান ১৫/১২/২০১৫দারুণ লেখনী। ভালো লাগলো।
-
অভিষেক মিত্র ১৪/১২/২০১৫দারুন চলছে।
-
ডাঃ প্রবীর আচার্য নয়ন ১৩/১২/২০১৫ভালো হচ্ছে.....