www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মধ্যবিত্ত

মধ্যবিত্ত
মোঃ বুলবুল হোসেন
তারিখঃ ০১-০৫-২০২২ ইং
বাবুল সংসারের বড় মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে । তাদের সংসার কোন রকম চলে । সংসারে সদস্য ছোট ভাই-বোন বাবা-মা তাদেরকে নিয়ে ভালই যাচ্ছিল দিন। বাবুল স্কুলে থেকে আসার পরে মাঝে মধ্যে বাবা কৃষি কাজে সাহায্য করে । সুখের জীবন ছিল তাদের যা বলার মত ভাষা নেই । এমন অবস্থায় বাবুলের ছোট বোনের বিয়ে হয় । সংসারে যা কিছু টাকা-পয়সা জমা ছিল প্রায় শেষের দিকে ।ছোট বোনটাকে বিয়ে দিয়ে সুখে দিন যাচ্ছে । বাবুল বাবার সাথে কাজ করে। সংসারের অভাবটা দূর হয়ে গেছে। দেখতে দেখতে এসএসসি পাস করে বাবুল সবাই বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি হয় । কিন্তু বাবুল কোথায় ভর্তি হবে এখনো জানেনা। বড় ভাইদের কাছ থেকে বুদ্ধি নেয়। আসলে কি করা যায় । কোন বিষয় নিয়ে পড়লে ভালো হয় । আমাদের মধ্যবিত্ত সংসার থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পড়ালেখা করে একটা বেনিফিট আসলে ভালো হয় । সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।একটা রুজির যেন ব্যবস্থা হয়।তাহলে হয়তো সংসারটা এগিয়ে যাবে। এদিকে বাবুল বিভিন্ন জায়গায় ট্রাই করে কোন জায়গায় ভর্তি হতে পারছিল না। বাবুল ভাবল এইচএসসি পাশ করে তারপর কোথাও ভর্তি হবে । বাবুল তার বাবার সাথে কথা বলে নেয়। এমন সময় বাবুলের মা বলল আমাদের ঘরে একটা বউ আসা দরকার। সবাই বউ নিয়ে আসতেছে ।বাবুলের বাবা বলল ঠিক আছে বেশ তো দেখোনা। তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
বাবুল বাবা-মার কথা কিছু মনে না করে মাঠে চলে যায়। মাঠ থেকে এসেই পরের দিন সকালে বাবুলের পাশের গ্রামে কলেজে ভর্তি হয়ে আসে। কলেজে স্যারের বাবুলকে অনেক ভালোবাসে কারণ বাবুল ভালোবাসা মতো ছেলে ছিল। এমনকি মেধাবী সবার সাথে ভালো ব্যবহার করত স্যারদের সাথে এমন ভাবে মিশে গিয়েছিল সবাই না ভালবেসে পারে না । এদিকে বাবুল মিয়ার দাদা বাবুল মিয়াকে দেখে বলে। বাবুল তোকে আমরা বিয়ে করতে চাই। বাবুল বলল দাদা এখন না আমি আগে এইচএসসি পাস করি । তারপর তোমরা যেটা খুশি সেটা করো ।ঠিকই তো বলেছে আগে পাস কর তারপর দেখা যাবে। দেখতে দেখতে বাবুল মিয়া এইচএসসি পাশ করে ফেলে।
বাবুল মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষা দেয়। কিন্তু কোন লাভ হয় না তাই সে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যায় । আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেহেতু খরচ এতো বেশি বাবুলের জানা ছিল না। আর যে খরচ দেওয়ার মতো বাবুলের বাবার সামর্থ ছিলনা। গ্রামে একটা প্রচলিত রীতি ছিল । কোন দরিদ্র ছেলে যদি পড়াশোনা না করাতে পারে ।তাহলে ধনীর দুলালী বিয়ে করে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া কিছু টাকা দেয় যার কারণে তার পড়াশোনা হয়ে যায়। পরবর্তীতে শোধ করে দিতে পারে। বাবুলের বিয়ের জন্য একটা মেয়ে দেখে। মেয়েদের অবস্থা অনেক ভালো । ছেলের পড়াশোনা করার কোন সমস্যা হবেনা মেয়ের বাবা বললো । আমরা পড়াশোনা করাব। পড়াশোনা শেষে আমাদের টাকা ফেরত দিয়ে দিবে সমস্যা নাই। এদিকে বাবুলের মা-বাবা দাদা সবাই রাজি হয়ে যায় । এমনকি বাবুলকে যে মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়। মেয়েটার নাম সীমা মেয়েটা দেখতে অনেক ভদ্র যেমন ফর্সা কথাবার্তা চালচলন ভালো। সীমা তার বাবাকে বলবো বাবা আমি বাবুলের সাথে কথা বলতে চাই। সীমার বাবা বলল ঠিক আছে বলো । তখন সীমা তাদের বাড়ি থেকে একটু সামনে নিয়ে গেল বাবুলকে। সীমা বাবুল কে বলল আপনার কি কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে । বাবুল বলল না আমার কোন সম্পর্ক নেই। তখন সীমা বলল আমি জানিনা আছে কিনা। বিয়ের পর আমাকে ভালবাসবে অন্য কাউকে নয়। আর থাকলেও আমাকে বিয়ে করবে না। আমি যাকে বিয়ে করবো সে শুধু আমার থাকবে অন্য কারো না । বাবুল বলল না ঠিক বলছেন এসব কিছু আমার নেই। বিয়ের পর যাকে আমি স্ত্রী হিসেবে পাবো তাকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসবো।
সীমা ও বাবুলের কথা শেষ হওয়ার পর যখন বাড়িতে আসে। তখন মা-বাবা বলে সীমাকে । সীমা কি ব্যাপার কি বুঝলি সীমা বলল মা ঠিক আছে। আমি এই ছেলেকে বিয়ে করবো । সীমার মা, বাবা কে বলে সমস্যা নেই বিয়ের তারিখ ঠিক করেন।তাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে যায় । এমনকি সীমা বাবুলের বিয়ে হয়। বাবুলের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার খরচ হয়ে যায়। ভালোই চলছিল বাবুলের লেখাপড়া। দুই পরিবারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক। এভাবে দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে সীমার বাবা বাবুলকে দেখতে পায় না। বাবুল তার বাবা-মাকে বিষয়গুলো খুলে বলে । তখন বাবুল যতদূর সম্ভব শ্বশুরবাড়ি সাথে মানিয়ে নিয়ে চলার চেষ্টা করে‌। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয় না বরং তার উপর নির্যাতন করতে থাকে। অনেক অপমান অপদস্থ করে। আসলেই কি কারণে এরকম করছে বাবুল বুঝতে পারে না । যাইহোক অনেক ভালোবাসে সীমা বাবুলকে বলার মত ভাষা নেই । বাবুলকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না সীমা। সিমা বাবুলের কাছে এসে বলে , আমার বাবা কিছুদিন আগে ব্যবসায় প্রচুর টাকা লস খেয়েছে। যার কারণে তোমাকে টাকা পয়সা দিবে না । টাকাপয়সা না দেওয়ার জন্য এসব করছে বাবা। বাবুলের কে টাকা দেওয়া লাগবে না বিদায় ঝামেলা সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা চলে আসে। পরীক্ষার ফি ও আগের মাসের বকেয়া জমা হয়ে গেছে। বাবা-মা কিছু জমি বিক্রি করে টাকা পয়সা দেয়। তাই দিয়ে লেখাপড়া শেষ করে। এরই মধ্যে শেষ করার পর সীমার বাবা বলে মানুষের কাছে আমার মেয়ে কে বাবুল এখন পছন্দ করেনা। এখন পড়াশোনা শেষ হয়ে গেছে আমাকে চিনে না ।তারপর একপর্যায়ে সীমাকে বাবুল, তার বাড়ীতে নিয়ে আসে।
এমন কি বাবুল চাকরি করতে থাকেন । সীমার বাবা অনেক টাকা দাবি করে বাবুলের কাছে। তুমি এখন চাকরি করো আমাকে প্রতিমাসে টাকা দিতে হবে ।তা না হলে আমার মেয়ে তোমাকে দিবো না ‌। এরকম নানান অজুহাত দেখিয়ে তাকে অপমান অপদস্ত করে। একপর্যায়ে সীমাকে বাবা মা নিয়ে চলে যায়। এদিকে বাবুলের সংসারটা ভালোই চলছিল। ছোট ভাইটা বড় হয়েছে পড়াশোনা করতেছে ভার্সিটিতে। সীমাকে ছেড়ে দিতে সংসার থেকে অনেক টাকা নষ্ট হয়েছে। এখন তো অনেক জমি নষ্ট করে ফেলেছে বাবুলের বাবা বাবুলের জন্য। সংসারে ঋণ হয়ে গেছে। সংসারের দেনা ততটা শোধ হয়নি । ছোট ভাইটা বড় হয়ে গেল তখন যতবারই বাবুল ঈদে বাড়িতে এসেছে কোন বার ভালোভাবে ঈদ করতে পারিনি । সব সময় বাবা-মার কাছ থেকে গালি ছোট ভাই এর গালি কেউ দেখতে পারতো না। শুধু বাবুলকে ভালোবাসতো না ভালোবাসতো বাবুলের টাকাকে । টাকা দিলে সংসার খুশি না দিল বাড়িতে সবসময় বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকত। এসব বাবুলের ভালো লাগতো না । আমি যা রোজগার করছি তা তো সবগুলোই দিয়ে দিচ্ছি ।আমার জন্য কিছু রেখে দিচ্ছি না। এত দেওয়ার পরও কেন আমার উপর এত নির্যাতন । মনের দুঃখে বাবুল মাঝে মাঝে বাড়িতে যেতো না। বাবুলের সংসারের সমস্ত ঋণ শোধ হয়ে গিয়েছিল ।তার পরও বাবুলকে টাকা দিলে ভালোবাসতো না দিলে বাসতো না । বাবুল এখন আর বাড়িতে যায়না। বাবুল বাড়িতে না যাওয়াতে তাদের কিছু যায় আসে না। তাদের টাকা হলে চলে। নিজেকে এভাবেই চালাতে থাকে বাবুল। বাবুল এর জীবনে শেষ পরিণতি কি কোথায় যাবে তা জানা নাই। এদিকে বউ বাবা-মা ভাই-বোন সবাইকে ছেড়ে বাবুল নিঃস্ব হয়ে গেছে । একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জব করতেছে তবু তার মনে শান্তি নেই। বাবুল মনে মনে চিন্তা করে হয়তো বিধাতা তার কপালে সুখ রাখে নাই । হয়তো এটাই আমার জীবন আমার নিয়তি, এই বলে বাবুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। বাবুর মনে মনে চিন্তা করে । সংসারে কত ছেলেতো কোটি কোটি টাকার নষ্ট করে । কই তাদের তো এমন অবস্থা হয় না ।সত্যি কি আমি তাদের সন্তান নাকি তারা আমাকে ছোটবেলা অন্য কারো কাছ থেকে নিয়েছে। বাবুল কথাগুলো ভাবে আর চোখের পানি ফেলতে থাকে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৩৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/০৫/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast