www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একদিন সকাল বেলায়

একদিন সকাল বেলায়
মোঃ বুলবুল হোসেন
তারিখঃ ২৯-০৩-২০২২ ইং

সারাদিন অফিস শেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে আর ভালো লাগে না। তাই ভাবলাম কোথাও একটু ঘুরে আসা যায়। এদিকে অফিসে তেমন একটা কাজ নেই। স্যার কে বলে আমরা কয়েকজন মিলে নদীর তীরে ঘুরতে যাব। পানি দেখাও হবে মনটা ভালো হবে। কয়েকজন মিলে অটোতে উঠে রওনা দিয়ে দিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর হাসান বলল ভাইয়া কিছু বাদাম নেওয়া যায় ।এমনি আর ভালো লাগেনা আমি বললাম ঠিক আছে। বাদাম নিয়ে আসলো আমরা খেতে খেতে এগুতে থাকলাম। আমি অটো ড্রাইভার এর পাশে বসে আছি। এমন সময় অটো ড্রাইভার বলল ভাইয়া জানেন কালকে কি হয়েছে। আমি বললাম কি হয়েছে অটো ড্রাইভার বলল। ভাইয়া আমি যখন এই রাস্তায় অটো চালাচ্ছি। একটি লোক এসে আমাকে বলল ভাইয়া নদীর ঘাটে যাবেন । আমি বললাম যাব। লোকটিকে দেখতে খাটো বয়স আমাদের মতই হবে। আর লোকটার সাথে একটা মেয়ে আর একটা ছোট বাচ্চা আছে । আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি বিয়ে করেছেন। লোকটি বলল আমি তো বিয়েই করি নাই। তখন আমি বললাম তাহলে আপনার সাথে ওই মেয়েটাকে। তখন উনি বলল এটা আমার গার্লফ্রেন্ড মেয়েটির দিকে তাকালাম দেখি মেয়েটির মুখ কালো হয়ে গেছে। মেয়েটির সাথে বাচ্চা দেখে আমার অনেক খারাপ লাগলো। যে একটা বাচ্চা সহ এই সমস্ত কাজ করে বেড়ায়। আমি আর কিছু বললাম না । তখন চুপিচুপি লোকটি আমাকে বলল ভাইয়া এই নদীর আশেপাশে কোন ভালো হোটেল আছে ‌। আমি বললাম কেন ভাইয়া ভালো হোটেল দেখে কি হবে । তখন লোকটি বলল বোঝেন না দুজন একটু কথাবার্তা হবে। আমি বললাম না ভাই আশেপাশে কোন হোটেল নেই। আপনি ঘুরতে হলে এই জায়গায় দিয়ে ঘুরতে হবে ।

যদি একটা হোটেল ছিল। আমি ঠিকানা দেয়নি হয়তো বা মেয়ের সর্বনাশ হয়ে যেতো। যাই হোক আমি লোকটাকে নামিয়ে দিলাম । এক সময় আমাদের অটোটা নদীর তীরে এসে পৌঁছে যায়। কামাল বললো আমরা নদীর ওপারে যাবো । সবাই বললো কামালের ইচ্ছাটা পূরণ হোক। তাই যেমন ভাবা তেমন কাজ নদীর ওপারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম। ফেরিতে উঠে নদী পার হতে থাকি। এমন সময় বিপদ থেকে একটি লঞ্চ আমাদের সামনে দিয়ে ছুটে চলে যায়। কামাল বললো এই লঞ্চে উঠে আমাদের দেশে যেতে হয় । কত বড় লঞ্চ সবাই লঞ্চের দিকে তাকিয়ে ছিল। সেটা দেখার মত ছিল । কথা বলতে বলতে একসময় অপরপ্রান্তে এসে পড়ে ফেরিটি। অপর প্রান্তে তেমন দেখার মতো কিছু ছিল না। কয়েকটা ইটভাটা ছিল। ইটভাটার মাঝখান দিয়ে আমরা হাটা শুরু করে দেই। শ্রমিকরা ইট তৈরি করার কাজে ব্যস্ত আছে। সবাই মিলে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে তাদের কাজগুলো দেখলাম। সেখান থেকে সামনে এগোতে থাকি। নদীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। নদীর কল কল শব্দ মৃদু বাতাস মনটা ভাল হয়ে গেল সবার। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখি অনেকগুলো লঞ্চ আছে। সে গুলো দিয়ে বালি আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয় । লঞ্চ গুলো দেখে মতিয়ার বলল ভাইয়া আমরা এই লঞ্চে উঠব । কি আর করার মতিয়ারের আশা পূর্ণ করতে হবে । তাই সবাই মিলে লঞ্চ ওঠার জন্য প্রস্তুতি নিলাম । লোহার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে হবে। লঞ্চে খালি ছিল । যার কারণে লঞ্চটি অনেক উঁচু মনে হচ্ছে। একে একে সবাই উঠে পড়ে। আমি যখন উঠি একটু ভয় ভয় লাগছিলো।

অনেক চেষ্টা করে আল্লাহর রহমতে উঠে পড়ি ।লঞ্চের চারপাশে ঘুরে দেখলাম। লঞ্চের মাঝিকে দেখতে পেলাম। সে আমাদের দেখে বলল আপনারা কোথায় থেকে এসেছেন । আমরা শহর থেকে এসেছি ।এ জায়গায় ঘুরতে ।তাই আমাদের একজনের আশা লঞ্চে উঠে দেখবে তাই উঠেছি । ও আচ্ছা ভালো করেছেন। লোকটির সাথে গল্প করতে করতে লোকটি বলে উঠলো। আপনারা যখন এসেছে তাহলে শুনেন না লঞ্চের অভিজ্ঞতা। প্রায় সাত বছর যাবত পানিতেই বসবাস করে আসছি। একদিন ভোর বেলায় বালি ভর্তি লঞ্চ নিয়ে আমার বাড়ির দিকে রওনা দেই।সব ঠিকঠাকই ছিলো। যখন মেঘনা নদীতে এসে পড়লো আমাদের লঞ্চ টি। তখন দেখি কালো মেঘে আকাশটা ছেয়ে গেছে। হঠাৎ নদী উত্তাল হয়ে যাচ্ছে। আমি ভাবলাম এমনিতে ও মাঝে মাঝে এমন হয়। কি আর হবে । তাই নির্ভয়ে এগোতে থাকি। কিছুদুর যাওয়ার পর নদীতে ঝড় উঠে যায়। আমাদের লঞ্চ ভর্তি ছিল তাই অনেক সময় পানি লঞ্চের উপর দিয়ে ঘুরিয়ে চলে যায়। লঞ্চের হালটা ঠিকমতো ধরে কোনরকম এগোতে থাকি । বাতাসের অনুকূলে চলতে থাকি। যেদিকে যায় যাক তবু যদি রক্ষা পাওয়া যায়। পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি কয়েকটা লঞ্চ ঢেউ এর সাথে দোল খাচ্ছে। আমরাও এগুতে থাকি সামনের দিকে। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আবার পিছনে তাকিয়ে দেখি লঞ্চ তলিয়ে যাচ্ছে।

আমার বুকের ভিতর কেমন যেন করছে। আমি ভাবলাম হয়তো আমি আর বাড়িতে ফিরতে পারব না। আমাদের লঞ্চে যে কয়জন ছিল সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আল্লাহ কে ডাকতে থাকে। যাইহোক অনেক চেষ্টা করে, আল্লাহর রহমতে বেঁচে যাই। আমরা খেয়াল করলাম যে আমাদের নৌকাটা আমাদের গন্তব্য ছেড়ে প্রায় একশত কিলোমিটার দূরে চলে এসেছে। সবাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি।আল্লাহ আপনি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন । আর যাদের লঞ্চ গুলো ডুবে গেছে। তাদের জন্য কষ্ট লাগলো। তারাও তো আমার মতে কোন না কোন মায়ের ছেলে। লোকটি বলছে আর চোখ দিয়ে পানি পরছে। আমি বললাম বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। লোকটি বলল সেই সকালের কথা মনে হলে দম বন্ধ হয়ে আসে ।কি ভয়ঙ্কর ছিল না সে সময় ‌। আমরা সকলেই লোকটির কাছ থেকে বিদায় নিলাম। আমাদের চলে আসতে হবে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। তাই আর থাকা যাবে না। লঞ্চ থেকে নেমে আমরা সবাই হাটা শুরু করে দেই।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৬৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০৩/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast