বউ মারা আবুলের স্বভাব
বউ মারা আবুলের স্বভাব
মোঃ বুলবুল হোসেন
তারিখঃ ১৩-০৩-২০২২ ইং
অনেকদিন আগেকার কথা । গ্রামের মানুষ তখন সহজ-সরল ছিলো। যেমন সহজ সরল ছিলো তেমনি কিছু মানুষ বাঁকা ও ছিলো। ততটা শিক্ষার হার ছিল না।
হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষিত লোক পাওয়া যেতো।
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই শুনতে পেলাম। পাশের বাড়ির কান্নাকাটি শব্দ দৌড়ে গিয়ে দেখলাম। আবুল ভাই তার বউ কে মারধর করছে । খোঁজ নিয়ে জানা গেলো। আবুল ভাই মাঝে মাঝেই বউকে এ ভাবে মারে । অনেকেই বলে বউ মারা তার পেশা। এর আগেও আবুল ভাই একটি বিয়ে করেছিলো বউকে মারতে মারতে মেরে ফেলেছে। ঘটনাটি শুনলাম পাশের পলাশ চাচার কাছ থেকে। এই আবুল তার আগের বউ কে এইভাবে মারতে মারতে একদিন ফাঁস দিয়ে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছিলো। তার জন্য আবুলের বাবা চার বিঘা জমি বিক্রি করে। গ্রামে সালিশ করে বিষয়টা ধামাচাপা দেয় । এইরকম কুলাঙ্গার ছেলে মানুষের জেনো আর না হয়। কাকা কথাগুলো বলতেছে আর আফসোস করতেছে । গ্রামের লোকজন ও আবুলকে খুব একটা ভালোবাসে না তার ক্ষমতা অর্থবিত্ত কে ভয় পায় । এই কারণে মানুষ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। এমন সময় আবুলের বাবা ঘর থেকে দৌড়ে এসে আবুলকে বলে। তুই কি গ্রামে মান-সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে দিবিনা।
প্রতিদিন মেয়েটা কে এভাবে মারলে সে তো মারা যাবে । আবুল কয় কেন মারা যাবে। বউ কে বললাম তুই তোর বাপের বাড়ি থেকে কিছু টাকা এনে দে । আমি বিদেশ চলে যাবো। তুমি তো আমার বিদেশ পাঠাবে না । এদিকে আবুলের বাপ বলে আমার কি সম্পদের অভাব আছে। তুই বিদেশ চলে যাবি। আমার যে সম্পত্তি আছে এগুলো কে দেখাশুনা করবে। কে খাবে এসব আমি জানিনা । আমার বিদেশ যেতে মন চাইছে আমি বিদেশ যাবো। তুমি টাকা না দিলে বউ কে এরকম প্রতিদিন মারতেই থাকবো। তা না হলে বউয়ের বাপের বাড়ি থেকে এনে দিবে। তখন আবুলের বড় কাকা রহিম এসে আবুলকে বলে তুই থাম । দেখছি আমি কি করা যায় । আমি বাড়িতে আলোচনা করি তারপর দেখি তোকে বিদেশ পাঠানো যায় কিনা। এই বলে আবুলকে শান্ত করে। এবং আবুলের বউকে বলে মা তুমি ঘরে যাও। আমি দেখতেছি বিষয়টা নিয়ে। তখন রহিম কাকা আবুলের বাপ কে বলে তুই ছেলেটারে বিদেশ পাঠিয়ে দে। তা না হলে প্রতিদিন বউ মা কে এভাবে মারলে আমাদের মান সম্মান থাকবে না । আর এলাকায় মুখ দেখাতে পারবো না । একবার তো একটা মেয়েকে মেরে ফেলেছে। দিয়ে দে বিদেশ ওই খানকার পরিবেশে ঠেলা ধাক্কা খেয়ে কিছু শিখে আসুক। আবুল এর বাবা তার বড় ভাই রহিমের কথা শুনে রাজি হয়ে যায়। বলে ঠিক আছে ভাইয়া তুমি যেটা ভালো মনে করো তারপর আবুলকে তার বাবা বিদেশ পাঠিয়ে দেয়।
বিদেশে যাওয়ার এক মাস পরে একটা চিঠি দেয় । তখনকার যুগে মোবাইল ফোনের ব্যবহার ছিল না ।
মাসে একটা দুটা চিঠি আসত তার প্রতি উত্তরে দেশে থেকেও একটা চিঠি বিদেশ পাঠানো হতো। একবার আবুল ছয় মাস চিঠি দেয় না। বাড়িতে হঠাৎ একটা চিঠি আসে। আবুল মারা গেছে এদিকে তো বাড়িতে সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আবুল বিদেশে মারা গেলে আবুলের বাবা সুকে পাথর হয়ে গেছে । আবুলের দুটি ছেলে রেখে বিদেশ চলে গিয়েছিলো বউ মা বলে আমার দুটি ছেলেকে নিয়েই কাটিয়ে দেবো সারা জীবন। আমি আর এই সংসার ছেড়ে চলে যাবো না। কিছু দিনের মধ্যে আবুলের বাবা একটি চিঠি পাঠায় আবুলের বন্ধুদের কাছে। যে তার ছেলের লাশটা যেনো দেশে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু চিঠির প্রতি উত্তর আর আসে না । প্রায় তিন বছর পরে হঠাৎ একদিন গাড়ি এসে রাস্তার মোড়ে থামে । কেউ একজন বলে কি ব্যাপার আবুল গাড়ী থেকে নামছে। সবাই তো অবাক যে তুই মরিস নি । তুই চিঠি দিয়েছিলি যে মারা গেছো। চিঠি তো আমি পাঠাই নাই। আবুল গ্রামের লোকদের কে বললো এব্যাপারে আপনাদেরকে পরে বুঝিয়ে বলবো। এরপর যখন আবুল বাড়িতে চলে আসে। আবুলের বাবা আবুল কে জড়িয়ে ধরে । আর বলতে থাকে বাবা তুই ফিরে এসেছে আমি আর কিছু চাই না আল্লাহর কাছে।
আবুল তার বাবার পায়ে ধরে মাফ চায় ।বলে বাবা আমাকে মাফ করে দেন। এ ধরনের ভুল জীবনে আর করব না। আমি বুঝেছি বাহিরের জগৎটা কি । বাহিরের জগৎটা কতোটা কঠিন।অনেক কষ্টের দিন কাটিয়েছি। কতো দিন না খেয়ে থাকছি বলে বোঝাতে পারবো না । তখন শুধু আপনাদের কাছে পেতে ইচ্ছে করছে । ওই দেশের পুলিশের সহায়তায় কোনরকম প্রাণ নিয়ে দেশে আসতে পেরেছি।আসলে বাবা-মা'র চেয়ে আপন এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। আপনাদের উপর আমি অনেক অত্যাচার করেছি। আমার সন্তানের প্রতি অবহেলা করেছি ।ভবিষ্যতে আমি আর এ ধরনের কার্যকলাপ করবো না। আবুলের বাবা আবুলের কথা শুনে খুশি হয়ে যায়।এরপর থেকে আবুল তার বউয়ের সাথে কখনো খারাপ আচরণ করেনি। আবুলের বউ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে । আমার স্বামীকে হেদায়েত দান করছেন। আপনার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করছি। আবুল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে থাকে। মুরুব্বীরা এমনি বলেন না। একজন খারাপ মানুষ যদি ভাল হয়। তার চাইতে ভালো এই পৃথিবীতে আর কেউ করতে পারে না ।তার জ্বলন্ত প্রমাণ আবুল। গ্রামের সকলেই আবুলের প্রশংসা করতে থাকে তাকে ভালবাসে। সবার অন্তরে যায়গা করে নেয়।
মোঃ বুলবুল হোসেন
তারিখঃ ১৩-০৩-২০২২ ইং
অনেকদিন আগেকার কথা । গ্রামের মানুষ তখন সহজ-সরল ছিলো। যেমন সহজ সরল ছিলো তেমনি কিছু মানুষ বাঁকা ও ছিলো। ততটা শিক্ষার হার ছিল না।
হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষিত লোক পাওয়া যেতো।
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই শুনতে পেলাম। পাশের বাড়ির কান্নাকাটি শব্দ দৌড়ে গিয়ে দেখলাম। আবুল ভাই তার বউ কে মারধর করছে । খোঁজ নিয়ে জানা গেলো। আবুল ভাই মাঝে মাঝেই বউকে এ ভাবে মারে । অনেকেই বলে বউ মারা তার পেশা। এর আগেও আবুল ভাই একটি বিয়ে করেছিলো বউকে মারতে মারতে মেরে ফেলেছে। ঘটনাটি শুনলাম পাশের পলাশ চাচার কাছ থেকে। এই আবুল তার আগের বউ কে এইভাবে মারতে মারতে একদিন ফাঁস দিয়ে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছিলো। তার জন্য আবুলের বাবা চার বিঘা জমি বিক্রি করে। গ্রামে সালিশ করে বিষয়টা ধামাচাপা দেয় । এইরকম কুলাঙ্গার ছেলে মানুষের জেনো আর না হয়। কাকা কথাগুলো বলতেছে আর আফসোস করতেছে । গ্রামের লোকজন ও আবুলকে খুব একটা ভালোবাসে না তার ক্ষমতা অর্থবিত্ত কে ভয় পায় । এই কারণে মানুষ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। এমন সময় আবুলের বাবা ঘর থেকে দৌড়ে এসে আবুলকে বলে। তুই কি গ্রামে মান-সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে দিবিনা।
প্রতিদিন মেয়েটা কে এভাবে মারলে সে তো মারা যাবে । আবুল কয় কেন মারা যাবে। বউ কে বললাম তুই তোর বাপের বাড়ি থেকে কিছু টাকা এনে দে । আমি বিদেশ চলে যাবো। তুমি তো আমার বিদেশ পাঠাবে না । এদিকে আবুলের বাপ বলে আমার কি সম্পদের অভাব আছে। তুই বিদেশ চলে যাবি। আমার যে সম্পত্তি আছে এগুলো কে দেখাশুনা করবে। কে খাবে এসব আমি জানিনা । আমার বিদেশ যেতে মন চাইছে আমি বিদেশ যাবো। তুমি টাকা না দিলে বউ কে এরকম প্রতিদিন মারতেই থাকবো। তা না হলে বউয়ের বাপের বাড়ি থেকে এনে দিবে। তখন আবুলের বড় কাকা রহিম এসে আবুলকে বলে তুই থাম । দেখছি আমি কি করা যায় । আমি বাড়িতে আলোচনা করি তারপর দেখি তোকে বিদেশ পাঠানো যায় কিনা। এই বলে আবুলকে শান্ত করে। এবং আবুলের বউকে বলে মা তুমি ঘরে যাও। আমি দেখতেছি বিষয়টা নিয়ে। তখন রহিম কাকা আবুলের বাপ কে বলে তুই ছেলেটারে বিদেশ পাঠিয়ে দে। তা না হলে প্রতিদিন বউ মা কে এভাবে মারলে আমাদের মান সম্মান থাকবে না । আর এলাকায় মুখ দেখাতে পারবো না । একবার তো একটা মেয়েকে মেরে ফেলেছে। দিয়ে দে বিদেশ ওই খানকার পরিবেশে ঠেলা ধাক্কা খেয়ে কিছু শিখে আসুক। আবুল এর বাবা তার বড় ভাই রহিমের কথা শুনে রাজি হয়ে যায়। বলে ঠিক আছে ভাইয়া তুমি যেটা ভালো মনে করো তারপর আবুলকে তার বাবা বিদেশ পাঠিয়ে দেয়।
বিদেশে যাওয়ার এক মাস পরে একটা চিঠি দেয় । তখনকার যুগে মোবাইল ফোনের ব্যবহার ছিল না ।
মাসে একটা দুটা চিঠি আসত তার প্রতি উত্তরে দেশে থেকেও একটা চিঠি বিদেশ পাঠানো হতো। একবার আবুল ছয় মাস চিঠি দেয় না। বাড়িতে হঠাৎ একটা চিঠি আসে। আবুল মারা গেছে এদিকে তো বাড়িতে সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আবুল বিদেশে মারা গেলে আবুলের বাবা সুকে পাথর হয়ে গেছে । আবুলের দুটি ছেলে রেখে বিদেশ চলে গিয়েছিলো বউ মা বলে আমার দুটি ছেলেকে নিয়েই কাটিয়ে দেবো সারা জীবন। আমি আর এই সংসার ছেড়ে চলে যাবো না। কিছু দিনের মধ্যে আবুলের বাবা একটি চিঠি পাঠায় আবুলের বন্ধুদের কাছে। যে তার ছেলের লাশটা যেনো দেশে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু চিঠির প্রতি উত্তর আর আসে না । প্রায় তিন বছর পরে হঠাৎ একদিন গাড়ি এসে রাস্তার মোড়ে থামে । কেউ একজন বলে কি ব্যাপার আবুল গাড়ী থেকে নামছে। সবাই তো অবাক যে তুই মরিস নি । তুই চিঠি দিয়েছিলি যে মারা গেছো। চিঠি তো আমি পাঠাই নাই। আবুল গ্রামের লোকদের কে বললো এব্যাপারে আপনাদেরকে পরে বুঝিয়ে বলবো। এরপর যখন আবুল বাড়িতে চলে আসে। আবুলের বাবা আবুল কে জড়িয়ে ধরে । আর বলতে থাকে বাবা তুই ফিরে এসেছে আমি আর কিছু চাই না আল্লাহর কাছে।
আবুল তার বাবার পায়ে ধরে মাফ চায় ।বলে বাবা আমাকে মাফ করে দেন। এ ধরনের ভুল জীবনে আর করব না। আমি বুঝেছি বাহিরের জগৎটা কি । বাহিরের জগৎটা কতোটা কঠিন।অনেক কষ্টের দিন কাটিয়েছি। কতো দিন না খেয়ে থাকছি বলে বোঝাতে পারবো না । তখন শুধু আপনাদের কাছে পেতে ইচ্ছে করছে । ওই দেশের পুলিশের সহায়তায় কোনরকম প্রাণ নিয়ে দেশে আসতে পেরেছি।আসলে বাবা-মা'র চেয়ে আপন এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। আপনাদের উপর আমি অনেক অত্যাচার করেছি। আমার সন্তানের প্রতি অবহেলা করেছি ।ভবিষ্যতে আমি আর এ ধরনের কার্যকলাপ করবো না। আবুলের বাবা আবুলের কথা শুনে খুশি হয়ে যায়।এরপর থেকে আবুল তার বউয়ের সাথে কখনো খারাপ আচরণ করেনি। আবুলের বউ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে । আমার স্বামীকে হেদায়েত দান করছেন। আপনার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করছি। আবুল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে থাকে। মুরুব্বীরা এমনি বলেন না। একজন খারাপ মানুষ যদি ভাল হয়। তার চাইতে ভালো এই পৃথিবীতে আর কেউ করতে পারে না ।তার জ্বলন্ত প্রমাণ আবুল। গ্রামের সকলেই আবুলের প্রশংসা করতে থাকে তাকে ভালবাসে। সবার অন্তরে যায়গা করে নেয়।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোঃ আমিনুল ইসলাম মিঠু ২১/০৩/২০২২বেশ ভাল
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৪/০৩/২০২২সামাজিক চিত্র।
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৪/০৩/২০২২বেশ ভালো