www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্মৃতির পাতা

স্মৃতির পাতা
মোঃ বুলবুল হোসেন
তারিখঃ ০৪-০৩-২০২২ ইং

প্রচন্ড গরম দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে বাড়ির পশ্চিম পাশে বাঁশ বাগানের বসে আছি। গাছের কোনো পাতাও নড়ে না। নিরব পরিবেশ মনে হচ্ছে উত্তপ্ত মরুভূমি। কোথাও যদি ঠাণ্ডা বাতাস থাকে তাহলে বাঁশ গাছের নিচে বসলে শরীরটা এমনি শীতল হয়ে যায় ‌। আল্লাহ তায়ালার অপরূপ সৃষ্টি। বাঁশ গাছের নিচে বসে দেখছি। কৃষক মাঠে কাজ করতেছে। এদিকে মাঝে মাঝে মেঘের ভেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। যখন মেঘের ভেলা কৃষকের মাথার উপরে আসে কিছু খনের জন্য। কৃষক তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। আর বলে হে আল্লাহ আর কিছুক্ষণ যদি মেঘের ভেলা থাকতো। এরকম দেখে চোখের পানি আটকাতে পারলাম না। কারণ আমার বাবা একজন কৃষক, মাঠে যারা কাজ করছে এদের মধ্যে কেউ আমার ভাই কেউ চাচা । তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কতো পরিশ্রম না করে আর এই পরিশ্রমের অর্থ আমাদের হাতে তুলে দেয়। আমরা যেনো ভালো মানুষ হই তাদের মুখ উজ্জ্বল রাখতে পারি। যতো পরিশ্রমী হোক না কেনো দিন শেষে হাসি মাখা মুখ দেখা যায় তাদের।
কোন হিংসা নেই। মনের মাঝে কোনো ক্লান্তি নেই। শুধু পরিবারের জন্য অগাধ ভালোবাসা। পরিবারের জন্য নিজের জীবন দিতেও দ্বিধাবোধ করেনা। এরকম মায়ার টান পৃথিবীর কোথাও আছে বলে আমার মনে হয় না। যা আমার এই বাংলাতে পাই। আজ শুধু আমার একটি কথাই বলতে ইচ্ছে করছে বাবা জানো আমি আজ গর্ববোধ করছি আমি কৃষকের ছেলে বলে। তোমার এই ভালোবাসা পৃথিবীর কোথাও পাবো বলে আমার মনে হয় না । সত্যি বাবা তুমি আমার সুপারম্যান। হঠাৎ মা এসে ডেকে বলল বাবা তুমি তোমার বাবা জন্য মাঠে পানি নিয়ে যাও। মার কথা শুনে বললাম ঠিক আছে মা আমি যাচ্ছি। মা খুশি হয়ে বলল ঠিক আছে।


আমি পানি নিয়ে বাবার কাছে যেতে একটি হাসির লক্ষ করলাম। বাবা আমাকে ফসলের জমি দেখে বললো আমাদের ফসলের ক্ষেত কতো সুন্দর হয়েছে। তাই না বাবা আমি বললাম ভালো হয়েছে। এবার মনে হয় বেশী ফসল উৎপাদন হবে আমাদের জমিতে । বাবা পানি খেয়ে বললো তুমি চলে যাও । এই গরমের মাঝে তুমি থাকতে পারবে না আমি বললাম না বাবা ঠিক আছে। আর কিছুক্ষণ না হয় তোমার সাথে থাকি। আমি তো আর রোজ আসি না। তবুও বাবার কাছে থাকতে দিল না তুমি চলে যাও। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ দিয়ে হাটতেছি আর চারপাশের পরিবেশ গুলো উপভোগ করতেছি। কতো সুন্দরী না দেখতে মাঠে ফসল দেখে মন ভরে যায়। এমন সময় হঠাৎ আমার মোবাইলে রিংটোন বেজে ওঠে। রিসিভ করতেই রহিম বলে উঠল দোস্ত কেমন আছিস শুনলাম বাড়িতে এসেছো। কতদিন হলো বিলের ধারে যাওয়া হয়না। চল বিকেল বেলায় বিলের ধারে ঘুরতে যাবো।আমি না বলতে পারলাম না। কতদিন হল বিলের ধারে যাইনি সেই ছোট থাকতে বন্ধুদের সাথে গরু মাঠে চরাতাম । কত আড্ডা হতো বন্ধুদের সাথে মনে হলে বারবার ছুটে যেতে ইচ্ছে করে। আমি রহিমকে বলে দিলাম দোস্ত ঠিক মতো চলে আসিস আমি যাবো। বিকেলবেলায় রহিমকে নিয়ে যখন বিলের দিকে রওনা দিলাম। হালকা মৃদু বাতাস বাতাসে দোল খাচ্ছে মাঠে ফসলের জমি। মনের মাঝে একটা শিহরন জাগে। নিরব পরিবেশ মাঝে মধ্যে পাখিদের কিচিরমিচির উন্মুক্ত বাতাস কোন বিষাক্ত ধোঁয়া নেই। দুজনে গল্প করতে করতে চলে গেলাম বিলের মধ্যখানে। বিলের মাঝখানে পুকুরের মতো দেখতে । গ্রামের সবাই এগুলোকে পাগার বলে। পুকুর মতোই পার বাঁধাই করা আর এই পাগারের এক পাশে খোলা রাখা হয় । যাতে মাছ প্রবেশ করতে পারে।

পাগারে বড় বড় মাছ পাওয়া যায় । বোয়াল রুই-কাতলা আসল কথা কি বিলের মাছ খেতে স্বাদই আলাদা। এমন সময় রহিম বলে উঠল দোস্ত দেখ আমাদের সেই জায়গা যেখানে বসে ঘর বানিয়ে রুজ আমরা বসে থাকতাম। আর সবাই মিলে কতো আড্ডা হই হুল্ল করতাম । চল না ওখানে গিয়ে একটু বসি। জায়গায় যেতেই মনের মাঝে দোলা লাগে। আর ভাবি সেখানে বসে দিনের পর দিন পার করে দিতাম। আজ শুধু স্মৃতি এমন সময় রহিম বলল দোস্ত তোর মনে আছে।
একবার আমাদের গরু বিলের চোরাবালিতে পড়ে গিয়েছিল। আমি বললাম হ্যাঁ আমার সব মনে আছে। আমাদের বিলে অনেক জায়গায় চোরাবালি আছে। যে জায়গায় পড়ে গেলে তলিয়ে যায় ওঠা যায় না। যার গভীরতার কোন শেষ নেই । শুধু কাঁদা পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। সামনে এই জায়গায় তো পড়েছিল তারপর আমরা বন্ধুরা মিলে লাঠি কলাগাছ নিয়ে এসে গরুটাকে অনেক কষ্টে উঠেছিলাম। সবার মধ্যে একটা ভয় কাজ করছিল গরুটাকে মনে হয় আর বাঁচানো গেলোনা । যা হোক আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা শেষ পর্যন্ত গরুটাকে কাঁদা থেকে তুলতে পেরেছিলাম।
আর তোর মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল কান্নাকাটি করতে ছিলি সে কথা কি ভুলা যায় বল। রহিম আমি গল্প করতে করতে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ি ।দোস্ত আসলেই আমরা সেই দিনের কাছে ফিরে যেতে পারবো না। দোস্ত তোর মনে আছে একবার পাশের পাগারে মাছ ধরার সময় কি হয়েছিল আমার সাথে।

রহিম বললো মনে থাকবে না কেন আমার সব মনে আছে । তুই যখন মাছ ধরতে ছিলি, আমার ভালো লাগছিল কারণ তুই হাসিমুখে মাছগুলো ধরতে ছিলি। আর আমি দেখছিলাম হঠাৎ তুই মাছ ধরতে ধরতেই চোরা কাদার মধ্যে পড়ে গেলি আর আমার কান্না কে দেখে। সবাইকে ডেকে যখন বললাম তুই কাঁদা নিচে তলিয়ে যাচ্ছো। তখন তোর কাকা দৌড়ে এসে তোকে ওখান থেকে তুলে নিয়ে আসে। এ কথা কি ভুলা যায় বন্ধু । একবার ভাব যদি তোর কাকা না থাকতো তাহলে হয়তো তকে আর ফিরে পেতাম না । আল্লাহর অশেষ রহমতে তোকে সুস্থ অবস্থায় পেয়েছিলাম। তখন আমি রহিমকে বললাম । রহিম চল আর কতক্ষণ বসে থাকবো সামনের দিকে একটু হাটা হাটি করি'। এদিকে বেলা ডুবে যাবে । এমন সময়ে রহিম ক্ষেতের জমির দিকে তাকাতে বলল । আর বলল দোস্ত দেখ আগে এই জমিতে কতো বড় বোরো ধান হতো। এখন বোরো আবাদ হয় না ইরি হয় । এক মানুষ সমান লম্বা হতো। আমরা কানামাছি খেলতাম। আর এখন বোর ধান নাই বললেই চলে। ইরি ধানে ভরে গেছে। দুজনের মাঝে কথা চলছে আর সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আর রহিমের কথা কি বলব । মানুষ হিসাবে সে একজন ভাল মানুষ বলা যায়। এখন সরকারি চাকরি করে। গ্রামে সব সময় আসা হয়না তার। ছেলে মেয়ে কে নিয়ে তার সংসার ভালো চলছে । তাদের সংসারটা অনেক সুখেই কাটছে। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করলাম। আর বললাম দোস্ত তোর সাথে আবার কবে দেখা হবে জানি না ।তোর সাথে কাটানো স্মৃতি গুলো সারা জীবন মনে থাকবে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩২২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৩/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast