কিছু স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়
কিছু স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়
মোঃ বুলবুল হোসেন
কালিহাতী, টাঙ্গাইল।
রাসেল এর সংসারটা অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে চলছে। বাবা কৃষি কাজ করে। রাসেল বাবার সাথে কাজে সাহায্য করে। কাজ করে যা উপার্জন হয়। তা দিয়ে কোনরকম সংসার চলে । ইস্কুলের সময় হলে দৌড়ে আবার স্কুলে চলে যায়। রাসেলের মনে অনেক স্বপ্ন। সে ছোট থেকে স্বপ্ন দেখেছে একদিন সৈনিক হবে। দেশের স্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দিবে। এমন স্বপ্ন বুকে নিয়ে সে প্রতিদিন বাবার কাজে সাহায্য করছে ।আর স্কুলের দিকে ছুটে চলছে। স্কুলের মাস্টার রাসেলকে আদর করতো। কারণ রাসেলের পরিবার সম্পর্কে মাস্টার সব জানত। এত কাজ করার পরও ছেলেটা ভালো স্টুডেন্ট তার প্রশংসা না করে পারে না। রাসেল সংসার এতটাই অভাব এর ছিল। যে ভালো একটি জামা কেনার পয়সা ছিল না। একটি পুরানো জামা নিয়ে দিনের পর দিন স্কুলে যেতে হত। স্কুলের সকল বন্ধুরা টিফিনের সময় কিছু না কিছু খেত। রাসেল স্কুলের পিছনে কাঁঠাল গাছের নিচে বসে থাকতো। শত ইচ্ছা থাকলেও কোন কিছু খেতে পারতো না। কারণ রাসেলের কোনো টাকা ছিল না।
রাসেল এসব কোন কিছু মনে করত না। কারণ কতদিন যে না খেয়ে থেকেছে হিসাব করে বলা যায় না। রাসেল ভাবত হয়তো আমাদের এই অভাব একদিন কেটে যাবে। বিকেল বেলায় বইখাতা নিয়ে বাসায় আসে । বই-খাতা রেখে দৌড়ে ছুটে যেত মাঠে বাবার কাজে সাহায্য করার জন্য। রাসেল ইস্কুলের খরচ যোগাত অপরে জমিতে কাজ করে।
একদিন রাসেল ইস্কুলে বসে আছে। হঠাৎ মিনা ক্লাসে এসে বলল রাসেল তোমার অংক নোট গুলো আমাকে দিবে। আমি অংক করতে পারিনি আর তুমি যদি না দেও তাহলে স্যারের হাতে আমাকে মার খেতে হবে। তুমি কি চাও আমি স্যারের হাতে মার খাই। রাসেল মনে মনে ভাবল মেয়েটা এতগুলো কথা না বললেও পারত। এমনিতেই আমি দিয়ে দিতাম নোট। রাসেল বললো আচ্ছা ঠিক আছে ।মিনা আমার নোটগুলো তুমি নিয়ে নাও। রাসেলের এমন আন্তরিকতা দেখে মিনা খুশি হয়ে গেল। ঐ দিন মিনা অংক স্যারের হাত থেকে বেঁচে গেল। পরদিন ইস্কুলেতে রাসেল ক্লাসে বসে আছে।
এমন সময় রাসেল শুনতে পেল কে যেন তার নাম ধরে ডাকতেছে। পিছন ঘুরে দেখে মিনা । রাসেল বলল মিনা আমাকে ডাকছো কিছু বলবে। মিনা মাথা নেড়ে বলল জি কিছু বলবো আমার কাছে এসো বলি। এরপর রাসেল তার সিট থেকে উঠে মিনার কাছে গিয়ে বসল। মিনা বলল আচ্ছা তোমাদের সংসারে কে কে আছে। রাসেল বলল আমাদের সংসারে আমি আমার বাবা-মা দাদা-দাদি আছে। রাসেল তার পরিবারের সম্পর্কে সব কিছু খুলে বলবো মিনা কে। এরপর থেকে মিনা রাসেলকে সাহায্য করা শুরু করলো। রাসেলের যে কোনো সমস্যায় মিনা বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিত। এদিকে দেখতে দেখতে টেস্ট পরীক্ষা সামনে চলে আসে। টেস্ট পরীক্ষায় রাসেল আর মিনা ভালো রেজাল্ট করল। এবার ফরম ফিলাপ করতে হবে। রাসেলের সংসারে তো এত টাকা নেই যে ফর্ম ফিলাপ করতে পারবে। রাসেলের চাচাতো ভাইরের স্কুলের সভাপতি সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাই রাসেলের বাবা রাসেলকে নিয়ে তার ভাইয়ের কাছে যায়। রাসেলের ফ্যামিলির কথা তার ভাই ভালোভাবে জানে।
রাসেল ফরম ফিলাপের কিছু টাকা মওকুফের জন্য একটি দরখাস্ত লেখে। রাসেল তার বাবা ও চাচাতো ভাই কে সাথে করে স্কুলের দিকে রওনা দেয়। রাসেলের চাচাতো ভাই মাস্টারের কাছে বলার পর কিছু টাকা মাফ হয়ে যায়। রাসেলের বাবা কিছু টাকা সংগ্রহ করেছিল। সে টাকা রাসেলের চাচাতো ভাইয়ের কাছে দেয়। রাসেল এর চাচাতো ভাই হিসাব করে দেখে কিছুটা কম আছে। বাকি টাকাটা রাসেলের চাচাতো ভাই দিয়ে দেয়। রাসেল ফরম ফিলাপ করে আসে। রাসেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে যাই হোক শেষ পর্যন্ত ফরমফিলাপ করতে পারছি আল্লাহর অশেষ রহমতে। হে আল্লাহ আপনার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে আমি ফরম ফিলাপ করতে পারছি। এসএসসি পরীক্ষা শেষ করল তার চাচাত ভাইয়ের বাসায় থেকে। মানুষ এত ভালো হতে পারে রাসেল পরীক্ষা দিতে না গেলে হয়তো বুঝতে পারত না। রাসেলকে বুঝতে দিত না সে অন্যের বাড়ি আছে। নিজের বাড়ির মত থেকে রাসেল পরীক্ষা দিয়েছে।
রাসেল এসএসসি পাস করল ভালো রেজাল্ট নিয়ে। গ্রামে সবাই খুশি হলো। সার্টিফিকেটগুলো তুলে রাসেল বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য যেতে শুরু করল। এদিকে রাসেলের সংসারে হঠাৎ করে অন্ধকারের নেমে আসে। রাসেলের বাবা মারা যায়। রাসেলের অভাবের সংসার বাবা না থাকাতেই সংসারটা রাসেলকে সামলাতে হয়। রাসেল সার্টিফিকেটগুলো হাতে নিয়ে কান্নাকাটি করে। বলে আর হলো না আমার স্বপ্ন পূর্ণ। সব ছেড়ে রাসেল পুনরায় আবার সংসারের কাজে মন দেয়। কারণ রাসেল ছিল একমাত্র সংসারে উপার্জনকারী। আমাদের দেশে এমন হাজারো রাসেল আছে। যারা সংসদের চাহিদা মেটাতে নিজের জীবন শেষ করে দেয়।
মোঃ বুলবুল হোসেন
কালিহাতী, টাঙ্গাইল।
রাসেল এর সংসারটা অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে চলছে। বাবা কৃষি কাজ করে। রাসেল বাবার সাথে কাজে সাহায্য করে। কাজ করে যা উপার্জন হয়। তা দিয়ে কোনরকম সংসার চলে । ইস্কুলের সময় হলে দৌড়ে আবার স্কুলে চলে যায়। রাসেলের মনে অনেক স্বপ্ন। সে ছোট থেকে স্বপ্ন দেখেছে একদিন সৈনিক হবে। দেশের স্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দিবে। এমন স্বপ্ন বুকে নিয়ে সে প্রতিদিন বাবার কাজে সাহায্য করছে ।আর স্কুলের দিকে ছুটে চলছে। স্কুলের মাস্টার রাসেলকে আদর করতো। কারণ রাসেলের পরিবার সম্পর্কে মাস্টার সব জানত। এত কাজ করার পরও ছেলেটা ভালো স্টুডেন্ট তার প্রশংসা না করে পারে না। রাসেল সংসার এতটাই অভাব এর ছিল। যে ভালো একটি জামা কেনার পয়সা ছিল না। একটি পুরানো জামা নিয়ে দিনের পর দিন স্কুলে যেতে হত। স্কুলের সকল বন্ধুরা টিফিনের সময় কিছু না কিছু খেত। রাসেল স্কুলের পিছনে কাঁঠাল গাছের নিচে বসে থাকতো। শত ইচ্ছা থাকলেও কোন কিছু খেতে পারতো না। কারণ রাসেলের কোনো টাকা ছিল না।
রাসেল এসব কোন কিছু মনে করত না। কারণ কতদিন যে না খেয়ে থেকেছে হিসাব করে বলা যায় না। রাসেল ভাবত হয়তো আমাদের এই অভাব একদিন কেটে যাবে। বিকেল বেলায় বইখাতা নিয়ে বাসায় আসে । বই-খাতা রেখে দৌড়ে ছুটে যেত মাঠে বাবার কাজে সাহায্য করার জন্য। রাসেল ইস্কুলের খরচ যোগাত অপরে জমিতে কাজ করে।
একদিন রাসেল ইস্কুলে বসে আছে। হঠাৎ মিনা ক্লাসে এসে বলল রাসেল তোমার অংক নোট গুলো আমাকে দিবে। আমি অংক করতে পারিনি আর তুমি যদি না দেও তাহলে স্যারের হাতে আমাকে মার খেতে হবে। তুমি কি চাও আমি স্যারের হাতে মার খাই। রাসেল মনে মনে ভাবল মেয়েটা এতগুলো কথা না বললেও পারত। এমনিতেই আমি দিয়ে দিতাম নোট। রাসেল বললো আচ্ছা ঠিক আছে ।মিনা আমার নোটগুলো তুমি নিয়ে নাও। রাসেলের এমন আন্তরিকতা দেখে মিনা খুশি হয়ে গেল। ঐ দিন মিনা অংক স্যারের হাত থেকে বেঁচে গেল। পরদিন ইস্কুলেতে রাসেল ক্লাসে বসে আছে।
এমন সময় রাসেল শুনতে পেল কে যেন তার নাম ধরে ডাকতেছে। পিছন ঘুরে দেখে মিনা । রাসেল বলল মিনা আমাকে ডাকছো কিছু বলবে। মিনা মাথা নেড়ে বলল জি কিছু বলবো আমার কাছে এসো বলি। এরপর রাসেল তার সিট থেকে উঠে মিনার কাছে গিয়ে বসল। মিনা বলল আচ্ছা তোমাদের সংসারে কে কে আছে। রাসেল বলল আমাদের সংসারে আমি আমার বাবা-মা দাদা-দাদি আছে। রাসেল তার পরিবারের সম্পর্কে সব কিছু খুলে বলবো মিনা কে। এরপর থেকে মিনা রাসেলকে সাহায্য করা শুরু করলো। রাসেলের যে কোনো সমস্যায় মিনা বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিত। এদিকে দেখতে দেখতে টেস্ট পরীক্ষা সামনে চলে আসে। টেস্ট পরীক্ষায় রাসেল আর মিনা ভালো রেজাল্ট করল। এবার ফরম ফিলাপ করতে হবে। রাসেলের সংসারে তো এত টাকা নেই যে ফর্ম ফিলাপ করতে পারবে। রাসেলের চাচাতো ভাইরের স্কুলের সভাপতি সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাই রাসেলের বাবা রাসেলকে নিয়ে তার ভাইয়ের কাছে যায়। রাসেলের ফ্যামিলির কথা তার ভাই ভালোভাবে জানে।
রাসেল ফরম ফিলাপের কিছু টাকা মওকুফের জন্য একটি দরখাস্ত লেখে। রাসেল তার বাবা ও চাচাতো ভাই কে সাথে করে স্কুলের দিকে রওনা দেয়। রাসেলের চাচাতো ভাই মাস্টারের কাছে বলার পর কিছু টাকা মাফ হয়ে যায়। রাসেলের বাবা কিছু টাকা সংগ্রহ করেছিল। সে টাকা রাসেলের চাচাতো ভাইয়ের কাছে দেয়। রাসেল এর চাচাতো ভাই হিসাব করে দেখে কিছুটা কম আছে। বাকি টাকাটা রাসেলের চাচাতো ভাই দিয়ে দেয়। রাসেল ফরম ফিলাপ করে আসে। রাসেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে যাই হোক শেষ পর্যন্ত ফরমফিলাপ করতে পারছি আল্লাহর অশেষ রহমতে। হে আল্লাহ আপনার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে আমি ফরম ফিলাপ করতে পারছি। এসএসসি পরীক্ষা শেষ করল তার চাচাত ভাইয়ের বাসায় থেকে। মানুষ এত ভালো হতে পারে রাসেল পরীক্ষা দিতে না গেলে হয়তো বুঝতে পারত না। রাসেলকে বুঝতে দিত না সে অন্যের বাড়ি আছে। নিজের বাড়ির মত থেকে রাসেল পরীক্ষা দিয়েছে।
রাসেল এসএসসি পাস করল ভালো রেজাল্ট নিয়ে। গ্রামে সবাই খুশি হলো। সার্টিফিকেটগুলো তুলে রাসেল বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য যেতে শুরু করল। এদিকে রাসেলের সংসারে হঠাৎ করে অন্ধকারের নেমে আসে। রাসেলের বাবা মারা যায়। রাসেলের অভাবের সংসার বাবা না থাকাতেই সংসারটা রাসেলকে সামলাতে হয়। রাসেল সার্টিফিকেটগুলো হাতে নিয়ে কান্নাকাটি করে। বলে আর হলো না আমার স্বপ্ন পূর্ণ। সব ছেড়ে রাসেল পুনরায় আবার সংসারের কাজে মন দেয়। কারণ রাসেল ছিল একমাত্র সংসারে উপার্জনকারী। আমাদের দেশে এমন হাজারো রাসেল আছে। যারা সংসদের চাহিদা মেটাতে নিজের জীবন শেষ করে দেয়।
মন্তব্যসমূহ
-
সালমান সাকিব ২১/০৬/২০২১অন্যের জন্য সপ্নগুলোকে বিসর্জন দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সাহসের প্রয়োজ।
-
সাঞ্জু ১৬/০৬/২০২১খুব সুন্দর লিখনি
-
মাহতাব বাঙ্গালী ১৬/০৬/২০২১যখন স্বপ্ন অঙ্কুরেই মারা যায় তখন জীবনটাকে বড়োই নিষ্ঠুর মনে হয়