অসহায় বাবা
অসহায় বাবা
মোঃ বুলবুল হোসেন
কালিহাতী, টাঙ্গাইল।
রহিম তখন ছোট বয়স ১০ বছর, বোঝার মত ক্ষমতা যথেষ্ট হয়েছে রহিমের। অভাবের সংসারে একবেলা খেয়ে না খেয়ে দ্বীন চলত। সংসারের অভাব রহিমকে তার বাবা-মা বুঝতে দিতো না। একদিন রাতে একটা রুটি খেয়ে রহিম ঘুমিয়ে পড়লো। গভীর রাতে রহিমের ঘুম ভাঙতেই লক্ষ্য করলো তার মা গুন গুন করে কান্না করতেছে। রহিমের বাবা বাড়িতে আসেনি হয়তো এর জন্য কান্নাকাটি করতেছে মা। রহিম নিরবে দেখে যাচ্ছে সবকিছু। এমন সময় দরজায় শব্দ শোনা গেল মা দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। মা দেখেন বাবার মুখটা একদম মলিন হয়ে গেছে। সারাদিন কিছু খাইনি মনে হয়। এদিকে মাও সারাদিন কিছু খাইনি। মা-বাবা দুজনই কান্না শুরু করে দিল ।
মা বলল আমি তোমাকে কি খেতে দিবো। আমাদের ঘরে একটির রুটি ছিল । আমাদের ছেলে রহিমকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি। এখন তোমাকে আমি কি খেতে দেবো। তাহলে তোমারও তো সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি। বাবা আপসোস করতে করতে মাকে বলল জানো সারাদিন কি হয়েছে । আমি একটা কাজ পেয়েছিলাম। যে লোকটি আমাকে কাজ দিয়েছিল। তার সাথে আমার কথা ছিল। দুপুর বেলায় আমাকে একটি রুটি দিবে। আর সারাদিনে কাজ করার পর পাঁচ টাকা আমার হাতে দিবে। লোকটির কথা শুনে আমি রাজি হয়ে গেলাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজ শুরু করে দিলাম। যাইহোক অনেক ঘোরাঘুরির পর আল্লাহর রহমতে একটা কাজ তো পেয়েছি। এদিকে চৈত্র মাস প্রচুর গরম আমার শরীর দিয়ে ঘাম ঝরে পড়তেছে। মাঝে মাঝে পানি পান করছি । গাছের ছায়ায় বসে একটু দম নিব এই সময় নাই। মহাজন সামনে বসে আছে। এদিকে কাজ করতে করতে কখন যেনো দুপুরে হয়ে গেছে আমি বুঝতেই পারিনি। মহাজন আমাকে' বলল তুমি কাজ করতে থাকো, আমি তোমার জন্য রুটি নিয়ে আসি। আমি কোমর থেকে গামছাটা খুলে শরীরের ঘাম মুছে গাছের ছায়ায় বসার জন্য প্রস্তুতি নিতেছি।
গাছের ছায়ায় বসতেই তোমাদের কথা মনে পড়ে গেল। যে তোমরা কি করতেছো কি খাচ্ছ ।এদিকে আমার টেনশন হচ্ছে। হঠাৎ আমার চোখ পড়ে গেল সামনের রাস্তায়। এক বৃদ্ধ লোক কান্নাকাটি করতে করতে আমার দিকে আসছে ।আমি যে গাছের নিচে বসে আছি। বৃদ্ধ লোকটি সেই গাছের নিচে এসে বসলো। আমি প্রশ্ন করলাম বাবা আপনি কাঁদতেছেন কেন কি হয়েছে আপনার। বৃদ্ধ লোকটি আমার কথা শুনে প্রাণ ফিরে পেল। আমার পাশে এসে বলল বাবা আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই। বৃদ্ধ লোকটি কে বললাম বলেন বাবা আমি শুনবো কি বলবেন। বৃদ্ধ লোকটি বলল বাবা জানো দুইদিন যাবত আমি কিছু খাই নাই। এই জগতে আমার আপন কেউ নাই। বৃদ্ধ লোকটির কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে । আমি তোমাদের কথা ভাবতে ছিলাম এই দুনিয়ায় তে ছায়া বলতে আমি তো আছি তোমাদের পাশে। এই বৃদ্ধ লোকটি তো তাও নাই।
এদিকে মহজন রুটি নিয়ে গাছ তলাতে আসে। আমার হাতে রুটি দিয়ে বলল নাও তুমি খাবার খেয়ে নাও। আমি বৃদ্ধ লোকটিকে আমার রুটি দিয়ে দেই। নিজে পানি পান করে আবার কাজ করতে শুরু করলাম। কাজের ফাঁকে আমি লক্ষ করলাম। বৃদ্ধ লোকটি রুটি খাচ্ছে আর কান্নাকাটি করতেছে । খাবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করছিল। কিছু না দেখে আমি আবার কাজে মন দিয়ে দিলাম। কাজের ফাঁকে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারিনি ।আর এদিকে আমি খেয়াল করলাম বৃদ্ধ লোকটি সেই গাছ তলায় বসে আছে। কাজ শেষে মহাজনের কাছ থেকে ৫ টাকা নিয়ে, আমি যখন বাড়ির দিকে রওনা দিবো। তখন বৃদ্ধ লোক আমাকে পিছন থেকে বলে বাবা শুনে যাও। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আমি বললাম আপনি এখনো যাননি কেনো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে আপনি বাড়ি যাবেন কীভাবে। কেনইবা এখানে বসে আছেন। বাবা জানো তোমার মত আমার একটি ছেলে ছিল। সেও আমাকে এমন করে ভালোবাসতো। আর এই পৃথিবীতে সে বেঁচে নেই। তুমি আমাকে যখন রুটিটা খেতে দিয়েছিলে, তখন আমার ছেলের কথা মনে পড়ে গেল। তাই সারাদিন তোমার পাশে বসেছিলাম। আর তোমাকে দেখতে দেখতে কখন সন্ধ্যা নেমে গেছে আমি বুঝতেই পারিনি। এখন কিভাবে বাড়ি যাবো বুঝতে পারছি না । বাবা তুমি যদি আমার বাড়িতে একটু দিয়ে আসতে তাহলে আমার অনেক উপকার হত। আমি বৃদ্ধ লোকটিকে বললাম ঠিক আছে আপনাকে আমি বাড়িতে পৌঁছে দিবো। বৃদ্ধ লোকটিকে নিয়ে তার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম ।বাড়িতে পৌঁছে দেখলাম বৃদ্ধ লোকটির বাড়িতে কেউ নেই ।
আসার সময় আমার কাছে যে পাঁচটি টাকা ছিল ।ওই পাঁচটি টাকা বৃদ্ধ লোকটিকে দিয়ে বললাম বাবা আপনি ৫ টাকা রাখেন আপনি কিছু খেয়ে নিয়েন । বৃদ্ধ লোকটি টাকা নিতে চায়নি জোর করে পাঁচটি টাকা দিয়ে আসলাম।
বৃদ্ধ লোকটিকে রেখে আসতে তাই অনেক রাত হয়ে গেছে। আমি ঠিক করছি না বল তুমি। রহিম তার বাবার কথা শুনে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলতেছে। তোমার মত মানুষ হয় না বাবা।
মোঃ বুলবুল হোসেন
কালিহাতী, টাঙ্গাইল।
রহিম তখন ছোট বয়স ১০ বছর, বোঝার মত ক্ষমতা যথেষ্ট হয়েছে রহিমের। অভাবের সংসারে একবেলা খেয়ে না খেয়ে দ্বীন চলত। সংসারের অভাব রহিমকে তার বাবা-মা বুঝতে দিতো না। একদিন রাতে একটা রুটি খেয়ে রহিম ঘুমিয়ে পড়লো। গভীর রাতে রহিমের ঘুম ভাঙতেই লক্ষ্য করলো তার মা গুন গুন করে কান্না করতেছে। রহিমের বাবা বাড়িতে আসেনি হয়তো এর জন্য কান্নাকাটি করতেছে মা। রহিম নিরবে দেখে যাচ্ছে সবকিছু। এমন সময় দরজায় শব্দ শোনা গেল মা দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। মা দেখেন বাবার মুখটা একদম মলিন হয়ে গেছে। সারাদিন কিছু খাইনি মনে হয়। এদিকে মাও সারাদিন কিছু খাইনি। মা-বাবা দুজনই কান্না শুরু করে দিল ।
মা বলল আমি তোমাকে কি খেতে দিবো। আমাদের ঘরে একটির রুটি ছিল । আমাদের ছেলে রহিমকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি। এখন তোমাকে আমি কি খেতে দেবো। তাহলে তোমারও তো সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি। বাবা আপসোস করতে করতে মাকে বলল জানো সারাদিন কি হয়েছে । আমি একটা কাজ পেয়েছিলাম। যে লোকটি আমাকে কাজ দিয়েছিল। তার সাথে আমার কথা ছিল। দুপুর বেলায় আমাকে একটি রুটি দিবে। আর সারাদিনে কাজ করার পর পাঁচ টাকা আমার হাতে দিবে। লোকটির কথা শুনে আমি রাজি হয়ে গেলাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজ শুরু করে দিলাম। যাইহোক অনেক ঘোরাঘুরির পর আল্লাহর রহমতে একটা কাজ তো পেয়েছি। এদিকে চৈত্র মাস প্রচুর গরম আমার শরীর দিয়ে ঘাম ঝরে পড়তেছে। মাঝে মাঝে পানি পান করছি । গাছের ছায়ায় বসে একটু দম নিব এই সময় নাই। মহাজন সামনে বসে আছে। এদিকে কাজ করতে করতে কখন যেনো দুপুরে হয়ে গেছে আমি বুঝতেই পারিনি। মহাজন আমাকে' বলল তুমি কাজ করতে থাকো, আমি তোমার জন্য রুটি নিয়ে আসি। আমি কোমর থেকে গামছাটা খুলে শরীরের ঘাম মুছে গাছের ছায়ায় বসার জন্য প্রস্তুতি নিতেছি।
গাছের ছায়ায় বসতেই তোমাদের কথা মনে পড়ে গেল। যে তোমরা কি করতেছো কি খাচ্ছ ।এদিকে আমার টেনশন হচ্ছে। হঠাৎ আমার চোখ পড়ে গেল সামনের রাস্তায়। এক বৃদ্ধ লোক কান্নাকাটি করতে করতে আমার দিকে আসছে ।আমি যে গাছের নিচে বসে আছি। বৃদ্ধ লোকটি সেই গাছের নিচে এসে বসলো। আমি প্রশ্ন করলাম বাবা আপনি কাঁদতেছেন কেন কি হয়েছে আপনার। বৃদ্ধ লোকটি আমার কথা শুনে প্রাণ ফিরে পেল। আমার পাশে এসে বলল বাবা আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই। বৃদ্ধ লোকটি কে বললাম বলেন বাবা আমি শুনবো কি বলবেন। বৃদ্ধ লোকটি বলল বাবা জানো দুইদিন যাবত আমি কিছু খাই নাই। এই জগতে আমার আপন কেউ নাই। বৃদ্ধ লোকটির কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে । আমি তোমাদের কথা ভাবতে ছিলাম এই দুনিয়ায় তে ছায়া বলতে আমি তো আছি তোমাদের পাশে। এই বৃদ্ধ লোকটি তো তাও নাই।
এদিকে মহজন রুটি নিয়ে গাছ তলাতে আসে। আমার হাতে রুটি দিয়ে বলল নাও তুমি খাবার খেয়ে নাও। আমি বৃদ্ধ লোকটিকে আমার রুটি দিয়ে দেই। নিজে পানি পান করে আবার কাজ করতে শুরু করলাম। কাজের ফাঁকে আমি লক্ষ করলাম। বৃদ্ধ লোকটি রুটি খাচ্ছে আর কান্নাকাটি করতেছে । খাবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করছিল। কিছু না দেখে আমি আবার কাজে মন দিয়ে দিলাম। কাজের ফাঁকে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারিনি ।আর এদিকে আমি খেয়াল করলাম বৃদ্ধ লোকটি সেই গাছ তলায় বসে আছে। কাজ শেষে মহাজনের কাছ থেকে ৫ টাকা নিয়ে, আমি যখন বাড়ির দিকে রওনা দিবো। তখন বৃদ্ধ লোক আমাকে পিছন থেকে বলে বাবা শুনে যাও। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আমি বললাম আপনি এখনো যাননি কেনো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে আপনি বাড়ি যাবেন কীভাবে। কেনইবা এখানে বসে আছেন। বাবা জানো তোমার মত আমার একটি ছেলে ছিল। সেও আমাকে এমন করে ভালোবাসতো। আর এই পৃথিবীতে সে বেঁচে নেই। তুমি আমাকে যখন রুটিটা খেতে দিয়েছিলে, তখন আমার ছেলের কথা মনে পড়ে গেল। তাই সারাদিন তোমার পাশে বসেছিলাম। আর তোমাকে দেখতে দেখতে কখন সন্ধ্যা নেমে গেছে আমি বুঝতেই পারিনি। এখন কিভাবে বাড়ি যাবো বুঝতে পারছি না । বাবা তুমি যদি আমার বাড়িতে একটু দিয়ে আসতে তাহলে আমার অনেক উপকার হত। আমি বৃদ্ধ লোকটিকে বললাম ঠিক আছে আপনাকে আমি বাড়িতে পৌঁছে দিবো। বৃদ্ধ লোকটিকে নিয়ে তার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম ।বাড়িতে পৌঁছে দেখলাম বৃদ্ধ লোকটির বাড়িতে কেউ নেই ।
আসার সময় আমার কাছে যে পাঁচটি টাকা ছিল ।ওই পাঁচটি টাকা বৃদ্ধ লোকটিকে দিয়ে বললাম বাবা আপনি ৫ টাকা রাখেন আপনি কিছু খেয়ে নিয়েন । বৃদ্ধ লোকটি টাকা নিতে চায়নি জোর করে পাঁচটি টাকা দিয়ে আসলাম।
বৃদ্ধ লোকটিকে রেখে আসতে তাই অনেক রাত হয়ে গেছে। আমি ঠিক করছি না বল তুমি। রহিম তার বাবার কথা শুনে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলতেছে। তোমার মত মানুষ হয় না বাবা।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২৩/০৭/২০২৩বেশ ভালো লেখা
-
সানাউল্লাহ ০৯/০৬/২০২১এই পৃথিবীতে এমন লোক খুবই কম আছে। নিজের স্ত্রী পুত্র কন্যা ও নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়ায়। কিছুটা অংশ দিতে পারতো। এটা এক অলৌকিক গল্প হয়ে গেছে। ৫ টাকা মজুরি এ কোন যুগের কাহিনি লিখেছেন লেখক। চমৎকার হয়েছে।শুভকামনা রইল।