রাত ঘুমে
রাত ঘুমে
অনিন্দ্যঃ এখানটায় বেশ আলো, চলো এদিকটাতেই বসা যাক।
বাদাম খাবে? এই বাদাম'অলা.. এদিকে এসো। দশ টাকার বাদাম আর দশ টাকার ছোলা ভাজা দাও। আরে..? চা'অলাও আছে দেখছি এখনো। চা খাবে? এইযে চা'.., এদিকে এসো।
আচ্ছা বৃষ্টি, কী ব্যাপার বলতো? এতো রাতে এরা সব এখানে কী করছে? এদেরতো এখন থাকার কথা নয়।
ওহ এসেছো দেখ্ছি? দুই কাপ চা দাওতো ভাই। একটা লিকার।
আহা আহা, আস্তে ঢালোনা ভাই। গরম চা তো উপচে পড়ছে। কাপটি হাতে ধরার অবস্থা নেই। বুঝলে বৃষ্টি, আমি আবার গরম গরম চা খেতে খুব পছন্দ করি।
এইযে নাও দশটাকা, তোমার চায়ের দাম। এখন ভাগোতো এখান থেকে। আরে হা করে কি দেখছো বাপ আমার? যাও বলছি।
হা হা হা। কি? কেমন ভরকে দিলাম বলো লোকটাকে? আচ্ছা বৃষ্টি, নদীতে মনে হয় অনেক জল এসেছে তাই না? কলকল শব্দ করে বয়ে চলেছে বানের জল। সশব্দে আছড়ে পড়ছে নদীতীরে। যদিও ওদিকটায় অন্ধকারের জন্য কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা।
কিন্তু জলধারার অবিরাম কলকল শব্দ ঠিকই কানে আসছে। গান শুনবে? আজই লিখেছি। সন্ধ্যা রাতে। সুরটা একটু এলোমেলো। ভাবছি মল্লারে বাঁধলে কেমন হয়? তোমাকে খুব মিস্ করেছি গানটা লেখার সময় জানো?
কাল রাতে এলেনা কেন বৃষ্টি? যদি আসতে তাহলে শুধু বাদাম নয়,
আরও ভালো কিছু খেতে পারতে। আমার বউয়ের হাতের রান্না করা সুস্বাদু বিরিয়ানি। তোমার অপেক্ষায় থেকে থেকে, সারা রাত আমার আর খাওয়াই হলোনা!
বৃষ্টিঃ অনিন্দ্য, তুমি থামবে? মাথাটা কি একেবারেই গেছে তোমার?
এখন রাত দুটো বাজে। আমি আমার বাড়িতে আছি। সুদূর ইউরোপে। আর আমার বর পাশেই শুয়ে ঘুমোচ্ছে। আমি তোমার সাথে ফোনে কথা বলছি অনিন্দ্য। কেন বাজে বকছো? তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছোনা?
দেখ অনিন্দ্য, we have a healthy lifestyle. I have a happy family there. আমি, আমরা- কেউই তোমার মতো আউল-বাউল নই, পাগল নই। তোমাকে সঙ্গ দেওয়ার, তোমাকে খাওয়ানোর, তোমাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য তোমার বিবাহিতা স্ত্রী রয়েছেন। ওই সমস্ত আমার দায় নয়।
তুমি কি আমার কথাগুলো শুনতে পাচ্ছো অনিন্দ্য? বিগত দশটি বছর ধরে এ আমি কোন্ দায় কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছি? কেন? Only because of you? Because you're my.. you're my ex? তুমি শুধুই আমার ব্যর্থ, যন্ত্রণাময় দুঃসহ অতীত।
Just go to the hell man. I can't take all these anymore, believe me. For god sake, just leave me alone. Please I beg of you.
অনিন্দ্যঃ এই জায়গায়টায় অনেক হৈচৈ মনে হচ্ছে। চলো মিউজিয়ামের ওদিকটায় বসি। জানো বৃষ্টি? জোৎস্নারাতে আমার ছোট্ট বারান্দা, চাঁদের আলোয় ভেসে যায়। তখন অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা করে।
মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে তোমাকে আমার সামনাসামনি বসিয়ে, ইজেলে টানানো ক্যানভাসে শব্দছবি আঁকি। শর্মীকে অনেকবার বলেছি। এখন আর বলিনা। আমি জেনে গেছি শর্মী আমার কবিতার খাতা নয়। আমার স্বপ্ন নয়। আমার অব্যক্ত, অসমাপ্ত শব্দগুলোর জ্বালামুখ নয়। সে যে কী, তা আমি কোনদিন জানতে পারিনি। যদি পারতাম তবে এই মধ্যরাতে তোমার হাত ধরে রাস্তায় বের হতাম না। আমাকে থাকতে দাও। আমাকে তোমার সাথে আরও কিছুক্ষণ থাকতে দাও বৃষ্টি।
বৃষ্টিঃ অনিন্দ্য, তোমার শিঘ্রই ভালো একজন ডাক্তার দেখানো দরকার। Please, do some help yourself লক্ষ্মীটি। শর্মী কি তোমার Take care করেনা? সে কি তোমায় ভালোবাসেনা? কেন? কেন সারাটাজীবন একটা আত্মভোলা, খামখেয়ালি মানুষই রয়ে গেলে? তোমাকে আমি কোথায় ছেড়ে এলাম! ওহ! মাঝেমাঝে, মাঝেমাঝে আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে, কিন্তু এতোদূর থেকে বুকফাটা নিরব আর্তনাদ, হাহাকার করা ছাড়া আমার আর কিই-বা করার আছে?
Please অনিন্দ্য, এভাবে নিজেকে শেষ করে দিওনা সোনা। Please.
সকলের অমতে তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করলাম। বাবা তোমাকে কতো ভালো একটা চাকরি জোগাড় করে দিলো। করতে পারলেনা।
কবিতার ভুত আর অলিক স্বপ্নজালে ক্রমেই জড়িয়ে গেলে। একটা বছর তোমার সাথে ছিলাম। একই ছাদের তলায়। অনেক চেষ্টা করেছি অনিন্দ্য। অনেক। রাতের পর রাত কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছি একটু সম্মানজনক জীবনযাপনের আশায়। শেষে বাবা এসে আমাকে নিয়ে গেলো। আমাদের অচেনা অদৃষ্ট, তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে দিলো।
অনিন্দ্য তাকিয়ে দেখো, আজকে তোমার কবিতা তোমাকে তোমারই কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে। তুমি জানোনা, তোমাকে কোন ভয়ানক পরিনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে রোজ। তুমি জানোনা সোনা! ফিরে এসো অনিন্দ্য, একটা স্বাভাবিক জীবনযাপনে। আগের মতো। বাইশ বছরের ছটফটে, প্রাণবন্ত যে ছেলেটি একদিন আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলো, সে আজ কোথায় হারালো? আজও কোন অবচেতনে বারবার আমি সেই দুরন্ত, প্রাণোচ্ছল মানুষটিকেি ফিরে পেতে চাই।
অনিন্দ্যঃ বৃষ্টি, রিকশা দিয়ে ঘুরতে তোমার কেমন লাগছে? দেখ, আমাদের ভাগ্য আজ কতোটা সুপ্রসন্ন। আজকে ঠিক যা-যা চাইছি, তাই হচ্ছে। রাতের বাতাসটা কী দারুণ, তাইনা?
এই রিকশামামা, তুমি পুলিশলাইন পার করে সোজা জেইল রোড ধরে টানতে থাকো। ভাড়া যা বলেছি তার ডবল দেবো। জোরসে টানো। আরও জোরে। সাব্বাস! এইতো মজা, সারা শহর যখন ঘুমে ডুবে আছে, আমরা দুজনে তখন পরিব্রাজক হয়ে মানুষের 'রাত ঘুম' পর্যবেক্ষণ করতে করতে ছুটে চলেছি। রিকশা মামা, তোমার কাছে দেশলাই আছে? নেই? নেই কেন? বিড়িটিড়ি খাওনা? হ্যারিকেন? ওহ, আজকালতো রিকশায় ও জিনিস থাকেনা। হ্যারিকেন এখন অ্যান্টিক পিস।
বৃষ্টি, তোমাদের বাড়িতে হ্যারিকেন আছে? নেই? হ্যাজাক বাতি? আমার মামার বাড়িতে ছিলো। ছোটবেলায় দেখেছি।
বৃষ্টি.. এই বৃষ্টি.. কথা বলছোনা কেন? কথা বলবেনাতো? আমি কিন্তু এখনি রিকশা থেকে নেমে যাবো বলছি।
বৃষ্টি..., বৃষ্টি...?
বৃষ্টিঃ অনিন্দ্য, তুমি পাগল হয়ে গেছো। তুমি সত্যি পাগল হয়ে গেছো। আজ এই দূর প্রবাসে আমাকে তুমিই পাঠিয়েছো। ভালোই হয়েছে। তোমার জীবনের এই অসম্ভব পরিনতি আমাকে দেখতে হচ্ছেনা। এও জানি, আমার কোন কথাই তোমার উপলব্ধিতে এখন আর দাগ কাটছেনা। তুমি হারিয়ে গেছো অনিন্দ্য। আমাকে নিয়তির অতল জলে ভাসিয়ে, তুমি হারিয়ে গেছো। যেটুকু আছো, সেটুকুই স্মৃতিতে বেঁচে থাকুক বাকিটা সময়। আর কথা হবেনা কোনদিনই। ঈশ্বর তোমাকে দেখে রাখুন। রাখছি। ভালো থেকো অনিন্দ্য।
এভাবেই প্রতিদিন, নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলেও কোন এক অনাকাঙ্ক্ষিত অসমীকরণের দায়ে- এমনি করেই কতো বৃষ্টিরা খেয়ালি অনিন্দ্যদের জীবন থেকে চিরতরে সরে যেতে বাধ্য হয়। ভাগ্য বিড়ম্বিত গ্রহানুর মতো, দূরতম কক্ষপথে, মহাকাশের দুই প্রান্তে ছিটকে পড়ে দুটি জীবন। তারপর আর ফিরে আসেনা। রাত ঘুমেও না। না বৃষ্টি। না অনিন্দ্য।
©সুব্রত ব্রহ্ম
জুন ২৯, ২০২০খ্রিঃ
ময়মনসিংহ।
অনিন্দ্যঃ এখানটায় বেশ আলো, চলো এদিকটাতেই বসা যাক।
বাদাম খাবে? এই বাদাম'অলা.. এদিকে এসো। দশ টাকার বাদাম আর দশ টাকার ছোলা ভাজা দাও। আরে..? চা'অলাও আছে দেখছি এখনো। চা খাবে? এইযে চা'.., এদিকে এসো।
আচ্ছা বৃষ্টি, কী ব্যাপার বলতো? এতো রাতে এরা সব এখানে কী করছে? এদেরতো এখন থাকার কথা নয়।
ওহ এসেছো দেখ্ছি? দুই কাপ চা দাওতো ভাই। একটা লিকার।
আহা আহা, আস্তে ঢালোনা ভাই। গরম চা তো উপচে পড়ছে। কাপটি হাতে ধরার অবস্থা নেই। বুঝলে বৃষ্টি, আমি আবার গরম গরম চা খেতে খুব পছন্দ করি।
এইযে নাও দশটাকা, তোমার চায়ের দাম। এখন ভাগোতো এখান থেকে। আরে হা করে কি দেখছো বাপ আমার? যাও বলছি।
হা হা হা। কি? কেমন ভরকে দিলাম বলো লোকটাকে? আচ্ছা বৃষ্টি, নদীতে মনে হয় অনেক জল এসেছে তাই না? কলকল শব্দ করে বয়ে চলেছে বানের জল। সশব্দে আছড়ে পড়ছে নদীতীরে। যদিও ওদিকটায় অন্ধকারের জন্য কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা।
কিন্তু জলধারার অবিরাম কলকল শব্দ ঠিকই কানে আসছে। গান শুনবে? আজই লিখেছি। সন্ধ্যা রাতে। সুরটা একটু এলোমেলো। ভাবছি মল্লারে বাঁধলে কেমন হয়? তোমাকে খুব মিস্ করেছি গানটা লেখার সময় জানো?
কাল রাতে এলেনা কেন বৃষ্টি? যদি আসতে তাহলে শুধু বাদাম নয়,
আরও ভালো কিছু খেতে পারতে। আমার বউয়ের হাতের রান্না করা সুস্বাদু বিরিয়ানি। তোমার অপেক্ষায় থেকে থেকে, সারা রাত আমার আর খাওয়াই হলোনা!
বৃষ্টিঃ অনিন্দ্য, তুমি থামবে? মাথাটা কি একেবারেই গেছে তোমার?
এখন রাত দুটো বাজে। আমি আমার বাড়িতে আছি। সুদূর ইউরোপে। আর আমার বর পাশেই শুয়ে ঘুমোচ্ছে। আমি তোমার সাথে ফোনে কথা বলছি অনিন্দ্য। কেন বাজে বকছো? তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছোনা?
দেখ অনিন্দ্য, we have a healthy lifestyle. I have a happy family there. আমি, আমরা- কেউই তোমার মতো আউল-বাউল নই, পাগল নই। তোমাকে সঙ্গ দেওয়ার, তোমাকে খাওয়ানোর, তোমাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য তোমার বিবাহিতা স্ত্রী রয়েছেন। ওই সমস্ত আমার দায় নয়।
তুমি কি আমার কথাগুলো শুনতে পাচ্ছো অনিন্দ্য? বিগত দশটি বছর ধরে এ আমি কোন্ দায় কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছি? কেন? Only because of you? Because you're my.. you're my ex? তুমি শুধুই আমার ব্যর্থ, যন্ত্রণাময় দুঃসহ অতীত।
Just go to the hell man. I can't take all these anymore, believe me. For god sake, just leave me alone. Please I beg of you.
অনিন্দ্যঃ এই জায়গায়টায় অনেক হৈচৈ মনে হচ্ছে। চলো মিউজিয়ামের ওদিকটায় বসি। জানো বৃষ্টি? জোৎস্নারাতে আমার ছোট্ট বারান্দা, চাঁদের আলোয় ভেসে যায়। তখন অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা করে।
মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে তোমাকে আমার সামনাসামনি বসিয়ে, ইজেলে টানানো ক্যানভাসে শব্দছবি আঁকি। শর্মীকে অনেকবার বলেছি। এখন আর বলিনা। আমি জেনে গেছি শর্মী আমার কবিতার খাতা নয়। আমার স্বপ্ন নয়। আমার অব্যক্ত, অসমাপ্ত শব্দগুলোর জ্বালামুখ নয়। সে যে কী, তা আমি কোনদিন জানতে পারিনি। যদি পারতাম তবে এই মধ্যরাতে তোমার হাত ধরে রাস্তায় বের হতাম না। আমাকে থাকতে দাও। আমাকে তোমার সাথে আরও কিছুক্ষণ থাকতে দাও বৃষ্টি।
বৃষ্টিঃ অনিন্দ্য, তোমার শিঘ্রই ভালো একজন ডাক্তার দেখানো দরকার। Please, do some help yourself লক্ষ্মীটি। শর্মী কি তোমার Take care করেনা? সে কি তোমায় ভালোবাসেনা? কেন? কেন সারাটাজীবন একটা আত্মভোলা, খামখেয়ালি মানুষই রয়ে গেলে? তোমাকে আমি কোথায় ছেড়ে এলাম! ওহ! মাঝেমাঝে, মাঝেমাঝে আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে, কিন্তু এতোদূর থেকে বুকফাটা নিরব আর্তনাদ, হাহাকার করা ছাড়া আমার আর কিই-বা করার আছে?
Please অনিন্দ্য, এভাবে নিজেকে শেষ করে দিওনা সোনা। Please.
সকলের অমতে তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করলাম। বাবা তোমাকে কতো ভালো একটা চাকরি জোগাড় করে দিলো। করতে পারলেনা।
কবিতার ভুত আর অলিক স্বপ্নজালে ক্রমেই জড়িয়ে গেলে। একটা বছর তোমার সাথে ছিলাম। একই ছাদের তলায়। অনেক চেষ্টা করেছি অনিন্দ্য। অনেক। রাতের পর রাত কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছি একটু সম্মানজনক জীবনযাপনের আশায়। শেষে বাবা এসে আমাকে নিয়ে গেলো। আমাদের অচেনা অদৃষ্ট, তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে দিলো।
অনিন্দ্য তাকিয়ে দেখো, আজকে তোমার কবিতা তোমাকে তোমারই কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে। তুমি জানোনা, তোমাকে কোন ভয়ানক পরিনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে রোজ। তুমি জানোনা সোনা! ফিরে এসো অনিন্দ্য, একটা স্বাভাবিক জীবনযাপনে। আগের মতো। বাইশ বছরের ছটফটে, প্রাণবন্ত যে ছেলেটি একদিন আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলো, সে আজ কোথায় হারালো? আজও কোন অবচেতনে বারবার আমি সেই দুরন্ত, প্রাণোচ্ছল মানুষটিকেি ফিরে পেতে চাই।
অনিন্দ্যঃ বৃষ্টি, রিকশা দিয়ে ঘুরতে তোমার কেমন লাগছে? দেখ, আমাদের ভাগ্য আজ কতোটা সুপ্রসন্ন। আজকে ঠিক যা-যা চাইছি, তাই হচ্ছে। রাতের বাতাসটা কী দারুণ, তাইনা?
এই রিকশামামা, তুমি পুলিশলাইন পার করে সোজা জেইল রোড ধরে টানতে থাকো। ভাড়া যা বলেছি তার ডবল দেবো। জোরসে টানো। আরও জোরে। সাব্বাস! এইতো মজা, সারা শহর যখন ঘুমে ডুবে আছে, আমরা দুজনে তখন পরিব্রাজক হয়ে মানুষের 'রাত ঘুম' পর্যবেক্ষণ করতে করতে ছুটে চলেছি। রিকশা মামা, তোমার কাছে দেশলাই আছে? নেই? নেই কেন? বিড়িটিড়ি খাওনা? হ্যারিকেন? ওহ, আজকালতো রিকশায় ও জিনিস থাকেনা। হ্যারিকেন এখন অ্যান্টিক পিস।
বৃষ্টি, তোমাদের বাড়িতে হ্যারিকেন আছে? নেই? হ্যাজাক বাতি? আমার মামার বাড়িতে ছিলো। ছোটবেলায় দেখেছি।
বৃষ্টি.. এই বৃষ্টি.. কথা বলছোনা কেন? কথা বলবেনাতো? আমি কিন্তু এখনি রিকশা থেকে নেমে যাবো বলছি।
বৃষ্টি..., বৃষ্টি...?
বৃষ্টিঃ অনিন্দ্য, তুমি পাগল হয়ে গেছো। তুমি সত্যি পাগল হয়ে গেছো। আজ এই দূর প্রবাসে আমাকে তুমিই পাঠিয়েছো। ভালোই হয়েছে। তোমার জীবনের এই অসম্ভব পরিনতি আমাকে দেখতে হচ্ছেনা। এও জানি, আমার কোন কথাই তোমার উপলব্ধিতে এখন আর দাগ কাটছেনা। তুমি হারিয়ে গেছো অনিন্দ্য। আমাকে নিয়তির অতল জলে ভাসিয়ে, তুমি হারিয়ে গেছো। যেটুকু আছো, সেটুকুই স্মৃতিতে বেঁচে থাকুক বাকিটা সময়। আর কথা হবেনা কোনদিনই। ঈশ্বর তোমাকে দেখে রাখুন। রাখছি। ভালো থেকো অনিন্দ্য।
এভাবেই প্রতিদিন, নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলেও কোন এক অনাকাঙ্ক্ষিত অসমীকরণের দায়ে- এমনি করেই কতো বৃষ্টিরা খেয়ালি অনিন্দ্যদের জীবন থেকে চিরতরে সরে যেতে বাধ্য হয়। ভাগ্য বিড়ম্বিত গ্রহানুর মতো, দূরতম কক্ষপথে, মহাকাশের দুই প্রান্তে ছিটকে পড়ে দুটি জীবন। তারপর আর ফিরে আসেনা। রাত ঘুমেও না। না বৃষ্টি। না অনিন্দ্য।
©সুব্রত ব্রহ্ম
জুন ২৯, ২০২০খ্রিঃ
ময়মনসিংহ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ন্যান্সি দেওয়ান ০১/০৫/২০২১Very Good
-
ফয়জুল মহী ৩০/০৪/২০২১Excellent
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ৩০/০৪/২০২১চমৎকার অনুভূতি।