আমার রবি
তাঁর জীবনে "মৃত্যু" নামক কঠিন শব্দটি এতো বেশিবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে যে, এক সময় দু:খ, শোকের ব্যথাতুর অনুভূতি গুলি কাটিয়ে তিনি ভাবনার এমন এক উচ্চ স্তরে পৌঁছে গেলেন, যেখানে মৃত্যু আর শোক নয়, দু:খ নয়। বিরহের কান্না নয়। এ শুধু লোকান্তরিত হয়ে অনন্ত লোকে অমরত্বের পথে যাত্রা করা। তাঁর বহু গানে গল্পে ও কবিতায় জীবনের শেষ পরিণতির কথা এসেছে।
যেমন 'ডাকঘর' গল্পে ছোট্ট শিশুর চিঠির জন্য অপেক্ষা। এ আসলে রূপক অর্থে মৃত্যুর অপেক্ষাই।
আমরা দেখেছি এই অমোঘ পরিণতি বা মৃত্যুকে তিনি শুধুই চলে যাওয়া নয়, বরং চির মুক্তির পথ বলে উল্লেখ করেছেন। এতোবার তাঁর জীবনে তিনি মৃত্যু, অকাল মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, একে একে সব প্রিয় মুখ গুলিকে হারিয়েছেন; তবু নিজের হৃদয়কে দুর্বল হতে দেননি। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বাবার আদর্শে বড় হয়ে উঠেছিলেন। মানুষের জীবন প্রকৃতির বিশালত্বের কাছে কতোটা নগন্য, তা উপলব্ধি করতে শিখেছিলেন ছোট বেলা থেকেই। তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা চিন্তা ও ভাবনায় কত বড় ছাপ ফেলেছিলো তা তাঁর অল্প বয়েসের একটি রচনা থেকে জানা যায়-
"নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে রয়েছো নয়নে নয়নে
হৃদয় তোমারে পায়না জানিতে রয়েছো হৃদয়ে গোপনে"।
তাঁর পরিনত বয়সেও অনেক লেখাতেই মৃত্যুকে তিনি মিলনের আরেকটি উপায় বলেও উল্লেখ করেছেন। তাঁর জীবনের শেষভাগে কিছু গানে, যেমন-
"আয় আরেকটি বার আয়রে সখা প্রাণের মাঝে আয়
মোরা সুখের দুখের কথা কবো প্রাণ জুড়াবে তায়।
হায় মাঝে হলো ছাড়াছাড়ি গেলেম কে কোথায়
আবার দেখা যদি হলো সখা প্রাণের মাঝে আয়"।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একে একে পরিবারের প্রিয় মুখ গুলিকে হারিয়েছিলেন ঠিকই, তবু তাঁর মানসিক দৃঢ়তা ছিলো পাহাড়সম। জীবন সায়াহ্নে এসে তাঁর কিছু লেখায় বিচ্ছেদ বা মৃত্যু সম্পর্কে তাঁর ইতিবাচক মনোভাব আরও সুস্পষ্ট দেখতে পাই।
"তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি - আহা,
নতুন নামে ডাকবে মোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি"
"আছে দু:খ, আছে মৃত্যু"। জীবন সত্য, তাই মৃত্যুও অবধারিত। তাই বলে সৃষ্টিতো আর থেমে থাকেনি। থেমে থাকবেওনা। প্রতিদিন ভোরের আলোর ফুটতেই নবজাতক কেঁদে উঠবে। পাখিরা সুরে সুরে নেচে গেয়ে নবীনকে বরণ করবে। আর বণার্ঢ্য কর্মময় জীবনের শেষে প্রবীণেরা সাড়ম্বরে বিদায় নেবে। এইতো জীবন চক্র।
যা কিছু আমাদের, আমাদের প্রাণের তাকে হৃদয়ে ধারণ করতে শিখি। গুণীজনকে প্রকৃত মর্যাদা দিতে শিখি। তাহলেই সংস্কৃতির সত্যিকার বিকাশ হবে। প্রত্যেক বছর যতো আড়ম্বরেই রবীন্দ্র, নজরুল জয়ন্তি পালন করিনা কেন, তাঁদেরকে না জানলে, রোজ চর্চা না করলে ঐসব লৌকিকতা অপ্রয়োজনীয়। নিজেদের মনগড়া একটা আকার যেন দিয়ে না দেই। আজ কবিগুরুর মহা প্রয়াণ দিবসে এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা। আরো হাজার বছর গুরুদেব বাঙ্গালি হৃদয়ে, বাঙ্গালি জীবনে প্রাণ সঞ্চারী হয়ে বেঁচে থাকুন এই আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন হৃদয়ে তীব্র ভাবে লালন করি।
লেখাটি কয়েক বছর আগে (২২শে শ্রাবণ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ) আমার ফেসবুক পাতায় প্রকাশিত।
© সুব্রত ব্রহ্ম
২২শে শ্রাবণ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
ময়মনসিংহ।
কবি গুরুর ছবি: সংগৃহীত।
যেমন 'ডাকঘর' গল্পে ছোট্ট শিশুর চিঠির জন্য অপেক্ষা। এ আসলে রূপক অর্থে মৃত্যুর অপেক্ষাই।
আমরা দেখেছি এই অমোঘ পরিণতি বা মৃত্যুকে তিনি শুধুই চলে যাওয়া নয়, বরং চির মুক্তির পথ বলে উল্লেখ করেছেন। এতোবার তাঁর জীবনে তিনি মৃত্যু, অকাল মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, একে একে সব প্রিয় মুখ গুলিকে হারিয়েছেন; তবু নিজের হৃদয়কে দুর্বল হতে দেননি। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বাবার আদর্শে বড় হয়ে উঠেছিলেন। মানুষের জীবন প্রকৃতির বিশালত্বের কাছে কতোটা নগন্য, তা উপলব্ধি করতে শিখেছিলেন ছোট বেলা থেকেই। তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা চিন্তা ও ভাবনায় কত বড় ছাপ ফেলেছিলো তা তাঁর অল্প বয়েসের একটি রচনা থেকে জানা যায়-
"নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে রয়েছো নয়নে নয়নে
হৃদয় তোমারে পায়না জানিতে রয়েছো হৃদয়ে গোপনে"।
তাঁর পরিনত বয়সেও অনেক লেখাতেই মৃত্যুকে তিনি মিলনের আরেকটি উপায় বলেও উল্লেখ করেছেন। তাঁর জীবনের শেষভাগে কিছু গানে, যেমন-
"আয় আরেকটি বার আয়রে সখা প্রাণের মাঝে আয়
মোরা সুখের দুখের কথা কবো প্রাণ জুড়াবে তায়।
হায় মাঝে হলো ছাড়াছাড়ি গেলেম কে কোথায়
আবার দেখা যদি হলো সখা প্রাণের মাঝে আয়"।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একে একে পরিবারের প্রিয় মুখ গুলিকে হারিয়েছিলেন ঠিকই, তবু তাঁর মানসিক দৃঢ়তা ছিলো পাহাড়সম। জীবন সায়াহ্নে এসে তাঁর কিছু লেখায় বিচ্ছেদ বা মৃত্যু সম্পর্কে তাঁর ইতিবাচক মনোভাব আরও সুস্পষ্ট দেখতে পাই।
"তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি - আহা,
নতুন নামে ডাকবে মোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি"
"আছে দু:খ, আছে মৃত্যু"। জীবন সত্য, তাই মৃত্যুও অবধারিত। তাই বলে সৃষ্টিতো আর থেমে থাকেনি। থেমে থাকবেওনা। প্রতিদিন ভোরের আলোর ফুটতেই নবজাতক কেঁদে উঠবে। পাখিরা সুরে সুরে নেচে গেয়ে নবীনকে বরণ করবে। আর বণার্ঢ্য কর্মময় জীবনের শেষে প্রবীণেরা সাড়ম্বরে বিদায় নেবে। এইতো জীবন চক্র।
যা কিছু আমাদের, আমাদের প্রাণের তাকে হৃদয়ে ধারণ করতে শিখি। গুণীজনকে প্রকৃত মর্যাদা দিতে শিখি। তাহলেই সংস্কৃতির সত্যিকার বিকাশ হবে। প্রত্যেক বছর যতো আড়ম্বরেই রবীন্দ্র, নজরুল জয়ন্তি পালন করিনা কেন, তাঁদেরকে না জানলে, রোজ চর্চা না করলে ঐসব লৌকিকতা অপ্রয়োজনীয়। নিজেদের মনগড়া একটা আকার যেন দিয়ে না দেই। আজ কবিগুরুর মহা প্রয়াণ দিবসে এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা। আরো হাজার বছর গুরুদেব বাঙ্গালি হৃদয়ে, বাঙ্গালি জীবনে প্রাণ সঞ্চারী হয়ে বেঁচে থাকুন এই আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন হৃদয়ে তীব্র ভাবে লালন করি।
লেখাটি কয়েক বছর আগে (২২শে শ্রাবণ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ) আমার ফেসবুক পাতায় প্রকাশিত।
© সুব্রত ব্রহ্ম
২২শে শ্রাবণ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
ময়মনসিংহ।
কবি গুরুর ছবি: সংগৃহীত।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কামরুজ্জামান সাদ ১০/০৩/২০১৮বেশ।
-
সুজয় সরকার ০৯/০৩/২০১৮চমৎকার