www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মরণখাদ (প্রথম পর্ব)

সত্যস্বর পত্রিকার একটি প্রতিবেদন
২৩শে অক্টোবর, ২০০৮
অমরগিরিতে যুবতীর মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদন – অমরগিরিতে সাগরের উপকণ্ঠে এক যুবতীর ক্ষতবিক্ষত দেহকে ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শিখা দাস নামে ঐ যুবতী স্থানীয় একটি ধাবায় কাজ করতেন। গত বৃহস্পতিবার ধাবা থেকে বাড়ি ফেরবার পথে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। এদিন সকালে স্থানীয় মানুষজন মোহনা সাগরতীরে তার দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশের অনুমান এটা আত্মহত্যার ঘটনা। বেদে পাড়ার ঐ যুবতীর এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘দিন কয়েক ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা চলছিলো।’ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ যুবতীর স্বামীকে থানায় নিয়ে যায়। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
তবে অমরগিরিতে আত্মহত্যার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এলাকার বাসিন্দা সঞ্জীব চন্দর কথায়, ‘এখানকার সুপর্ণ সরণী নামে রাস্তাটা একটা খাড়াই পাহাড়ের ওপর এসে শেষ হয়ে গেছে। সেই পাহাড়ের কিনারা থেকেই বছরে প্রায় তিরিশ-চল্লিশ জন লোক আত্মহত্যা করে। স্থানীয় মানুষজনের মুখে খাদটার নামই হয়ে গেছে মরণখাদ। অত্যন্ত নির্জন এই অঞ্চলটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবার জন্য অনেকদিন ধরেই দাবী করছেন এলাকাবাসীরা। কিন্তু সেক্ষেত্রে এখানকার অধিবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে বলে প্রশাসন থেকেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন এই মৃত্যু আরো একবার প্রমাণ করে দিলো, এই এলাকাটা কতখানি ভয়ঙ্কর।

উত্তম মিত্রের ডায়রি
১২ই ডিসেম্বর, ২০১৮
বাবা আজ বললো, ‘তোকে নাবিকজেঠুর বাড়ি যেতে হবে। আমিই যাবো বলে ঠিক করেছিলাম, কিন্তু অফিসে কাজের খুব চাপ। তাই আমার পক্ষে এখন যাওয়া সম্ভব হবে না। তুই-ই যা। ওনাকে তো তুই ভালোমতোই চিনিস। আর উনিও তোকে চেনেন। কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’
বাবার কথায় আমি একটু অস্বস্তিতে পড়লাম। নাবিকজেঠুকে যে চিনি না তা নয়। কিন্তু যে লোকটাকে আমি প্রায় সাত-আট বছর দেখিনি, তাকে আজ হঠাৎ দেখতে গেলে কেমন লাগবে সেই ভেবেই আমি কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লাম। বাবা আমাকে হতবুদ্ধি দেখে আশ্বাস দিলো, জেঠুকে আগেভাগে ফোন করে সব কথা জানিয়েই আমাকে পাঠানো হবে। এই বলে বাবা তো আমাকে দিন তিন-চার পরে রওনা হতে বলে চলে গেলো। কিন্তু আমার কেমন কেমন লাগছে। একটা লোককে কতদিন দেখিনি। এ কথা ঠিক যে, যে জেঠু খুবই খোলামেলা মনের মানুষ। কিন্তু আজ এতগুলো বছর পর আবার তাঁর সাথে যখন দেখা হতে চলেছে, তখন কেমন লাগবে কে জানে? বাবার কথা তো ফেলতে পারি না।
নাবিকজেঠুর বাবার জেঠুর বড়োছেলে। পঁচিশ বছরের বড়ো এই দাদার সঙ্গে বাবার ভাব একেবারে অভিন্নহৃদয় বন্ধুর মতো। জেঠুর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা বাবার কাছে কত শুনেছি। দীর্ঘদেহী, স্বাস্থ্যবান মানুষটা ছোটবেলায় বেশ কয়েকবার এসেওছেন আমাদের বাড়িতে। কিন্তু বিশ বছর ভারতীয় নৌবাহিনীতে কাজ করে আর তারপরে প্রায় বাইশ বছর সরকারী চাকরি করার পর এখন তিনি আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে সমুদ্রের ধারে ছোট্ট বাড়ি করে থাকেন। সঙ্গে হরি নামে এক চাকর থাকে সর্বক্ষণের জন্য। বাবা তো বলে, ‘বৌ ম’রে যাওয়ার পর ওর মাথাটাই গেছে। না হলে এই বয়সে কেউ আপনার জনকে ছেড়ে দূরে থাকে?’ জেঠুর দুই ছেলে। বড়ো ছেলে থাকে কলকাতায়। আর.বি.আইয়ে কাজ করে। আর ছোটো ছেলে ডি.আর.ডি.ওর সায়েন্টিস্ট। হায়দ্রাবাদে আছে। দুজনেরই বিয়ে থা হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েও আছে। দুজনেই তাদের বাবাকে কাছে আনতে চায়। কিন্তু নাবিকজেঠুর এক জেদ। তিনি ঐ সমুদ্রের পাড় থেকে নড়বেন না। যদি বাবাকে চাও, তো তোমরা এখানে এসো।
এই তো হলো নাবিকজেঠুর কথা। এখন দু-তিনদিনের মধ্যে জোগাড়যন্ত্র করে বেরোতে হবে। কলেজের এখন ছুটি। আর এটাই বাবার আমাকে পাঠানোর মূল কারণ। যাই হোক, এখানে যা হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা পড়েছে, তাতে সমুদ্রের ধারে গেলে ভালোই লাগবে মনে হয়।


১৫ই ডিসেম্বর, ২০১৮
দুদিন লেখালিখি বন্ধ ছিলো। এর কারণটা অবশ্যই হলো যাওয়ার তোড়জোড়। নিজের জামাকাপড় গোছানো হয়ে গেছে। ট্রেনের টিকিট কেটে আগাম আসন সংরক্ষণ করে রেখেছি। আর হ্যাঁ, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, নাবিকজেঠুর সাথে কথা বলেছি। আমি, বাবা, মা তিনজনেই ভালোভাবে কথা বলেছি জেঠুর সাথে। কথা বলে মনে হলো, এখনও উনি আগের মতোই খোলামেলা স্বভাবের আছেন। আমার সাথে কথা শুরু হতেই তিনি বলে উঠলেন, ‘কি রে চ্যাঙ্গা বিশু। কেমন আছিস?’ উনি আমাকে ছোটবেলায় যে চ্যাঙ্গা বিশু বলে ডাকতেন, সেটা ওনার এখনও মনে আছে দেখে খুব ভালো লাগলো।
তবে আজ বাবার কাছে যেটা শুনলাম, সেটা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। বাবা জানালো, নাবিকজেঠুর ক্যান্সার হয়েছে। এই অবস্থায় ওনার পক্ষে অমন একটা অজ এলাকায় একা একা থাকাটা নিতান্তই অনুচিত। তাই মানিকদা, মানে জেঠুর বড়োছেলে চাইছে জেঠুকে কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু জেঠুকে রাজী করানোটাই মুশকিলের। যাই হোক, আমিও জেঠুকে বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারে বলবো। জানি না, উনি আমার কথা কতদূর শুনবেন। তবে বাবাকে দেখে মনে হলো, এ ব্যাপারে বাবা খুবই উদ্বিগ্ন। আর নিজে এখন যেতে পারছে না বলে আমাকে পাঠাচ্ছে। এই ফাঁকে অবশ্য আমার একটু ঘুরে আসা হবে।
একা একা দূরপাল্লার ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার আগে একবার হয়েছে। তবে কাল যে যাবো – এই নিয়ে একটা উত্তেজনাও মনে মনে কাজ করছে। না হলে, রাত এই সাড়ে বারোটার সময়েও আমার চোখে ঘুম থাকবে না কেন? কাল ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় ট্রেন। মা বলেছিলো, সাড়ে ন’টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে। সেই মতো ন’টার মধ্যে খাওয়াদাওয়াও শেষ করে নিয়েছিলাম। এখন আর ঘুমই আসছে না।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩২০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/১০/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast