গান্ধারীকে
গান্ধারী,
যে রাজ্যের রাজা অন্ধ, সে রাজ্যের রাণীর কি উচিত ছিল না, রাজকার্যে দ্বিগুণ সজাগ দৃষ্টি রাখা ? যে সন্তানের বাবা অন্ধ, তার মায়ের কি উচিত ছিল না তার বিষয়ে দ্বিগুণ সতর্ক হওয়া? করুণাময় ঈশ্বরের দান পরম মূল্যবান তোমার দৃষ্টিশক্তি সারাজীবন আবদ্ধ রইল একটুকরো বস্ত্রখণ্ডের আড়ালে, এক স্বৈরাচারী সন্তানের প্রায় অনাবৃত শরীরে বর্ষিত হওয়ার জন্য; তাও তা হল নিষ্ফল ব্যবহার, সে শক্তি তাকে রক্ষা করতে পারল না মৃত্যুর হাত থেকে।
যুগ যুগ ধরে নারীশক্তির অপব্যবহার করার এই দুঃসাহসিক মূর্খামি একমাত্র মানব জাতির পক্ষেই দেখানো সম্ভব হয়েছে। একজন বুদ্ধিমতী, বিচক্ষণা, চিন্তাশীলা নারীর শক্তি অব্যবহৃত রয়ে গেল অক্ষম স্বামীর কারণে, আর অপব্যবহৃত হল দুরাচারী সন্তানের কারণে। যে দৃষ্টি অনেক অন্যায়কে চিহ্নিত করতে পারত, অনেক দুর্বলতাকে নির্ণয় করতে পারত, অনেক ভুল সংশোধন করে দিতে পারত, অনেক পাপ প্রতিরোধ করতে পারত, তার এই চরম অপব্যবহার সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে গেল, উপরন্তু এই অর্থহীন সিদ্ধান্তের উপর পাতিব্রাত্যের অপরিসীম মহত্ব আরোপিত হল।
তুমি সহধর্মিণী। সমাজের শিক্ষা তোমায় স্বধর্মিণী হতে শেখায়নি। বেশ তো, সহ-সাফল্য থাক, সহ-কৃতিত্ব থাক, সহ-আনন্দ, সহ-দুঃখ, সহ-বেদনা থাক। কিন্তু কেন সহ-মরণ, সহ-পঙ্গুত্ব, সহ-অন্ধত্ব, সহ-অপারগতা, সহ-মূর্খামি ? দাম্পত্য সম্পর্কে তো নারীপুরুষ একে অপরের পরিপূরক। তাহলে কেন তুমি পুরুষের অক্ষমতার সঙ্গিনী হবে, কেন তোমার ক্ষমতার চর্চায় তার অক্ষমতার ক্ষতিপূরণ করবে না ? এ পোড়া সমাজ কবে বুঝবে যে, তোমাকে স্বধর্মিণী হতে না দিলে, কুরুক্ষেত্রে চিরকাল রক্তগঙ্গা বইবে ?
যে রাজ্যের রাজা অন্ধ, সে রাজ্যের রাণীর কি উচিত ছিল না, রাজকার্যে দ্বিগুণ সজাগ দৃষ্টি রাখা ? যে সন্তানের বাবা অন্ধ, তার মায়ের কি উচিত ছিল না তার বিষয়ে দ্বিগুণ সতর্ক হওয়া? করুণাময় ঈশ্বরের দান পরম মূল্যবান তোমার দৃষ্টিশক্তি সারাজীবন আবদ্ধ রইল একটুকরো বস্ত্রখণ্ডের আড়ালে, এক স্বৈরাচারী সন্তানের প্রায় অনাবৃত শরীরে বর্ষিত হওয়ার জন্য; তাও তা হল নিষ্ফল ব্যবহার, সে শক্তি তাকে রক্ষা করতে পারল না মৃত্যুর হাত থেকে।
যুগ যুগ ধরে নারীশক্তির অপব্যবহার করার এই দুঃসাহসিক মূর্খামি একমাত্র মানব জাতির পক্ষেই দেখানো সম্ভব হয়েছে। একজন বুদ্ধিমতী, বিচক্ষণা, চিন্তাশীলা নারীর শক্তি অব্যবহৃত রয়ে গেল অক্ষম স্বামীর কারণে, আর অপব্যবহৃত হল দুরাচারী সন্তানের কারণে। যে দৃষ্টি অনেক অন্যায়কে চিহ্নিত করতে পারত, অনেক দুর্বলতাকে নির্ণয় করতে পারত, অনেক ভুল সংশোধন করে দিতে পারত, অনেক পাপ প্রতিরোধ করতে পারত, তার এই চরম অপব্যবহার সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে গেল, উপরন্তু এই অর্থহীন সিদ্ধান্তের উপর পাতিব্রাত্যের অপরিসীম মহত্ব আরোপিত হল।
তুমি সহধর্মিণী। সমাজের শিক্ষা তোমায় স্বধর্মিণী হতে শেখায়নি। বেশ তো, সহ-সাফল্য থাক, সহ-কৃতিত্ব থাক, সহ-আনন্দ, সহ-দুঃখ, সহ-বেদনা থাক। কিন্তু কেন সহ-মরণ, সহ-পঙ্গুত্ব, সহ-অন্ধত্ব, সহ-অপারগতা, সহ-মূর্খামি ? দাম্পত্য সম্পর্কে তো নারীপুরুষ একে অপরের পরিপূরক। তাহলে কেন তুমি পুরুষের অক্ষমতার সঙ্গিনী হবে, কেন তোমার ক্ষমতার চর্চায় তার অক্ষমতার ক্ষতিপূরণ করবে না ? এ পোড়া সমাজ কবে বুঝবে যে, তোমাকে স্বধর্মিণী হতে না দিলে, কুরুক্ষেত্রে চিরকাল রক্তগঙ্গা বইবে ?
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এস,বি, (পিটুল) ১৯/০৪/২০১৪valo laglo. Amar patay amon-tron roilo
-
chandanlall bhattacharya ১৮/০৪/২০১৪ব্যাপারটাকে অন্য দৃষ্টিকোন থেকে দেখা যেতে পারে। মহাভারতই বলুন বা রামায়ন, এগুলো প্রকৃতপক্ষে নৈতিক শিক্ষার একটা মাধ্যম ।এখানে কাউকে ছোট বা বড় করার প্রচেষ্টা আদৌ আছে কিনা তা অনুসন্ধানের বিষয়। আমার মনে হয়েছে,এখানে বর্নিত প্রতিটি কাহিনি এক একটা অন্ধকার দিকের প্রতি ইশারা করছে। যদি এমনভাবে ভাবা যায় যে, প্রেমের আবেগেই হোক বা নিজের ভালবাসাকে সর্বসমক্ষে একটা মর্যাদা দেবার তাড়নায় হোক গান্ধারী নিজেকে স্বামীর যোগ্য স্ত্রী হয়ে চোখে বস্ত্রখন্ড বাঁধলেন । এটা প্রেমিকার আবেগকে মর্যাদা দিলেও একজন অন্ধ রাজার স্ত্রীর ক্ষেত্রে, শত পুত্রের জননীর ক্ষেত্রে কতটা হানিকর সেটা মহাভারতই প্রমাণ। এই কাহিনি প্রকান্তরে নারী জাতীকেই সচেতন করে দিতে চেয়েছে যে, আবেগের থেকে কর্তব্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।সেক্ষেত্রে গান্ধারীকে ছোট বা হেয় করার প্রশ্ন থাকে না। শুধু নারীই নয়, পুরুষ, সামাজিক আচার আচরন, চাল চলন, ব্যবহার সর্বক্ষেত্রেই মহাভারত বা রামায়ন উদাহরন সহযোগে নির্দেশ দিয়েছে। একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়,একই বিষয়ের ভাল ও খারাপের পরিনতির উদাহরন এখানে আছে। এবার বেছে নেওয়াটা ব্যক্তিগত বিষয়।আসলে দেখার বা ভাববার ভঙ্গীতেই এর তারতম্য । একটা খুব মোটা দাগের ভাবনা কিন্তু প্রচলিত আছে যে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের মূলে দ্রৌপদী - কথাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।