www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মরীচিকা


______
মেয়েটির নাম জানতাম না। ঠিকানা টাও
না। শুধু তার প্রতিদিনের রাস্তা টা জানতাম।
রাস্তার পূর্ব দিক থেকে আসতো মেয়েটা।
আমি বসতাম চা খেতে রাইসুল ভাইর
দোকানে। ঠিক বিকাল চারটা তের থেকে
আঠার’র ভেতর মেয়েটা কে দেখা যেতো।
কি অদ্ভুত সে মুহূর্ত। আমার ব্রেইন টা তখন
মাছির ব্রেইনে রূপ নিতো। ব্রেইনটা তখন এক
সেকেন্ডে ঘটে যাওয়া সব কিছু কে মাছির
ব্রেইনের মতো স্লো মোশন করে তিন
সেকেন্ড এ ফ্রেমিং করত। আমি তখন প্রায়
হিপনোটাইজড হয়ে যেতাম। সে যখন আমার
সামনে দিয়ে পশ্চিমের রাস্তা ধরে হঠাৎ
মোড় ঘুরে বাঁ দিকের রাস্তা ধরতো তখন
আমার বুকটা ধড়ফড় করে উঠতো। মেয়েটি শেষ
মুহূর্তে আড় চোখে আমায় দেখে নিতো।
চোখে চোখ পড়তেই ভেতরে ঘটে যেতো
বিস্ফোরণ আর আমার খাতায় জন্ম হতো
একটি করে কবিতার।
.
রাইসুল ভাই ছিলেন আমার বন্ধুবর আর খুব
মজার এবং গোপনে একজন সাহিত্যিক তবে
পেশায় চায়ের কারিগর। চা কে তিনি বলতেন
‘ছাঁকা পানি’। তিনি নিজেকে বলতেন ‘ছাঁকা
পানির কারিগর’। সেই রাইসুল ভাই একদিন
ঠাট্টা করে বলেই বসলেন, “কি হে ভাবের
কবি, বলি এভাবে চোখাচোখি আর কতদিন?
আর কতদিন ওই রমণীর তরে শ’ শ’ টাকার
কাগজ বিসর্জন? যাও না এবার একটু আগাও।”
আমি বললাম, “ঠিক আছে যাবো। কিন্তু আজ
আমায় এমন এক কাপ ছাঁকা পানি খাওয়াবে
যেন ভেতর টা ঝাড়া দিয়ে ওঠে।” রাইসুল ভাই
আমার কথা শুনে দুষ্টু হাসি হেসেছিলেন।
.
চারটা এগারো বাজতেই রাইসুল ভাই ধোঁয়া
ওড়া গাড়ো কালো রঙের এক কাপ চা এগিয়ে
দিয়ে বললেন, “রমণী কে না দেখে এতে চুমুক
দিস নে ভুলেও, খবরদার। চায়ের ঝাঁজে উল্টে
পড়তে পারিস। রমণীর খুনি রূপ দেখে এই
কাপে প্রথম চুমুক দিবি, কেমন? তারপর সোজা
কাপ রেখে পিছু নিবি। বুঝেছিস?” আমি
মাথা টা বাঁ দিকে কাঁত করে সায় দিতেই
রমণীর দেখা পেইয়েছিলাম। সাথে সাথে
চায়ের কাপে চুমুক দিতেই থর থর করে ঝাঁকি
দিয়ে কেঁপে উঠে বিস্মিতের মতো চোখ বড়
বড় করে রাইসুল ভাই এর দিকে তাকাতেই উনি
বলেছিলেন, “কি বুঝলি? এই মেয়ে এই এক
কাপ চায়ের চেয়েও নমনীয়। যা যা, ওই যে
তোর সুনয়না চলে যায়” আমি খুব সাহস নিয়ে
সেদিন তার পিছু নিয়েছিলাম। কিছুদুর
যাওয়ার পরেই মেয়েটি সোজা ঘুরে আমায়
ডাকলো,
: এই যে রোমিও, কি চাই? হুম?
- না কিছু না
আমি উল্টো পথ ধরতেই আমার ঘাড়ে ঝুলে
থাকা কবিতার খাতা আর বই বহনের ঝোলা
টা কে টেনে ধরলো ও।
:ব্যাগে কি? কবিতার খাতা? ও বাবা কবি
নাকি? এই শোন তোমার পাঞ্জাবী টা ময়লা
হয়ে গেছে। এই ময়লা পাঞ্জাবী পরে
মেয়েদের পিছু নিলে পাত্তা পাবে না তো
কবি। নতুন নতুন পিছু নেয়া শিখেছো তাই না?
আমিই কি তোমার প্রথম টার্গেট নাকি আগে
আরও কয়েক জনের পিছু নিয়েছ? হুম? বল বল।
-না আপনি প্রথম।
:হুম তো কি চাই? ভালোবাসা?
- ............
:বুঝলাম ভালোবাসা লাগবে না তাইতো?
-দেখুন আপনি বোধহয় জানেন না যে মৌনতা
সম্মতির লক্ষন।
:ওরে আমার লাজুক লতা প্রেমিক রে।
হাহাহাহাহাহাহা...... তো আমি যদি তোমায়
ভালবাসি তো কি দেবে আমায়?
-আমার তো ভালোবাসা ছাড়া কিছুই দেয়ার
নাই।
:ভালোবাসা? হাহাহাহাহাহাহাহা...। তা
বেশ। এ পাড়ার কোটিপতি বাপের ছেলে
এজাজ কে তো চেনো। ও সেদিন কি বলেছে
জানো? বলেছে ও আমাকে ভালবাসার সাথে
সাথে ভালো একটা বাসাও দেবে। সে বাসার
দরজায় আমার নামে ফলক থাকবে। ছ’ মাসে
একবার দেশের বাইরে নিয়ে যাবে ঘুরতে। কি
বুঝেছ কিছু? পারবে আরও বেটার কিছু দিতে?
-হ্যাঁ, খুব পারবো। প্রতিদিন আপনাকে নিয়ে
একটি করে কবিতা আর একটা করে বেলী
ফুলের মালা, চলবে?
:কি বললে তুমি? পাগল নাকি? কবিতা?
কবিতায় কি হয়? কবিতা আমি বুঝি না। ওতে
আমার পোষাবে না। আর গোলাপ, বেলি এসব
সেকেলে।
-আচ্ছা আপনার বড়লোক প্রেমিক কবিতা
বোঝে?
:ও কবিতা বুঝতে যাবে কোন দুঃখে? ও এসব
পাগলামিতে বিশ্বাসী না।
-দেখুন যিনি শিল্প বোঝেন না তিনি কিন্তু
মানুষ খুন করার মতো ভয়ঙ্কর অপরাধ করে
ফেলতে পারেন।
:আহা! আহা! মধু! মধু! এসব ভাষণ বইয়ে মানায়
বুঝেছ কবি? কবিতা আর কথায় পৃথিবী চলে
না। পৃথিবী চলে টাকায়, বুঝেছ? কাল থেকে
তোমায় যেন আর আমার পিছে না দেখি।
-যে মন কবিতা বোঝে না। তার মন টা তে খুব
বিষ। বিষের পিছে ছোঁটার মতো বোকা আমি
নই। .
এরপর আর আমি বিকেলে সে দোকানে
বসতাম না। মাস খানেক আগে একবার
শুনেছিলাম তার নাকি বড়লোক প্রেমিক
এজাজের সাথে বিয়ে হয়েছে। এরপর থেকে
তাকে নিয়ে আর কবিতা লিখতাম না। কাগজ,
কলম, ব্যাগ সব পড়ে থাকতো ঘরের কোনায়। ।
আজ অনেকদিন পর কবিতার ব্যাগ খুলে
লিখতে বসেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ রাইসুল ভাই
এসে জানালেন মেয়েটি তার বড়লোক
স্বামীর ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে
ঝুলছে। আমি খাতা কলম ফেলে ছুটলাম।
গিয়ে দেখলাম সিলিং আর ওর গলার সাথে
পেঁচানো ওড়না টা অনেক দামী। পরনের
ড্রেস টাও নাকি অনেক দামী মহিলারা
বলাবলি করছেন। সে ঘরে চলছে দামী এসি।
আহা! এই গরমের মাঝেও কি প্রশান্তি।
ভাবছিলাম সুখ খুঁজে ফেরা নাম না জানা
সুনয়না এই মেয়েটির মৃত্যু টাও কি শীতাতপ
নিয়ন্ত্রনে খুব শান্তি তে হয়েছে? গুঞ্জন
শুনছি তাকে নাকি খুন করে পালিয়েছে তার
বড়লোক স্বামী। আমি অবিশ্বাস করিনি।
কারন অর স্বামী কবিতা বুঝতো না।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৫৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/১০/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • এস এম সাব্বির ১৫/১০/২০১৫
    ভালো লাগলো
  • গল্পর মুল ভাব টা ভালো লাগল। তবে আরও সুন্দর করে লেখা যেত।
  • এইচ আই হাবীব ০৫/১০/২০১৫
    আমার কাছে লিখার মূল ভাব পরিষ্কার । কাব্য জগত্‍তে যাদের বিচরণ নেই তারাই হিংস্র । লেখক আপনি গল্পটা কাল্পনিক না বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষিতে লিখেছেন তা আমার জানা নেই ।তবে , আমি এমনটি হতে দেখেছি । ভালো লেগেছে গল্পটি . . .
  • গুছিয়ে লিখুন ভাই। ভাষার ওপর কাজ করা দরকার। এভাবে গল্প দাঁড়াবে না। আমরা সবাই জানি কবিতা না বুঝলেও , মানুষ সুন্দর , সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে।
 
Quantcast