www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ট্রেন জার্নি এন্ড দ্য গার্ল

2011 সাল ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাবো । খুলনা থেকে রাত আটটায় সৈয়দপুরের ট্রেন ধরে নাটোর স্টেশনে নামবো । সেখান থেকে ঢাকা-রাজশাহীর বাস ধরে সোজা ক্যাম্পাসের সামনে । সব পরিকল্পনা ঠিকঠাক । রাত আটটার ট্রেন আড়াইঘন্টা লেটে রাত সারে দশটায় ছাড়লো । যাত্রার শুরুতেই ঝামেলা ।
কানে হেডফোন দিয়ে Artcell এর "আমার পথ চলা" শুনতে লাগলাম । রাতের বেলা ট্রেনে জার্নি তাও প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা ব্যাপারটাতে বেশ থ্রিলার মুড থাকে । বাইরে থেকে চুপচাপ থাকলেও ভেতরে সবসময়ই অস্থির থাকি কেন যেন । এক যায়গায় বসে থাকতে ইচ্ছা হয় না । উঠে পড়লাম সিট থেকে । গিয়ে ট্রেনের দরজা পাশে ঠেশ দাড়িয়ে নতুন সিগারেটের প্যাকেটটা খুললাম । একটা বের করে ধরালাম । সিগারেট টানছি আর হেডফোনে System Of a Down এর সঙ্গে গলা মিলিয়ে গাচ্ছি and if u go I wanna go with u and if u die I wanna die with u Take ur hand and walk away....
: এই যে ভাই চিল্লানি টা থামান । ফাটা বাঁশের মত কানে লাগতেছে । রাত বারোটা বেজে পারলো না আপনি ঘুমের বারোটা বাজায় দিছেন । হুর মিয়া ।
কথা গুলো বলে মেয়েটা আমার পাশের সিটে বসে পড়লো । আমি হা করে শুনলাম কথাগুলো আর হযম করলাম । কাহিনী কি? ইনি কোত্থেকে উঠলেন? আমার পাশের সিট তো ফাকা ছিলো । ধুর । আমি আবার সিগারেট টানা শুরু করলাম । কিছুক্ষণ পর ।
:এই যে ভাই ঘুমুতে দেবেন? কি সিগারেট টানা শুরু করলেন? ফালান ঐটা । ফালান । গন্ধে নাড়ি উল্টায় আসছে ।
বলেই আবার সিটে গিয়ে বসলো আমি আবারও চমকে গেলাম এবং থমকে গেলাম । এর সমস্যা কি? আরে? সিগারেট না খেয়ে পাঁচ ঘন্টা কেমনে? মেজাজটা খুব গরম হয়ে গেল । এবার আমি গিয়ে আমার সিটে বসলাম । মেয়েটা চোখ খুলে একবার আমাকে দেখে আবার চোখ বন্ধ করলো । আমি ভালো করে মেয়েটাকে দেখে নিলাম । কি হতে পারে মেয়ে টা? চোর, বাটপার, ডাকাত, সিআইডি পুলিশ, আমার মতই পরীক্ষার্থী নাকি সাধারণ যাত্রী? ধ্যাত যা হয় হবে । উঠে গিয়ে আরেকটা সিগারেট ধরলাম ।
:এই যে মিস্টার দেখি সিগারেটটা ।
-কেন?
:দিতে বলছি?
- what? আপনি কে? আপনি বললেই সিগারেটেটা দিতে হবে?
:আমি দুটো টান দিবো । দেন
-কি? বুঝলাম না? কি করবেন? সিগারেট খাবেন?
:হ্যাঁ । একটা মানুষের ঘুম নষ্ট করতে আপনার বিবেকে বাধতেছে না এই সিগারেটের জন্য । দেখি কি আছে? ভালো লাগলে দুজনে সারারাত গল্প করবো আর সিগারেট খাবো আর ভালো না লাগলে ট্রেনের ভেতর সিগারেট খাওয়া বন্ধ । দেন ।
-আরে । আপনার ভালো লাগলেও তো বিপদ দেখি । আমি আপনার সাথে গল্প করবো কেন? তাহলে মোবাইলে ফুলচার্জ দিলাম কেন? সাথে আরেকটি ব্যাটারী ফুল চার্জ দিয়ে আনলাম কেন? আপনার বকবক শোনার জন্য? তাহলে গান কে শুনবে? আর সিগারেট ভাগ দিবো মানে পাগলে কামড়ায় তো । সিগারেট লিমিটেড । শেষ হয়ে গেলে পাবো কই? আপনি তো দেখি মহা সংকট । শর্ত দিছেন দুইটাই ঝামেলার ।
:ধ্যাত ছ্যামড়া
বলে মেয়ে টা চলে গেল । আমার এবার আতে ঘা লাগলো । ছ্যামড়া বললো কেন? আমার সিটে বসে আমা ওকে শুনায় শুনায় বলতে থাকলাম
-যে আমাকে ছ্যামড়া বলে সে নিজে ছেমড়ি, তার আব্বু ছেমড়ি, তার আম্মু ছেমড়ি, তার হাজবেন্ড ছেমড়ি, তার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি সহ সব ছেমড়ি । গুষ্টি ধরে ছেমড়ি ।
:হাহাহাহাহাহাহাহা..... । এই যে মিস্টার কিসে পড়াশোনা করেন?
-আপনার কি দরকার?
:না দেখে তো মনে হচ্ছে এইচ এস সি দিবেন বা দিছেন ।
-তো?
:না মানে S.S.C. তে বাংলায় পাস করছিলেন? এখনো লিঙ্গভেদ বোঝেন না তো তাই আর কি ।
বুঝলাম গড়ে সবাইকে ছেমড়ি বলাটা ঠিক হয়নি । কোথাও কোথাও ছ্যামড়া লাগানো উচিৎ ছিলো । ধূর । হেরে গেলাম । মেয়েটাকে রাগাতে পারলাম না । আরেকটা সিগারেট খাওয়া দরকার । উঠতে গেলাম দরজার কাছে ।
:শুনুন । সিগারেট খাবেন তো? আমি একটু আসি আপনার সাথে?
-আসুন । অবাক হওয়ার শেষ হচ্ছে না । কাহিনী কি? বুঝতেছি না ।
:আচ্ছা সিগারেট কেন খান?
-টেনশন বা চিন্তা । খুব খারাপ জিনিস । সিগারেটে প্রচুর ক্ষতিকর কেমিক্যাল থাকে নিকোটিন ছাড়াও । যেগুলো শরীরে ঢুকলে সেগুলো কে প্রটেক্ট করতে শরীর এবং ব্রেইন ব্যস্ত হয়ে যায় ।সাময়িক চিন্তার ছেদ ঘটে ।
:তাই নাকি? আমাকে দেবেন? আমার মাথায় অনেক চিন্তা । দুর হয় কি না দেখি ।
-কি হয়েছে বলবেন? যদি কিছু মনে না করেন ।
:আচ্ছা পাকশী ব্রিজ কতদুর জানেন?
-এই তো আর আধাঘন্টা দূরত্ব হয়তো । কেন?
:আমার খুব ভালো লাগে ব্রিজ টা দেখতে ।
-ও । কিন্তু আপনার কি হয়েছে বললেন না তো ।
:আমার? আমার একটা অতীত আছে । অতীতটার নাম শিহাব । ওর সাথে পরিচয় বছর দুই আগে । একই সাথে পড়াশোনা করতাম । ভালো ছেলে । স্মার্ট । খুব ভালো লাগতো । একই ক্লাসে পড়ার সুবাদে খুব ভালো বন্ধু হলাম আমরা । তারপর আস্তে আস্তে ঘনিষ্ঠতা বাড়লো প্রেমে গড়ালো মাসখানেক যেতে না যেতেই আবেগের বসে আমরা ওর এক বন্ধুর ফ্ল্যাটে গেলাম । আচ্ছা পাকশী ব্রিজ আসলে বলবেন তো । রাতের ভিউ টা দেখার খুব শখ ।
-জ্বি শিওর । তারপর বলুন ।
:তারপর ফাঁকা ফ্ল্যাটে আমরা নিজেরাই নিজেদের কে হারিয়ে ফেললাম । তিনঘন্টা থাকার পর আমি বের হতে চাইলে শিহাব বললো বসো । বসে থাকলাম । তারপর আরেকটা ছেলে ঢুকলো ঘরে । শিহাব দেয়ালের আড়াল থেকে একটা ক্যামেরা বের করে আমাকে বললো এই ভিডিও টা ক্যাম্পাসে ছড়াতে না চাইলে নিজেকে ওর কাছে সপে দাও । আমি পাশের রুমে আছি । আরও দুজন আসবে । কোন অভিযোগ যদি শুনি তাহলে কিন্তু পুরো ক্যাম্পাসে ভিডিও টা ছড়িয়ে যাবে । কথাগুলো শুনলাম । কাদতে পারলাম না । একটা চিতকার দিতে পারলাম না । তারপর.... একে একে বাকি দুজনো এসে ঘুরে গেলো । তারপর আমাকে ছেড়ে দিলো ।
-তারপর?
:পাকশী ব্রিজ দেখা যায়?
- হ্যাঁ । ওই তো ।
:কই দেখি? মেয়েটা দরজা ধরে একটু ঝুকে পাকশী ব্রীজের আগমন দেখছে । মেয়েটা হঠাৎ ঘুরে বললো
:ওই ভিডিও দিয়ে সে আমাকে আবারও বাধ্য করতো আরও কয়েকজন কে খুশি করতে । আমাকে পতিতা বানাতো ।
মেয়েটা আবার ঘুরে পাকশী ব্রিজ দেখছে । ট্রেন ব্রিজের ভেতর ঢুকছে । মেয়েটা খুব মন দিয়ে ব্রিজ দেখছে । আবার সে ঘুরে বললো
:কিন্তু আমি পতিতা হতে চাই না । বলেই সে ট্রেনের দরজার হ্যান্ডেল ছেড়ে দিলো । কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়ে টা লাফ দিল ট্রেন থেকে । দেখলাম ব্রিজের লোহায় কয়েকটি বাড়ি খেয়ে লোহার ফাকা দিয়ে মেয়ে টা পড়ে যাচ্ছে । নদীর পানিতে গিয়ে পড়বে দেহটা । নোংরা দেহটাকে নদীর পানি তে ধুয়ে পরিশুদ্ধ করবে মেয়ে টা ।
আরেকটা সিগারেট ধরালাম ।
টেনশন.........।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২৯০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/১১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুন্দর গল্প
  • হায়রে বন্ধুত্ব হায়রে প্রেম হায়রে ভালোবাসা। আই হেট অল অফ দা স্টুপিড এন্ড দিস টাইপ অফ সিহাব নামের অমানুষ গুলো কে। মেয়েটার আসলে আর কি করার থাকতে পারতো। অনেক ঘৃনা লাগলো নিজের উপর। আমরা ছেলে মানুষ..........
  • শুধু একটা কথা টেনশন........................
  • রূপক বিধৌত সাধু ০১/১২/২০১৪
    আহারে! কষ্ট লাগলো ।
  • অগ্নিপক্ষ ৩০/১১/২০১৪
    কিপ ইট আপ!
  • ৩০/১১/২০১৪
    ভালো ।
  • Pp ৩০/১১/২০১৪
    Gojob..boss
    • এটা কি কইলেন......। :)
      • Pp ০৪/১২/২০১৪
        বললাম
        হৃদয় ছুয়েছে
    • এটা কি কইলেন......। :)
 
Quantcast