www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সারপ্রাইজ

অর্ঘ্য আর প্রিয়ার বিয়ে হয়েছে প্রায় পনেরো বছর আর এই পনেরো বছরের তাদের দাম্পত্য জীবনও কেটেছে বেশ সুখেই। শুধু একটাই মুশকিল, সেটা হল অর্ঘ্য ভীষণ রকম কুঁড়ে প্রকৃতির। যে কোন কাজ তাকে দশ বার না বললে হয় না। আর হলেও কাজটা সে খুব আস্তে আস্তে করে। তাছাড়া আরও একটা ব্যাপার যেটা প্রিয়ার ভালো লাগে না, সেটা হল অর্ঘ্য ভীষণই আন-রোম্যান্টিক।
বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন রকম হিন্ট দেওয়ার পর ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ -র দিন ব্রেকফাস্ট টেবিলে কোন ভনিতা না করেই প্রিয়া অর্ঘ্যকে বলল, “দেখ, তোমার যদি আমাকে আর ভালো না লাগে তাহলে বলে দাও, আমি বাপের বাড়ি চলে যাব। এত আন-রোম্যান্টিক মানুষের সাথে আর থাকা যায় না।”
অর্ঘ্য মন দিয়ে ডিম পাউরুটি খেতে লাগল। প্রিয়ার কথার কোন উত্তরই দিল না। আর তাতে প্রিয়ার রাগ চড়ে গেল সপ্তমে। সে খাবার ফেলে উঠে গিয়ে বলল, “আমি যদি তোমার কাছে এতটাই অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাই যে আমার কথার উত্তর দেওয়ারও তুমি প্রয়োজন মনে কর না, তাহলে ঠিক আছে, আমি বাপের বাড়িই চলে যাব।”
উঠে গিয়ে প্রিয়া কাজে যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগল। ঘর থেকে বেরিয়ে যখন ওদের ছেলে রাহুলের ঘরের কাছে এল, তখন প্রিয়া শুনতে পেল অর্ঘ্য রাহুলকে বলছে, “দ্যাখ, এটা কিন্তু তোর মা-কে বলবি না। এটা ওর জন্য সারপ্রাইস...”
‘সারপ্রাইস’ কথাটা শুনে প্রিয়ার মন নেচে উঠল। ভ্যালেন্টাইন ডে-র সারপ্রাইস! রাহুলের স্কুলের বাস এসে দাঁড়িয়ে থাকবে বলে ও ব্যাগটা কাধে নিয়ে এক ছুট লাগাল। প্রিয়াকে দেখে অর্ঘ্য বলল, “তোমারও তো দেরী হয়ে যাচ্ছে। তুমিও ছুট লাগাও। নাহলে এখুনি আবার ফোনের ঘটা শুরু হয়ে যাবে। তোমার চাকরি করার কি যে দরকার আমি বুঝি না।”
অন্যদিন হলে এই কথা নিয়ে লঙ্কা কান্ড বেঁধে যেত ওদের মধ্যে। কিন্তু আজ প্রিয়ার মুড খুব ভালো, মনটাও নাচছে। তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে ‘আসছি,’ বলে কাজে বেরিয়ে গেল।
প্রিয়া একটা শাড়ির দোকানে কাজ করে। দোকানে গিয়েও প্রিয়ার কাজে মন নেই। শুধু বাড়ি যাওয়ার তাড়া। প্রতি দশ মিনিট অন্তর ঘড়ি দেখছে। গত পনেরোটা ভ্যালেন্টাইন ডে –তে কিছু না পাওয়ার দুঃখ যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে ওর মন থেকে। শেষে দুপুরের দিকে প্রিয়া ভাবল যে এই ভাবে ‘কি সারপ্রাইস?’ সেটা না ভেবে বরং ওর ছেলের স্কুলে গিয়েই তাকে জিজ্ঞেস করে নেবে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। সে চলে গেল রাহুলের স্কুলে। স্কুল তখন সবে ছুটি হয়েছে। সব ছেলেমেয়েরা ছুটোছুটি করছে সামনের মাঠটায়। রাহুলও নেমে গেছে ক্রিকেট খেলতে। প্রিয়া তাড়াতাড়ি ওর কাছে গিয়ে বলল, “রাহুল, তোর বাবা আজ কি একটা সারপ্রাইসের কথা বলছিল না?”
রাহুল বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করতে করতে বলল, “হ্যাঁ, বলছিল তো।”
“কি রে?” প্রিয়ার বুকের ভীতর যেন ট্রাম্পেট বাজতে লাগল।
এমন সময় বিপরীত দল অল-আউট হয়ে যাওয়ায় রাহুলের ডাক পড়ল, ব্যাট করার জন্য। নাম শোনা মাত্রই সে ছুট লাগাল। বলল, “ব্যাট করতে গেলাম। সারপ্রাইসটা......রান্নাঘরের...”
মাঠের মধ্যে জনা শয়েক ছেলেমেয়ের চেঁচামিচির মধ্যে এইটুকুই শুনতে পেল প্রিয়া। বকি কথা মিলিয়ে গেল কোলাহলে। কিন্তু প্রিয়া এতেই খুশি। যাক, নিজেই গিয়ে না হয় খুঁজে দেখবে একবার।
আবার দোকানে ফিরে এল ও। কিন্তু কাজ করতে ওর একটুও ইচ্ছে করছে না। অর্ঘ্যর এই সামান্য রোম্যান্টিকতাই প্রিয়ার কাছে বেশ অনেকটা পাওয়া। সে শরীর খারাপের অজুহাত দিয়ে ছুটি নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হল। মনে মনে ভাবল, “সিমা আর পৌষালীকে একবার ফোন করে আসতে বলি। এতদিন ‘অর্ঘ্য আন-রোম্যান্টিক’ বলে ওদের কাছে অনেক নিন্দা করেছি। তাই আজ ওর সাইপ্রাইস গিফটটাও ওদের না দেখালেই না।” আর তাছাড়া ও জানে যে অর্ঘ্যর সারপ্রাইসের কথা ওরা দুজন জানলে সারা কলকাতার জানতে একদিনও সময় লাগবে।
ফেরার পথে ও আমিনিয়া থেকে তিন প্লেট বিরিয়ানি আর চিকেন চাপ নিল রাতে খাবে বলে। সাইপ্রাইস গিফটের পর সারপ্রাইস পার্টি। বাড়ি ফিরে প্রিয়া দেখে ফোন পাওয়া মাত্র ওরা দুজন চলে এসছে।
বন্ধুদের নিয়ে ঘরে গিয়েই প্রিয়া বলল, “দাঁড়া, আমি রান্না ঘরে খাবারটা রেখে আসি।”
ওদের রান্নাঘরটা খুব একটা বড় নয়। বাড়ির অন্য ঘরগুলোর সাথে একটু বেমানান। বেসিনের পাশের স্ল্যাবটায় খাবারটা রেখে প্রিয়া তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল ওর সাইপ্রাইস গিফট। মিনিট দশেক পরেও যখন প্রিয়া এল না তখন সিমা আর পৌষালী রান্না ঘরের দিকে গেল।
সিমা বলল, “কি রে? কি খুঁজছিস?”
প্রিয়া আমতা আমতা করে বলল, “চানাচুর ছিল এক প্যাকেট। কোথায় যে রাখলাম?”
পৌষালী বলল, “ছাড় তো। এখন আর চানাচুর খুঁজে লাভ নেই। কি দরকারি কথা বলবি বলছিলিস, সেটা বল।”
প্রিয়া মনে মনে বলল, “সেই দরকারি কথাটাই তো খুঁজছি।”
কিন্তু আরও মিনিট পনেরো খুঁজেও যখন কিছু পেল না তখন প্রিয়ার একটু অভিমানই হল। ভাবল, আর খুঁজবেই না। কিন্তু সারপ্রাইসটা কি, সেটা যতক্ষণ না জানতে পারছে, ততক্ষণ ওর মনটাও শান্ত হচ্ছে না।
প্রিয়া যখন প্রায় ক্লান্ত হয়ে গেছে, এমন সময় রাহুল বাড়ি ফিরল। মা-কে রান্না ঘরে দেখে সে বলল, “মা, বাপির সারপ্রাইজটা দেখলে?”
‘সারপ্রাইজ’ কথাটা কানে আসতেই সিমা আর পৌষালী অবাক হয়ে প্রিয়াকে বলল, “সে কি রে প্রিয়া, তোর আন-রোম্যান্টিক বর তোর জন্য ভি-ডের সারপ্রাইজ গিফট এনেছে?”
প্রিয়ার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল। মাথা নিচু করে বলল, “কেন? ও বুঝি সারপ্রাইজ গিফট দিতে পারে না আমায়?”
তারপর রাহুলের দিকে ফিরে বলল, “গিফটটা কোথায় তুই জানিস?”
রাহুল বলল, “একি, তুমি এখনও বুঝতে পারনি?” তারপর রান্নাঘরের দরজার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলল, “গত দু সপ্তাহ ধরে তুমি বলছিলে না, ওই দেখ, বাবা কাল রান্নাঘরের দরজার হাতলটা ঠিক করে দিয়েছে।”
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৬২৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/০২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • শুভাশিষ আচার্য ১৫/০৩/২০১৬
    এটা পড়েছিলাম। দারুন গল্প এটা।
  • রুমা ঢ্যাং ২৯/০২/২০১৬
    হাহাহা। এত আনরোমান্টিক! মজা পেলাম বেশ।
  • সাইদুর রহমান ২৮/০২/২০১৬
    খুবই মজার গল্প।
  • ধন্যবাদ দাদা।
  • চন্দ্রাবলী ২৪/০২/২০১৬
    সত্যি ভীষণ আনরোমেন্টিক বর
    হা হা হা
    ❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤ অসাধারণ
  • চমৎকার!!!!!!
  • আশিস চৌধুরী ২৩/০২/২০১৬
    অভিষেক দারুণ সারপ্রাইজ!আমার শুভেচ্ছা।
  • সব্যসাচী বিশ্বাস ২৩/০২/২০১৬
    ফাটাফাটি!
  • রুবি ২৩/০২/২০১৬
    সারপ্রাইসটা সত্যিই দারুণ।
  • পাপিয়া অধিকারী ২৩/০২/২০১৬
    হা হা হা।
    দারুণ! দারুণ!
  • অভিষেক এটা যা তা। আমার জীবন কাহিনী লিখবে তো, বলে নেবে না ? এখন যে পড়বে সেই হাসবে।
    • অভিষেক মিত্র ২৩/০২/২০১৬
      হা হা।

      ধন্যবাদ দেবব্রত বাবু। আমার বন্ধুরা যারা আমার গল্প পড়ে, তারা বদনাম দিত যে আমি শুধুই ভূত আর অলৌকিক গল্প লিখি। তাই এটা একটু স্বাদ বদল আর কি।
  • তপন দাস ২২/০২/২০১৬
    হা হা হা । দারুন!
  • দেবাশীষ দিপন ২২/০২/২০১৬
    হা হা হা খুব মজা পাইলাম।।খুবই চমৎকার।
  • দারুন আন রোমান্টিক গল্প ...!! হা হা হা হা হা।
  • আজিজ আহমেদ ২২/০২/২০১৬
    ভেরী কিঊট। ভাল লাগলো অভি।
    দু-এক জায়গায় টাইপো আছে।
 
Quantcast