নেকড়ের থাবা
এ্যালার্মটা বাজতেই ঘুম ভেঙে গেল অচিন্তবাবুর। দেখলেন ঠিক সাড়ে পাঁচটা বাজে। হাতমুখ ধুয়ে তিনি বেড়াতে বেরিয়ে গেলেন, নিয়ম মাফিক। লেকের ধারে আধঘণ্টা হেঁটে যখন পার্কের কোনার একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলেন। এখানে বলে রাখি, অচিন্তবাবু হলেন ডাঃ অচিন্ত চৌধুরী। বয়স প্রায় পঞ্চান্ন। কলকাতার এ্যাপোলো হাসপাতালের চিফ কারডিওলজিস্ট। গত বিশ বছর কলকাতায় বসবাস করলেও ওনার আসল বাড়ি সুন্দরবন অঞ্চলে। এখন আর সেখানে কেউ নেই। পিতা মাতার মৃত্যু হয়েছে তাও আট বছর হয়ে গেল। স্ত্রীও গত হয়েছেন বছর দুই আগে। একমাত্র কন্যা সুনিপা বিয়ে করে আমেরিকায় চলে গেছে। যাই হোক, তখনই অতনুবাবু ওরফে অতনু দত্ত হাফাতে হাফাতে এসে হাজির হলেন। এনিও ডাক্তার, তবে চাইল্ড স্পেশালিষ্ট।
"কি বিশ্রী ব্যাপার বলুন তো?" বললেন ভদ্রলোক।
যে কোন সাধারণ ক্রাইম রিপোর্টই যে তাকে বিচলিত করে দেয় এটা বেশ ভালো করেই জানেন অচিন্তবাবু। হালকা হেঁসে বললেন, "কি হল আবার? খুন?"
"প্রায় সেই রকমই দাদা," বেঞ্চে বসে একটা সিগারেট ধরালেন অতনু দত্ত।
"মানে? খুনের মত আবার কি?" প্রশ্ন করলেন অচিন্তবাবু।
"ডুয়ার্শের ওদিকটায় রায়গড় বলে একটা এস্টেট আছে। ওখানে নাকি ইদানীং মানুষখেকোর আগমন ঘটেছে। মাঝে মধ্যেই নাকি গরু, বাছুর, ছাগল নিয়ে যাচ্ছে। এই তো দিন দুয়েক আগে নাকি একটা তিন বছরের ছেলেকেও নিয়ে গেছে। হরেন্ডাস ব্যাপার মশাই।" এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন অতুনবাবু।
"মানুষখেকো মানে, বাঘ?" কৌতূহল হল অচিন্তবাবুর।
"আমিও তো তাই ভেবে ছিলাম। কিন্তু বলেছে নেকড়ে। নেকড়ে আবার মানুষখেকো হয় নাকি?"
"হতেও পারে। এতে আর আপনার কি করার আছে বলুন? বন দপ্তর থেকে যা করবে তাই, আর কি। চলুন এক কাপ চা খাওয়া যাক।" এই বলে দুজনে চলে গেল পিন্টুর চায়ের দোকানে।
বাড়ি ফেরার পথে অচিন্তবাবুর আবার মনে পড়ে গেল কথাটা। জায়গাটার কি যেন নাম বললেন অতনুবাবু? হ্যাঁ, রায়গড়। কোথায় শুনেছেন যেন নামটা। ঠিক মনে পড়ল না অচিন্তবাবুর। মনে মনে ভাবলেন, যে বছর দশেক আগে হলে না হয় একবার যেতেন শিকারের লোভে। এখন আর নয়।
বিকেলে বাড়ি ফিরে সোফায় গা এলিয়ে দিলেন ডাঃ অচিন্ত চৌধুরী। আজ রুগীর চাপ একটু বেশিই ছিল। তার উপরে দুটো সার্জারি। ভীষণ ক্লান্ত বোধ করছেন। এখন আর এত খাটনি পোষায় না। কদিন একটু ঘুরে এলে ভালোই হত। চাকর দিনু এক গ্লাস শরবত আর কর্ডলেস ফোনটা নিয়ে এল। হেঁসে বলল, "বাবু, ফোন।"
বিরক্তির সাথে ফোনটা নিয়ে কানে দিলেন অচিন্তবাবু।
"হ্যালো?"
"হ্যালো, কে অচিন্ত? চিনতে পারছিস?" ওপাশ থেকে অচিন্তবাবুর খুব পরিচিত কণ্ঠস্বর বলে উঠল। ওনার চিনতে একটুও অসুবিধে হল না।
"আরে বিপুল যে? কতিদিন পর ফোন করলি? কেমন আছিস ভাই?"
বিপুল দাস অচিন্তবাবুর স্কুলের বন্ধু। স্কুলজীবনের বাকি কারুর সাথে যোগাযোগ না থাকলেও বিপুল বাবুর সাথে যোগাযোগ কোন দিনই ছিন্ন হয়নি। স্কুল শেষ করে বিপুল কর্মসুত্রে উড়িষ্যা চলে যায়। মাস ছয়েক আগে ভি আর এস নিয়ে ফিরে আসে ফিরে আসে কলকাতায়। তারপর আর কথা হয়নি ওর সাথে, দেখাও হয়নি।
"ভালো আছি রে। তোর কি খবর? নিপা কেমন আছে?"
এদিক ওদিকের দুয়েকটা কথার পর বিপুলবাবু বললেন, "তোকে কিন্তু একটা বিশেষ কারনে ফোন করেছি। একটা নিমন্ত্রণ আছে তোর জন্য।"
"কেন রে, আবার বিয়ে করছিস নাকি?" মজা করে বলল অচিন্তবাবু।
"না, রে ভাই। একটা করেই খুব ভুগেছি ভাই। আর না। আসলে আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তির একটা অংশ ছিল ডুয়ার্শের এদিকটার। রায়গড় এস্টেট। এই প্রাপ্তিটা হয়েছে মাস চারেক আগে। একটু গুছিয়ে নিতে সময় লাগল আর কি। তাই নিমন্ত্রণ।"
বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল অচিন্তবাবুর। একেই বলে কাকতালীয়। সকালেই শুনলাম রায়গড় আর বিকেলে সেখানেই নিমন্ত্রণ।
"তা কবে যাব বল। আমিও ভাবছিলাম কদিন কোথাও থেকে একটু ঘুরে এলে ভালো হয়," এক কোথায় রাজি হয়ে গেল অচিন্তবাবু। অনেক কারন কাজ করছে তার মাথায়।
"পরশু তিস্তা তরসা ধরে চলে আয়ে। স্টেশনে আমার গাড়ি থাকবে। তুই টিকিট কেটে জানাস।"
"সে তো খুব ভালো কথা। ঠিক হ্যায়। তা হলে তাই কথা রইল।"
"একটা কথা বলি," একটু আমত আমত করে বলল বিপুলবাবু, "তোর শিকারের নেশাটা এখনো আছে?"
"শিকার করা বারণ। নেশা থাকা আর না থাকা। তা হঠাৎ এই প্রশ্ন?" বুকটা ঢিপঢিপ করছে ডাঃ অচিন্ত চৌধুরীর।
"না মানে, একটা... আনিস না তোর বন্দুকটা। এলে বলব, কেমন?"
ফোনটা রেখে চুপচাপ বসে আছে অচিন্তবাবু। সেক্রেটরিকে ফোন করে একটা তিস্তা তরসা এক্সপ্রেসের টিকিট কাটতে বলে দিলেন।
জলপাইগুড়ি স্টেশনে অপেক্ষা করছিল বিপুলবাবুর গাড়ি। ড্রাইভার একটা বড় কাগজে তার নাম লিখে অচিন্তবাবুকে খুঁজছিল। গাড়ি করে রায়গড় পৌঁছতে লাগল পাক্কা তিন ঘণ্টা। গাড়ি বারান্দায় দাঁড়াতেই বেরিয়ে এলেন বিপুলবাবু। ছমাসে চেহারা বেশ পাল্টেছে তার, ভাবলেন অচিন্তবাবু।
"একটু মোটা হয়েছিস মনে হচ্ছে?" হাত মিলিয়ে প্রশ্ন করলেন অচিন্তবাবু।
"তা একটু হয়েছি বৈকি," হেঁসে বললেন বিপল দাস।
বিপুলবাবুর বাড়িটা প্রায় একটা প্রাসাদসম। দেখলেই বোঝা যায় এই বয়স একশো বছরের কম নয়। ঘরে ঢুকে বিপুলবাবুর সৌন্দর্যজ্ঞান সম্পর্কে তার ভুল ধারনা শুধরে নিলেন অচিন্তবাবু। বিশাল বিশাল ওয়েল পেন্টিং ঝুলছে দেওয়ালে, দামি দামি আসবাবপত্রে সাজানো ঘরটা।
"এ তো রাজার বাড়ি রে, বিপুল," বললেন অচিন্তবাবু।
দুপুরে খেতে বসে অচিন্তবাবু বললেন, "তা বন্দুকটা আনতে বললি হঠাৎ?"
প্রশ্নটা যেন শুনতেই পেলেন না বিপুলবাবু। উলটে প্রশ্ন করলেন, "তা নিশানাটা ঠিকঠাক আছে তো? না প্রাকটিসের অভাবে গেছে সেটা।"
"তা আছে। আমি কলকাতায় একটা সুটিং ক্লাবের সদস্য। তবুও আগের মত অভেদ্য নাও হতে পারে," খুব সন্তর্পণে ইলিশ মাছের কাটা বাছতে বাছতে বললেন অচিন্তবাবু।
"তোকে আসতে বলার আর একটা কারন হয়তো তুই আন্দাজ করতে পেরেছিস। খবরের কাগজ যখন পড়িস, তখন নিশ্চই জানতে বাকি নেই এখানের মানুষখেকোর কথাটা।"
অচিন্তবাবু মাথা নেড়ে জানালেন যে তিনি জানেন।
বিপুলবাবু বলে চললেন, "অবসর নেওয়ার পর কলকাতার ভিড় ভাট্টা আর ভালো লাগছিল না। এইখানের কথা শুনে তাই ঠিক করলাম জীবনের শেষ কটা দিন এখানেই কাটাব, প্রকৃতির কাছাকাছি। তা ছাড়া আমার যে একটু লেখালিখির অভ্যাস আছে সেটা তো তুই জানিস। একটা উপন্যাস লেখার চেষ্টা করছি। আর তার জন্য এই স্থানটা পারফেক্ট। তা এখানে আসার পরই শুনি এই মানুষখেকোর কথা। আমার ক্ষেতের মুজুররাই প্রথম বলে। আমি যে একসময় একটু আধটু শিকার করতাম সেটা তারা জেনেই আমাকে অনুরধ করে কিছু করার জন্য। আমিও খবর দিই বন দপ্তরে। কিন্তু কোন ফল হয়নি। তারপর ঠিক করি আমি নিজেই যাব। কিন্তু অভ্যেস নেই বলে ঠিক সাহস হল না একা যাওয়ার। তাই ভাবলাম, তুই যদি রাজি থাকিস তাহলে সেই পুরানো দিনের মত একসাথে জাওয়া যাবে। কি বলিস?"
"সে তো উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু একটু বিস্তারিত না জানলে প্লান করা মুশকিল," বললেন অচিন্তবাবু।
"দেখ, বিস্তারিত আমি যা জেনেছি তা হল, এই জঙ্গলে এক ধরনের নেকড়ে জাতীয় পশু আছে। আজ নয় বহু বছর ধরে। যা আশে পাশের গ্রাম থেকে গরুটা, ছাগলটা নিয়ে যায়। এমন কি মাঝে মাঝে মানুষের বাচ্চাও। এই ফলে গ্রামের লোকেরা বিকেলের পর বাড়ি থেকে বেরোয় না। সন্ধ্যা বেলায় রান্নার লোক আসে না, দারয়ান পাহারা দিতে চায় না, ইত্যাদি। আমি পড়েছি ফ্যাসাদে।"
"টম্যাটোর চাটনি খেতে খেতে থালা থেকে মুখ না তুলেই বললেন অচিন্তবাবু, "নেকড়ে জাতীয় পশু মানে? নিশ্চিত নয়?"
"না মানে কেউ কোনদিন দেখিনি পশুটাকে। কিন্তু একটা ছাগলের আধ খাওয়া দেহ পাওয়া গেছিল। কামড়ের দেগ, আঁচড়ের ক্ষত দেখে আমার মনে হয়েছে নেকড়ে। এখন একটা না একাধিক তাও জানি না।"
"একটাই হবে। কারন এই ধরনের মানুষখেকো সাধারনত একটাই হয়। আমার অভিজ্ঞতা তো তাই বলে," বললেন অচিন্তবাবু।
হাত মুখ ধুয়ে বারান্দায় বসে দুই সিগারেট খাচ্ছিল দুই বন্ধু। খানিকক্ষণ অচিন্তবাবু সিগারেটটা একটা গাছের গুড়ি লক্ষ্য করে ছুড়ে দিলেন। তারপর বাঁ হাত দিয়ে ডান হাতের আঙুল মটকাতে মটকাতে বললেন, "গ্রামের কেউই জন্তুটাকে দেখেনি?"
"দেখেছে, একটা বাচ্চা। আমার বাগানের মালির ছেলে," বলল বিপুলবাবু।
"একবার কথা বলা যায় তার সাথে?"
"হ্যাঁ, সে আর এমন কি। আমি কথা বলেছি। কোন লাভ হয়নি। তুই দেখ। কাল সকালে ডাকিয়ে দেবখন।"
এই বিষয়ে সে দিন আর কোন কথা হয়নি। পুরানো দিনের গল্প করেই কাটিয়ে দিয়েছে সন্ধ্যাটা। অচিন্তবাবু বলেছেন একবার বেরবেন কিন্তু বিপুলবাবুর জোরাজুরিতে তা আর হয়নি।
পরের দিন সকালে মালি তার ছেলেকে নিয়ে হাজির। বিপুলবাবু বললেন, "রামদিন, তোমার ছেলের নামটা যেন কি?"
"হরিপদ, হুজুর," সংক্ষেপে উত্তর দিল রামদিন।
ছেলেটাকে দেখেই মনে হচ্ছে যে সে বেশ ভয় পেয়েছে এখানে আসতে বলায়। অচিন্তবাবু তার কাঁধে হাত রেখে বললেন, "বাবা, তুমি দেখেছো বাঘটাকে?"
একটু জড়তা কাটিয়ে ছেলেটি বলল, "বাঘ নয় বাবু, নেকড়ে। আমি টিভিতে দেখেছি। গায়ের রঙ কালো, ইয়া বড় বড় লোম। লেজটা কিন্তু খুব একটা বড় নয়।"
"কোথায় দেখেছিল নেকড়েটাকে?"
"সে যে, যেদিন বিশুকাকার ছাগলটা নিয়ে গেল, আমি জল খেতে উঠেছিলাম। রাত তখন প্রায় দুটো। জঙ্গলের দিকটা থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এল ঐ নেকড়েটা। আমি তো ভয় সিটয়ে গেছিলাম।"
মালি আর হরিপদ চলে গেলে অচিন্তবাবু প্রশ্ন করলেন, "গ্রামের দিকটায় রাতের বেলা আলো থাকে?"
ওনার ইশারা বুঝতে পেরে বিপুলবাবু বললেন, "তা খুব একটা থাকে না। কেন ওর কথা কি তোর বিশ্বাস হচ্ছে না?"
"বিশ্বাসের প্রশ্ন নয়, শিকার যদি করতেই হয় তবে আরও বিস্তারিত জানতে হবে। নেকড়ে হলে মাচা বাধতে হবে উপর, বেশ উচুতে। না হলে ব্যাটা লাফিয়ে উঠে আসবে। আর দুটো কাজ করতে হবে তার আগে," পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে একটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন অচিন্তবাবু।
"কি কাজ?"
"একবার গ্রামের দিকটায় যাব। একটু জিজ্ঞাসা বাদ করার আছে।"
"কাকে? গ্রামের লোকেরা তো কিছুই দেখেনি।"
"তা দেখেনি, তবে কি কি নিয়ে গেছে তা তো জানা যাবে। তার থেকেই নেকড়েটার আয়োতন সম্পর্কে একটা ধারনা করা যাবে। শত্রুর মোকাবিলা করার আগে তার সম্পর্কে যতটা সম্ভব জেনে নিতে হবে।"
"সে আর কি ব্যাপার। আজই দুপুরের দিকে চল। খেয়ে দেয়ে দুটো নাগাদ বেরিয়ে যাব।"
"আচ্ছা, আর..."
"কি?"
"একবার জঙ্গলের দিকটায় যাব।"
"কি? পাগল হলি নাকি?" প্রায় আতঙ্কিত হয়ে বললেন বিপুলবাবু।
"পাগল হব কেন? জানতে হবে না কোন দিকটায় বাসা করেছে। না হলে জঙ্গলের পুবে মাচা বাঁধব আর নেকড়ে আসবে পশ্চিমে," হালকা হেঁসে বললেন অচিন্তবাবু।
"শোন, বন বিভাগের লোক তো গেছিল কদিন আগে। কিছুই পায়নি। সাড়া জঙ্গল চষে ফেলেও কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি পশুটার। শুধু একটা আধ খাওয়া ছাগলের দেহ পাওয়া যায়। তোকে বলছিলাম না। শুধু ঐ পাহাড়ের দিকটায় দেখে নি।"
"কেন? দেখিনি কেন? তুই গ্রামের অবস্থান যা বলেছিস তাতে তো ওদিকটার থেকেই আসার চান্স সবচেয়ে বেশি," বেশ অবাক হয়েই বলল অচিন্তবাবু।
"না, মানে, ওদিকটায় বুনো হাতির আড়ত আছে। ওদিকে যেতে কেউ আর সাহস পায়নি," একটা নিঃস্পৃহ হাঁসি হেঁসে বললেন বিপুল দাস।
"আচ্ছা, তাহলে জঙ্গলে যাওয়া বাদ। মাচাটা গ্রামের দিকটাতেই কর হবে। আমি কাল সকালে দেখিয়ে দেব। বলিস একটু শক্তপোক্ত মাচা বাধতে।"
গ্রামের লোকেদের কাছ থেকে তেমন কিছুই জানা গেল না। কেউ দেখেনি পশুটাকে। যে যার আন্দাজ মাফিক একটা গল্প দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। যা হয় আর কি। গ্রামের একটা বৃদ্ধের কাছ থেকে একটা কাজের কথা জানা গেল। এই মানুষখেকো নেকড়ে নাকি বহু বছর থেকেই আছে এখানে। প্রায় বছর ত্রিশেক। এই ঘটনাও ঘটছে অনেকদিন ধরে। এতদিন বাইরের লোক জানত না, বিপুলবাবু বন দপ্তরে খবর দেওয়ার পর খবরটা ছড়িয়ে পড়ে। আর নেকড়েও আছে একাধিক। কারন আগে দুজন শিকারি দুটোকে মেরেছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আবার দিন কয়েক পর আক্রমন শুরু।
"তা মৃত পশুগুলো আপনি দেখেছেন?" প্রশ্ন করল অচিন্তবাবু।
"তা দেখেছি বাবু, ওগুলো নেকড়েই," বলল সেই বৃদ্ধ লোকটা।
বাড়ি ফেরার পথে অচিন্তবাবু বললেন, "আরও একটা কাজ করতে হবে ভাই বিপুল।"
"বল, শুধু জঙ্গলে যেতে বলিস না।"
"না না, বনে যেতে হবে না। যেতে হবে বন দপ্তরে। আগে যে দুজন শিকারি নেকড়ে মেরেছিলেন তাদের ফোন নম্বরটা প্রয়োজন। কিছু তথ্য পাওয়া যাবে।"
"সেটা আবার কোন ব্যাপার নাকি। এখানের রেঞ্জার আমার খুব পরিচিত। আমি তাকে ফোন করে জেনে নেব।"
বাড়ি ফিরে বন দপ্তরে থেকে নম্বরগুলো পেতে বেশি সময় লাগলো না। কিন্তু নম্বরগুলো পেয়েও খুব একটা লাভ হল না। প্রথমজনের নম্বরে ফোন করতে ওপাশ থেকে বলল এটা রং নম্বর। আর দ্বিতীয়জন নাকি একজন সাহেব ছিল, নাম রবার্ট হিউয়েন। শিকারের পরেরদিন কাউকে কিছু না জনিয়েই সে চলে যায়।
সন্ধ্যে হলে দুজনে বেরিয়ে গেল মাচার উদ্দেশ্যে। অন্যদিন হলে বিপুলবাবু সন্ধ্যা বেলায় বেরতেনই না। কিন্তু আজ ভয়টা অনেক কম। বন্ধুর উপস্থিতি যেন কমিয়ে দিয়েছে ভয়টাকে।
গ্রামের একটু কাছাকাছিই বাঁধা হয়েছে মাচাটা। একটা ছগল বাঁধা আছে, টোপ হিসাবে। রাইফেলটা পাশে রেখে চুপচাপ বসে আছেন দুজন। ঘন জঙ্গল। আকাশ ছোঁয়া সব গাছে ভরা। অন্ধকারে কিছুই ঠিক করে বোঝা যাচ্ছে না। তাও বেশ কিচ্ছুক্ষন থাক ফলে একটু পরিষ্কার। আঁধারটা চোখে সয়ে গেছে। চারিদিকে একটা অস্বস্তিকর নিস্তব্ধতা। মাঝে মাঝে এক একটা ঝিঁঝিঁর ডাক সেই নিস্তব্ধতা ভেঙে খানখান করে দিচ্ছে। কিন্তু নেকড়ের দেখা নেই। বেশ কিছুক্ষন এদিক ওদিকের ঘাস খেয়ে ছাগলটাও শান্তিতে ঝিমোচ্ছে। সারা রাত কেটে গেল, নেকড়ে এল না।
এই একই ভাবে কাটল আরও একটা রাত। কিন্তু তৃতীয় রাতে অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটল। প্রায় যখন রাত দেড়টা, অচিন্তবাবু দেখলেন পাহাড়ের ওই দিকটার ঝোপের ভিতর কি একটা যেন নড়ছে। আস্তে আস্তে ছায়ামূর্তিটা বেরিয়ে এল ঝোপের পিছন থে অচিন্তবাবুর মনে হল এই পশুর দৈর্ঘ প্রায় ফুট ছয়েক। অন্ধকারে দেখলেন নেকড়ের চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। তারপর একটা রক্ত হিম করা চিৎকার। অচিন্তবাবুর জামার আস্তিনটা খামচে ধরেছে বিপুলবাবু। উনি বুঝতে পারলেন, বন্দুক ওঠানোর শক্তি আর বিপুলবাবুর নেই।
খুব সন্তর্পণে রাইফেলটা ওচালেন অচিন্তবাবু। সামান্য শব্দ হলেই নেকড়েটা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যাবে। আস্তে আস্তে নেকড়েটা এগিয়ে যাচ্ছে ছাগলটার দিকে। ছাগলটা ভয়ে ডাকতে শুরু করেছে জোরে জোরে।
অচিন্তবাবুর অভ্যাস নেই অনেকদিন। পারবেন তো? বনানীর নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে দুটো ফায়ারিং-এর শব্দ হল। গুড়ুম! গুড়ুম! আর তার সাথেই একটা রক্ত জল করা নেকড়ের ডাক। এই ডাকটা একটু অদ্ভুত লাগলো অচিন্তবাবুর। নেকড়ের আওয়াজ এত তীক্ষ্ণ হয় না। ঠিক যেন মানুষের চিৎকারের মত শোনাল। উনি যদিও কোনদিন নেকড়ে শিকার করেননি, তবুও কোন পশুর স্বর এত তীক্ষ্ণ হয় না।
মাচার উপর থেকে অচিন্তবাবু দেখতে পাচ্ছেন একটু দূরে নেকড়ের বিশাল শরীরটা ছটফট করছে। আস্তে আস্তে এবার শান্ত হয়ে গেল দেহটা।
ধীরে ধীরে মাচা থেকে নামলেন দুজন। অচিন্তবাবুর আস্তিনটা এখনও ছাড়েননি বিপুলবাবু। কাছে গিয়ে দেখলেন এখনও একটা মৃদু কম্পন আছে নেকড়েটার। ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে নেকড়েটার মুখে দু ফোঁটা জল ফেললেন। এটা শিকারিদের কোড অফ ওনার। তারপর রাইফেলটা নেকড়েটার মাথায় ঠেকিয়ে আবার ফায়ারিং করলেন। এইবার দেহটা পুরোপুরি শান্ত হয়ে গেল। পকেট থেকে টর্চ বের করে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলেন নেকড়েটাকে। সাধারণ নেকড়ে থেকে এটা বেশ আলাদা। হাত দিয়ে গায়ের লোম সরিয়ে দেখলেন চামড়ার রঙ সাধারন জন্ত জানোয়ারের থেকে বেশ পরিষ্কার।
"সাহেব নেকড়ে মনে হয়?" হেঁসে বললেন বিপুলবাবু। নেকড়েটা মরে যাওয়াতে উনি আবার পুরানো সাহস ফিরে পেয়েছেন।
তিনদিন মাচায় বসে শরীরটা ভীষণ খারাপ হয়েছে অচিন্তবাবুর। এইখানে রাতের বেলায় ঠাণ্ডাটাও বেশ পড়ে। ঠাণ্ডায় চামড়াটা ফেটে গেছে। একটা বিদেশি ক্রিম লাগিয়ে শুয়ে পড়েন অচিন্তবাবু। মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙে যায়। প্রচন্ড ব্যাথা করছে কোমরে। উনি জানেন এটা খুব সাধারন ব্যাপার। তিন রাত কাঠের মাচায় বসে কোমর ব্যাথা। এই ব্যাথায় আগেও তিনি ভুগেছেন। তার ওষুধও এনেছেন সাথে। কিন্তু এত মারাত্মক ব্যাথা আগে কোনদিন হয়নি। হাত বাড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ওষুধটা আনতে গিয়ে ওটা হাত ফসকে মাটিতে পড়ে গেল। অগত্যা বিছানা ছেড়ে উঠতেই হল। দাঁড়াতে গিয়ে বুঝলেন কোমরের ব্যাথাটা অসহ্য। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না, একটু কুঁজো হয়ে দাঁড়ালে যেন সুবিধে হচ্ছে। কোনক্রমে হাতড়ে হাতড়ে আলোটা জ্বালালেন। উল্টোদিকে আয়নায় চোখ পড়তেই হতভম্ব হয়ে গেলেন অচিন্তবাবু। এ কি? ওনার মুখটা এরকম লম্বাটে দেখেচ্ছে কেন? কানগুলোও কেমন খাড়া খাড়া। গত এক ঘণ্টায় ওনার গায়ের লোম যেন এক ইঞ্চি করে বেড়ে গেছে। ওষুধটা হাত থেকে ফসকে যাওয়ার কারণটাও তিনি বুঝতে পারলেন। ওনার হাতে আঙুলের কোন অস্তিত্ব নেই। হাতের পাঞ্জাটা একটা থাবায় পরিণত হয়ে গেছে। একটা নেকড়ের থাবায়...।
"কি বিশ্রী ব্যাপার বলুন তো?" বললেন ভদ্রলোক।
যে কোন সাধারণ ক্রাইম রিপোর্টই যে তাকে বিচলিত করে দেয় এটা বেশ ভালো করেই জানেন অচিন্তবাবু। হালকা হেঁসে বললেন, "কি হল আবার? খুন?"
"প্রায় সেই রকমই দাদা," বেঞ্চে বসে একটা সিগারেট ধরালেন অতনু দত্ত।
"মানে? খুনের মত আবার কি?" প্রশ্ন করলেন অচিন্তবাবু।
"ডুয়ার্শের ওদিকটায় রায়গড় বলে একটা এস্টেট আছে। ওখানে নাকি ইদানীং মানুষখেকোর আগমন ঘটেছে। মাঝে মধ্যেই নাকি গরু, বাছুর, ছাগল নিয়ে যাচ্ছে। এই তো দিন দুয়েক আগে নাকি একটা তিন বছরের ছেলেকেও নিয়ে গেছে। হরেন্ডাস ব্যাপার মশাই।" এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন অতুনবাবু।
"মানুষখেকো মানে, বাঘ?" কৌতূহল হল অচিন্তবাবুর।
"আমিও তো তাই ভেবে ছিলাম। কিন্তু বলেছে নেকড়ে। নেকড়ে আবার মানুষখেকো হয় নাকি?"
"হতেও পারে। এতে আর আপনার কি করার আছে বলুন? বন দপ্তর থেকে যা করবে তাই, আর কি। চলুন এক কাপ চা খাওয়া যাক।" এই বলে দুজনে চলে গেল পিন্টুর চায়ের দোকানে।
বাড়ি ফেরার পথে অচিন্তবাবুর আবার মনে পড়ে গেল কথাটা। জায়গাটার কি যেন নাম বললেন অতনুবাবু? হ্যাঁ, রায়গড়। কোথায় শুনেছেন যেন নামটা। ঠিক মনে পড়ল না অচিন্তবাবুর। মনে মনে ভাবলেন, যে বছর দশেক আগে হলে না হয় একবার যেতেন শিকারের লোভে। এখন আর নয়।
বিকেলে বাড়ি ফিরে সোফায় গা এলিয়ে দিলেন ডাঃ অচিন্ত চৌধুরী। আজ রুগীর চাপ একটু বেশিই ছিল। তার উপরে দুটো সার্জারি। ভীষণ ক্লান্ত বোধ করছেন। এখন আর এত খাটনি পোষায় না। কদিন একটু ঘুরে এলে ভালোই হত। চাকর দিনু এক গ্লাস শরবত আর কর্ডলেস ফোনটা নিয়ে এল। হেঁসে বলল, "বাবু, ফোন।"
বিরক্তির সাথে ফোনটা নিয়ে কানে দিলেন অচিন্তবাবু।
"হ্যালো?"
"হ্যালো, কে অচিন্ত? চিনতে পারছিস?" ওপাশ থেকে অচিন্তবাবুর খুব পরিচিত কণ্ঠস্বর বলে উঠল। ওনার চিনতে একটুও অসুবিধে হল না।
"আরে বিপুল যে? কতিদিন পর ফোন করলি? কেমন আছিস ভাই?"
বিপুল দাস অচিন্তবাবুর স্কুলের বন্ধু। স্কুলজীবনের বাকি কারুর সাথে যোগাযোগ না থাকলেও বিপুল বাবুর সাথে যোগাযোগ কোন দিনই ছিন্ন হয়নি। স্কুল শেষ করে বিপুল কর্মসুত্রে উড়িষ্যা চলে যায়। মাস ছয়েক আগে ভি আর এস নিয়ে ফিরে আসে ফিরে আসে কলকাতায়। তারপর আর কথা হয়নি ওর সাথে, দেখাও হয়নি।
"ভালো আছি রে। তোর কি খবর? নিপা কেমন আছে?"
এদিক ওদিকের দুয়েকটা কথার পর বিপুলবাবু বললেন, "তোকে কিন্তু একটা বিশেষ কারনে ফোন করেছি। একটা নিমন্ত্রণ আছে তোর জন্য।"
"কেন রে, আবার বিয়ে করছিস নাকি?" মজা করে বলল অচিন্তবাবু।
"না, রে ভাই। একটা করেই খুব ভুগেছি ভাই। আর না। আসলে আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তির একটা অংশ ছিল ডুয়ার্শের এদিকটার। রায়গড় এস্টেট। এই প্রাপ্তিটা হয়েছে মাস চারেক আগে। একটু গুছিয়ে নিতে সময় লাগল আর কি। তাই নিমন্ত্রণ।"
বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল অচিন্তবাবুর। একেই বলে কাকতালীয়। সকালেই শুনলাম রায়গড় আর বিকেলে সেখানেই নিমন্ত্রণ।
"তা কবে যাব বল। আমিও ভাবছিলাম কদিন কোথাও থেকে একটু ঘুরে এলে ভালো হয়," এক কোথায় রাজি হয়ে গেল অচিন্তবাবু। অনেক কারন কাজ করছে তার মাথায়।
"পরশু তিস্তা তরসা ধরে চলে আয়ে। স্টেশনে আমার গাড়ি থাকবে। তুই টিকিট কেটে জানাস।"
"সে তো খুব ভালো কথা। ঠিক হ্যায়। তা হলে তাই কথা রইল।"
"একটা কথা বলি," একটু আমত আমত করে বলল বিপুলবাবু, "তোর শিকারের নেশাটা এখনো আছে?"
"শিকার করা বারণ। নেশা থাকা আর না থাকা। তা হঠাৎ এই প্রশ্ন?" বুকটা ঢিপঢিপ করছে ডাঃ অচিন্ত চৌধুরীর।
"না মানে, একটা... আনিস না তোর বন্দুকটা। এলে বলব, কেমন?"
ফোনটা রেখে চুপচাপ বসে আছে অচিন্তবাবু। সেক্রেটরিকে ফোন করে একটা তিস্তা তরসা এক্সপ্রেসের টিকিট কাটতে বলে দিলেন।
জলপাইগুড়ি স্টেশনে অপেক্ষা করছিল বিপুলবাবুর গাড়ি। ড্রাইভার একটা বড় কাগজে তার নাম লিখে অচিন্তবাবুকে খুঁজছিল। গাড়ি করে রায়গড় পৌঁছতে লাগল পাক্কা তিন ঘণ্টা। গাড়ি বারান্দায় দাঁড়াতেই বেরিয়ে এলেন বিপুলবাবু। ছমাসে চেহারা বেশ পাল্টেছে তার, ভাবলেন অচিন্তবাবু।
"একটু মোটা হয়েছিস মনে হচ্ছে?" হাত মিলিয়ে প্রশ্ন করলেন অচিন্তবাবু।
"তা একটু হয়েছি বৈকি," হেঁসে বললেন বিপল দাস।
বিপুলবাবুর বাড়িটা প্রায় একটা প্রাসাদসম। দেখলেই বোঝা যায় এই বয়স একশো বছরের কম নয়। ঘরে ঢুকে বিপুলবাবুর সৌন্দর্যজ্ঞান সম্পর্কে তার ভুল ধারনা শুধরে নিলেন অচিন্তবাবু। বিশাল বিশাল ওয়েল পেন্টিং ঝুলছে দেওয়ালে, দামি দামি আসবাবপত্রে সাজানো ঘরটা।
"এ তো রাজার বাড়ি রে, বিপুল," বললেন অচিন্তবাবু।
দুপুরে খেতে বসে অচিন্তবাবু বললেন, "তা বন্দুকটা আনতে বললি হঠাৎ?"
প্রশ্নটা যেন শুনতেই পেলেন না বিপুলবাবু। উলটে প্রশ্ন করলেন, "তা নিশানাটা ঠিকঠাক আছে তো? না প্রাকটিসের অভাবে গেছে সেটা।"
"তা আছে। আমি কলকাতায় একটা সুটিং ক্লাবের সদস্য। তবুও আগের মত অভেদ্য নাও হতে পারে," খুব সন্তর্পণে ইলিশ মাছের কাটা বাছতে বাছতে বললেন অচিন্তবাবু।
"তোকে আসতে বলার আর একটা কারন হয়তো তুই আন্দাজ করতে পেরেছিস। খবরের কাগজ যখন পড়িস, তখন নিশ্চই জানতে বাকি নেই এখানের মানুষখেকোর কথাটা।"
অচিন্তবাবু মাথা নেড়ে জানালেন যে তিনি জানেন।
বিপুলবাবু বলে চললেন, "অবসর নেওয়ার পর কলকাতার ভিড় ভাট্টা আর ভালো লাগছিল না। এইখানের কথা শুনে তাই ঠিক করলাম জীবনের শেষ কটা দিন এখানেই কাটাব, প্রকৃতির কাছাকাছি। তা ছাড়া আমার যে একটু লেখালিখির অভ্যাস আছে সেটা তো তুই জানিস। একটা উপন্যাস লেখার চেষ্টা করছি। আর তার জন্য এই স্থানটা পারফেক্ট। তা এখানে আসার পরই শুনি এই মানুষখেকোর কথা। আমার ক্ষেতের মুজুররাই প্রথম বলে। আমি যে একসময় একটু আধটু শিকার করতাম সেটা তারা জেনেই আমাকে অনুরধ করে কিছু করার জন্য। আমিও খবর দিই বন দপ্তরে। কিন্তু কোন ফল হয়নি। তারপর ঠিক করি আমি নিজেই যাব। কিন্তু অভ্যেস নেই বলে ঠিক সাহস হল না একা যাওয়ার। তাই ভাবলাম, তুই যদি রাজি থাকিস তাহলে সেই পুরানো দিনের মত একসাথে জাওয়া যাবে। কি বলিস?"
"সে তো উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু একটু বিস্তারিত না জানলে প্লান করা মুশকিল," বললেন অচিন্তবাবু।
"দেখ, বিস্তারিত আমি যা জেনেছি তা হল, এই জঙ্গলে এক ধরনের নেকড়ে জাতীয় পশু আছে। আজ নয় বহু বছর ধরে। যা আশে পাশের গ্রাম থেকে গরুটা, ছাগলটা নিয়ে যায়। এমন কি মাঝে মাঝে মানুষের বাচ্চাও। এই ফলে গ্রামের লোকেরা বিকেলের পর বাড়ি থেকে বেরোয় না। সন্ধ্যা বেলায় রান্নার লোক আসে না, দারয়ান পাহারা দিতে চায় না, ইত্যাদি। আমি পড়েছি ফ্যাসাদে।"
"টম্যাটোর চাটনি খেতে খেতে থালা থেকে মুখ না তুলেই বললেন অচিন্তবাবু, "নেকড়ে জাতীয় পশু মানে? নিশ্চিত নয়?"
"না মানে কেউ কোনদিন দেখিনি পশুটাকে। কিন্তু একটা ছাগলের আধ খাওয়া দেহ পাওয়া গেছিল। কামড়ের দেগ, আঁচড়ের ক্ষত দেখে আমার মনে হয়েছে নেকড়ে। এখন একটা না একাধিক তাও জানি না।"
"একটাই হবে। কারন এই ধরনের মানুষখেকো সাধারনত একটাই হয়। আমার অভিজ্ঞতা তো তাই বলে," বললেন অচিন্তবাবু।
হাত মুখ ধুয়ে বারান্দায় বসে দুই সিগারেট খাচ্ছিল দুই বন্ধু। খানিকক্ষণ অচিন্তবাবু সিগারেটটা একটা গাছের গুড়ি লক্ষ্য করে ছুড়ে দিলেন। তারপর বাঁ হাত দিয়ে ডান হাতের আঙুল মটকাতে মটকাতে বললেন, "গ্রামের কেউই জন্তুটাকে দেখেনি?"
"দেখেছে, একটা বাচ্চা। আমার বাগানের মালির ছেলে," বলল বিপুলবাবু।
"একবার কথা বলা যায় তার সাথে?"
"হ্যাঁ, সে আর এমন কি। আমি কথা বলেছি। কোন লাভ হয়নি। তুই দেখ। কাল সকালে ডাকিয়ে দেবখন।"
এই বিষয়ে সে দিন আর কোন কথা হয়নি। পুরানো দিনের গল্প করেই কাটিয়ে দিয়েছে সন্ধ্যাটা। অচিন্তবাবু বলেছেন একবার বেরবেন কিন্তু বিপুলবাবুর জোরাজুরিতে তা আর হয়নি।
পরের দিন সকালে মালি তার ছেলেকে নিয়ে হাজির। বিপুলবাবু বললেন, "রামদিন, তোমার ছেলের নামটা যেন কি?"
"হরিপদ, হুজুর," সংক্ষেপে উত্তর দিল রামদিন।
ছেলেটাকে দেখেই মনে হচ্ছে যে সে বেশ ভয় পেয়েছে এখানে আসতে বলায়। অচিন্তবাবু তার কাঁধে হাত রেখে বললেন, "বাবা, তুমি দেখেছো বাঘটাকে?"
একটু জড়তা কাটিয়ে ছেলেটি বলল, "বাঘ নয় বাবু, নেকড়ে। আমি টিভিতে দেখেছি। গায়ের রঙ কালো, ইয়া বড় বড় লোম। লেজটা কিন্তু খুব একটা বড় নয়।"
"কোথায় দেখেছিল নেকড়েটাকে?"
"সে যে, যেদিন বিশুকাকার ছাগলটা নিয়ে গেল, আমি জল খেতে উঠেছিলাম। রাত তখন প্রায় দুটো। জঙ্গলের দিকটা থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এল ঐ নেকড়েটা। আমি তো ভয় সিটয়ে গেছিলাম।"
মালি আর হরিপদ চলে গেলে অচিন্তবাবু প্রশ্ন করলেন, "গ্রামের দিকটায় রাতের বেলা আলো থাকে?"
ওনার ইশারা বুঝতে পেরে বিপুলবাবু বললেন, "তা খুব একটা থাকে না। কেন ওর কথা কি তোর বিশ্বাস হচ্ছে না?"
"বিশ্বাসের প্রশ্ন নয়, শিকার যদি করতেই হয় তবে আরও বিস্তারিত জানতে হবে। নেকড়ে হলে মাচা বাধতে হবে উপর, বেশ উচুতে। না হলে ব্যাটা লাফিয়ে উঠে আসবে। আর দুটো কাজ করতে হবে তার আগে," পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে একটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন অচিন্তবাবু।
"কি কাজ?"
"একবার গ্রামের দিকটায় যাব। একটু জিজ্ঞাসা বাদ করার আছে।"
"কাকে? গ্রামের লোকেরা তো কিছুই দেখেনি।"
"তা দেখেনি, তবে কি কি নিয়ে গেছে তা তো জানা যাবে। তার থেকেই নেকড়েটার আয়োতন সম্পর্কে একটা ধারনা করা যাবে। শত্রুর মোকাবিলা করার আগে তার সম্পর্কে যতটা সম্ভব জেনে নিতে হবে।"
"সে আর কি ব্যাপার। আজই দুপুরের দিকে চল। খেয়ে দেয়ে দুটো নাগাদ বেরিয়ে যাব।"
"আচ্ছা, আর..."
"কি?"
"একবার জঙ্গলের দিকটায় যাব।"
"কি? পাগল হলি নাকি?" প্রায় আতঙ্কিত হয়ে বললেন বিপুলবাবু।
"পাগল হব কেন? জানতে হবে না কোন দিকটায় বাসা করেছে। না হলে জঙ্গলের পুবে মাচা বাঁধব আর নেকড়ে আসবে পশ্চিমে," হালকা হেঁসে বললেন অচিন্তবাবু।
"শোন, বন বিভাগের লোক তো গেছিল কদিন আগে। কিছুই পায়নি। সাড়া জঙ্গল চষে ফেলেও কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি পশুটার। শুধু একটা আধ খাওয়া ছাগলের দেহ পাওয়া যায়। তোকে বলছিলাম না। শুধু ঐ পাহাড়ের দিকটায় দেখে নি।"
"কেন? দেখিনি কেন? তুই গ্রামের অবস্থান যা বলেছিস তাতে তো ওদিকটার থেকেই আসার চান্স সবচেয়ে বেশি," বেশ অবাক হয়েই বলল অচিন্তবাবু।
"না, মানে, ওদিকটায় বুনো হাতির আড়ত আছে। ওদিকে যেতে কেউ আর সাহস পায়নি," একটা নিঃস্পৃহ হাঁসি হেঁসে বললেন বিপুল দাস।
"আচ্ছা, তাহলে জঙ্গলে যাওয়া বাদ। মাচাটা গ্রামের দিকটাতেই কর হবে। আমি কাল সকালে দেখিয়ে দেব। বলিস একটু শক্তপোক্ত মাচা বাধতে।"
গ্রামের লোকেদের কাছ থেকে তেমন কিছুই জানা গেল না। কেউ দেখেনি পশুটাকে। যে যার আন্দাজ মাফিক একটা গল্প দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। যা হয় আর কি। গ্রামের একটা বৃদ্ধের কাছ থেকে একটা কাজের কথা জানা গেল। এই মানুষখেকো নেকড়ে নাকি বহু বছর থেকেই আছে এখানে। প্রায় বছর ত্রিশেক। এই ঘটনাও ঘটছে অনেকদিন ধরে। এতদিন বাইরের লোক জানত না, বিপুলবাবু বন দপ্তরে খবর দেওয়ার পর খবরটা ছড়িয়ে পড়ে। আর নেকড়েও আছে একাধিক। কারন আগে দুজন শিকারি দুটোকে মেরেছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আবার দিন কয়েক পর আক্রমন শুরু।
"তা মৃত পশুগুলো আপনি দেখেছেন?" প্রশ্ন করল অচিন্তবাবু।
"তা দেখেছি বাবু, ওগুলো নেকড়েই," বলল সেই বৃদ্ধ লোকটা।
বাড়ি ফেরার পথে অচিন্তবাবু বললেন, "আরও একটা কাজ করতে হবে ভাই বিপুল।"
"বল, শুধু জঙ্গলে যেতে বলিস না।"
"না না, বনে যেতে হবে না। যেতে হবে বন দপ্তরে। আগে যে দুজন শিকারি নেকড়ে মেরেছিলেন তাদের ফোন নম্বরটা প্রয়োজন। কিছু তথ্য পাওয়া যাবে।"
"সেটা আবার কোন ব্যাপার নাকি। এখানের রেঞ্জার আমার খুব পরিচিত। আমি তাকে ফোন করে জেনে নেব।"
বাড়ি ফিরে বন দপ্তরে থেকে নম্বরগুলো পেতে বেশি সময় লাগলো না। কিন্তু নম্বরগুলো পেয়েও খুব একটা লাভ হল না। প্রথমজনের নম্বরে ফোন করতে ওপাশ থেকে বলল এটা রং নম্বর। আর দ্বিতীয়জন নাকি একজন সাহেব ছিল, নাম রবার্ট হিউয়েন। শিকারের পরেরদিন কাউকে কিছু না জনিয়েই সে চলে যায়।
সন্ধ্যে হলে দুজনে বেরিয়ে গেল মাচার উদ্দেশ্যে। অন্যদিন হলে বিপুলবাবু সন্ধ্যা বেলায় বেরতেনই না। কিন্তু আজ ভয়টা অনেক কম। বন্ধুর উপস্থিতি যেন কমিয়ে দিয়েছে ভয়টাকে।
গ্রামের একটু কাছাকাছিই বাঁধা হয়েছে মাচাটা। একটা ছগল বাঁধা আছে, টোপ হিসাবে। রাইফেলটা পাশে রেখে চুপচাপ বসে আছেন দুজন। ঘন জঙ্গল। আকাশ ছোঁয়া সব গাছে ভরা। অন্ধকারে কিছুই ঠিক করে বোঝা যাচ্ছে না। তাও বেশ কিচ্ছুক্ষন থাক ফলে একটু পরিষ্কার। আঁধারটা চোখে সয়ে গেছে। চারিদিকে একটা অস্বস্তিকর নিস্তব্ধতা। মাঝে মাঝে এক একটা ঝিঁঝিঁর ডাক সেই নিস্তব্ধতা ভেঙে খানখান করে দিচ্ছে। কিন্তু নেকড়ের দেখা নেই। বেশ কিছুক্ষন এদিক ওদিকের ঘাস খেয়ে ছাগলটাও শান্তিতে ঝিমোচ্ছে। সারা রাত কেটে গেল, নেকড়ে এল না।
এই একই ভাবে কাটল আরও একটা রাত। কিন্তু তৃতীয় রাতে অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটল। প্রায় যখন রাত দেড়টা, অচিন্তবাবু দেখলেন পাহাড়ের ওই দিকটার ঝোপের ভিতর কি একটা যেন নড়ছে। আস্তে আস্তে ছায়ামূর্তিটা বেরিয়ে এল ঝোপের পিছন থে অচিন্তবাবুর মনে হল এই পশুর দৈর্ঘ প্রায় ফুট ছয়েক। অন্ধকারে দেখলেন নেকড়ের চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। তারপর একটা রক্ত হিম করা চিৎকার। অচিন্তবাবুর জামার আস্তিনটা খামচে ধরেছে বিপুলবাবু। উনি বুঝতে পারলেন, বন্দুক ওঠানোর শক্তি আর বিপুলবাবুর নেই।
খুব সন্তর্পণে রাইফেলটা ওচালেন অচিন্তবাবু। সামান্য শব্দ হলেই নেকড়েটা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যাবে। আস্তে আস্তে নেকড়েটা এগিয়ে যাচ্ছে ছাগলটার দিকে। ছাগলটা ভয়ে ডাকতে শুরু করেছে জোরে জোরে।
অচিন্তবাবুর অভ্যাস নেই অনেকদিন। পারবেন তো? বনানীর নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে দুটো ফায়ারিং-এর শব্দ হল। গুড়ুম! গুড়ুম! আর তার সাথেই একটা রক্ত জল করা নেকড়ের ডাক। এই ডাকটা একটু অদ্ভুত লাগলো অচিন্তবাবুর। নেকড়ের আওয়াজ এত তীক্ষ্ণ হয় না। ঠিক যেন মানুষের চিৎকারের মত শোনাল। উনি যদিও কোনদিন নেকড়ে শিকার করেননি, তবুও কোন পশুর স্বর এত তীক্ষ্ণ হয় না।
মাচার উপর থেকে অচিন্তবাবু দেখতে পাচ্ছেন একটু দূরে নেকড়ের বিশাল শরীরটা ছটফট করছে। আস্তে আস্তে এবার শান্ত হয়ে গেল দেহটা।
ধীরে ধীরে মাচা থেকে নামলেন দুজন। অচিন্তবাবুর আস্তিনটা এখনও ছাড়েননি বিপুলবাবু। কাছে গিয়ে দেখলেন এখনও একটা মৃদু কম্পন আছে নেকড়েটার। ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে নেকড়েটার মুখে দু ফোঁটা জল ফেললেন। এটা শিকারিদের কোড অফ ওনার। তারপর রাইফেলটা নেকড়েটার মাথায় ঠেকিয়ে আবার ফায়ারিং করলেন। এইবার দেহটা পুরোপুরি শান্ত হয়ে গেল। পকেট থেকে টর্চ বের করে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলেন নেকড়েটাকে। সাধারণ নেকড়ে থেকে এটা বেশ আলাদা। হাত দিয়ে গায়ের লোম সরিয়ে দেখলেন চামড়ার রঙ সাধারন জন্ত জানোয়ারের থেকে বেশ পরিষ্কার।
"সাহেব নেকড়ে মনে হয়?" হেঁসে বললেন বিপুলবাবু। নেকড়েটা মরে যাওয়াতে উনি আবার পুরানো সাহস ফিরে পেয়েছেন।
* * *
তিনদিন মাচায় বসে শরীরটা ভীষণ খারাপ হয়েছে অচিন্তবাবুর। এইখানে রাতের বেলায় ঠাণ্ডাটাও বেশ পড়ে। ঠাণ্ডায় চামড়াটা ফেটে গেছে। একটা বিদেশি ক্রিম লাগিয়ে শুয়ে পড়েন অচিন্তবাবু। মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙে যায়। প্রচন্ড ব্যাথা করছে কোমরে। উনি জানেন এটা খুব সাধারন ব্যাপার। তিন রাত কাঠের মাচায় বসে কোমর ব্যাথা। এই ব্যাথায় আগেও তিনি ভুগেছেন। তার ওষুধও এনেছেন সাথে। কিন্তু এত মারাত্মক ব্যাথা আগে কোনদিন হয়নি। হাত বাড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ওষুধটা আনতে গিয়ে ওটা হাত ফসকে মাটিতে পড়ে গেল। অগত্যা বিছানা ছেড়ে উঠতেই হল। দাঁড়াতে গিয়ে বুঝলেন কোমরের ব্যাথাটা অসহ্য। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না, একটু কুঁজো হয়ে দাঁড়ালে যেন সুবিধে হচ্ছে। কোনক্রমে হাতড়ে হাতড়ে আলোটা জ্বালালেন। উল্টোদিকে আয়নায় চোখ পড়তেই হতভম্ব হয়ে গেলেন অচিন্তবাবু। এ কি? ওনার মুখটা এরকম লম্বাটে দেখেচ্ছে কেন? কানগুলোও কেমন খাড়া খাড়া। গত এক ঘণ্টায় ওনার গায়ের লোম যেন এক ইঞ্চি করে বেড়ে গেছে। ওষুধটা হাত থেকে ফসকে যাওয়ার কারণটাও তিনি বুঝতে পারলেন। ওনার হাতে আঙুলের কোন অস্তিত্ব নেই। হাতের পাঞ্জাটা একটা থাবায় পরিণত হয়ে গেছে। একটা নেকড়ের থাবায়...।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মহঃ এসরাফিল সেখ ১২/০১/২০১৬অসাধারন একটা গল্প।
-
Sishir Chakraborty ০৫/০১/২০১৬Aaro bhoy paeia dao
-
পরিতোষ ভৌমিক ২ ০২/০১/২০১৬লেখায় দম আছে বলতে হবে । দারুন লিখেছেন অভিষেক বাবু ।
-
পলাশ ২৪/১২/২০১৫শুদ্ধ সাহিত্য চর্চার মানুসিকতায় এবং নবীন-প্রবীণ লেখকদের একই ফ্রেমে তুলে ধরতে আমরা সম্প্রতি একটি অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা শুরু করেছি । এখানকার লেখাগুলো নিয়ে আমরা হাতে ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশের চেষ্টা করব । আপনি চাইলে আমাদের সহযাত্রী হতে পারেন । আমরা আপনার লেখা প্রকাশে আগ্রহী । আপনার লেখা সেরা সাহিত্য কর্মটি পাঠিয়ে দিন আমাদের মেইলে । আমরা লেখা প্রকাশে সর্বাত্মক চেষ্টা করব । সাথে এক কপি ছবি (সম্ভব হলে) ও সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত । আমাদের ই মেইল - [email protected] ওয়েব www.vabakatha.blogspot.com আমাদের ফেবু গ্রুপ- https://www.facebook.com/groups/1712000052364487/?ref=bookmarks
-
সব্যসাচি বিশ্বাস ২২/১২/২০১৫What a story,Sir.
Awesome. -
রুবি ২২/১২/২০১৫অসাধারণ।
পড়তে পড়তে গায়ে কাটা দিয়ে উঠ্ল। -
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ২১/১২/২০১৫দারুণ লাগল ।
-
দেবব্রত সান্যাল ২১/১২/২০১৫জমাটি গল্প। ভালো লাগলো।
-
দেবাশীষ দিপন ১৯/১২/২০১৫গল্পটা পড়লাম।খুব খুব ভাল লাগলো।আপনার লেখার ধরণটা মুগ্ধ করলো দাদা।
-
আজিজ আহমেদ ১৯/১২/২০১৫ভাল লাগলো অভিষেক।
-
মোবারক হোসেন ১৯/১২/২০১৫ভাল
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ১৯/১২/২০১৫স্বর্গের ভাষা একটা। কিন্তু মর্ত্যধামের ভাষা ! সেতো লাখ লাখ, যাই হোক কষ্ট করে পড়ে বোঝার চেষ্টা করেছেন - অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভাই শেষে তো ভয় ধরিয়ে দিলে। আতংক রেখে দিলে আমাদের হৃ...........য়ে.
ভ তে ভক্তি। ভ তে ভয়,
ভ তে ভগবান - ভ তে ভাই।
বাহ রে বাহ। বেশ দারুন গল্প। হাতটা পাকিয়েছ বেশ!!! -
জে এস সাব্বির ১৯/১২/২০১৫ওঁওঁওঁওঁ ।পারফেক্ট লেখনি ।মধ্যে মধ্যে তো আমিও ভয় পেয়ে গেলাম !!
এত্তগুলা ভাললাগা রেখে গেলাম ।