ভয়
ভীষণ জোরে গাড়ি ছুটছে, ভি আই পি রোড দিয়ে। গ্রীষ্মের ভোর। চারিদিক খাঁ খাঁ করছে। রাস্তায় কিছু গাড়ি যাতায়াত করছে ঠিকই, কিন্তু তাও স্বল্প। দু ধারে বিস্তর মাঠ। ধান ক্ষেতও আছে প্রচুর। তবে ধান কাটা হয়ে গেছে বলে মাঠগুলোকে বড় ন্যাড়া লাগছে। বহু দূরে কিছু বসতিও দেখা যাচ্ছে কিন্তু মানুষের চিহ্ন মাত্র নেই।
এই রকম জন বিরল রাস্তায় মানুষের দেখা পাব এই আশা যখন প্রায় ছেড়েই দিয়েছি, এমন সময় ড্রাইভার বলল, "স্যার, ঐ গাড়িটা মনে হয় খারাপ হয়ে গেছে, ঐ দেখুন গাড়ির মালিক হাত দেখাচ্ছে। থামবো?"
একটু কাছেকাছি যেতে ভদ্রলোককে দেখতে পেলাম। নিতান্ত সাধারন চেহারা। মোটামুটি সাড়ে পাঁচ ফুটের কাছাকাছি উচ্চতা, গায়ের রং ময়লা, ইষৎ মোটা, চোখে চশমা, পরনে ছাই রঙের সাফারি সুট, হাতে সুটকেস। বয়স আন্দাজ পঞ্চাশ। আমি বললাম, "দাঁড়াও তো।" ড্রাইভার সামনের গাড়িটা পেরিয়ে গিয়ে দাঁড়াল।
গাড়ি দাঁড়াতেই ঐ ভদ্রলোক তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলেন। জানলার কাছে এসে বললেন, "মশাই, গাড়িটা হঠাৎ ব্রেক ডাউন করল। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড তিন মাইল দূরে। একটু লিফট দিলে খুব উপকার হত। হে হে।" ভদ্রলোকের চেহারার মতই ওনার গলাটাও খুব সাধারন মানের, তবে একটু মিহি।
আমি মাথা নেড়ে "উঠে পড়ুন" বলতে, তিনি বললেন, "এক মিনিট," এই বলে তিনি তার ড্রাইভারকে কিছু বলতে গেলেন বোধহয়।
এখানেই বলে রাখি আমার নাম অরূপ কুমার সামন্ত। জীবনে বিশেষ কিছু না করতে পেরে অবশেষে সাহিত্য চর্চা করছি। বিশেষ নামডাক আছে, তা নয়, তবে বেশ কিছু পত্র পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হয়, তার ফলে জে যৎসামান্য আয় হয়, তাতে আমার ভালই চলে যায়। একা মানুষ, বিবাহ করিনি। পিতা মারা যাওয়ার পূর্বে বেশ কিছু অর্থ রেখে যান ব্যাঙ্কে। তার ইন্টারেস্ট দিয়ে বেশ চলে যায়।
এখন আমি চলেছি ইছাপুর নামক একটি গ্রামে। হাবড়া, গোবরডাঙ্গা ছাড়িয়ে বেশ কিছুটা যেতে হবে। আমার এক মামা ওখানে থাকতেন। তার সাতকুলে কেউ ছিল না, আমি ছাড়া। তার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া বিপুল সম্পত্তি এখন আমার। তাই নিয়েই কিছু সি সাবুদ করার ছিল। সেই কারনেই আমার যাত্রা।
ভদ্রলোক সামনে বসলেন, ড্রাইভারের পাশের সিটটায়। আমাকে একটা ছোট্ট নমস্কার ঠুকে বললেন, "আমার নাম কালিপদ শিকদার। আমি যাচ্ছি মল্লিকপুরের কাছাকাছি একটা গ্রামে। নাম ইছাপুর। একটু বেড়াবার জন্য আর কি।"
আমি বললাম, "সে তো ভালো কথা, আমিও সেখানেই যাচ্ছি। তা চলুন একসাথে। অনেকটা পথ, সঙ্গীও পাওয়া যাবে।"
ভদ্রলোক মাথা নত করে হে হে করে চুপ করে গেলেন।
বাকি পথটা অনেক কথা হল ওনার সাথে। কোথায় থাকেন, কি করেন ইত্যাদি। খানিক বাদে আমি বললাম, "তা ওখানে উঠছেন কোথায়?"
"আমার এক বন্ধুর আছেন ওখানে, সমীর দত্ত। তার বাড়িতেই উঠব এখন। কাল..."
ভদ্রলোক থেমে গেলেন। কারন আমরা বড় রাস্তা থেকে মাটির রাস্তায় নেমে গেছি। রাস্তার দুধারে গাছের সারি, যেগুলোর প্রায় আশি ভাগই আমি চিনি নি। ঘড়িতে দেখলাম, সময় প্রায় সাড়ে দশটা। রাস্তার পাশে একটা টিনের ফলকে কালো কালি দিয়ে লেখা ইছাপুর।
আর একটু এগোতেই একটা ছোট মুদির দোকান চোখে পড়ল। শিকদার বাবু আঙুল দেখিয়ে বললেন, "এই, এইখানে একটু..."
ওনার থেকে বিদায় নিয়ে আমরা ঐ মুদির দোকানটার পাশ দিয়ে এগিয়ে গেলাম। এখানে আমি আগে কোনদিন আসিনি। মামার সাথে কথা হত টেলিফোনে। আমার কলকাতার বাড়িতেও গেছিলেন বেশ কয়েকবার। আমাকে এখানে আসতেও বলেছিলেন, কিন্তু আমার আসা হয়নি। আরও খানিক গিয়ে যেঁ বাড়িটার সামনে দাঁড়ালাম সেটাকে বাড়ি না বলে অট্টালিকাই বলা ভালো। এটাই আমার সেই মামার বাড়ি।
গাড়ি দাঁড়াতেই একটা মাঝ বয়সের লোক বেরিয়ে এল, "বাবু, আপনি এঁছেন? এঁসেন।" এই বলে আমার ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে সে ভীতরে ঢুকে গেল।
খানিক পর স্নান করে খাবার টেবিলে বসে বললাম, "তোমার নামটা কি হে?"
"নেত্য হরি, বাবু।"
"আচ্ছা নেত্য হরি, ঐ উকিল সাহেব কখন আসবেন কিছু বলেছেন?"
"কাল এঁছিলেন। বললেন আজ ঐ রেতের দিকে আবার আসবেন।"
গরম ভাত আর মুরগির মাংস দিয়ে খাওয়া শেষ করে বললাম, "তা রান্নাটা কে করল? তুমি? দারুণ হাত তো!"
নেত্য হরি জিব কেটে বলল, " না বাবু। আমার ইস্তিরি করেছে।"
দুপুরে একটু ঘুম দিয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ একটু বেড়াতে বেরলাম। কলকাতার মানুষ, গ্রাম জিনিষটা খুব উপভোগ করি। ওখানে আর এত গাছপালা কই?
ফাঁকা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, এমন সময় 'ও সামন্ত মশাই' বলে একটা ডাক পেয়ে পিছন ফিরে দেখি শিকদার বাবু। হাঁসি মুখে উনি আমার দিকেই আসছেন। কাছাকাছি এসে বল্লনে, "সকালে যা উপকার করেছেন মশাই। না হলে হয়তো কাজই হত না।"
বললাম, "কি কাজ? অফিশিয়াল কিছু?"
"না, না, আসল ব্যাপারটা তাহলে আপনাকে বলি শুনুন। আমি চাকরি করি আই আই পি আর (ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ প্যারাসাইকোলজি রিসার্চ)-এ। আর আমার ডিপার্টমেন্ট হল আত্মা বা পাতি বাংলায় ভুত।"
"কি? ভুত?" আমি তো অবাক। হাসি যে পায়নি তা নয়, আজকের দিনেও নাকি লোকে এই সব মানে। শিকদার বাবু বলতে লাগলেন, "আমার বন্ধু সমীর এই জায়গাটার কথা আমায় প্রথম বলে। এই গ্রামের উত্তর পূর্ব দিকে একটা বিশাল জমিদার বাড়ি আহে, সেটা এখন প্রায় ধ্বংসস্তুপ। কিন্তু দোতলার দুটো ঘর এখনও নাকে ভালো অবস্থায় আছে। ঐ ঘর থেকে নাকি এর আগে বহু লোক নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।"
"এতে আপনি ভুত পেলেন কোথায়?" হেঁসে বললাম, "এতো মানুষের কাজও হতে পারে। ভুত কি আর খেয়ে ফেলবে মানুষগুলোকে?"
"সেটাই তো দেখার মিঃ সামন্ত। একবার দেখবেন নাকি বাড়িটা?" ভদ্রলোকের চোখ জ্বলে উঠল।
আমি বললাম, "আলো যখন আছে, তখন ভুতের ভয় তো নেই। চলুন।"
আমার উৎসাহ বাড়ছে। ভূতে যদিও বিশ্বাস করিনা তবে মানুষ গায়েব হওয়ার ব্যপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল। আমি একটু ইয়ার্কির ছলে বললাম, "তা আপনি গবেষণাটা কি নিয়ে বা কি করে করবেন? ভুত তো আর চোখে দেখা যাবে না।"
উনি কিন্তু বেশ সিরিয়াসলিই বললেন, "আজ রাতটা ওখানে থাকব ভাবছি।"
আমি থমকে গেলাম। বলেন কি ভদ্রলোক? বললাম, "সে কি মশাই? ভুতের কথা না হয় বাদ দিন। সাপখোপ তো থাকতেই পারে? বড্ড রিস্ক নিয়ে ফেলছেন না?" আমার কথার উত্তরে উনি শুধুই হাসলেন।
আরও মিনিট কুড়ি হেঁটে আমরা যেখানে পৌঁছলাম সেটাকে ছোটখাট একটা জঙ্গল বলাই চলে। তার ভিতর দিয়ে মিনিট পাঁচেক হাঁটার পর একটা ভগ্নস্তুপের সামনে পৌঁছলাম। শিকদার বাবু বললেন, "যাবেন নাকি ভীতরে?"
সামনের আগাছাগুলো সাবধানে পেরিয়ে, আমরা পৌঁছলাম বাড়ির সদর দরজার কাছে। দরজা যদিও বললাম কিন্তু সেটা শুধুই একটা গহ্বর। পাল্লা নেই। পাশের একটা আধ ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে আমরা উঠতে লাগলাম দোতলার উদ্দেশ্যে। সিঁড়িগুলো ভীষণ নোংরা আর এই খানের ছাদের অংশটা নেই বলে বৃষ্টির জলে শেওলা জমেছে। খুব সন্তর্পণে উঠতে হচ্ছিল। শিকদার বাবু হাতের লাঠিটা দিয়ে ঝুল সরিয়ে উঠে যাচ্ছেন, আমি পিছনে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে যেঁ ঘরটার সামনে পৌঁছলাম সেটা এখনও ঠিক আছে। শিকদার বাবু লাঠি দিয়ে একটু ঠেলা মারতেই আধ ভাঙা পাল্লাটা মৃদু শব্দ করে খুলে গেল। আমরা দুজন ঘরে প্রবেশ করলাম। যেমন ধারনা ছিল, ঘরটা তার থেকে পরিষ্কার। ধুলো ময়লা জমে আছে ঠিকই, কিন্তু থাকার উপযোগী। হাতে টর্চ ছিল। তাই জ্বেলে দেখলাম, ঘরটা প্রায় একটা আর্ট মিউজিয়াম। সারা দেওয়াল জুড়ে ঝুলছে প্রচুর ছবি, কোনটা রাজা, কোনটা রানি কোনটা আবার সিনারি। আমি বললাম, "এই যে একটা পরিতক্ত বাড়িতে এত ছবি। চুরি হয় না?"
শিকদার বাবু হেঁসে বললেন, "চুরি করবে কে? এখানে লোকে দিনের বেলাতেই আসতে চায় না। আরে চোরেরও তো ভূতের ভয় আছে নাকি?"
আমি টর্চ জ্বেলে ছবিগুলো দেখছি এমন সময় চোখ পড়ল একটা অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার ছবির উপর। এটা একটা গ্রুপ ফোটো। চেয়ার নিয়ে একটা একটা লোক বসে আছে মাঝখানে আর তার পিছন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু মানুষ। কিন্তু ছবিটা ভীষণ বাজে ভাবে তোলা। জিনি মাঝখানে বসে আছেন তার বাঁ দিকে জনা দশেক লোক আর তার ডান দিকে মাত্র একজন। আর সেই একজনের পিছনে একটা বিশাল গাছ। সাধারণত গ্রুপ ফোটোয় মাঝখানের জনের দুপাশে সমান সমান লোক থাকে, তাতে ছবিটা দেখতেও ভালো লাগে। শিকদার বাবুকে ডেকে দেখাতে উনি বললেন, "ব্যাড ফটোগ্রাফি।"
আমি মন দিয়ে ছবিগুলো দেখছি, এমন সময় ঘরটা থেকে একটা বিদঘুটে গন্ধ বেরতে লাগলো। আমি দুবার জোরে জোরে নিশ্বাস নিলাম। কিরকম একটা...। শিকদার বাবু জিগেস করতে বললেন, "সাপ তাড়াবার ওষুধ দিয়েছি।"
ফেরার পথে ওনাকে বললাম, "রাতে আমার ওখানে আপনার নিমন্ত্রণ থাকল। আপনার গবেষণার গল্প শুনব কিন্তু।" উনি একটু না না করে রাজি হয়ে গেলেন।
রাতে খাবার টেবিলে অনেক গল্প হল। বেশ অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। কিন্তু উনি এতো সিরিয়াসলি বলছিলেন যে বিশ্বাস না করে পারলাম না।
এই বাড়িটা সম্পর্কে জিগেস করতে উনি বললেন, "এই বাড়িটা শঙ্কর নারায়ণ মল্লিকের। উনি এখানকার জমিদার ছিলেন। এই সব ছবির কালেকশন নাকি ওনারই। উনি নিজেও ছবি আঁকতেন। ছবি তুলতেও নাকি বেশ পটু ছিলেন এই শঙ্কর নারায়ণ মল্লিক। সারা জীবনে নাকি তিপান্ন খানা পট্রেট আঁকিয়েছিলেন। উনি নাকি তন্ত্রমন্ত্রও জানতেন বলে এখানকার মানুষদের বিশ্বাস। এই বেশি আমি কিছুই জানি না। ওনার মৃত্যুর পর ওনার ছেলেরা কলকাতায় চলে যায়। টাকার অভাবে বাড়িটা আর মেরামত করা হয়নি।"
খাওয়া শেষ করে নটা নাগাদ উনি চলে গেলেন। বললেন আমার এখান থেকে নাকি সোজা ঐ মল্লিক বাড়িতেই যাবেন। সঙ্গে একটা ছোট ব্যাগ। বললেন অতে নাকি ভুতের অস্তিত্ব প্রমান করার সব যন্ত্র পাতি আছে।
ভুতে বিশ্বাস না থাকলেও এই তথাকথিত ভুতের বাড়িতে রাত কাটানোর ব্যাপারটা আমার ঠিক ভালো লাগছিল না। রাতে ভালো ঘুমও হল না। বারবার মনে হতে লাগলো শিকদার বাবুর কথা। কি দারকার ছিল যাওয়ার?
ঘুম ভাঙল নেত্য হরির ডাকে। ঘুম ভাঙতেই চিন্তাটা যেন আরও বেড়ে গেল। তাড়াতাড়ি চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যত এগোতে লাগলাম বাড়িটার দিকে, তত যেন চিন্তা বাড়তে লাগলো। সঙ্গে একটা অস্বাস্তি ভাব। সকালে নেত্য হরিকে দিয়ে দুটো লোকের ব্যবস্থা করেছি যারা আমার সাথে যাবে। কিন্তু বাড়িতে ঢুকতে কেউই রাজি হল না। ওদের বাইরে রেখেই আমি চলে গেলাম সিঁড়ির দিকে। কোন সাড়া শব্দ নেই। বার দুয়েক হাঁক দিলাম, "শিকদার বাবু, ও শিকদার বাবু।" সাড়া নেই। একটা অজানা ভয় যেন আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো বুকের ভিতর। জানি না উপরে গিয়ে কি দৃশ্য দেখব? পা ভারি হয়ে যাচ্ছে যত উপরে উঠছি।
দরজাটা ঠেলা দিতেই খুলে গেল। ঘর ফাঁকা। জানলা দিয়ে আলো আসতে ঘরটা অনেক উজ্জ্বল লাগছে। ঘরে কেউ নেই, শিকদার বাবুর ব্যাগটাও নেই। ভাবলাম, 'চলে গেলেন নাকি? কিন্তু জানালেন না কেন?' পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ফোন করলাম, সুইচড অফ। ওনার বন্ধুর নম্বরটা নিয়েছিলাম কাল। ওনাকে ফোন করতে উনি বললেন, "না তো। ওর বাকি মালপত্র তো এখানে। যাবে কোথায়?"
বাড়ির আসে পাশে তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম। কোথাও নেই। আমার বুকটা ধকধক করছে, কি হল ভদ্রলোকের? আবার গেলাম ঘরটায়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম সব কিছু। নাহ, কিছুই অস্বাভাবিক নেই। তার মানে উনিও কি নিরুদ্দেশ...? ভাবতে পারলাম না। কাল যার সাথে এক টেবিলে বসে ডিনার করলাম, সেই মানুষটা হঠাৎ হারিয়ে গেল? মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। ভাবলাম আর খুঁজে লাভ নেই। বরং থানায় একটা খবর দেওয়া দরকার।
ধীর পায়ে দরজার দিকে এগোলাম। আমার চোখ স্থির হয়ে গেছে। পা দুটো যেন নড়তে চাইছে না। এও কি সম্ভব? চোখটা পড়েছে কালকের দেখা সেই গ্রুপ ফোটোটার উপর। শিকদার বাবুর কথা অনুযায়ী যেটা 'ব্যাড ফটোগ্রাফি'। কিন্তু ছবিটা আজ একটু আলাদা। কাল দেখেছিলাম চেয়ারে বসা লোকটার ডান দিকে মাত্র একজন দাঁড়িয়ে আছে, আজ সেখানে দুজন। একটু কাছে যেতে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। ছবির এই নতুন লোকটা আমার খুব চেনা, এই নতুন লোকটাকে অবিকল কালিপদ শিকদারের মত দেখতে।
এই রকম জন বিরল রাস্তায় মানুষের দেখা পাব এই আশা যখন প্রায় ছেড়েই দিয়েছি, এমন সময় ড্রাইভার বলল, "স্যার, ঐ গাড়িটা মনে হয় খারাপ হয়ে গেছে, ঐ দেখুন গাড়ির মালিক হাত দেখাচ্ছে। থামবো?"
একটু কাছেকাছি যেতে ভদ্রলোককে দেখতে পেলাম। নিতান্ত সাধারন চেহারা। মোটামুটি সাড়ে পাঁচ ফুটের কাছাকাছি উচ্চতা, গায়ের রং ময়লা, ইষৎ মোটা, চোখে চশমা, পরনে ছাই রঙের সাফারি সুট, হাতে সুটকেস। বয়স আন্দাজ পঞ্চাশ। আমি বললাম, "দাঁড়াও তো।" ড্রাইভার সামনের গাড়িটা পেরিয়ে গিয়ে দাঁড়াল।
গাড়ি দাঁড়াতেই ঐ ভদ্রলোক তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলেন। জানলার কাছে এসে বললেন, "মশাই, গাড়িটা হঠাৎ ব্রেক ডাউন করল। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড তিন মাইল দূরে। একটু লিফট দিলে খুব উপকার হত। হে হে।" ভদ্রলোকের চেহারার মতই ওনার গলাটাও খুব সাধারন মানের, তবে একটু মিহি।
আমি মাথা নেড়ে "উঠে পড়ুন" বলতে, তিনি বললেন, "এক মিনিট," এই বলে তিনি তার ড্রাইভারকে কিছু বলতে গেলেন বোধহয়।
এখানেই বলে রাখি আমার নাম অরূপ কুমার সামন্ত। জীবনে বিশেষ কিছু না করতে পেরে অবশেষে সাহিত্য চর্চা করছি। বিশেষ নামডাক আছে, তা নয়, তবে বেশ কিছু পত্র পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হয়, তার ফলে জে যৎসামান্য আয় হয়, তাতে আমার ভালই চলে যায়। একা মানুষ, বিবাহ করিনি। পিতা মারা যাওয়ার পূর্বে বেশ কিছু অর্থ রেখে যান ব্যাঙ্কে। তার ইন্টারেস্ট দিয়ে বেশ চলে যায়।
এখন আমি চলেছি ইছাপুর নামক একটি গ্রামে। হাবড়া, গোবরডাঙ্গা ছাড়িয়ে বেশ কিছুটা যেতে হবে। আমার এক মামা ওখানে থাকতেন। তার সাতকুলে কেউ ছিল না, আমি ছাড়া। তার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া বিপুল সম্পত্তি এখন আমার। তাই নিয়েই কিছু সি সাবুদ করার ছিল। সেই কারনেই আমার যাত্রা।
ভদ্রলোক সামনে বসলেন, ড্রাইভারের পাশের সিটটায়। আমাকে একটা ছোট্ট নমস্কার ঠুকে বললেন, "আমার নাম কালিপদ শিকদার। আমি যাচ্ছি মল্লিকপুরের কাছাকাছি একটা গ্রামে। নাম ইছাপুর। একটু বেড়াবার জন্য আর কি।"
আমি বললাম, "সে তো ভালো কথা, আমিও সেখানেই যাচ্ছি। তা চলুন একসাথে। অনেকটা পথ, সঙ্গীও পাওয়া যাবে।"
ভদ্রলোক মাথা নত করে হে হে করে চুপ করে গেলেন।
বাকি পথটা অনেক কথা হল ওনার সাথে। কোথায় থাকেন, কি করেন ইত্যাদি। খানিক বাদে আমি বললাম, "তা ওখানে উঠছেন কোথায়?"
"আমার এক বন্ধুর আছেন ওখানে, সমীর দত্ত। তার বাড়িতেই উঠব এখন। কাল..."
ভদ্রলোক থেমে গেলেন। কারন আমরা বড় রাস্তা থেকে মাটির রাস্তায় নেমে গেছি। রাস্তার দুধারে গাছের সারি, যেগুলোর প্রায় আশি ভাগই আমি চিনি নি। ঘড়িতে দেখলাম, সময় প্রায় সাড়ে দশটা। রাস্তার পাশে একটা টিনের ফলকে কালো কালি দিয়ে লেখা ইছাপুর।
আর একটু এগোতেই একটা ছোট মুদির দোকান চোখে পড়ল। শিকদার বাবু আঙুল দেখিয়ে বললেন, "এই, এইখানে একটু..."
ওনার থেকে বিদায় নিয়ে আমরা ঐ মুদির দোকানটার পাশ দিয়ে এগিয়ে গেলাম। এখানে আমি আগে কোনদিন আসিনি। মামার সাথে কথা হত টেলিফোনে। আমার কলকাতার বাড়িতেও গেছিলেন বেশ কয়েকবার। আমাকে এখানে আসতেও বলেছিলেন, কিন্তু আমার আসা হয়নি। আরও খানিক গিয়ে যেঁ বাড়িটার সামনে দাঁড়ালাম সেটাকে বাড়ি না বলে অট্টালিকাই বলা ভালো। এটাই আমার সেই মামার বাড়ি।
গাড়ি দাঁড়াতেই একটা মাঝ বয়সের লোক বেরিয়ে এল, "বাবু, আপনি এঁছেন? এঁসেন।" এই বলে আমার ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে সে ভীতরে ঢুকে গেল।
খানিক পর স্নান করে খাবার টেবিলে বসে বললাম, "তোমার নামটা কি হে?"
"নেত্য হরি, বাবু।"
"আচ্ছা নেত্য হরি, ঐ উকিল সাহেব কখন আসবেন কিছু বলেছেন?"
"কাল এঁছিলেন। বললেন আজ ঐ রেতের দিকে আবার আসবেন।"
গরম ভাত আর মুরগির মাংস দিয়ে খাওয়া শেষ করে বললাম, "তা রান্নাটা কে করল? তুমি? দারুণ হাত তো!"
নেত্য হরি জিব কেটে বলল, " না বাবু। আমার ইস্তিরি করেছে।"
দুপুরে একটু ঘুম দিয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ একটু বেড়াতে বেরলাম। কলকাতার মানুষ, গ্রাম জিনিষটা খুব উপভোগ করি। ওখানে আর এত গাছপালা কই?
ফাঁকা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, এমন সময় 'ও সামন্ত মশাই' বলে একটা ডাক পেয়ে পিছন ফিরে দেখি শিকদার বাবু। হাঁসি মুখে উনি আমার দিকেই আসছেন। কাছাকাছি এসে বল্লনে, "সকালে যা উপকার করেছেন মশাই। না হলে হয়তো কাজই হত না।"
বললাম, "কি কাজ? অফিশিয়াল কিছু?"
"না, না, আসল ব্যাপারটা তাহলে আপনাকে বলি শুনুন। আমি চাকরি করি আই আই পি আর (ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ প্যারাসাইকোলজি রিসার্চ)-এ। আর আমার ডিপার্টমেন্ট হল আত্মা বা পাতি বাংলায় ভুত।"
"কি? ভুত?" আমি তো অবাক। হাসি যে পায়নি তা নয়, আজকের দিনেও নাকি লোকে এই সব মানে। শিকদার বাবু বলতে লাগলেন, "আমার বন্ধু সমীর এই জায়গাটার কথা আমায় প্রথম বলে। এই গ্রামের উত্তর পূর্ব দিকে একটা বিশাল জমিদার বাড়ি আহে, সেটা এখন প্রায় ধ্বংসস্তুপ। কিন্তু দোতলার দুটো ঘর এখনও নাকে ভালো অবস্থায় আছে। ঐ ঘর থেকে নাকি এর আগে বহু লোক নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।"
"এতে আপনি ভুত পেলেন কোথায়?" হেঁসে বললাম, "এতো মানুষের কাজও হতে পারে। ভুত কি আর খেয়ে ফেলবে মানুষগুলোকে?"
"সেটাই তো দেখার মিঃ সামন্ত। একবার দেখবেন নাকি বাড়িটা?" ভদ্রলোকের চোখ জ্বলে উঠল।
আমি বললাম, "আলো যখন আছে, তখন ভুতের ভয় তো নেই। চলুন।"
আমার উৎসাহ বাড়ছে। ভূতে যদিও বিশ্বাস করিনা তবে মানুষ গায়েব হওয়ার ব্যপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল। আমি একটু ইয়ার্কির ছলে বললাম, "তা আপনি গবেষণাটা কি নিয়ে বা কি করে করবেন? ভুত তো আর চোখে দেখা যাবে না।"
উনি কিন্তু বেশ সিরিয়াসলিই বললেন, "আজ রাতটা ওখানে থাকব ভাবছি।"
আমি থমকে গেলাম। বলেন কি ভদ্রলোক? বললাম, "সে কি মশাই? ভুতের কথা না হয় বাদ দিন। সাপখোপ তো থাকতেই পারে? বড্ড রিস্ক নিয়ে ফেলছেন না?" আমার কথার উত্তরে উনি শুধুই হাসলেন।
আরও মিনিট কুড়ি হেঁটে আমরা যেখানে পৌঁছলাম সেটাকে ছোটখাট একটা জঙ্গল বলাই চলে। তার ভিতর দিয়ে মিনিট পাঁচেক হাঁটার পর একটা ভগ্নস্তুপের সামনে পৌঁছলাম। শিকদার বাবু বললেন, "যাবেন নাকি ভীতরে?"
সামনের আগাছাগুলো সাবধানে পেরিয়ে, আমরা পৌঁছলাম বাড়ির সদর দরজার কাছে। দরজা যদিও বললাম কিন্তু সেটা শুধুই একটা গহ্বর। পাল্লা নেই। পাশের একটা আধ ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে আমরা উঠতে লাগলাম দোতলার উদ্দেশ্যে। সিঁড়িগুলো ভীষণ নোংরা আর এই খানের ছাদের অংশটা নেই বলে বৃষ্টির জলে শেওলা জমেছে। খুব সন্তর্পণে উঠতে হচ্ছিল। শিকদার বাবু হাতের লাঠিটা দিয়ে ঝুল সরিয়ে উঠে যাচ্ছেন, আমি পিছনে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে যেঁ ঘরটার সামনে পৌঁছলাম সেটা এখনও ঠিক আছে। শিকদার বাবু লাঠি দিয়ে একটু ঠেলা মারতেই আধ ভাঙা পাল্লাটা মৃদু শব্দ করে খুলে গেল। আমরা দুজন ঘরে প্রবেশ করলাম। যেমন ধারনা ছিল, ঘরটা তার থেকে পরিষ্কার। ধুলো ময়লা জমে আছে ঠিকই, কিন্তু থাকার উপযোগী। হাতে টর্চ ছিল। তাই জ্বেলে দেখলাম, ঘরটা প্রায় একটা আর্ট মিউজিয়াম। সারা দেওয়াল জুড়ে ঝুলছে প্রচুর ছবি, কোনটা রাজা, কোনটা রানি কোনটা আবার সিনারি। আমি বললাম, "এই যে একটা পরিতক্ত বাড়িতে এত ছবি। চুরি হয় না?"
শিকদার বাবু হেঁসে বললেন, "চুরি করবে কে? এখানে লোকে দিনের বেলাতেই আসতে চায় না। আরে চোরেরও তো ভূতের ভয় আছে নাকি?"
আমি টর্চ জ্বেলে ছবিগুলো দেখছি এমন সময় চোখ পড়ল একটা অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার ছবির উপর। এটা একটা গ্রুপ ফোটো। চেয়ার নিয়ে একটা একটা লোক বসে আছে মাঝখানে আর তার পিছন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু মানুষ। কিন্তু ছবিটা ভীষণ বাজে ভাবে তোলা। জিনি মাঝখানে বসে আছেন তার বাঁ দিকে জনা দশেক লোক আর তার ডান দিকে মাত্র একজন। আর সেই একজনের পিছনে একটা বিশাল গাছ। সাধারণত গ্রুপ ফোটোয় মাঝখানের জনের দুপাশে সমান সমান লোক থাকে, তাতে ছবিটা দেখতেও ভালো লাগে। শিকদার বাবুকে ডেকে দেখাতে উনি বললেন, "ব্যাড ফটোগ্রাফি।"
আমি মন দিয়ে ছবিগুলো দেখছি, এমন সময় ঘরটা থেকে একটা বিদঘুটে গন্ধ বেরতে লাগলো। আমি দুবার জোরে জোরে নিশ্বাস নিলাম। কিরকম একটা...। শিকদার বাবু জিগেস করতে বললেন, "সাপ তাড়াবার ওষুধ দিয়েছি।"
ফেরার পথে ওনাকে বললাম, "রাতে আমার ওখানে আপনার নিমন্ত্রণ থাকল। আপনার গবেষণার গল্প শুনব কিন্তু।" উনি একটু না না করে রাজি হয়ে গেলেন।
রাতে খাবার টেবিলে অনেক গল্প হল। বেশ অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। কিন্তু উনি এতো সিরিয়াসলি বলছিলেন যে বিশ্বাস না করে পারলাম না।
এই বাড়িটা সম্পর্কে জিগেস করতে উনি বললেন, "এই বাড়িটা শঙ্কর নারায়ণ মল্লিকের। উনি এখানকার জমিদার ছিলেন। এই সব ছবির কালেকশন নাকি ওনারই। উনি নিজেও ছবি আঁকতেন। ছবি তুলতেও নাকি বেশ পটু ছিলেন এই শঙ্কর নারায়ণ মল্লিক। সারা জীবনে নাকি তিপান্ন খানা পট্রেট আঁকিয়েছিলেন। উনি নাকি তন্ত্রমন্ত্রও জানতেন বলে এখানকার মানুষদের বিশ্বাস। এই বেশি আমি কিছুই জানি না। ওনার মৃত্যুর পর ওনার ছেলেরা কলকাতায় চলে যায়। টাকার অভাবে বাড়িটা আর মেরামত করা হয়নি।"
খাওয়া শেষ করে নটা নাগাদ উনি চলে গেলেন। বললেন আমার এখান থেকে নাকি সোজা ঐ মল্লিক বাড়িতেই যাবেন। সঙ্গে একটা ছোট ব্যাগ। বললেন অতে নাকি ভুতের অস্তিত্ব প্রমান করার সব যন্ত্র পাতি আছে।
ভুতে বিশ্বাস না থাকলেও এই তথাকথিত ভুতের বাড়িতে রাত কাটানোর ব্যাপারটা আমার ঠিক ভালো লাগছিল না। রাতে ভালো ঘুমও হল না। বারবার মনে হতে লাগলো শিকদার বাবুর কথা। কি দারকার ছিল যাওয়ার?
ঘুম ভাঙল নেত্য হরির ডাকে। ঘুম ভাঙতেই চিন্তাটা যেন আরও বেড়ে গেল। তাড়াতাড়ি চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যত এগোতে লাগলাম বাড়িটার দিকে, তত যেন চিন্তা বাড়তে লাগলো। সঙ্গে একটা অস্বাস্তি ভাব। সকালে নেত্য হরিকে দিয়ে দুটো লোকের ব্যবস্থা করেছি যারা আমার সাথে যাবে। কিন্তু বাড়িতে ঢুকতে কেউই রাজি হল না। ওদের বাইরে রেখেই আমি চলে গেলাম সিঁড়ির দিকে। কোন সাড়া শব্দ নেই। বার দুয়েক হাঁক দিলাম, "শিকদার বাবু, ও শিকদার বাবু।" সাড়া নেই। একটা অজানা ভয় যেন আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো বুকের ভিতর। জানি না উপরে গিয়ে কি দৃশ্য দেখব? পা ভারি হয়ে যাচ্ছে যত উপরে উঠছি।
দরজাটা ঠেলা দিতেই খুলে গেল। ঘর ফাঁকা। জানলা দিয়ে আলো আসতে ঘরটা অনেক উজ্জ্বল লাগছে। ঘরে কেউ নেই, শিকদার বাবুর ব্যাগটাও নেই। ভাবলাম, 'চলে গেলেন নাকি? কিন্তু জানালেন না কেন?' পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ফোন করলাম, সুইচড অফ। ওনার বন্ধুর নম্বরটা নিয়েছিলাম কাল। ওনাকে ফোন করতে উনি বললেন, "না তো। ওর বাকি মালপত্র তো এখানে। যাবে কোথায়?"
বাড়ির আসে পাশে তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম। কোথাও নেই। আমার বুকটা ধকধক করছে, কি হল ভদ্রলোকের? আবার গেলাম ঘরটায়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম সব কিছু। নাহ, কিছুই অস্বাভাবিক নেই। তার মানে উনিও কি নিরুদ্দেশ...? ভাবতে পারলাম না। কাল যার সাথে এক টেবিলে বসে ডিনার করলাম, সেই মানুষটা হঠাৎ হারিয়ে গেল? মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। ভাবলাম আর খুঁজে লাভ নেই। বরং থানায় একটা খবর দেওয়া দরকার।
ধীর পায়ে দরজার দিকে এগোলাম। আমার চোখ স্থির হয়ে গেছে। পা দুটো যেন নড়তে চাইছে না। এও কি সম্ভব? চোখটা পড়েছে কালকের দেখা সেই গ্রুপ ফোটোটার উপর। শিকদার বাবুর কথা অনুযায়ী যেটা 'ব্যাড ফটোগ্রাফি'। কিন্তু ছবিটা আজ একটু আলাদা। কাল দেখেছিলাম চেয়ারে বসা লোকটার ডান দিকে মাত্র একজন দাঁড়িয়ে আছে, আজ সেখানে দুজন। একটু কাছে যেতে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। ছবির এই নতুন লোকটা আমার খুব চেনা, এই নতুন লোকটাকে অবিকল কালিপদ শিকদারের মত দেখতে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
চিরন্তন ০৮/১২/২০১৫শুধু শেষটা নয়।। শুরু থেকেই দারুন ।।। 😊
-
শাহানাজ সুলতানা (শাহানাজ) ০৭/১২/২০১৫সুন্দর
-
জুনায়েদ বি রাহমান ০৫/১২/২০১৫ভয়ে ভয়ে শেষ করলাম। ভৌতিক গল্প। ভালো লাগলো।
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ২০/১১/২০১৫একটু ভয়ে ভয়ে পুরোটা পড়েছি। দারুন জমিয়ে দিয়েছ ভাই । শুভেচ্ছা জানাই।
-
হাসান কাবীর ২০/১১/২০১৫গল্পে বর্ণনা মজবুত।
-
জয়শ্রী রায় মৈত্র ১৩/১১/২০১৫ভৌতিক গল্পের প্লট বেশ ভালই । লেখার হাতও জমাটি । কয়েকটি বানান ঠিক করে নিতে হবে বলে আমার মনে হয়েছে । শুভেচ্ছা রইল ।
-
মোবারক হোসেন ১২/১১/২০১৫ভাল।।
-
শুভাশিষ আচার্য ০৬/১১/২০১৫টানটান গল্প শুরু করলে শেষ না করে পারা যায় না।
-
দেবব্রত সান্যাল ০৬/১১/২০১৫তোমার লেখার হাত ভালো। জমানতে ওস্তাদ। বাকি অনেক জিজ্ঞাসা আছে , সেটা ব্যক্তিগত ভাবে করবো।