অধীরবাবু ও আইনস্টাইন
বিজ্ঞানের মতে, প্রতিটি বস্তুকে আমরা তিনটে ডাইমেনশন দিয়ে বর্ণনা করতে পারি - দীর্ঘ, প্রস্থ আর উচ্চতা। কিন্তু বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক অ্যালবার্ট আইনস্টাইন-এর মতবাদ অনুযায়ী প্রতিটি বস্তুর একটা চতুর্থ ডাইমেনশন আছে। আর সেটা হল সময়।
সকালের ফ্লাইটের দিল্লী এসেছেন অধীরবাবু অর্থাৎ ডাঃ অধীর কুমার সোম। উনি একজন প্যারা-সাইকলজিস্ট। কলকাতায় প্রথমিক শিক্ষা শেষ করে উনি অ্যামেরিকার কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি করেন ১৯৮৯ সালে। তারপর গবেষণা করেছেন প্রায় সারা পৃথিবী জুড়ে, কখনও জার্মানি, কখনও অস্ট্রেলিয়া কখনও ব্রাজিল। একবার তো দক্ষিণ মেরুতেও গিয়েছিলেন গবেষণার কাজে। এখন আপাতত কলকাতায় বাস করেন। গবেষণাও করেন নিজের বাড়ির নীচে একটা ছোট্ট ল্যাব-এ। বিয়ে করেন নি, আর আত্মীয় বলতেও সেরকম কেউ নেই। এক দুঃসম্পর্কের ভাগনে আছে, সে ওনার সাথেই থাকেন। ওনার অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ করে।
যাই হোক, ওনার দিল্লী আসার করনটা এবার বলি। পরশু গ্র্যান্ড হোটেলে একটা প্যারা-সাইকলজির সেমিনার আছে। সারা বিশ্বের সব বিখ্যাত প্যারা-সাইকলজিস্টরা আসবেন সেখানে। অধীরবাবু এই সেমিনারের একজন বক্তা। ওখানেই তিনি প্রথম তার মতবাদটা প্রকাশ করবেন জন সমক্ষে। গত দশ বছরের গবেষণার ফল এই মতবাদটি। এটা মতবাদই, থিয়োরী নয়। কারন এর কোন প্রমান তিনি পান নি। তবুও বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে যতটুকু জানা গেছে, তার উপরেই এই মতবাদ। মৃত্যুর পরে কি হয় এই ওনার গবেষণার বিষয়।
মৃত্যুর পর, মানুষের দেহ পচে গলে যায় বিভিন্ন মাইক্রোবের সাহায্যে। কিন্তু জীবন শক্তি? সেটার কি হয়? এটা তো শক্তির একটা রুপ। এটা তো অবিনশ্বর। যেমন বায়ু সক্তি, জল সক্তি সেই রকম আর কি। কোন কোন বিজ্ঞানীর মতে এটা একটা প্রোটিন, নাম এক্টোপ্লাজম। কিন্তু অধীরবাবুর চিন্তাধারা একেবারেই আলাদা।
গ্র্যান্ড হোটেলে থাকার ইচ্ছে ওনার ছিল না। চিরকাল দিল্লীতে এসে উনি হোটেল বিকাশ এই থাকেন তাই এইবারও তার অন্যথা করলেন না। হোটেলটা মাঝারি হলেও বেশ ছিমছাম। যে ঘরটায় অধীরবাবু আছেন সেটাও বেশ বড়। টিভি, ফ্রিজ, এসি সব আছে। জানলা দিয়ে বড় রাস্তা দেখা যায়। বেশ ভালোই ঘরখানা। কিন্তু, কিরকম যেন একটা স্যাঁতস্যাঁতে ভাব এই রুম নং তেরোর। যদিও তাতে কিছু এসে যায় না অধীরবাবুর। মাত্র দুটো রাতের তো ব্যাপার। সেমিনারের পরের দিনই ভোর ছটায় ফিরতি ফ্লাইট।
সেমিনার থেকে ফিরতে রাত দশটা বেজে গেল। ওরা পৌঁছে দিয়ে গেছে হোটেলে। সামনের দোকান থেকে এক প্যাকেট গোল্ড ফ্লেক সিগারেট কিনে রুমে চলে এলেন অধীরবাবু। পোশাক বদলে একটা সিগারেট ধরালেন। আজকের সেমিনারে বেশ হইচই পড়ে গেছে ওনার মতবাদ নিয়ে। কিন্তু সমালোচনাও হয়েছে বিস্তর। নতুন আবিষ্কারের কথা প্রথম শুনলে এই রকমই হয়। যাই হোক, ধোঁয়ার দুটোর রিং ছেড়ে উনি ফোন করলেন ওনার ভাগনে ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সাগ্নিককে। বার তিনেক বাজার পর ওপাশ থেকে আওয়াজ এল, "হ্যাঁ মামা, বলুন। সেমিনার ঠিক ঠাক হল তো?"
"হ্যাঁ রে, ঠিক আছে। বেশ মাতামাতি শুরু হয়েছে আমার মতবাদ নিয়ে। যাই হোক, তোকে ফোন করলাম আমাকে সকালে ডেকে দেওয়ার কথা মনে করানর জন্য আর কি।"
"ও, সে মনে আছে মামা। তিনটে নাগাদ ফোন করে দেব। অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছি।"
"আচ্ছা, গুড নাইট," বলে ফোন রেখে দিলেন ডাঃ অধীর কুমার সোম। শরীরটা ঠিক সুস্থ বোধ করছেন না। 'রাতের খাওয়াটা বেশ রিচ ছিল। আম্বল হয়ে গেছে মনে হয়', এই ভেবে ব্যাগ থেকে আম্বলের একটা ওষুধ বের করে খেয়ে নিলেন। বেশ ঘামও দিচ্ছে। তাই এসিটা চালিয়ে শুয়ে পরলেন। ঘুমও এসে গেল বেশ তাড়াতাড়ি।
মাঝরাতে ঘুমটা ভেঙে গেল। 'নাহ, এখন অসুবিধেটা একটু কম।' পাশ ফিরে শুতে গিয়ে দেখেন ফ্রিজের দরজাটা অল্প খোলা। একটু আলো আসছে ওখান থেকে। 'আরে, খুলল কি করে?' ঘুমানোর সময় আলো জিনিষটা একদম সহ্য হয় না অধীরবাবুর। উঠে গিয়ে বন্ধ করে দিলেন দরজাটা। শুতে যাওয়ার আগে তো ফ্রিজ খোলেন নি। তাহলে? ঘুমটা বেশ কেটে গেছে ওনার। তাই উঠে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে জানলা দিয়ে নিস্তব্ধ শহরের রাত দেখতে লাগলেন। চারিদিক শান্ত। হঠাৎ সেই নিস্তব্ধতা খান খান করে ফোনটা বেজে উঠল। সাগ্নিকের ফোন। ফোনটা ধরতে গিয়ে সময় দেখলেন দুটো একত্রিশ।
"হ্যালো?" ওপাশের কণ্ঠস্বর বলে উঠল।
"হ্যাঁ, বল?"
"উঠে পড়েছেন?" জিজ্ঞেস করল সাগ্নিক।
"ঘুমটা এমনিই ভেঙে গেছে, রে। আচ্ছা, এই রেডি হব আর কি?" বললেন অধীরবাবু।
"আচ্ছা মামা, রাখছি। এয়ারপোর্টে গিয়ে একবার জানিয়ে দেবেন।" এই বলে সাগ্নিক ফোনটা রেখে দিল।
অধীরবাবু মনে মনে ভাবলেন যে সবে তো দুটো একত্রিশ, এখনও ঢের দেরী আর মিনিট পনেরো গড়িয়ে নিই, তারপর রেডি হবখন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। আবার শুয়ে পড়লেন অধীরবাবু আর ঘুমও এসে গেল তৎক্ষণাৎ।
হঠাৎ ঘুমটা ভাঙতে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলেন তিনি। এই রে নিশ্চয়ই দেরী হয়ে গেছে। একটু আগে যে অল্প অস্বাস্তিটা ছিল এখন তাও নেই। একদম ফিট। কটা বাজে দেখার জন্য মোবাইলটা নিতে গিয়ে চোখ পড়ল ফ্রিজটার দিকে। দরজাটা অল্প খোলা।
'উফ, বড্ড জ্বালাচ্ছে তো? মনে হয় ভ্যাকুয়ামটা গেছে।'
উঠে গিয়ে ফ্রিজের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন অধীরবাবু। মনে মনে বললেন, 'একটা সিগারেট খাই, তারপর রেডি হব খন'।
একটা সিগারেট ধরিয়ে জানলার পাশে দাঁড়ীয়ে দেখতে লাগলেন নিস্তধ শহর। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। সাগ্নিকের ফোন। ফোনটা ধরতে গিয়ে সময় দেখলেন দুটো একত্রিশ। 'আরে, মোবাইলটা খারাপ হয়ে গেল নাকি? একটু আগেই তো দেখতা দুটো একত্রিশ। কি জানি, ঘুম চোখে ভুল দেখে ছিলাম হয়তো।' ফোনটা কানে দিলেন।
"হ্যালো?" ওপাশের কণ্ঠস্বর বলে উঠল।
"হ্যাঁ, বল?"
"উঠে পড়েছেন?" জিজ্ঞেস করল সাগ্নিক।
"ঘুমটা এমনিই ভেঙে গেছে, রে। আচ্ছা, এই রেডি হব আর কি?" বললেন অধীরবাবু।
"আচ্ছা মামা, রাখছি। এয়ারপোর্টে গিয়ে একবার জানিয়ে দেবেন।" এই বলে সাগ্নিক ফোনটা রেখে দিল।
এ কি রে বাবা, সাগ্নিক আগের বার ঠিক এই কথাগুলোই বলল না? ঠিক মনে করতে পারলেন না অধীরবাবু। ঘুমে চোখ বুজে আসছে ওনার, অধীরবাবু ভাবলেন, 'আর মিনিট পনেরো গড়িয়ে নিই, তারপর উঠব খন।'
হঠাৎ ঘুমটা ভাঙতে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলেন তিনি। এই রে নিশ্চয়ই দেরী হয়ে গেছে। একটু আগে যে অল্প অস্বাস্তিটা ছিল এখন তাও নেই। কটা বাজে দেখার জন্য মোবাইলটা নিতে গিয়ে চোখ পড়ল ফ্রিজটার দিকে। দরজাটা অল্প খোলা। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল ডাঃ অধীর কুমার সোমের। উঠে গিয়ে ফ্রিজের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন অধীরবাবু। মনে মনে বললেন, 'একটা সিগারেট খাই, তারপর রেডি হব খন'।
সিগারেট নিতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন প্যাকেটে ন'টা সিগারেট। কি হল? মাথা যেন কাজ করছে না ওনার। যন্ত্র চালিতের মত একটা সিগারেট ধরিয়ে জানলার পাশে দাঁড়ীয়ে দেখতে লাগলেন নিস্তধ শহর। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। সাগ্নিকের ফোন। ফোনটা ধরতে গিয়ে সময় দেখলেন দুটো একত্রিশ।
সাড়ে সাতটা পর্যন্ত দরজা খুললেন না দেখে হোটেলের ম্যানেজার রোহিত কোহলি পুলিসে খবর দিতে বাধ্য হলেন। খবর পাঠানো হল সেমিনারের কর্তাদেরও। পুলিস এসে দরজা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ডাঃ অধীর কুমার সোমের লাশ নিয়ে গেল। পুলিসের ডাক্তার চেক করে বললেন যা মাঝ রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অধীরবাবু। মৃত্যুর সময় মোটামুটি রাত আড়াইতে থেকে তিনটের মধ্যে।
আবার ঘুম ভেঙে গেছে অধীরবাবুর। পাশ ফিরে দেখলেন ফ্রিজের দরজাটা খোলা। উঠে বসলেন উনি। মনে মনে ঠিক করলেন এবার আর দরজাটা বন্ধ করবেন না। কিন্তু ওনার পা যেন ওনার কথা শুনতে চাইছে না। কে যান টানছে ওনাকে। উনি এগিয়ে গেলেন দরজাটা বন্ধ করতে। উনি বুঝতে পেরেছেন কি হচ্ছে এটা। নিজের অজান্তেই নিজের মতবাদটা প্রমান করে ফেলেছেন অধীরবাবু। আইনস্টাইনের কথা অনুযায়ী চতুর্থ ডাইমেনশন হল সময়। আর ডাঃ অধীর কুমার সোমের মতবাদ অনুযায়ী মৃত্যুর পর এই চতুর্থ ডাইমেনশন অর্থাৎ সময় স্থির হয়ে যায়। সময় তখন ধ্রুবক।
সকালের ফ্লাইটের দিল্লী এসেছেন অধীরবাবু অর্থাৎ ডাঃ অধীর কুমার সোম। উনি একজন প্যারা-সাইকলজিস্ট। কলকাতায় প্রথমিক শিক্ষা শেষ করে উনি অ্যামেরিকার কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি করেন ১৯৮৯ সালে। তারপর গবেষণা করেছেন প্রায় সারা পৃথিবী জুড়ে, কখনও জার্মানি, কখনও অস্ট্রেলিয়া কখনও ব্রাজিল। একবার তো দক্ষিণ মেরুতেও গিয়েছিলেন গবেষণার কাজে। এখন আপাতত কলকাতায় বাস করেন। গবেষণাও করেন নিজের বাড়ির নীচে একটা ছোট্ট ল্যাব-এ। বিয়ে করেন নি, আর আত্মীয় বলতেও সেরকম কেউ নেই। এক দুঃসম্পর্কের ভাগনে আছে, সে ওনার সাথেই থাকেন। ওনার অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ করে।
যাই হোক, ওনার দিল্লী আসার করনটা এবার বলি। পরশু গ্র্যান্ড হোটেলে একটা প্যারা-সাইকলজির সেমিনার আছে। সারা বিশ্বের সব বিখ্যাত প্যারা-সাইকলজিস্টরা আসবেন সেখানে। অধীরবাবু এই সেমিনারের একজন বক্তা। ওখানেই তিনি প্রথম তার মতবাদটা প্রকাশ করবেন জন সমক্ষে। গত দশ বছরের গবেষণার ফল এই মতবাদটি। এটা মতবাদই, থিয়োরী নয়। কারন এর কোন প্রমান তিনি পান নি। তবুও বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে যতটুকু জানা গেছে, তার উপরেই এই মতবাদ। মৃত্যুর পরে কি হয় এই ওনার গবেষণার বিষয়।
মৃত্যুর পর, মানুষের দেহ পচে গলে যায় বিভিন্ন মাইক্রোবের সাহায্যে। কিন্তু জীবন শক্তি? সেটার কি হয়? এটা তো শক্তির একটা রুপ। এটা তো অবিনশ্বর। যেমন বায়ু সক্তি, জল সক্তি সেই রকম আর কি। কোন কোন বিজ্ঞানীর মতে এটা একটা প্রোটিন, নাম এক্টোপ্লাজম। কিন্তু অধীরবাবুর চিন্তাধারা একেবারেই আলাদা।
গ্র্যান্ড হোটেলে থাকার ইচ্ছে ওনার ছিল না। চিরকাল দিল্লীতে এসে উনি হোটেল বিকাশ এই থাকেন তাই এইবারও তার অন্যথা করলেন না। হোটেলটা মাঝারি হলেও বেশ ছিমছাম। যে ঘরটায় অধীরবাবু আছেন সেটাও বেশ বড়। টিভি, ফ্রিজ, এসি সব আছে। জানলা দিয়ে বড় রাস্তা দেখা যায়। বেশ ভালোই ঘরখানা। কিন্তু, কিরকম যেন একটা স্যাঁতস্যাঁতে ভাব এই রুম নং তেরোর। যদিও তাতে কিছু এসে যায় না অধীরবাবুর। মাত্র দুটো রাতের তো ব্যাপার। সেমিনারের পরের দিনই ভোর ছটায় ফিরতি ফ্লাইট।
সেমিনার থেকে ফিরতে রাত দশটা বেজে গেল। ওরা পৌঁছে দিয়ে গেছে হোটেলে। সামনের দোকান থেকে এক প্যাকেট গোল্ড ফ্লেক সিগারেট কিনে রুমে চলে এলেন অধীরবাবু। পোশাক বদলে একটা সিগারেট ধরালেন। আজকের সেমিনারে বেশ হইচই পড়ে গেছে ওনার মতবাদ নিয়ে। কিন্তু সমালোচনাও হয়েছে বিস্তর। নতুন আবিষ্কারের কথা প্রথম শুনলে এই রকমই হয়। যাই হোক, ধোঁয়ার দুটোর রিং ছেড়ে উনি ফোন করলেন ওনার ভাগনে ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সাগ্নিককে। বার তিনেক বাজার পর ওপাশ থেকে আওয়াজ এল, "হ্যাঁ মামা, বলুন। সেমিনার ঠিক ঠাক হল তো?"
"হ্যাঁ রে, ঠিক আছে। বেশ মাতামাতি শুরু হয়েছে আমার মতবাদ নিয়ে। যাই হোক, তোকে ফোন করলাম আমাকে সকালে ডেকে দেওয়ার কথা মনে করানর জন্য আর কি।"
"ও, সে মনে আছে মামা। তিনটে নাগাদ ফোন করে দেব। অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছি।"
"আচ্ছা, গুড নাইট," বলে ফোন রেখে দিলেন ডাঃ অধীর কুমার সোম। শরীরটা ঠিক সুস্থ বোধ করছেন না। 'রাতের খাওয়াটা বেশ রিচ ছিল। আম্বল হয়ে গেছে মনে হয়', এই ভেবে ব্যাগ থেকে আম্বলের একটা ওষুধ বের করে খেয়ে নিলেন। বেশ ঘামও দিচ্ছে। তাই এসিটা চালিয়ে শুয়ে পরলেন। ঘুমও এসে গেল বেশ তাড়াতাড়ি।
মাঝরাতে ঘুমটা ভেঙে গেল। 'নাহ, এখন অসুবিধেটা একটু কম।' পাশ ফিরে শুতে গিয়ে দেখেন ফ্রিজের দরজাটা অল্প খোলা। একটু আলো আসছে ওখান থেকে। 'আরে, খুলল কি করে?' ঘুমানোর সময় আলো জিনিষটা একদম সহ্য হয় না অধীরবাবুর। উঠে গিয়ে বন্ধ করে দিলেন দরজাটা। শুতে যাওয়ার আগে তো ফ্রিজ খোলেন নি। তাহলে? ঘুমটা বেশ কেটে গেছে ওনার। তাই উঠে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে জানলা দিয়ে নিস্তব্ধ শহরের রাত দেখতে লাগলেন। চারিদিক শান্ত। হঠাৎ সেই নিস্তব্ধতা খান খান করে ফোনটা বেজে উঠল। সাগ্নিকের ফোন। ফোনটা ধরতে গিয়ে সময় দেখলেন দুটো একত্রিশ।
"হ্যালো?" ওপাশের কণ্ঠস্বর বলে উঠল।
"হ্যাঁ, বল?"
"উঠে পড়েছেন?" জিজ্ঞেস করল সাগ্নিক।
"ঘুমটা এমনিই ভেঙে গেছে, রে। আচ্ছা, এই রেডি হব আর কি?" বললেন অধীরবাবু।
"আচ্ছা মামা, রাখছি। এয়ারপোর্টে গিয়ে একবার জানিয়ে দেবেন।" এই বলে সাগ্নিক ফোনটা রেখে দিল।
অধীরবাবু মনে মনে ভাবলেন যে সবে তো দুটো একত্রিশ, এখনও ঢের দেরী আর মিনিট পনেরো গড়িয়ে নিই, তারপর রেডি হবখন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। আবার শুয়ে পড়লেন অধীরবাবু আর ঘুমও এসে গেল তৎক্ষণাৎ।
হঠাৎ ঘুমটা ভাঙতে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলেন তিনি। এই রে নিশ্চয়ই দেরী হয়ে গেছে। একটু আগে যে অল্প অস্বাস্তিটা ছিল এখন তাও নেই। একদম ফিট। কটা বাজে দেখার জন্য মোবাইলটা নিতে গিয়ে চোখ পড়ল ফ্রিজটার দিকে। দরজাটা অল্প খোলা।
'উফ, বড্ড জ্বালাচ্ছে তো? মনে হয় ভ্যাকুয়ামটা গেছে।'
উঠে গিয়ে ফ্রিজের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন অধীরবাবু। মনে মনে বললেন, 'একটা সিগারেট খাই, তারপর রেডি হব খন'।
একটা সিগারেট ধরিয়ে জানলার পাশে দাঁড়ীয়ে দেখতে লাগলেন নিস্তধ শহর। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। সাগ্নিকের ফোন। ফোনটা ধরতে গিয়ে সময় দেখলেন দুটো একত্রিশ। 'আরে, মোবাইলটা খারাপ হয়ে গেল নাকি? একটু আগেই তো দেখতা দুটো একত্রিশ। কি জানি, ঘুম চোখে ভুল দেখে ছিলাম হয়তো।' ফোনটা কানে দিলেন।
"হ্যালো?" ওপাশের কণ্ঠস্বর বলে উঠল।
"হ্যাঁ, বল?"
"উঠে পড়েছেন?" জিজ্ঞেস করল সাগ্নিক।
"ঘুমটা এমনিই ভেঙে গেছে, রে। আচ্ছা, এই রেডি হব আর কি?" বললেন অধীরবাবু।
"আচ্ছা মামা, রাখছি। এয়ারপোর্টে গিয়ে একবার জানিয়ে দেবেন।" এই বলে সাগ্নিক ফোনটা রেখে দিল।
এ কি রে বাবা, সাগ্নিক আগের বার ঠিক এই কথাগুলোই বলল না? ঠিক মনে করতে পারলেন না অধীরবাবু। ঘুমে চোখ বুজে আসছে ওনার, অধীরবাবু ভাবলেন, 'আর মিনিট পনেরো গড়িয়ে নিই, তারপর উঠব খন।'
হঠাৎ ঘুমটা ভাঙতে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলেন তিনি। এই রে নিশ্চয়ই দেরী হয়ে গেছে। একটু আগে যে অল্প অস্বাস্তিটা ছিল এখন তাও নেই। কটা বাজে দেখার জন্য মোবাইলটা নিতে গিয়ে চোখ পড়ল ফ্রিজটার দিকে। দরজাটা অল্প খোলা। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল ডাঃ অধীর কুমার সোমের। উঠে গিয়ে ফ্রিজের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন অধীরবাবু। মনে মনে বললেন, 'একটা সিগারেট খাই, তারপর রেডি হব খন'।
সিগারেট নিতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন প্যাকেটে ন'টা সিগারেট। কি হল? মাথা যেন কাজ করছে না ওনার। যন্ত্র চালিতের মত একটা সিগারেট ধরিয়ে জানলার পাশে দাঁড়ীয়ে দেখতে লাগলেন নিস্তধ শহর। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। সাগ্নিকের ফোন। ফোনটা ধরতে গিয়ে সময় দেখলেন দুটো একত্রিশ।
* * *
সাড়ে সাতটা পর্যন্ত দরজা খুললেন না দেখে হোটেলের ম্যানেজার রোহিত কোহলি পুলিসে খবর দিতে বাধ্য হলেন। খবর পাঠানো হল সেমিনারের কর্তাদেরও। পুলিস এসে দরজা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ডাঃ অধীর কুমার সোমের লাশ নিয়ে গেল। পুলিসের ডাক্তার চেক করে বললেন যা মাঝ রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অধীরবাবু। মৃত্যুর সময় মোটামুটি রাত আড়াইতে থেকে তিনটের মধ্যে।
* * *
আবার ঘুম ভেঙে গেছে অধীরবাবুর। পাশ ফিরে দেখলেন ফ্রিজের দরজাটা খোলা। উঠে বসলেন উনি। মনে মনে ঠিক করলেন এবার আর দরজাটা বন্ধ করবেন না। কিন্তু ওনার পা যেন ওনার কথা শুনতে চাইছে না। কে যান টানছে ওনাকে। উনি এগিয়ে গেলেন দরজাটা বন্ধ করতে। উনি বুঝতে পেরেছেন কি হচ্ছে এটা। নিজের অজান্তেই নিজের মতবাদটা প্রমান করে ফেলেছেন অধীরবাবু। আইনস্টাইনের কথা অনুযায়ী চতুর্থ ডাইমেনশন হল সময়। আর ডাঃ অধীর কুমার সোমের মতবাদ অনুযায়ী মৃত্যুর পর এই চতুর্থ ডাইমেনশন অর্থাৎ সময় স্থির হয়ে যায়। সময় তখন ধ্রুবক।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
চিরন্তন ১০/১২/২০১৫লেভেলের
-
দেবব্রত সান্যাল ২৬/০৯/২০১৫রহস্য, প্যারাসায়কলোজি আর বিজ্ঞান , মিশিয়ে জমজমাট একটা গল্প। এ ধরনের গল্প আমার ভালোলাগে। তাই আরও পড়তে চাই।
-
নীহার রঞ্জন মল্লিক ২৬/০৯/২০১৫ক্লাসিক!
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ২২/০৯/২০১৫পড়তে পড়তে চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছেন! আবার পুরোনো পড়াটা পড়ছি নাতো ! আবার উপরনিচ পড়ছি, কয়েকবার !!!
ভালো লাগলো। -
অনিল বসু ২১/০৯/২০১৫দারুণ।
-
নাসিফ আমের চৌধুরী ২১/০৯/২০১৫ভাল লাগল ।
-
এল. এস. ডি ২১/০৯/২০১৫ক্লাসিক।
-
দেবাশিস্ ভট্টাচার্য্য ২১/০৯/২০১৫খুব সুন্দর হয়েছে।
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ২১/০৯/২০১৫বাহ !! খুব ভালো লাগল ভাই, অসাধারণ চিন্তা ধারার ফসল।