আমার দেখা চীনের প্রাচীর
গত দু'বছর কর্মসূত্রে চীনে আছি। কাজের চাপে প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। তার মধ্যেই যেটুকু অবসর সময় পাই, তখন একটু লেখালিখি করার চেষ্টা করি। তা বহুদিন পর, গত মাসে দিন তিনেকের ছুটিতে বেজিং থেকে ঘুরে এলাম।
বেশ জায়গা এই বেজিং শহরটা। বিশাল বিশাল সব বাড়ি। গুনে দেখেছি, পনের তলার নীচে কোন বাড়িই নেই। এ যেন সত্যি সত্যিই কংক্রিটের জঙ্গল। আমি যে হোটেলটায় ছিলাম, সেটাও তেত্রিশ তলা। আমাকে যদিও আকাশের বেশি কাছে থাকতে হয় নি। আমার ঘরটা ছিল পাঁচ তলায়। জানলায় চোখ রাখলেই নীচের বড় রাস্তাটা দেখা যায়। রাস্তা দেখা যায় বললে ভুল বলা হবে, বলা উচিৎ গাড়ির ছাদ দেখা যায়। এক সাথে এত দামি গাড়ি আমি কোলকাতাতেও কখনও দেখিনি। রাস্তার দু'ধার দিয়ে বড় বড় সব দোকান। কে.এফ.সি. আর পিৎজা হাট ছাড়া কোনটার নামই ইংরেজিতে লেখা ছিল না, তাই পড়তেও পারিনি।
যাই হোক, তিনশো কি.মি. প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে চলা ট্রেনে চড়ে বেজিং পৌঁছনোর পরের দিন ভোর ছ'টায় চীনের মহা প্রাচীর দেখতে রওনা দিলাম। বেজিং থেকে প্রায় দু ঘণ্টার রাস্তা বাদালিং। এই বাদালিং-এ প্রাচীরের অক্ষত একটি অংশে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সংরক্ষিত করা আছে। সঙ্গী আমার একজন কলিগ মিঃ মহান্তি। আর আমাদের বাহন একটা হুনডাই কম্পানির 'প্যাশাট'। আমাদের গাড়ির চালক বেশ ভালই ইংরেজি জানত। তাই সে আমাদের গাইড-এর কাজও করছিল। এখানে এই ভালো ইংরেজি জানা লোকের বেশ অভাব।
আমাদের গাড়ি শহরেরে যানজট ছাড়িয়ে চওড়ায় প্রায় ত্রিশ ফুট, হাইওয়ে ধরল। রাস্তার দু'ধারে মাঠ, খেত ইত্যাদি। প্রধানত দেখলাম ভুট্টা আর আপেল চাষ হচ্ছে। আমাদের ড্রাইভার কিষণ সিং বলল ওটা নাকি ভুট্টার সিজন। না, না আমাদের ড্রাইভার পাঞ্জাবি ছিল না। আসলে ওর নাম ছিল কি সুন সিং (Ki Sun Sing)। ওটা মহান্তিবাবুর কাছে হয়ে গেল কিষণ সিং।
ঐ হাইওয়ে ধরে আরও এক ঘণ্টা যেতে, পার্শ্ববর্তী দৃশ্যপট ধীরে ধীরে বদলে গেল। দু'ধারে এখন পাহাড় আর পাহাড়। আমাদের রাস্তাও ঐ পাহাড়ের গা ঘেঁষে চলেছে। এখানের পাহাড়গুলো কেমন যেন ন্যাড়া ন্যাড়া। কিন্তু সবুজের আধিক্য দেখে মনটা ভরে গেল। পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছিল। আর তাই দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। আকাশের কোনে বেশ রাগী রাগী কালো মেঘ জমছে। যদিও আমাদের ভাগ্যে সেদিন বৃষ্টি ছিল না।
আরও আধঘণ্টা চলার পর কিশণ শিং আঙুল দেখিয়ে বলল, "ঐ দেখুন।"
জানলা দিয়ে দেখলাম, পাহাড়ের মাথার উপর দিয়ে সাপের মত একে বেঁকে চলে গেছে, চীনের প্রাচীর। একটা ওয়াচ টাওয়ার-এর দুধার দিয়ে চলে গেছে বিশাল পাঁচিলটা। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের এই আশ্চর্যটিকে এই প্রথম আমি দেখলাম। কি অপূর্ব সেই অনুভূতি তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। আমি তখন সেই দৃশ্য দেখছি যা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়।
আরও মিনিট কুড়ি যাওয়ার পর আমাদের গাড়িটা অনেকগুলো গাড়ির মাঝখানে পার্ক করল। কিষণ শিং বলল আগে খেয়ে নিয়ে তারপর আমারা প্রাচীরের উপরটায় যাব। রাস্তার পাশের একটা দোকানে আমাদের ব্রেকফার্স্টের অর্ডার দিয়ে মহান্তিবাবুর কিষণ শিং টিকিট কাটতে চলে গেল। আমরা ল্যাং ফর আর শোয়ে খেয়ে প্রাচীরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ভাবছেন, ল্যাং ফর আর শোয়ে আবার কি ধরনের চীনা খাবার? কিছুই না, ল্যাং ফর হল এক ধরনের ঠাণ্ডা চাউমিন আর শোয়ে হল জলের চীনা নাম।
আরও মিনিট দশেক হাটতে হল পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে। তারপর কাউণ্টারে টিকিট দেখিয়ে আমরা পাথরের সিঁড়ি বেয়ে প্রাচীরে উঠতে শুরু করলাম। খান বিশেক বেশ লম্বা লম্বা সিঁড়ি চড়ে আমরা প্রাচীরের মাথায় উঠে পড়লাম। এবারের অনুভূতিটা একটু আলাদা। ছেলেবেলায় ইতিহাসের বইতে পড়েছি মিং সাম্রাজের তৈরি এই মহাপ্রাচীরের কথা। কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি যে সেই প্রাচীরটা নিজের চোখে দেখব। আর আজ, আমি সেই প্রাচীরের উপরেই দাড়িয়ে আছি।
পাথর আর ইট দিয়ে বানানো এই বিশাল দেওয়ালের প্রধান কাজই ছিল, মঙ্গোলদের থেকে রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য। কিষণ শিং বলল যে এই প্রাচীর নাকি প্রায় দশ হাজার মাইল বিস্তৃত। প্রতি হাজার মিটার ছাড়া ছাড়া এক একটা ওয়াচ টাওয়ার। ওখান থেকেই নাকি রাজার সৈন্য সামন্তরা লক্ষ্য রাখতো শত্রু সীমার উপর।
কিষণ শিং-এর কথা অনুযায়ী প্রতি একশো মিটার প্রাচীর বানাতে নাকি দশ হাজার লোক লেগেছিল। যদিও সেই প্রাচীর আজ আর নেই। প্রাচীরের পাথর খুলে খুলে নাকি আশেপাশের গ্রামের লোক নিজেদের বাড়ি বানিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই। পরে,সাম্প্রতিক চীন সরকার সেটা আবার মেরামত করেছে। তবুও কিছু কিছু জায়গা অবিকল সেই আগের মতই আছে। পাঁচশো বছর আগের সেই চীনা মজদুরদের রক্ত আর ঘাম তৈরি সেই প্রাচীন চীনের প্রাচীর।
বেশ খানিক দূর হাঁটার পর প্রাচীরের সব থেকে উঁচু স্থানে এসে পৌঁছলাম। সেখান থেকে দেখলাম যতদূর দৃষ্টি যায়, ততদূর পাহাড়ের গা বেয়ে সাপের মত চলে গেছে সেই প্রাচীর। আর সেই প্রাচীরের উপর দিয়ে চলেছে কাতারে কাতারে লোক। মনে হচ্ছিলো যেন পিঁপড়ের সারি চলেছে খাবারের খোঁজে। সেই সারিতে আমরাও আছি। আমাদের খিদে যদিও মিটে গেছে। আমাদের খিদে ছিল এই আশ্চর্য জিনিস দেখার খিদে। প্রাচীরের উপরটা খুব একটা মসৃণ নয়। হাটতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো। তবে কি? আমরা দুচোখ ভরে আমাদের খিদে মেটাচ্ছিলাম। ক্লান্তি কিছুটা লাগছিল বটে, তবে আমার সঙ্গী ষাট বছরের যুবকের উৎসাহ দেখে আমার ক্লান্তিও কোথায় হারিয়ে গেল।
হাটতে হাটতে কতদূর গেছিলাম জানি না। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেঘ কেটে এক ফালি সূর্য দেখা দিয়েছে। আমাদের মনের যা অবস্থা, সূর্য্যের হাসিটা যেন তারই প্রতিরূপ। মহান্তিবাবু পাশের দেওয়ালটা ধরে বেশ হাঁপাচ্ছেন। ওঁর বুড়ো হাড়ে আর চলার জোর নেই। কিন্তু উৎসাহের কোন আভাব দেখলাম না। ওনাকে দেখে মনে হচ্ছিলো, উনি যেন এই পঁচিশ হাজার কিলোমিটারই হেঁটে যাবেন ভেবে এসেছেন।
কিন্তু আর বেশি দূর যাওয়ার জোর ছিলনা আমাদের। কিষণ শিং-ও বলল, তখন না রওনা দিলে শহরে পৌছতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাই আমরা ফেরার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলাম। এবার সেই খাড়াই পথে অবনমন।
গাড়িতে পৌছতে আরও দেড় ঘণ্টা লাগল। বেশ খিদেও পেয়ে গেছিল। কে.এফ.সি.-র দোকান থেকে খাবার নিয়ে বেজিং-এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। চোখের সামনে থেকে চীনের মহা প্রাচীর আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। বিকেলের শেষ আলোয় আমি যেন দেখতে পাচ্ছিলাম হাজার হাজার মানুষের মেহনতে তৈরি হচ্ছে ওই প্রাচীর। আমার নাকে যেন ভেসে আসছে সেই সব আদিম চীনা মজদুরের ঘাম আর রক্ত মিশ্রিত একটা আদ্ভুত সুবাস।।
বেশ জায়গা এই বেজিং শহরটা। বিশাল বিশাল সব বাড়ি। গুনে দেখেছি, পনের তলার নীচে কোন বাড়িই নেই। এ যেন সত্যি সত্যিই কংক্রিটের জঙ্গল। আমি যে হোটেলটায় ছিলাম, সেটাও তেত্রিশ তলা। আমাকে যদিও আকাশের বেশি কাছে থাকতে হয় নি। আমার ঘরটা ছিল পাঁচ তলায়। জানলায় চোখ রাখলেই নীচের বড় রাস্তাটা দেখা যায়। রাস্তা দেখা যায় বললে ভুল বলা হবে, বলা উচিৎ গাড়ির ছাদ দেখা যায়। এক সাথে এত দামি গাড়ি আমি কোলকাতাতেও কখনও দেখিনি। রাস্তার দু'ধার দিয়ে বড় বড় সব দোকান। কে.এফ.সি. আর পিৎজা হাট ছাড়া কোনটার নামই ইংরেজিতে লেখা ছিল না, তাই পড়তেও পারিনি।
যাই হোক, তিনশো কি.মি. প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে চলা ট্রেনে চড়ে বেজিং পৌঁছনোর পরের দিন ভোর ছ'টায় চীনের মহা প্রাচীর দেখতে রওনা দিলাম। বেজিং থেকে প্রায় দু ঘণ্টার রাস্তা বাদালিং। এই বাদালিং-এ প্রাচীরের অক্ষত একটি অংশে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সংরক্ষিত করা আছে। সঙ্গী আমার একজন কলিগ মিঃ মহান্তি। আর আমাদের বাহন একটা হুনডাই কম্পানির 'প্যাশাট'। আমাদের গাড়ির চালক বেশ ভালই ইংরেজি জানত। তাই সে আমাদের গাইড-এর কাজও করছিল। এখানে এই ভালো ইংরেজি জানা লোকের বেশ অভাব।
আমাদের গাড়ি শহরেরে যানজট ছাড়িয়ে চওড়ায় প্রায় ত্রিশ ফুট, হাইওয়ে ধরল। রাস্তার দু'ধারে মাঠ, খেত ইত্যাদি। প্রধানত দেখলাম ভুট্টা আর আপেল চাষ হচ্ছে। আমাদের ড্রাইভার কিষণ সিং বলল ওটা নাকি ভুট্টার সিজন। না, না আমাদের ড্রাইভার পাঞ্জাবি ছিল না। আসলে ওর নাম ছিল কি সুন সিং (Ki Sun Sing)। ওটা মহান্তিবাবুর কাছে হয়ে গেল কিষণ সিং।
ঐ হাইওয়ে ধরে আরও এক ঘণ্টা যেতে, পার্শ্ববর্তী দৃশ্যপট ধীরে ধীরে বদলে গেল। দু'ধারে এখন পাহাড় আর পাহাড়। আমাদের রাস্তাও ঐ পাহাড়ের গা ঘেঁষে চলেছে। এখানের পাহাড়গুলো কেমন যেন ন্যাড়া ন্যাড়া। কিন্তু সবুজের আধিক্য দেখে মনটা ভরে গেল। পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছিল। আর তাই দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। আকাশের কোনে বেশ রাগী রাগী কালো মেঘ জমছে। যদিও আমাদের ভাগ্যে সেদিন বৃষ্টি ছিল না।
আরও আধঘণ্টা চলার পর কিশণ শিং আঙুল দেখিয়ে বলল, "ঐ দেখুন।"
জানলা দিয়ে দেখলাম, পাহাড়ের মাথার উপর দিয়ে সাপের মত একে বেঁকে চলে গেছে, চীনের প্রাচীর। একটা ওয়াচ টাওয়ার-এর দুধার দিয়ে চলে গেছে বিশাল পাঁচিলটা। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের এই আশ্চর্যটিকে এই প্রথম আমি দেখলাম। কি অপূর্ব সেই অনুভূতি তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। আমি তখন সেই দৃশ্য দেখছি যা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়।
আরও মিনিট কুড়ি যাওয়ার পর আমাদের গাড়িটা অনেকগুলো গাড়ির মাঝখানে পার্ক করল। কিষণ শিং বলল আগে খেয়ে নিয়ে তারপর আমারা প্রাচীরের উপরটায় যাব। রাস্তার পাশের একটা দোকানে আমাদের ব্রেকফার্স্টের অর্ডার দিয়ে মহান্তিবাবুর কিষণ শিং টিকিট কাটতে চলে গেল। আমরা ল্যাং ফর আর শোয়ে খেয়ে প্রাচীরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ভাবছেন, ল্যাং ফর আর শোয়ে আবার কি ধরনের চীনা খাবার? কিছুই না, ল্যাং ফর হল এক ধরনের ঠাণ্ডা চাউমিন আর শোয়ে হল জলের চীনা নাম।
আরও মিনিট দশেক হাটতে হল পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে। তারপর কাউণ্টারে টিকিট দেখিয়ে আমরা পাথরের সিঁড়ি বেয়ে প্রাচীরে উঠতে শুরু করলাম। খান বিশেক বেশ লম্বা লম্বা সিঁড়ি চড়ে আমরা প্রাচীরের মাথায় উঠে পড়লাম। এবারের অনুভূতিটা একটু আলাদা। ছেলেবেলায় ইতিহাসের বইতে পড়েছি মিং সাম্রাজের তৈরি এই মহাপ্রাচীরের কথা। কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি যে সেই প্রাচীরটা নিজের চোখে দেখব। আর আজ, আমি সেই প্রাচীরের উপরেই দাড়িয়ে আছি।
পাথর আর ইট দিয়ে বানানো এই বিশাল দেওয়ালের প্রধান কাজই ছিল, মঙ্গোলদের থেকে রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য। কিষণ শিং বলল যে এই প্রাচীর নাকি প্রায় দশ হাজার মাইল বিস্তৃত। প্রতি হাজার মিটার ছাড়া ছাড়া এক একটা ওয়াচ টাওয়ার। ওখান থেকেই নাকি রাজার সৈন্য সামন্তরা লক্ষ্য রাখতো শত্রু সীমার উপর।
কিষণ শিং-এর কথা অনুযায়ী প্রতি একশো মিটার প্রাচীর বানাতে নাকি দশ হাজার লোক লেগেছিল। যদিও সেই প্রাচীর আজ আর নেই। প্রাচীরের পাথর খুলে খুলে নাকি আশেপাশের গ্রামের লোক নিজেদের বাড়ি বানিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই। পরে,সাম্প্রতিক চীন সরকার সেটা আবার মেরামত করেছে। তবুও কিছু কিছু জায়গা অবিকল সেই আগের মতই আছে। পাঁচশো বছর আগের সেই চীনা মজদুরদের রক্ত আর ঘাম তৈরি সেই প্রাচীন চীনের প্রাচীর।
বেশ খানিক দূর হাঁটার পর প্রাচীরের সব থেকে উঁচু স্থানে এসে পৌঁছলাম। সেখান থেকে দেখলাম যতদূর দৃষ্টি যায়, ততদূর পাহাড়ের গা বেয়ে সাপের মত চলে গেছে সেই প্রাচীর। আর সেই প্রাচীরের উপর দিয়ে চলেছে কাতারে কাতারে লোক। মনে হচ্ছিলো যেন পিঁপড়ের সারি চলেছে খাবারের খোঁজে। সেই সারিতে আমরাও আছি। আমাদের খিদে যদিও মিটে গেছে। আমাদের খিদে ছিল এই আশ্চর্য জিনিস দেখার খিদে। প্রাচীরের উপরটা খুব একটা মসৃণ নয়। হাটতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো। তবে কি? আমরা দুচোখ ভরে আমাদের খিদে মেটাচ্ছিলাম। ক্লান্তি কিছুটা লাগছিল বটে, তবে আমার সঙ্গী ষাট বছরের যুবকের উৎসাহ দেখে আমার ক্লান্তিও কোথায় হারিয়ে গেল।
হাটতে হাটতে কতদূর গেছিলাম জানি না। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেঘ কেটে এক ফালি সূর্য দেখা দিয়েছে। আমাদের মনের যা অবস্থা, সূর্য্যের হাসিটা যেন তারই প্রতিরূপ। মহান্তিবাবু পাশের দেওয়ালটা ধরে বেশ হাঁপাচ্ছেন। ওঁর বুড়ো হাড়ে আর চলার জোর নেই। কিন্তু উৎসাহের কোন আভাব দেখলাম না। ওনাকে দেখে মনে হচ্ছিলো, উনি যেন এই পঁচিশ হাজার কিলোমিটারই হেঁটে যাবেন ভেবে এসেছেন।
কিন্তু আর বেশি দূর যাওয়ার জোর ছিলনা আমাদের। কিষণ শিং-ও বলল, তখন না রওনা দিলে শহরে পৌছতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাই আমরা ফেরার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলাম। এবার সেই খাড়াই পথে অবনমন।
গাড়িতে পৌছতে আরও দেড় ঘণ্টা লাগল। বেশ খিদেও পেয়ে গেছিল। কে.এফ.সি.-র দোকান থেকে খাবার নিয়ে বেজিং-এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। চোখের সামনে থেকে চীনের মহা প্রাচীর আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। বিকেলের শেষ আলোয় আমি যেন দেখতে পাচ্ছিলাম হাজার হাজার মানুষের মেহনতে তৈরি হচ্ছে ওই প্রাচীর। আমার নাকে যেন ভেসে আসছে সেই সব আদিম চীনা মজদুরের ঘাম আর রক্ত মিশ্রিত একটা আদ্ভুত সুবাস।।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
SWAPNOPRIYA ২৩/০১/২০১৬দাদা ভীষণ ভালো লাগলো ।
-
শুভাশিষ আচার্য ০৭/১০/২০১৫আহা। চোখ ভরে গেল। দু একটা ছবি হলে মন্দ হত না। কিষন সিং এর নামকরন আর লেখার শেষ করা টার মদ্ধ্যে আলী সাহেব এর ছোয়া পেলাম। অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
-
দেবব্রত সান্যাল ০১/১০/২০১৫কর্মসূত্রে বেজিং গিয়ে দুবার দুটো Great Wall দেখেছি। Badaling আর Mutianyu . এই লেখাটা আগেও দেখেছি। আরও লেখার সুযোগ রয়েছে।
-
দীপঙ্কর বেরা ৩০/০৮/২০১৫ভালো
কিছু ছবি দিতে পারতেন -
কিশোর কারুণিক ৩০/০৮/২০১৫বেশ ভাল
-
কল্লোল বেপারী ২৭/০৮/২০১৫খুব ভালো লিখেছেন।
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ২৪/০৮/২০১৫বাহ খুব ভালো লিখেছ ।
-
মোবারক হোসেন ২২/০৮/২০১৫আপনার লিখা পড়ে চীনের প্রাচীর দেখার সাধ জাগছে মনে। খুব ভাল লাগলো।
-
দিলদার হোসেন ২১/০৮/২০১৫আপনার লিখা পরে চীন না গিয়েই চীন দেখে ফেললাম ।
ধন্যবাদ দাদা এমন অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য । -
নাসিফ আমের চৌধুরী ২০/০৮/২০১৫
-
শাহাদাত হোসেন রাতুল ১৪/০৮/২০১৫
-
সুনীল চক্রবর্তী ২৯/০৭/২০১৫সুন্দর উপস্থাপনা।
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ২৭/০৭/২০১৫আপনার লেখনীর মধ্যে চিনের প্রাচীর আর একবার প্রত্যক্ষ করলাম। আপনাকে শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন জানাই।
-
শিবজিত ২২/০৭/২০১৫লেখাটা পরে এক মুহুরতের জন্ন চিন এর পাচিলটা চখের সাম্নে ভেসে উথ্ল
-
Sanjay Das ১৮/০৭/২০১৫BESH LAGLO.
-
মায়নুল হক ১৪/০৭/২০১৫অনেক ভালো লাগলো