www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অন্ধ ছেলে মেয়ের কথা

ইদানিং ভীষণ লোডসেডিং হচ্ছে, রোজ মাপা পাঁচঘন্টা করে। লিফট থেকেও না থাকার মতো অবস্থা, কি আর করা যায় বিকাশ রক্ষিতকে বাজারের ব্যাগ হাতে সিঁড়ি ধরে যখনই উপরে উঠতে হয় তখনই এ'সব চিন্তা গুলো মাথায় আসে, অনুভব করেন বয়সটা পঁচাত্তরের বেশী। কিন্তু এত কষ্ট করে দোতলায় উঠে রুমির হাসি মুখ দেখলেই সব কষ্ট ভুলে যান।

রুমির পরিচয়... ওনার নাতনি, একমাত্র ছেলে মারা যাওয়ার পর দুবছরের ছোট শিশু কন্যা রুমিকে বিকাশ ও রঞ্জনা রক্ষিত বুকে তুলে নেয়-- কারন তার পুত্রবধূ (রুমির মা) নতুন পরিণয়ে অবদ্ধ হয় গৃহ ত্যাগ করে। তখন থেকেই বিকাশ ও রঞ্জনা রুমির বাবা ও মা’র ভূমিকা পালন করছেন । বিকাশবাবুর উপস্থিতি রুমি অনুভব করে তার গায়ের গন্ধ আর শব্দে...কাউকে বলতেও হয় না, ছোট পায়ে রুমি বিকাশবাবুর পাশে চলে আসে। স্বামীর কষ্ট অনুভবিত- তাই কোন কিছুর অপেক্ষা না-করে বিকাশবাবুর হাত থেকে বাজারের থলেটা স্ত্রী রঞ্জনা-দেবী এসে তারাতারি নিয়ে নেন, সঙ্গে সঙ্গেই রুমির জিজ্ঞাসা- 'দাদুন তুমি ঠিক এনেছ, ভোলনি তো?'

ঠিক তেমনি স্বরে বিকাসবাবু বলে ওঠেন...'হ্যাঁ, ভুলি কেমন করে- তোর জন্য আনা লালদই তো আমরাও একটু আধটু খেতে পাই', তারপর তিনজনের সমস্বরে হেসে ওঠেন। এই ভাবেই তিনজনের ছোট্ট পরিবার হাসি ঠাট্টা মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন আনন্দলোক হাউজিং কমপ্লেক্সের দোতলা ফ্ল্যাটে অতিবাহিত হচ্ছিলো । কিন্তু কোথাও যেন একটা করুন সুর বিকাশবাবুর মনের মধ্যে সব সময় লুকিয়ে বাজে-- এই করুন সুর বাজাটা স্বাভাবিকই, কারণ বিকাশবাবু নিজে একজন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার- পনেরো বছর হলো, গার্ডেন রিচ সিপ বিল্ডিং কর্পোরেশন থেকে অবসর নিয়েছেন। যদিও চাকরী জীবনে কলকাতার নিউআলিপুরে পছন্দ মতো বাড়ি- গাড়ী সবই করেছিলেন আর অবসর প্রাপ্তির পর মোটা টাকা পেনশানও পাচ্ছেন, এক কথায় কোন কিছুর অভাব নেই। আবার থেকেও না থাকার মতো, সেটাই কখনো মানুষের জীবনে চরম বেদনার হয়ে উঠে। যাক, যারা নেই তাদের নিয়ে অযথা বিকাশবাবু কখনই চিন্তা করতে চান না... শুধু ওই আদরের নাতনি রুমি যে জন্মালো অন্ধ হয়ে। তাই, ওকে নিয়েই যত চিন্তাভাবনা রঞ্জনা দেবী আর বিকাশবাবুর। বর্তমানে দুজনের বয়স অনেক হ’ল। এই বয়সেও রুমির প্রতিটা মুহূর্তকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হয় আর সেই চিন্তাভাবনা গুলো আজকাল আরো প্রকট হয়ে উঠেছে, তাদের অবর্তমানে এই অন্ধ মেয়েটির কি হবে? উঃ কি দুর্বিষহ। ঈশ্বর কেন এত নিষ্ঠুর, শুধু বিকাশবাবুর জন্যেই এই করুন সুরটি শেষ বয়সে উপহার দিলেন?
ঘড়ির কাঁটার দিকে চোখ পড়তেই বিকাশবাবু রুমিকে স্মরণ করিয়ে দেন, ‘এখন নটা বাজে’, এখন রুমির ব্লাইন্ড স্কুলে যাওয়ার সময় । রুমি কিন্তু বেশ সপ্রতিভ মেয়ে, কোন সময়ই নিজেকে অসামর্থ্য মনে করে না, আর কেনই বা করবে? সে যে বিশেষ ভাবে বিকাশবাবুর সান্নিধ্যে বেড়ে উঠেছে, কোন জিনিষের কখনো অভাব বোধ করেনি... দাদু-ঠাকুমার চোখ দিয়ে জগতের সব কিছুর রঙ উপলব্ধি করেছে । পড়াশোনা থেকে গানবাজনা পর্যন্ত, তাদের হাতে আর মুখে শিখেছে ... সে জন্যেই রুমি কৃতিত্তের সাথে ইংরাজি পোষ্টগ্রাজুয়েশন ও এম. মিউজ শেষ করে আজ ব্লাইন্ড স্কুলে শিক্ষিকা ।
রুমি তার মনে অনেক উচ্চাশা রাখে, যেখানে তার দাদুর পূর্ণ সমর্থন । বয়স বাড়ার সাথে সাথে যা আছে, সকল কিছুই আজ রুমির কাছে উপলব্ধ । দেহ-মন-যৌবন ও সৌন্দর্য সব দিক থেকে রুমি কখনো নিজেকে ছোট ভাবে না। শুধু একটাই দুঃখ, নিজের চোখে জগতটাকে দেখা হ’ল না ।

দাদুর হাত ধরে সিঁড়ি ভেঙ্গে নীচে নামতেই দাদুর বিশ্বাসী ড্রাইভার মোহনজী এগিয়ে এসে হাত ধরে গাড়ীতে উঠিয়ে দেয়। বিশেষ করে এই সময়টা তার নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয়, যেমন ইস্কুল ছুটির সময় মোহনজী ঠিক সময় মতো পাশে না থাকলে হয় । মোহনজী রুমির-দাদুর বিশ্বাসী লোক, জন্ম থেকেই রুমিকে দেখে আসছে, আগে দাদুর অফিসে ড্রাইভার ছিল । রিটায়ার্মেন্টে পর, এ’বাড়ির ড্রাইভার কাম মেনেজার। সামনে ট্র্যাফিক সিগন্যালে গাড়ী দাঁড়াতেই রুমি এক বুক নিঃশ্বাস নেয়, বুঝে যায় তার কর্মস্থল ব্লাইন্ড স্কুলের কাছে এসে গেছে,কারণ এ’জায়গার গন্ধটা রুমির অনেক দিনের চেনা, তথাপি একবার মোহনজীকে জিজ্ঞাসা করে... 'কোথায় এলাম মোহনজী?', উত্তরে মোহনজী বলে, 'দিদিমণি বেহালা চৌরাস্তা পার হয়ে ব্লাইন্ড স্কুলের কাছে' ।

সোজা স্কুলের মেইন গেট পার করে ভিতরে গাড়ি রাখার জায়গায় গাড়ীটা ঢুকে যায় । গাড়িটা রেখে মোহনজী আগের মতো অফিস ঘর অবধি রুমিকে এগিয়ে দিতে আসে, কিন্তু রুমি তা চায় না- 'বলে তোমরা আমাকে একটু একলা চলাফেরা করতে দাও'। মোহনজী কিছু বলে না, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, আর এক দৃষ্টিতে রুমির চলে যাওয়াকে লক্ষ রাখে ।

সৌম্য দীপ সেন... ইংরাজি অনার্সে গ্রাজুয়েশন শেষ করে বেহালা ব্লাইন্ড স্কুলে সহায়ক শিক্ষক পদে কর্মরত। সারে চার ফুট উচ্চতার মিশমিশে কালো গায়ের রঙের সৌম্য । খুব ছোট বয়সে মাকে হারায়, বাবা তখন মার্চেন্ট নেভিতে কর্মরত ছিলেন । তাই ছোটবেলা থেকে কলকাতার দমদমে মাসির কাছেই মানুষ । মাসির ছেলে মেয়েদের সাথে সৌম্যর বেড়ে ওঠা...যা-ওর জীবনে সহিষ্ণুতার এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষালাভ । কিন্তু সবকিছু উর্দ্ধেও সৌম্য অনুভব করে এ'পৃথিবীতে তার আপন জনের স্নেহ-র অভাব । স্কুল-কলেজ, ছাত্র জীবনে নিজের কদর্য কুৎসিত-রূপ অপরের চোখে বা ক্লাসের বান্ধবীদের চোখের ভাষায় উপলব্ধ, সেই জন্যে একমাত্র প্রিয়জন বলতে শুধু কবিতা লেখাকেই সৌম্য বেছে নিয়েছিল । আর সেই কবিতা লেখার মধ্যে দিয়ে নিজের মনের যত দুঃখ ব্যক্ত করা, বা কবিতার মাঝেই আহত মনের সেবা, সান্তনা লাভ, তার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া বলে সৌম্য মনে করত ।

এবার আসল কথায় আসা যাক... এবছর বেহালা ব্লাইন্ড স্কুল ম্যাগাজিন কমিটির মুখ্য সম্পাদক রুমি রক্ষিত এবং সেই কমিটির একজন সদস্য সৌম্য দীপ সেন । সকলের লেখা সংগ্রহ এবং তার উপর যাচাই বাছাই এর কাজগুলো কেমন ভাবে করবে... সেই সম্পর্কে কিছু আলোচনার জন্যে সকাল দশটায় রুমি মিটিং ডেকেছে। ম্যাগাজিন সম্পাদনার বিভিন্ন কাজ, যা একার পক্ষে করা রুমির ভীষণ কঠিন হয়ে পড়েছিল, সে'কারনেই সাহায্যের জন্য সে সৌম্যকে অনুরোধ করেছিল। সৌম্যর লেখা কবিতা ও সুন্দর করে গোছান সংকলন কার্য ক্ষমতা দেখে তার প্রতি রুমির শ্রদ্ধা আরও বেড়ে যায় । আজ প্রতিটি লেখায় সৌম্যর পর্যালোচনা গুলো শুনতে শুনতে রুমি অভিভূত হয়ে পড়ে, আশ্চর্য হ'ল--ছেলেটার নিষ্ঠার সাথে সংশোধন আর সুসম্পন্ন করার দক্ষতার প্রতিও আকৃষ্ট না হয়ে থাকা যায় না । দুজনেই কাজের মধ্যে ডুবে যায়, একে অপরের পর্যালোচনা শুনতে শুনতে আর সংকলনের প্রতিটি লেখা সংশোধন করতে করতে পড়ন্ত সূর্য্য একসময় পশ্চিমে হেলে যায় । চারিদিকের দিনের আলো... আঁধারে স্থিত হয়ে আসে । দারোয়ানের ডাকে, দুজনের স্থম্ভিত ফেরে ঘরের বাইরেটা অন্ধকার হয়ে পড়েছে, কাঁচের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে রাস্তার লাইট গুলো জ্বলে উঠেছে । সৌম্য বলে, 'আজ এই পর্যন্ত থাক' । দুজনেই উঠে আস্তে আস্তে সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়ায় ।

সিঁড়ি উপরের লাইট গুলো মনে হয় খারাপ হয়ে গিয়েছে, নীচতলা থেকে যতটুকু আলো দেখা যায় তা পর্যাপ্ত নয় । সৌম্য সাবধানে সিঁড়ি দিয়ে পা ফেলতে থাকে... সহসাই রুমির লাটির শব্দে পিছন ফিরতে গিয়ে... চকিতে সৌম্যর পা সিঁড়ির ধাপ থেকে সরে যায়... আর সেই মুহূর্তে রুমি সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে, টাল সামলাতে না পেরে সৌম্যর গায়ের উপর পড়ে যায় । রুমির দেহের ভার সামলেতে না পারার জন্যে দুজনেই একসাথে সিঁড়ি দিয়ে নীচে গড়িয়ে পড়ে । রুমি, সৌম্যর উপরে পড়ে যাওয়ায়... সম্পূর্ণ আঘাতটা সৌম্যকে সহ্য করতে হয় পরিণমে সৌম্যর মাথায় মারাত্মক আঘাত লাগে...মাথার পিছন দিয়ে রক্ত বেরতে থাকে, কাছাকাছি যারা ছিল সবাই ধরাধরি করে সামনের একটা হেলথ ক্লিনিকে সৌম্যকে তুলে নিয়ে যায়, কানের নীচটা কেটে যায়... মাথার পিছন দিকটায় তিনটে সেলাই পড়ে... ঘাড়ে ও কাঁধে চোট লাগে । ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে সৌম্য দেখে রুমি ও সাথে দুজন লোক চুপ করে বাইরে বেঞ্চে বসে আছে । রুমির দিকে এগিয়ে সৌম্য জিজ্ঞাসা করে, ‘ঠিক আছেন?’, রুমি কিছু বলার আগেই সৌম্যকে ধরে থাকা দারোয়ানটা বলে ওঠে...'ম্যাডামের কিছুই হয়নি' ।

রুমি সৌম্যর সামনে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায় আর ক্ষমা চাইতে থাকে, 'বারবার বলে ইস, আমার জন্যেই আজ আপনাকে এতটা আঘাত পেতে হল' । আর ওই বলা টুকুই যেন, সৌম্যর কাছে জীবনে প্রথমবার বিরাট এক সান্তনা সমেত পরম বিস্ময়কর সহানুভূতি প্রাপ্তি ! শেষে রুমি, গাড়ী করে সৌম্যকে নিজের বাড়ি নিয়ে আসে । মোহনজী আর দাদু মিলে রুমিদের ফ্ল্যাটে সৌম্যকে ধরাধরি করে নিয়ে যায় । রাতে সৌম্যর মাসির বাড়ি ফোন করে বিকাশবাবু সৌম্যর মাসিকে দুর্ঘটনার সব কিছুই সবিস্তারে জানিয়ে দেন । সৌম্য সে'রাতে রুমিদের বাড়িই থেকে যায় । এরপর আস্তে আস্তে দিন দশেকের মধ্যেই সৌম্য সেরে ওঠে । এই ঘটনার একমাস বাদে, সাফল্যের সাথে ব্লাইন্ড স্কুলের ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়... এই ভাবে ক্রমশ বছর পার হয়ে দুজনের বন্ধুত্ব আরও ঘনিষ্ঠ হয় ।
আর... সৌম্য? ধীরে ধীরে রুমির ঠাম্মা দাদুরও খুব স্নেহের পাত্র হয়ে ওঠে !

এর পরের ঘটনা, দাদু আজকাল বাজার থেকে লালদই আর আনেন না, দোতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে রুমিকে দাদুর হাত ধরে নীচে আর নামতে হয়-না । সব কাজের ভার এখন সৌম্যর । সৌম্য এখন গাড়ী চালান শিখেছে, এমন কি মাঝে মাঝে মোহনজী ছুটি নিয়ে দেশে গেলে, সৌম্যই গাড়ী চালায় । সৌম্য না থাকলে ইলেট্রিসিটি বিল থেকে কর্পরেশান ট্যাক্স, ফ্ল্যাটের জন্যে কিছুই জমা পরে না। সৌম্য কিছু না করলে, বাতি জ্বলে না, জল আসে না, এমন কি খাওয়া দাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। সৌম্যের উপর আনন্দলোক হাউজিং কমপ্লেক্সের দোতলা ফ্ল্যাটটি ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভরশীল হয়ে যায় ।

পরবর্তী ঘটনা, বিকাশ রক্ষিত... চেন্নাই শঙ্কর নেত্রালয় ও গ্লোবাল ব্লাইন্ড অরগানাইজেশানের লাইফ মেম্বার । প্রতি বছরে একবার করে বিকাশ ও রঞ্জনা রক্ষিত রুমিকে নিয়ে চেন্নাই যেতেন । এবার সে দায়িত্ব এসে পড়ল সৌম্যের কাঁধে, সবাই কলকাতা থেকে ফ্লাইটে চেন্নাই রওনা হলেন । ওখানে ম্যাক ফাউন্ডেশনে অন্তরভুক্ত সেমিনারে বিশ্বসেরা আই স্পেশালিষ্টরা এসেছে, তাদের কাছে রুমিকে দেখানোর পর ডাক্তারের সিদ্ধান্ত হোল, রুমির চোখ 'মাইক্রফথালমিয়া' আক্রান্ত । এ'ধরনের চোখের রোগ জন্মাগত অবস্থা থেকেই সাধারণত মানুষের হয়ে থাকে, যেটা 'কঞ্জেনিটাল এনমালিস' নামে একধরনের চোখের রোগের মধ্যে পড়ে । 'কর্নিএল গ্রাফটিং' নামে এক ধরনের সার্জারিতে ঠিক করা যায়, তার জন্য তাজা অবস্থার এক/দুটি কর্নিয়ার প্রয়োজন । চোখে কর্নিয়া তো সবার আছে কিন্তু, কে দেবে সেই চোখ? দাদু ঠাম্মি দুজেনের সত্তর বছর পার । দুজনেই নিজেরদের এক একটা চোখ রুমির জন্যে দিতে চাইলেন কিন্তু আই ব্যাংকের চোখ যেখানে খারিজ, সেখানে হাই সুগার হাই প্রেশার ও বেশী বয়সের চোখের কর্নিয়া চলবে-না বলে ডাক্তার মানা করেদিল । সুতরাং পূর্ণ সিধান্তের ভার গিয়ে পড়ল সৌম্যের উপর । সৌম্যের আত্মত্যাগ ও নিঃস্বার্থ সহায়তায় রুমির চোখের অপারেশন সব ঠিকঠাক ভাবে হয়ে যায় । চোখের উইকলি চেকআপ ডাক্তার কনসালটেশনের জন্য রক্ষিত পরিবার আর সৌম্য একমাস চেন্নাই বেঙ্গল লজে থেকে যায়। কলকাতায় ফিরে আসার আগের দিন ডাক্তার সাফাই দিয়ে বলে সব কিছুই সঠিক ভাবে সুসম্পন্ন হয়েছে ।


অন্তিম ঘটনা, রুমি এখন দেখতে পায়, বহুদিন অপেক্ষার পরে অন্ধকার থেকে আলো দেখছে । রুমি দেখতে পায় দুনিয়ার যাবতীয় প্রার্থিত ঐশ্বর্যকে, আর দেখতে পায় পৃথিবীর লাল, নীল, সাদা ও নানা রঙের বিচিত্র খেলাকে ।
সে জন্যেই রুমি সিলিং এ টাঙ্গান সৌম্যের ঝুলন্ত স্থির দেহটা সৌম্যের দাওয়া একচোখ দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে । ঝুলন্ত সৌম্যের শুধু একটা মাত্র চোখ তখন রুমির দিকে যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে, মনে হচ্ছে ঝুলন্ত সৌম্যের ঠিকরানো চোখের ভাষা বলছে... 'আজ আলোর থেকে অন্ধকারই আমার বেশী ভালো লেগেছে, সময়ের সাথে আমি নষ্ট হয়ে গেলাম...অযথা আমার, এই চোখটা নষ্ট হোল' ।

পুলিশ এসেছে ঘর ভরতি লোকজন, বিকাশ রক্ষিত উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে জবান দিচ্ছেন...'হ্যাঁ রুমি আমার নাতনী, সৌম্য আমার কেউ হয় না...রুমি এবং সৌম্য একই স্কুলে চাকরী করে সেই সূত্রে ওদের চেনাশোনা,- আমাদের বাড়িতে যাতায়াত করত, আমারাও ওকে স্নেহের চোখে দেখতাম । কিন্তু তার মানে এই নয় যে- সৌম্য রুমিকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে, আর সে' প্রস্তাবে রুমিকে রাজী হতে হবে ? শেষমেশে প্রতিশোধ নাওয়ার জন্যে নিজের মাসির বাড়ি ছেড়ে এখানে এসে আত্মহত্যা করল কেন ? এটা নেহাতই একটা ষড়যন্ত্র !'

----------- সমাপ্ত -----------
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৯৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০৩/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুকান্ত মন্ডল ১৭/০৩/২০১৮
    চমৎকার
  • গল্পের গাঁথুনী চমৎকার ছিল।
 
Quantcast