গোধূলির পরে শহরতলি
পুরানো কোন কোন কথা হঠাৎ কখন মনের ভিতরে প্রচণ্ড আলোড়ন তোলে-
আর সে'রকম কোন একটা স্মৃতি বার বার আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল…হাতে কাজ নেই কোন, অফিসের ট্যুরে কোলকাতায়। সব কাজ শেষ করে ফেলেছি , মাঝের এই একটা দিন বিশ্রাম। আগামীকাল ফিরে যাব দিল্লী, আজকাল যত সমস্যা হয় কাজের মধ্যে না -ডুবে থাকলে ।
মনের অনুসরণে হাঁটি হাঁটি করে শেষ বিকেলে সেই মানিকতলার কলিমুদ্দিন লেন এসে হটাৎ-ই থমকে দাঁড়াই! মনে হল এখানে আসার আগে একটু খোঁজ খবর করে এলেই ভালো হত । চিন্তা করে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম- 'আগে এদিকটায় রেশন দোকানের পাশে একটা রেডিও দোকান ছিল না?' সামনে দাঁড়ানো লোক গুলো বলল- ’কোন রেডিও দোকান নেই এখানে, তবে সরু গলিটার শেষ মাথায় খালপাড়া- সেখানে একটা টিভির দোকান আছে,ওখানে গিয়ে একবার জিজ্ঞাসা করতে পারেন' ।
বেশ মনে আছে, সেই রেডিওর দোকানের পাশ দিয়ে পুরানো গ্যারেজের সামনের মাঠটা এখন তো মাঝে মাঝে স্বপ্নে আসে… কই তার তো চিহ্ন টুকুও নেই এখানে…? মাঠটা শেষ করে একটা বড় জাম গাছ ছিল তার পাশে রোয়াক বাঁধান সিঁড়িওয়ালা পুরান বড় দোতলা কমলা রঙের বাড়িটা কি যেন নামটা… 'নিসর্গ-ভিলা' ! হ্যাঁ ঠিক নিসর্গ-ভিলাই, এদিক দিয়ে কত বার এসেছি গিয়েছি, আর ওই রোয়াকে বসে কত আড্ডাই না মেরেছি ।
কিন্তু কোথায় সেই পুরান দোতলা কমলা রঙের বাড়ি, সেই 'নিসর্গ-ভিলা' ? কিছুই তো নেই এখানে ! সে জায়গায় আজ দাঁড়িয়ে কুড়িতলা পঞ্চাশ ফ্ল্যাট বিশিষ্ট 'সবুজ-প্রকৃতি'! কিন্তু কোন তলায় গিয়ে কাকে জিজ্ঞাসা করব যে, তিন দশক আগে এই শহরতলিতে আমাদের ইংরাজি পড়াতেন প্রবোধবাবুকে চেনেন? আর তার ছোট মেয়ে পিকু ?
আমার প্রথম প্রেম আর প্রত্যাখ্যান! যখন আমি প্রেম নিবেদন করি তখন পিকু প্রেসিডেন্সী কলেজের লেকচারার আমাদের থেকে সিনিয়ার রূপকদার সাথে চুটিয়ে প্রেম করত, ইস্... প্রথমে ব্যাপারটা আমি সঠিক জানতাম না, বুকের মধ্যে একটা চাপা ব্যথা নিয়ে পুরো একটা মাস আমি ভিন্ন জগতে ছিলাম... আজও সে কথা পরিষ্কার মনে পড়ে। কিন্তু পিকু তো আমার বাল্যবন্ধু ছিল, সেই ছোটবেলার নার্সারিস্কুল থেকে... আশ্চর্য মেয়েরা ভিতরের কথা কি সুন্দর চাপতে পারে!
তারপর অনেক বছর কেটে গেছে যখন আমি যাদবপুর থেকে সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে জি কে ডাবলুতে ট্রেনী, অফিস ফেরতা এক রাতে পাড়ার গলিতে আমাকে ডেকে পিকু বলেছিল… ‘দেখ অনি, আমি বিরাট ভুল করেছি আমাকে ক্ষমা করিস, আমি না জেনে শুনে রূপকদার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলাম উনি বিবাহিত হওয়া স্বত্তেও, কেমন যেন উন্মাদনায় ভেসে গেছিলাম। তোর সেদিনের করুন মুখটা আজও আমার মনে পড়ে। অনি, আমি সত্যি তোকে ভালোবাসি- আমাকে ক্ষমা করবি ?’ হটাৎ কেন যে জ্বলে উঠে ছিলাম শান্ত প্রকৃতির আমি, তা নিজেই জানিনা । ওকে বাড়ি অবধি ছেড়ে দিয়ে উত্তরটা দিয়েছিলাম- ‘নারে এখন আমি এনগ্যেইজড মানে বাগদত্ত’ । নেহাতই ডাহা মিথ্যা বলেছিলাম, হয়তো মনের প্রতিহিংসার জ্বলুনিটায় একটু মলম দাওয়ার চেষ্ঠা করেছিলাম । কিন্তু বুকের ব্যথাটা প্রশমিত করতে পারিনি । বুকের সেই চিনচিনে ব্যথাটা আজ আবার অনুভব করলাম !
পিকুকে কেউ চেনে না শহরতলির এই নতুন পাড়ায়, কোথায় আছে সেই পিকু ?
কতক্ষণ জানি না, সে জায়গাটায় আমি নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম । তখন দিনের আলো শেষ, চারদিকে অন্ধকার দেখছিলাম, সে সময় হয়তো লোডশেডিং হয়েছিল, অন্ধকারে আমি হাতড়াচ্ছিলাম তিরিশ বছরের কোন এক পুরানো স্মৃতিকে শহরতলির সেই গলিটায় ।
---সমাপ্ত---
আর সে'রকম কোন একটা স্মৃতি বার বার আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল…হাতে কাজ নেই কোন, অফিসের ট্যুরে কোলকাতায়। সব কাজ শেষ করে ফেলেছি , মাঝের এই একটা দিন বিশ্রাম। আগামীকাল ফিরে যাব দিল্লী, আজকাল যত সমস্যা হয় কাজের মধ্যে না -ডুবে থাকলে ।
মনের অনুসরণে হাঁটি হাঁটি করে শেষ বিকেলে সেই মানিকতলার কলিমুদ্দিন লেন এসে হটাৎ-ই থমকে দাঁড়াই! মনে হল এখানে আসার আগে একটু খোঁজ খবর করে এলেই ভালো হত । চিন্তা করে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম- 'আগে এদিকটায় রেশন দোকানের পাশে একটা রেডিও দোকান ছিল না?' সামনে দাঁড়ানো লোক গুলো বলল- ’কোন রেডিও দোকান নেই এখানে, তবে সরু গলিটার শেষ মাথায় খালপাড়া- সেখানে একটা টিভির দোকান আছে,ওখানে গিয়ে একবার জিজ্ঞাসা করতে পারেন' ।
বেশ মনে আছে, সেই রেডিওর দোকানের পাশ দিয়ে পুরানো গ্যারেজের সামনের মাঠটা এখন তো মাঝে মাঝে স্বপ্নে আসে… কই তার তো চিহ্ন টুকুও নেই এখানে…? মাঠটা শেষ করে একটা বড় জাম গাছ ছিল তার পাশে রোয়াক বাঁধান সিঁড়িওয়ালা পুরান বড় দোতলা কমলা রঙের বাড়িটা কি যেন নামটা… 'নিসর্গ-ভিলা' ! হ্যাঁ ঠিক নিসর্গ-ভিলাই, এদিক দিয়ে কত বার এসেছি গিয়েছি, আর ওই রোয়াকে বসে কত আড্ডাই না মেরেছি ।
কিন্তু কোথায় সেই পুরান দোতলা কমলা রঙের বাড়ি, সেই 'নিসর্গ-ভিলা' ? কিছুই তো নেই এখানে ! সে জায়গায় আজ দাঁড়িয়ে কুড়িতলা পঞ্চাশ ফ্ল্যাট বিশিষ্ট 'সবুজ-প্রকৃতি'! কিন্তু কোন তলায় গিয়ে কাকে জিজ্ঞাসা করব যে, তিন দশক আগে এই শহরতলিতে আমাদের ইংরাজি পড়াতেন প্রবোধবাবুকে চেনেন? আর তার ছোট মেয়ে পিকু ?
আমার প্রথম প্রেম আর প্রত্যাখ্যান! যখন আমি প্রেম নিবেদন করি তখন পিকু প্রেসিডেন্সী কলেজের লেকচারার আমাদের থেকে সিনিয়ার রূপকদার সাথে চুটিয়ে প্রেম করত, ইস্... প্রথমে ব্যাপারটা আমি সঠিক জানতাম না, বুকের মধ্যে একটা চাপা ব্যথা নিয়ে পুরো একটা মাস আমি ভিন্ন জগতে ছিলাম... আজও সে কথা পরিষ্কার মনে পড়ে। কিন্তু পিকু তো আমার বাল্যবন্ধু ছিল, সেই ছোটবেলার নার্সারিস্কুল থেকে... আশ্চর্য মেয়েরা ভিতরের কথা কি সুন্দর চাপতে পারে!
তারপর অনেক বছর কেটে গেছে যখন আমি যাদবপুর থেকে সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে জি কে ডাবলুতে ট্রেনী, অফিস ফেরতা এক রাতে পাড়ার গলিতে আমাকে ডেকে পিকু বলেছিল… ‘দেখ অনি, আমি বিরাট ভুল করেছি আমাকে ক্ষমা করিস, আমি না জেনে শুনে রূপকদার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলাম উনি বিবাহিত হওয়া স্বত্তেও, কেমন যেন উন্মাদনায় ভেসে গেছিলাম। তোর সেদিনের করুন মুখটা আজও আমার মনে পড়ে। অনি, আমি সত্যি তোকে ভালোবাসি- আমাকে ক্ষমা করবি ?’ হটাৎ কেন যে জ্বলে উঠে ছিলাম শান্ত প্রকৃতির আমি, তা নিজেই জানিনা । ওকে বাড়ি অবধি ছেড়ে দিয়ে উত্তরটা দিয়েছিলাম- ‘নারে এখন আমি এনগ্যেইজড মানে বাগদত্ত’ । নেহাতই ডাহা মিথ্যা বলেছিলাম, হয়তো মনের প্রতিহিংসার জ্বলুনিটায় একটু মলম দাওয়ার চেষ্ঠা করেছিলাম । কিন্তু বুকের ব্যথাটা প্রশমিত করতে পারিনি । বুকের সেই চিনচিনে ব্যথাটা আজ আবার অনুভব করলাম !
পিকুকে কেউ চেনে না শহরতলির এই নতুন পাড়ায়, কোথায় আছে সেই পিকু ?
কতক্ষণ জানি না, সে জায়গাটায় আমি নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম । তখন দিনের আলো শেষ, চারদিকে অন্ধকার দেখছিলাম, সে সময় হয়তো লোডশেডিং হয়েছিল, অন্ধকারে আমি হাতড়াচ্ছিলাম তিরিশ বছরের কোন এক পুরানো স্মৃতিকে শহরতলির সেই গলিটায় ।
---সমাপ্ত---
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পরশ ১৬/০৫/২০১৬ফাইন
-
রুমা চৌধুরী ০৪/০৫/২০১৬অসাধারণ । ভীষণ ভাল লাগল। পুরানো শহরের মায়াময় স্মৃতি নিয়ে গল্প। খুব সুন্দর ভাল লাগায় ভরে গেল। আজকের নতুন স্বপ্ন দেখানো ঝা চক চকে আভিজাত্যের নিচে হারিয়ে গেছে অতীতের কিছু অনুভূতি, ভাললাগা, ভালবাসা।
খুব ভাল লাগল। -
শাহানাজ সুলতানা (শাহানাজ) ০৪/০৫/২০১৬কিছু বানান বিভ্রাট আছে শুদ্ধ করে নিন
-
দেবব্রত সান্যাল ০৩/০৫/২০১৬তারুণ্যে স্বাগত। নিয়মিত লিখুন। বেশ কিছু টাইপো আছে। শুদ্ধ করে নিন।