কিছুকথা রুপকথা
10 তারিখ গেছিলাম দেশের বাড়ি . তোমার সাথে করে আড়ি . কিছু কাজ ছিল সামাজিক, গেলাম অনেক অনেক দিন পর . ভাবলাম কেমন লাগবে ?কি জানি?
আমার ছেলেবেলা খুঁজলাম এখানে ওখানে পুকুরধারে ইট-ভাঁটার কাছে, খুঁজলাম সেই আমবাগান যেখানে আমরা খেলেছি . সেই বুড়ির লেবুতলা আর নেই.
বুড়ি ও অনেকদিন হল মারা গেছে . আর যেখানে আমার গা ছম ছম করতো সেটা কালীতলা . ওটা কিন্ত অনেকটা তেমনি রয়ে গেছে . জনশ্রুতি ছিল কালীতলায় নাকি একটা রক্ত মাখা খাঁড়া গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায় সময় সময় . মরচে ধরা একটা সিন্দুর লাগানো পুরনো খাঁড়াটা পোতা আছে লাল রঙের বেদীতে. যদিও ফাটল ধরেছে এখানে ওখানে . আর আছে কিছু গাছ পাকুড় বট অশথ্ব নিম . ওদের বয়স হয়েছে চেহারা দেখলে বোঝা যায় . তাদের কারো কারো ঝুড়ি নেমে জায়গাটা বেশ রহস্যময় আর ছায়া ছায়া মত. তার পাশে আছে একটা পুকুর. তবে জল আর তেমন নেই . বট গাছের ঝুড়ি ধরে লাফ দিয়ে পুকুরের জলে . সে দারুন মজা . পুকুরের পাশ দিয়ে একটা সরু রাস্তা চলে গেছে ধান জমির দিকে . ওখান দিয়ে ইট-ভাঁটার কাছে যাওয়া যেত . আল পেড়িয়ে যাবার পথে পড়ত সর্ষেক্ষেত কখনো পাটেরক্ষেত কিম্বা শশারক্ষেত. আমার আলের উপর দিয়ে হাঁটতে ভালো লাগতো . সাথীরা অবাক হয়ে বলতো – তুই একটা বোকা ? কোনদিন সর্ষেক্ষেত দেখিসনি ? আমি বলতাম কি করে দেখব ? থাকিতো শহরে ! আর ছিল কাঁচের মত জল নিয়ে একটা ছোট্ট নদী . নাম নাই বা বললাম তবে নদীতো বটে . বর্ষায় অর তেজ দেখে কে ? দুর্গাপূজার ভাসানে প্রতি বছরে কেউ না কেউ ডুবে যাবেই. শীতের শেষে মোটেই জল থাকেনা . কোথাও কোমর কোথাও একগলা কোথাও হাঁটু কোথাও পায়ের পাতা ভেজা জল . কত সাঁতার কেটেছি, ডুব দিয়ে বালি তুলেছি . ঝিনুক থেখে মুক্তো পাবো বলে কত ঝিনুক ভেঙ্গেছি তার ঠিক নেই . একবার আমার পিসতুতো ভাই শিবুর সাথে পাল্লা দিয়ে, সাঁতরে যাব নদীর ওপারে. বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ তবু ও চ্যালেঞ্জ ! মাথার উপরে সূর্য তার আলো নদীর জলের বালিতে . কখনো কখনো ঘন সবুজ শেওলা ভরা চাপ চাপ অন্ধকার . ছোট ছোট মাছেরা বালিতে গা ঘষে আর আমার চোখে আয়নার ঝিলিক. কিছু পড়ে দেখি আবার অন্ধকার , রহস্য রোমাঞ্চ মিলে মিশে একাকার।
সেই গাছটার কথা মনে পড়ে যার দাম বেশ কয়েক কোটি টাকা উঠেছিল . যদিও থাকে বিক্রি করা হয়নি . তাকে দেকতে গেলাম সবাই মিলে ভ্যান রিক্সা চড়ে. ওটা ছিল সাদা পলাশের গাছ. বিস্ময় ছিল সাদা পলাশের গাছ হ্য়? জানতাম না . পরেরদিন ছিল বাগদেবীর পূজা . ভাবলাম, হয়তো গাছটাতে অনেক সাদা পলাশ ফুটে আছে থোকা থোকা . নিয়ে আসব মুঠো করে, তোমায় দেখাবো বলে . আহত হলাম গাছে একটাও ফুল ফোটেনি . গাছটা দাঁড়িয়ে আছে একটা সাঁওতাল ছেলের মত. বিশাল তার কাঁধ মাথায় যার একরাশ ঝাঁকড়া চুল. কেটে যাওয়া একটা ঘুড়ি লটকে আছে গাছের ডালে. তোমার মনে হবে, মানে আমার মনে হলো গাছটা বুঝি ঘুড়ি ওড়াচ্ছে আপন খুশিতে . আমি বললাম আমায় তুমি চিনতে পারছ না ? সে যেন উত্তর দিল কাঁধ ঝাঁকিয়ে – না. অথচ........ গাছটার নিচে গোল করে বাঁধানো বেদী, আমরা বসলাম কিছুক্ষন. এই গাছের দাম কেন অত বেশি? এর নির্যাস থেকে নাকি দামী ওষুধ হতে পারে, কিন্ত কেউ বলতে পারল না এই গাছের ফুল সাদা কিনা? কেন না কোন বছর এই গাছে ফুল-ই ফোটেনা ।
তার পরদিন সকালে একা চলে গেলাম নদীর সাথে কথা বলতে . নদী কে বললাম আমায় চিনতে পারছ ? সে উত্তর দেবার আগেই একটা মাছরাঙা ঝুপ করে ডুব দিয়ে মাছ ধরে বসল গিয়ে নদীতে পতা একটা বাঁশের ডগায় . মাছ খাওয়া শেষ করে উড়ে গেল নদীর ওপারে. দেখি একটা না আর একটা মাছরাঙা. দুটিতে কখনো উপরে কখনো নিচে উড়তে উড়তে খেলে বেড়াচ্ছে . নদীর জলে একটা বালিহাঁস একা একা যাযাবরের মত বেসে চলেছে. ভাবলাম অরস সঙ্গী হলে মন্দ হয়না . কিন্ত যেতে পারলাম না . দুর থেকে ভেসে আসা চিত্কার – ভাই কটা পে......লি........? ভাই জবাব দেয় – পাঁচ........টা . দেখি সাত আট বছরের একটা ছেলে থালায় সাদা কাপড় বেঁধে, তাতে রেখেছে ছোট একটা ফুটো. ফুটো দিয়ে ফেলছে ছোট অতার গোলা. তারপর থাল্তাকে রেখে আসছে নদীর জলে, কিছুক্ষন পর থালাটা তুলতেই পথভোলা ছোট মাছেরা ধরা পড়ছে ।
এখন নদী প্রায় শুকনো, আমি দাঁড়িয়ে নদীর মাঝখানে. পার ভাঙ্গা নদীর পার কিন্ত খাড়া উঠে গেছে বিশ ফুট উপরে. এখানে বর্ষায় জল থৈ থৈ করে, এখন সবুজ ঘাস গজিয়ে গেছে কোথাও কোথাও. যেখানে দাঁড়িয়ে তার ঠিক পাশে সাত সাতটা হাঁস আপন মনে চপর চপর করছে. কেও ঠোঁট ডুবিয়ে নিজের পালকে, কেও একপায়ে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে. আবার কেউ আর একটার লেজ টেনে ধরছে, ঠিক তুমি যেমন কর . সবসময় যার পিছনে লাগা অভ্যাস. আর একটা দেখি নদীর জলে মুখ ডুবিয়ে লেজটা উপরে তুলে খাবারের সন্ধানে . হয়তো পেলনা কিছু তাই ডাঙায় এসে দলে ভিরলো. শন শন করে ফাগুন হাওয়া শীত ধরিয়ে দেবে যেন . ভিজে হাঁসটা এমন করে পাখা ঝাড়ল, যে কুচি কুচি জলের কণা এসে পড়ল আমার চোখে মুখে . আগে নৌকা এপার ওপার করত এখন দেখি একটা বাঁশের সাঁকো. ভাবলাম যাব নদীর ওপারে, কি মনে করে আর গেলাম না . তোমার সাথে হাত ধরে ধরে যাব বলে গেলাম না . ফিরে এলাম ঘরে....।
**************************
একটু দীর্ঘ ডট স্থানে ( । ) আছে ওগুলো বুঝে নেবেন ।
আমার ছেলেবেলা খুঁজলাম এখানে ওখানে পুকুরধারে ইট-ভাঁটার কাছে, খুঁজলাম সেই আমবাগান যেখানে আমরা খেলেছি . সেই বুড়ির লেবুতলা আর নেই.
বুড়ি ও অনেকদিন হল মারা গেছে . আর যেখানে আমার গা ছম ছম করতো সেটা কালীতলা . ওটা কিন্ত অনেকটা তেমনি রয়ে গেছে . জনশ্রুতি ছিল কালীতলায় নাকি একটা রক্ত মাখা খাঁড়া গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায় সময় সময় . মরচে ধরা একটা সিন্দুর লাগানো পুরনো খাঁড়াটা পোতা আছে লাল রঙের বেদীতে. যদিও ফাটল ধরেছে এখানে ওখানে . আর আছে কিছু গাছ পাকুড় বট অশথ্ব নিম . ওদের বয়স হয়েছে চেহারা দেখলে বোঝা যায় . তাদের কারো কারো ঝুড়ি নেমে জায়গাটা বেশ রহস্যময় আর ছায়া ছায়া মত. তার পাশে আছে একটা পুকুর. তবে জল আর তেমন নেই . বট গাছের ঝুড়ি ধরে লাফ দিয়ে পুকুরের জলে . সে দারুন মজা . পুকুরের পাশ দিয়ে একটা সরু রাস্তা চলে গেছে ধান জমির দিকে . ওখান দিয়ে ইট-ভাঁটার কাছে যাওয়া যেত . আল পেড়িয়ে যাবার পথে পড়ত সর্ষেক্ষেত কখনো পাটেরক্ষেত কিম্বা শশারক্ষেত. আমার আলের উপর দিয়ে হাঁটতে ভালো লাগতো . সাথীরা অবাক হয়ে বলতো – তুই একটা বোকা ? কোনদিন সর্ষেক্ষেত দেখিসনি ? আমি বলতাম কি করে দেখব ? থাকিতো শহরে ! আর ছিল কাঁচের মত জল নিয়ে একটা ছোট্ট নদী . নাম নাই বা বললাম তবে নদীতো বটে . বর্ষায় অর তেজ দেখে কে ? দুর্গাপূজার ভাসানে প্রতি বছরে কেউ না কেউ ডুবে যাবেই. শীতের শেষে মোটেই জল থাকেনা . কোথাও কোমর কোথাও একগলা কোথাও হাঁটু কোথাও পায়ের পাতা ভেজা জল . কত সাঁতার কেটেছি, ডুব দিয়ে বালি তুলেছি . ঝিনুক থেখে মুক্তো পাবো বলে কত ঝিনুক ভেঙ্গেছি তার ঠিক নেই . একবার আমার পিসতুতো ভাই শিবুর সাথে পাল্লা দিয়ে, সাঁতরে যাব নদীর ওপারে. বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ তবু ও চ্যালেঞ্জ ! মাথার উপরে সূর্য তার আলো নদীর জলের বালিতে . কখনো কখনো ঘন সবুজ শেওলা ভরা চাপ চাপ অন্ধকার . ছোট ছোট মাছেরা বালিতে গা ঘষে আর আমার চোখে আয়নার ঝিলিক. কিছু পড়ে দেখি আবার অন্ধকার , রহস্য রোমাঞ্চ মিলে মিশে একাকার।
সেই গাছটার কথা মনে পড়ে যার দাম বেশ কয়েক কোটি টাকা উঠেছিল . যদিও থাকে বিক্রি করা হয়নি . তাকে দেকতে গেলাম সবাই মিলে ভ্যান রিক্সা চড়ে. ওটা ছিল সাদা পলাশের গাছ. বিস্ময় ছিল সাদা পলাশের গাছ হ্য়? জানতাম না . পরেরদিন ছিল বাগদেবীর পূজা . ভাবলাম, হয়তো গাছটাতে অনেক সাদা পলাশ ফুটে আছে থোকা থোকা . নিয়ে আসব মুঠো করে, তোমায় দেখাবো বলে . আহত হলাম গাছে একটাও ফুল ফোটেনি . গাছটা দাঁড়িয়ে আছে একটা সাঁওতাল ছেলের মত. বিশাল তার কাঁধ মাথায় যার একরাশ ঝাঁকড়া চুল. কেটে যাওয়া একটা ঘুড়ি লটকে আছে গাছের ডালে. তোমার মনে হবে, মানে আমার মনে হলো গাছটা বুঝি ঘুড়ি ওড়াচ্ছে আপন খুশিতে . আমি বললাম আমায় তুমি চিনতে পারছ না ? সে যেন উত্তর দিল কাঁধ ঝাঁকিয়ে – না. অথচ........ গাছটার নিচে গোল করে বাঁধানো বেদী, আমরা বসলাম কিছুক্ষন. এই গাছের দাম কেন অত বেশি? এর নির্যাস থেকে নাকি দামী ওষুধ হতে পারে, কিন্ত কেউ বলতে পারল না এই গাছের ফুল সাদা কিনা? কেন না কোন বছর এই গাছে ফুল-ই ফোটেনা ।
তার পরদিন সকালে একা চলে গেলাম নদীর সাথে কথা বলতে . নদী কে বললাম আমায় চিনতে পারছ ? সে উত্তর দেবার আগেই একটা মাছরাঙা ঝুপ করে ডুব দিয়ে মাছ ধরে বসল গিয়ে নদীতে পতা একটা বাঁশের ডগায় . মাছ খাওয়া শেষ করে উড়ে গেল নদীর ওপারে. দেখি একটা না আর একটা মাছরাঙা. দুটিতে কখনো উপরে কখনো নিচে উড়তে উড়তে খেলে বেড়াচ্ছে . নদীর জলে একটা বালিহাঁস একা একা যাযাবরের মত বেসে চলেছে. ভাবলাম অরস সঙ্গী হলে মন্দ হয়না . কিন্ত যেতে পারলাম না . দুর থেকে ভেসে আসা চিত্কার – ভাই কটা পে......লি........? ভাই জবাব দেয় – পাঁচ........টা . দেখি সাত আট বছরের একটা ছেলে থালায় সাদা কাপড় বেঁধে, তাতে রেখেছে ছোট একটা ফুটো. ফুটো দিয়ে ফেলছে ছোট অতার গোলা. তারপর থাল্তাকে রেখে আসছে নদীর জলে, কিছুক্ষন পর থালাটা তুলতেই পথভোলা ছোট মাছেরা ধরা পড়ছে ।
এখন নদী প্রায় শুকনো, আমি দাঁড়িয়ে নদীর মাঝখানে. পার ভাঙ্গা নদীর পার কিন্ত খাড়া উঠে গেছে বিশ ফুট উপরে. এখানে বর্ষায় জল থৈ থৈ করে, এখন সবুজ ঘাস গজিয়ে গেছে কোথাও কোথাও. যেখানে দাঁড়িয়ে তার ঠিক পাশে সাত সাতটা হাঁস আপন মনে চপর চপর করছে. কেও ঠোঁট ডুবিয়ে নিজের পালকে, কেও একপায়ে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে. আবার কেউ আর একটার লেজ টেনে ধরছে, ঠিক তুমি যেমন কর . সবসময় যার পিছনে লাগা অভ্যাস. আর একটা দেখি নদীর জলে মুখ ডুবিয়ে লেজটা উপরে তুলে খাবারের সন্ধানে . হয়তো পেলনা কিছু তাই ডাঙায় এসে দলে ভিরলো. শন শন করে ফাগুন হাওয়া শীত ধরিয়ে দেবে যেন . ভিজে হাঁসটা এমন করে পাখা ঝাড়ল, যে কুচি কুচি জলের কণা এসে পড়ল আমার চোখে মুখে . আগে নৌকা এপার ওপার করত এখন দেখি একটা বাঁশের সাঁকো. ভাবলাম যাব নদীর ওপারে, কি মনে করে আর গেলাম না . তোমার সাথে হাত ধরে ধরে যাব বলে গেলাম না . ফিরে এলাম ঘরে....।
**************************
একটু দীর্ঘ ডট স্থানে ( । ) আছে ওগুলো বুঝে নেবেন ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সবুজ আহমেদ কক্স ১৯/০১/২০১৫
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ০৮/০১/২০১৫হমমম। গ্রামে যেতে মনে হল। আর হ্যা বুঝে নিলাম।
-
অ ০৭/০১/২০১৫গ্রাম্য পরিবেশের শ্বাশত চিত্র অঙ্কন করেছেন । কিছুক্ষণের জন্য যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম স্মৃতিময় শৈশবে ।
অনেক অনেক ভালো লাগল । -
উদ্বাস্তু নিশাচর ০৭/০১/২০১৫নস্টালজিয়ায় ভুগিয়ে ছাড়বেন দেখছি
আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইল ।