জহির ভাই
জহির ভাই অদ্ভুত মানুষ।
অদ্ভুত মানুষ জহির ভাই।
মানুষ অদ্ভুত ভাই জহির।
ভাই অদ্ভুত জহির মানুষ।
যেভাবেই বলা হোক না কেন, বক্তব্য একই থাকে।
জহির ভাইয়ের সাথে পরিচয় আমার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। একদিন রাতে আমার বন্ধু শরৎ তার একজন অতিথিকে নিয়ে এলো আমাদের রাত্রিকালীন ছাদের আড্ডায়। প্রথম পরিচয়ের সময় তাঁর চেহারা দেখতে পাইনি। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই মানুষটাকে পছন্দ করে ফেললাম আড্ডায় তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য। সাধারনত নতুন কেউ এলে আড্ডায় কিছুতেই পুরোপুরি সহজ হতে পারেনা, আবার অনেকে নিজেকে আড্ডার মধ্যমণি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে অর্থহীন নানা ধরনের হাস্যকর আচরন করতে থাকেন। কিন্তু জহির ভাইয়ের আচরণে আমাদের মনে হচ্ছিল, তিনি আমাদের আড্ডার নিয়মিত একজন সদস্য। মানুষের সাথে তাঁর মিশে যাওয়ার ক্ষমতা অসাধারন। ক্রমশ আমার সাথে জহির ভাইয়ের পরিচয় গভীরতা পায়। আর আমি জানতে পারলাম তাঁর বিচিত্র জীবনধারা সম্পর্কে। বাউন্ডুলে স্বভাবের অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য সম্ভবত ঘরপালানো রোগ। নজরুল পালিয়েছিলেন, জহির ভাইও পালিয়েছিলেন। গল্প বলার চমৎকার ভঙ্গির কারনেই বোধকরি জহির ভাইয়ের ঘরপালানো বছরগুলো আমাকে আলোড়িত করেছে দারুণভাবে।
জহির ভাইয়ের জাগতিক সম্পত্তির সমষ্টি ছিল একটা কাঁধে ঝোলানো থলের ভেতর। নির্দিষ্ট কোন রাত কাটাবার স্থান তাঁর ছিলনা। পারিপার্শ্বিক পরিবেশের গোলযোগ এড়িয়ে যাওয়ার ঈর্ষনীয় ক্ষমতা আছে জহির ভাইয়ের। একবার, তাকে আমি খুঁজে বের করেছিলাম একটা কদম গাছের নিচে মুষল ধারায় বৃষ্টির মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থায়।
একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানে জহির ভাই কাজ করতেন সহকারী পরিচালক হিসেবে। বেশ কিছুদিন সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পর তিনি একসময় হাত দিলেন তাঁর নিজের নাটক তৈরিতে। পরিচালক হিসেবে সেটাই তাঁর প্রথম কাজ। অনেক উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা আর ছুটাছুটির পর একদিন তাঁর নাটক শুরু করার দিনটি আসল। কিন্তু, যথারীতি কিছু সমস্যা দেখা দিল। ছোটোখাটো সমস্যা দেখে ভয় পাবার লোক জহির ভাই নন। সমস্যা হোলো সকল কুশলীরা উপস্থিত হলেও প্রযোজক হঠাৎ নিরুদ্দেশ। চিত্রধারনের সময়কার বিভিন্ন প্রয়োজনে, জহির ভাই তাঁর এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন একটা গাড়ি। আর প্রযোজকের অনুপস্থিতির কারণে যখন পুরো ব্যাপারটি বন্ধ হয়ে যেতে বসলো, তখন জহির ভাই খুবই অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর বন্ধুর গাড়িটা দিলেন বিক্রি করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম বন্ধুকে তিনি কি বলে বোঝাবেন। জহির ভাই বললেন নাটক বিক্রি হলে বন্ধুকে নতুন গাড়ি কিনে দেবেন।
অতিবাহিত হোলো বেশ কিছুদিন। জহির ভাইয়ের নিঃশ্বাস নেয়ার সময় নেই। শেষ হোল নাটকের চিত্রধারন। চিত্রধারনের পরেও একটা নাটক প্রচারোপযোগী হতে বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
এসব প্রক্রিয়া শেষ করে জহির ভাই তাঁর নাটক কোন কেন্দ্রের কাছেই বিক্রি করতে পারলেননা।
যথারীতি, জাগতিক সমস্যায় জহির ভাই বিব্রত হলেন না। ডুব দিলেন। ডুব দিলেন, মানে হারিয়ে গেলেন অনির্দিষ্ট কালের জন্য। কিন্তু তার গাড়িহারা বন্ধু বসে থাকলেন না। অভিযোগ করে আদালতে একটা মামলাও ঠুকে দিলেন। প্রায় সাত মাস পর জহির ভাই হঠাৎ দৃশ্যমান হলেন। জানালেন তিনি মাছরাঙ্গা নামের একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। এভাবেই ছোট পর্দায় পূর্ণাঙ্গ পরিচালক হিসেবে জহির ভাইয়ের যাত্রা শুরু।
জহির ভাই আছেন এখনো পুরোপুরি আগেরই মত। যদিও এখন তিনি মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত একজন পরিচালক। বিকেল পাঁচটার পর তাকে আগের মতই নিয়মিত পাওয়া যায় ছবির হাঁটে। একই রকম উদাসী ভঙ্গিতে তিনি বসে থাকেন, গল্প করেন আর বসেই থাকেন।
অদ্ভুত মানুষ জহির ভাই।
মানুষ অদ্ভুত ভাই জহির।
ভাই অদ্ভুত জহির মানুষ।
যেভাবেই বলা হোক না কেন, বক্তব্য একই থাকে।
জহির ভাইয়ের সাথে পরিচয় আমার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। একদিন রাতে আমার বন্ধু শরৎ তার একজন অতিথিকে নিয়ে এলো আমাদের রাত্রিকালীন ছাদের আড্ডায়। প্রথম পরিচয়ের সময় তাঁর চেহারা দেখতে পাইনি। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই মানুষটাকে পছন্দ করে ফেললাম আড্ডায় তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য। সাধারনত নতুন কেউ এলে আড্ডায় কিছুতেই পুরোপুরি সহজ হতে পারেনা, আবার অনেকে নিজেকে আড্ডার মধ্যমণি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে অর্থহীন নানা ধরনের হাস্যকর আচরন করতে থাকেন। কিন্তু জহির ভাইয়ের আচরণে আমাদের মনে হচ্ছিল, তিনি আমাদের আড্ডার নিয়মিত একজন সদস্য। মানুষের সাথে তাঁর মিশে যাওয়ার ক্ষমতা অসাধারন। ক্রমশ আমার সাথে জহির ভাইয়ের পরিচয় গভীরতা পায়। আর আমি জানতে পারলাম তাঁর বিচিত্র জীবনধারা সম্পর্কে। বাউন্ডুলে স্বভাবের অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য সম্ভবত ঘরপালানো রোগ। নজরুল পালিয়েছিলেন, জহির ভাইও পালিয়েছিলেন। গল্প বলার চমৎকার ভঙ্গির কারনেই বোধকরি জহির ভাইয়ের ঘরপালানো বছরগুলো আমাকে আলোড়িত করেছে দারুণভাবে।
জহির ভাইয়ের জাগতিক সম্পত্তির সমষ্টি ছিল একটা কাঁধে ঝোলানো থলের ভেতর। নির্দিষ্ট কোন রাত কাটাবার স্থান তাঁর ছিলনা। পারিপার্শ্বিক পরিবেশের গোলযোগ এড়িয়ে যাওয়ার ঈর্ষনীয় ক্ষমতা আছে জহির ভাইয়ের। একবার, তাকে আমি খুঁজে বের করেছিলাম একটা কদম গাছের নিচে মুষল ধারায় বৃষ্টির মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থায়।
একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানে জহির ভাই কাজ করতেন সহকারী পরিচালক হিসেবে। বেশ কিছুদিন সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পর তিনি একসময় হাত দিলেন তাঁর নিজের নাটক তৈরিতে। পরিচালক হিসেবে সেটাই তাঁর প্রথম কাজ। অনেক উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা আর ছুটাছুটির পর একদিন তাঁর নাটক শুরু করার দিনটি আসল। কিন্তু, যথারীতি কিছু সমস্যা দেখা দিল। ছোটোখাটো সমস্যা দেখে ভয় পাবার লোক জহির ভাই নন। সমস্যা হোলো সকল কুশলীরা উপস্থিত হলেও প্রযোজক হঠাৎ নিরুদ্দেশ। চিত্রধারনের সময়কার বিভিন্ন প্রয়োজনে, জহির ভাই তাঁর এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন একটা গাড়ি। আর প্রযোজকের অনুপস্থিতির কারণে যখন পুরো ব্যাপারটি বন্ধ হয়ে যেতে বসলো, তখন জহির ভাই খুবই অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর বন্ধুর গাড়িটা দিলেন বিক্রি করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম বন্ধুকে তিনি কি বলে বোঝাবেন। জহির ভাই বললেন নাটক বিক্রি হলে বন্ধুকে নতুন গাড়ি কিনে দেবেন।
অতিবাহিত হোলো বেশ কিছুদিন। জহির ভাইয়ের নিঃশ্বাস নেয়ার সময় নেই। শেষ হোল নাটকের চিত্রধারন। চিত্রধারনের পরেও একটা নাটক প্রচারোপযোগী হতে বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
এসব প্রক্রিয়া শেষ করে জহির ভাই তাঁর নাটক কোন কেন্দ্রের কাছেই বিক্রি করতে পারলেননা।
যথারীতি, জাগতিক সমস্যায় জহির ভাই বিব্রত হলেন না। ডুব দিলেন। ডুব দিলেন, মানে হারিয়ে গেলেন অনির্দিষ্ট কালের জন্য। কিন্তু তার গাড়িহারা বন্ধু বসে থাকলেন না। অভিযোগ করে আদালতে একটা মামলাও ঠুকে দিলেন। প্রায় সাত মাস পর জহির ভাই হঠাৎ দৃশ্যমান হলেন। জানালেন তিনি মাছরাঙ্গা নামের একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। এভাবেই ছোট পর্দায় পূর্ণাঙ্গ পরিচালক হিসেবে জহির ভাইয়ের যাত্রা শুরু।
জহির ভাই আছেন এখনো পুরোপুরি আগেরই মত। যদিও এখন তিনি মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত একজন পরিচালক। বিকেল পাঁচটার পর তাকে আগের মতই নিয়মিত পাওয়া যায় ছবির হাঁটে। একই রকম উদাসী ভঙ্গিতে তিনি বসে থাকেন, গল্প করেন আর বসেই থাকেন।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মঞ্জুর হোসেন মৃদুল ৩১/০৮/২০১৪ভাল লাগল।