একটি অপ্রকাশিত প্রেম
বাসার সামনে ক্রিং ক্রিং শব্দ করে রিকশাটা থামতেই নেমে পড়ে রনেল। খানিকটা কৌতূহল নিয়ে উপরের দিকে চোখ তুলে তাকায়, দোতলার বারান্দা হতে এক জোড়া সজল চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
মেয়েটির নাম রোদেলা। হালকা পাতলা রোগাটে দেহে গোলাপি রঙ। মুখখানি মায়াময়। পিঠের উপর ঘন কালো রাশি রাশি চুল। এক কথায় অপরূপা! মেয়েটি প্রায়ই বারান্দায় দাঁড়িয়ে রনেলের চলার পথে দৃষ্টি বিছিয়ে দেয়। তবে কি...? অহেতুক ভাবনা প্রশ্রয় দেয়না রনেল। মনে মনে বলে "আমার মতো হাবাটে টাইপের ছেলেকে কেউ ভালোবাসতেই পারেনা" যাকে কিনা বন্ধুরা নাম দিয়েছে "ঘরকুণো বয়লার মুরগা"! অপ্রয়োজনে কখনো বাইরে যায়না সে। ঘরেই থাকে। পড়াশোনা, কবিতা, গান, গল্প মুখ্যত এই নিয়েই তাঁর জীবন। বিকেলে বারান্দায় চেয়ারে বসে নগর প্রকৃতি আর আকাশের সাথে জমিয়ে প্রেম করে। হাতে থাকে এক কাপ চিনি ছাড়া গ্রীণ টি।
সকাল নয়টা, ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে রনেল। চারতলার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে, দোতলা পর্যন্ত আসতেই দেখে দরজা খুলে মায়াময় মুখের রোদেলা বেরিয়ে আসছে। পাখির মতো সুরেলা চিকন কণ্ঠে রোদেলা বলে উঠে "কোথায় যাচ্ছেন ভাইয়া?" মাথা নিচু করে লাজুক ভঙ্গিতে রনেল উত্তর দেয়, ভার্সিটিতে। একটু সাহস সঞ্চয় করে আড়চোখে দেখে "মিটি মিটি হাসছে রোদেলা"। একই বিল্ডিং এর বাসিন্দা ওরা দুজন। যোগাযোগ আছে ওদের দু পরিবারের মাঝে। রোদেলা, রনেলের ছোটবোন জেসির সমবয়সী। যদিও একই ক্লাসে পড়েনা। সেই সুবাদে রোদেলা প্রায়ই রনেলদের বাসায় যাতায়াত করে।
কখনো সখনো কলিংবেলের শব্দ শুনে রনেলই দরজা খুলে দেয়, অবাক চোখে দেখে রোদেলা দাঁড়িয়ে। রোদেলা চোখেমুখে আলোকদ্যুতি ছড়িয়ে কোমল কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে "জেসি বাসায় আছে ভাইয়া?" রনেল জবাব না দিয়ে চুপচাপ সরে দাঁড়িয়ে পথ ছেড়ে দেয়, নিঃশব্দে ভেতরে চলে আসে রোদেলা।
এক বিকেলে বারান্দায় বসে আছে রনেল, এমন সময় রোদেলা এসে হাজির। কোন রাখঢাক ছাড়াই জিজ্ঞাসা করলো, আপনি আমাকে এতো লজ্জা পান কেন? প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে যায় রনেল, তোতলিয়ে দ্বিধাজড়িত কন্ঠে উত্তর দিলো, তোমায় লজ্জা পাবার কী আছে! তবে...। এটুকু বলে দৌড়ে পালায় রোদেলা।
অন্য আরেকদিনের কথা, ভার্সিটিতে যাবার জন্যে রিকশায় উঠে বসতেই, পেছন থেকে রোদেলার ডাক পড়ে, এই যে রনেল ভাইয়া শুনুন, অনেকটা কৈফিয়িতের মতো বললো, আসলে আমি কোন রিকশা পাচ্ছিনা, আপনি কি আমাকে একটু সামনে নামিয়ে দিবেন, পরে কিছু একটা ধরে নিবো আমি। রোদেলার কথাগুলো সত্যি মনে হলোনা রনেলের, নিশ্চিত রিকশায় পাশে বসার অজুহাত মনে হলো। তবুও ভদ্রতার খাতিরে বললো, ঠিক আছে...। এক রিকশায় পাশাপাশি দুজন বসে আছে। চুপচাপ। রনেল যথা সম্ভব চেপে বসে আছে রিকশার এক পাশে। দৃষ্টি সোজা সামনে।
শুনুন !
পাশ ফিরে তাকাতেই চোখাচোখি হলো। রনেল মনে মনে ভাবছে, সে যেন তলিয়ে যাচ্ছে রোদেলার সজল চোখ যুগলে। রিকশার ঝাঁকুনিতে চেতনায় ফিরে, জিজ্ঞাসা করলো রনেল " কিছু বলবে...? রহস্যময় মুচকি হাসি হেসে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রোদেলা জবাব দিলো, নাহ, কিছু না। "
রনেল মাঝে মাঝে উপলব্ধি করে, নিজের ভেতরে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, এতোদিনের নীরব নিথর মনটা একটু একটু করে চঞ্চল হতে শুরু করেছে। একাকী সময়ে ওর চোখের সামনে রোদেলার মুখ ভেসে উঠে। বুঝতে পারে সে ক্রমেই ভালোবাসার বেড়াজালে জড়িয়ে যাচ্ছে।
জীবনেও কাউকে ভালোবাসি কথাটা বলা হয়ে উঠেনি রনেলের। সময় সুযোগ দুটোই ওর ছিলো। অথচ, লজ্জা, সংকোচে এগিয়ে যাওয়া হয়নি। রোদেলা আমাকে ভালোবাসে, স্পষ্ট বুঝতে পারি। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারিনা। জানিনা এটা লজ্জা নাকি নিয়তি! এগুলো এখন রনেলের প্রিয় ভাবনা।
এমনি ভাবে সময় চলে যায় জীবনের ফাঁক গলে, আজ রোদেলারা চলে যাচ্ছে, ওর বাবা বদলি হয়েছেন, অন্যকোন জেলা শহরে। বিদায়ের সময় দেখা হলো, দুজন দাঁড়িয়ে আছে মুখোমুখি, একদম মূর্তির মতো। আমরা চলে যাচ্ছি, আর্দ্র কন্ঠে রোদেলার উচ্চারণ। এক বুক হাহাকার চেপে রনেলের জবাব "ভালো থেকো"। চোখ তুলে তাকালো। মনে হলো, রোদেলার দুটি চোখ ভরে গেছে নোনাজলে। এখনই টপাটপ পড়তে শুরু করবে। রনেল মনে মনে আৎকে উঠে - আমার জন্যে এতোটা ভালোবাসা ছিলো ওর কাছে!
রোদেলা চলে গেছে। কেমন যেন একটা কষ্ট অনুভূত হয় রনেলের বুকের ভিতরে। এই প্রথম কারো জন্যে এতো কষ্ট হচ্ছে ওর। হয়তো এর থেকে দুঃসহ বেদনা বুকে চেপে রোদেলা চলে গেছে। এ ভাবনা আরো অসহায় করে তোলে ওকে। বারবার মনে পড়তে থাকে স্মৃতিগুলো। মনে মনে ভাবে আমি তাঁকে ভুলতে পারছিনা, পারবোও না কোনদিন। সারাক্ষণ সে মনের সাথে যুদ্ধ করে - আমি যদি এতোটাই অস্থির ওর জন্যে তবে কেন বলি ওকে, "ভালোবাসি"! সেতো আমার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করতো না। হয়তো কথা বলার সুযোগ চাইতো! কিন্তু নিজে কিছু না বলাতে সেও বলেনি! মেয়ে তোমার বুক ফেটেছে, তবুও মুখ ফোটে বলোনি। তবে দোষটা কার! এসব ভাবতেই কান্না চলে আসে রনেলের। বন্ধুদের মাঝেও ভালো লাগেনা। পুরনো জীবনেই আছে রনেল। সারাক্ষণ প্রার্থনায় রোদেলা। হয়তো রোদেলাও ছটফট করছে, একথা ভেবেই সে আবার কেঁদে ফেলে। অশ্রুসজল নয়নে রনেল ভাবে আমি তাঁকে ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি, অথচ বলা হয়নি। তাই হলো না, তোমায় বুকে চেপে ধরে ভালোবাসা! এটাই হয়তো আমাদের নিয়তি।
১৪/১১/২০১৬ইং। ঢাকা।
মেয়েটির নাম রোদেলা। হালকা পাতলা রোগাটে দেহে গোলাপি রঙ। মুখখানি মায়াময়। পিঠের উপর ঘন কালো রাশি রাশি চুল। এক কথায় অপরূপা! মেয়েটি প্রায়ই বারান্দায় দাঁড়িয়ে রনেলের চলার পথে দৃষ্টি বিছিয়ে দেয়। তবে কি...? অহেতুক ভাবনা প্রশ্রয় দেয়না রনেল। মনে মনে বলে "আমার মতো হাবাটে টাইপের ছেলেকে কেউ ভালোবাসতেই পারেনা" যাকে কিনা বন্ধুরা নাম দিয়েছে "ঘরকুণো বয়লার মুরগা"! অপ্রয়োজনে কখনো বাইরে যায়না সে। ঘরেই থাকে। পড়াশোনা, কবিতা, গান, গল্প মুখ্যত এই নিয়েই তাঁর জীবন। বিকেলে বারান্দায় চেয়ারে বসে নগর প্রকৃতি আর আকাশের সাথে জমিয়ে প্রেম করে। হাতে থাকে এক কাপ চিনি ছাড়া গ্রীণ টি।
সকাল নয়টা, ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে রনেল। চারতলার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে, দোতলা পর্যন্ত আসতেই দেখে দরজা খুলে মায়াময় মুখের রোদেলা বেরিয়ে আসছে। পাখির মতো সুরেলা চিকন কণ্ঠে রোদেলা বলে উঠে "কোথায় যাচ্ছেন ভাইয়া?" মাথা নিচু করে লাজুক ভঙ্গিতে রনেল উত্তর দেয়, ভার্সিটিতে। একটু সাহস সঞ্চয় করে আড়চোখে দেখে "মিটি মিটি হাসছে রোদেলা"। একই বিল্ডিং এর বাসিন্দা ওরা দুজন। যোগাযোগ আছে ওদের দু পরিবারের মাঝে। রোদেলা, রনেলের ছোটবোন জেসির সমবয়সী। যদিও একই ক্লাসে পড়েনা। সেই সুবাদে রোদেলা প্রায়ই রনেলদের বাসায় যাতায়াত করে।
কখনো সখনো কলিংবেলের শব্দ শুনে রনেলই দরজা খুলে দেয়, অবাক চোখে দেখে রোদেলা দাঁড়িয়ে। রোদেলা চোখেমুখে আলোকদ্যুতি ছড়িয়ে কোমল কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে "জেসি বাসায় আছে ভাইয়া?" রনেল জবাব না দিয়ে চুপচাপ সরে দাঁড়িয়ে পথ ছেড়ে দেয়, নিঃশব্দে ভেতরে চলে আসে রোদেলা।
এক বিকেলে বারান্দায় বসে আছে রনেল, এমন সময় রোদেলা এসে হাজির। কোন রাখঢাক ছাড়াই জিজ্ঞাসা করলো, আপনি আমাকে এতো লজ্জা পান কেন? প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে যায় রনেল, তোতলিয়ে দ্বিধাজড়িত কন্ঠে উত্তর দিলো, তোমায় লজ্জা পাবার কী আছে! তবে...। এটুকু বলে দৌড়ে পালায় রোদেলা।
অন্য আরেকদিনের কথা, ভার্সিটিতে যাবার জন্যে রিকশায় উঠে বসতেই, পেছন থেকে রোদেলার ডাক পড়ে, এই যে রনেল ভাইয়া শুনুন, অনেকটা কৈফিয়িতের মতো বললো, আসলে আমি কোন রিকশা পাচ্ছিনা, আপনি কি আমাকে একটু সামনে নামিয়ে দিবেন, পরে কিছু একটা ধরে নিবো আমি। রোদেলার কথাগুলো সত্যি মনে হলোনা রনেলের, নিশ্চিত রিকশায় পাশে বসার অজুহাত মনে হলো। তবুও ভদ্রতার খাতিরে বললো, ঠিক আছে...। এক রিকশায় পাশাপাশি দুজন বসে আছে। চুপচাপ। রনেল যথা সম্ভব চেপে বসে আছে রিকশার এক পাশে। দৃষ্টি সোজা সামনে।
শুনুন !
পাশ ফিরে তাকাতেই চোখাচোখি হলো। রনেল মনে মনে ভাবছে, সে যেন তলিয়ে যাচ্ছে রোদেলার সজল চোখ যুগলে। রিকশার ঝাঁকুনিতে চেতনায় ফিরে, জিজ্ঞাসা করলো রনেল " কিছু বলবে...? রহস্যময় মুচকি হাসি হেসে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রোদেলা জবাব দিলো, নাহ, কিছু না। "
রনেল মাঝে মাঝে উপলব্ধি করে, নিজের ভেতরে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, এতোদিনের নীরব নিথর মনটা একটু একটু করে চঞ্চল হতে শুরু করেছে। একাকী সময়ে ওর চোখের সামনে রোদেলার মুখ ভেসে উঠে। বুঝতে পারে সে ক্রমেই ভালোবাসার বেড়াজালে জড়িয়ে যাচ্ছে।
জীবনেও কাউকে ভালোবাসি কথাটা বলা হয়ে উঠেনি রনেলের। সময় সুযোগ দুটোই ওর ছিলো। অথচ, লজ্জা, সংকোচে এগিয়ে যাওয়া হয়নি। রোদেলা আমাকে ভালোবাসে, স্পষ্ট বুঝতে পারি। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারিনা। জানিনা এটা লজ্জা নাকি নিয়তি! এগুলো এখন রনেলের প্রিয় ভাবনা।
এমনি ভাবে সময় চলে যায় জীবনের ফাঁক গলে, আজ রোদেলারা চলে যাচ্ছে, ওর বাবা বদলি হয়েছেন, অন্যকোন জেলা শহরে। বিদায়ের সময় দেখা হলো, দুজন দাঁড়িয়ে আছে মুখোমুখি, একদম মূর্তির মতো। আমরা চলে যাচ্ছি, আর্দ্র কন্ঠে রোদেলার উচ্চারণ। এক বুক হাহাকার চেপে রনেলের জবাব "ভালো থেকো"। চোখ তুলে তাকালো। মনে হলো, রোদেলার দুটি চোখ ভরে গেছে নোনাজলে। এখনই টপাটপ পড়তে শুরু করবে। রনেল মনে মনে আৎকে উঠে - আমার জন্যে এতোটা ভালোবাসা ছিলো ওর কাছে!
রোদেলা চলে গেছে। কেমন যেন একটা কষ্ট অনুভূত হয় রনেলের বুকের ভিতরে। এই প্রথম কারো জন্যে এতো কষ্ট হচ্ছে ওর। হয়তো এর থেকে দুঃসহ বেদনা বুকে চেপে রোদেলা চলে গেছে। এ ভাবনা আরো অসহায় করে তোলে ওকে। বারবার মনে পড়তে থাকে স্মৃতিগুলো। মনে মনে ভাবে আমি তাঁকে ভুলতে পারছিনা, পারবোও না কোনদিন। সারাক্ষণ সে মনের সাথে যুদ্ধ করে - আমি যদি এতোটাই অস্থির ওর জন্যে তবে কেন বলি ওকে, "ভালোবাসি"! সেতো আমার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করতো না। হয়তো কথা বলার সুযোগ চাইতো! কিন্তু নিজে কিছু না বলাতে সেও বলেনি! মেয়ে তোমার বুক ফেটেছে, তবুও মুখ ফোটে বলোনি। তবে দোষটা কার! এসব ভাবতেই কান্না চলে আসে রনেলের। বন্ধুদের মাঝেও ভালো লাগেনা। পুরনো জীবনেই আছে রনেল। সারাক্ষণ প্রার্থনায় রোদেলা। হয়তো রোদেলাও ছটফট করছে, একথা ভেবেই সে আবার কেঁদে ফেলে। অশ্রুসজল নয়নে রনেল ভাবে আমি তাঁকে ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি, অথচ বলা হয়নি। তাই হলো না, তোমায় বুকে চেপে ধরে ভালোবাসা! এটাই হয়তো আমাদের নিয়তি।
১৪/১১/২০১৬ইং। ঢাকা।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোনালিসা ১৪/১১/২০১৬প্রকাশ তো হয়েই গেল............