সময়ে বদল সম্ভোধনের সুর
চুল ছিঁড়তে পারলে একটু ভালো লাগতো। কিন্তু অফিসের সবার সামনে কিভাবে সম্ভব! বাথরুমে গিয়ে কাজটা করে আসব নাকি! কোনভাবেই আজকে নিজেকে এভাবে মেনে নিতে পারছি না। আমি কৌশিক কিভাবে শেভ না করে আজ অফিসে এলাম? আর আজকেই তাকে অফিসে আসতে হলো! এক মাস পর! নিজের মুখখানি কিভাবে লুকাই ভেবে পাচ্ছি না। আমি নিশ্চিত আমার খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলি বেখাপ্পা রকমের চোঁখা হয়ে গেছে, কিছুটা আনন্দে, কিছুটা লজ্জায়। লাল মূলোর মতো ভ্যাবলা মার্কা চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি তাঁর সামনে সিগনেচারের অপেক্ষায়। তাঁর দিকে তাকানোর ষোলো আনা ইচ্ছে, অথচ তাকিয়ে আছি বসের রুমের টিভি স্ক্রীনে।
-ঠিক আছে কৌশিক, এবার তুমি আসতে পারো।
উফফ! বসের কথায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমি আর দাঁঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না।
এইবার সে জিজ্ঞেস করলো-
-কী খবর! শরীর খারাপ?
-জ্বি ম্যাডাম, আমার খবর ভালো। আপনি কেমন আছেন?
এটুকুতেই আমার কথা বলার ক্ষমতা শেষ! সব ভুলে গেছি।
-তোমার শরীর এমন ভেঙ্গে যাচ্ছে কেন?
-এইতো ম্যাডাম ভীষণ কাজের চাপ, তাই......
-যত্ন নাও।
বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো-আপনার জন্যে আমার এই অবস্থা! শরীরের প্যাঁচাল ছাড়েন! জাহান্নামে যাক আমার শরীর! আপনি আবার কবে আসবেন? আপনাকে নিয়মিত চোখের সামনে দেখতে পেলেই শরীর ঠিক হয়ে যাবে।
আমার হবু স্ত্রী শিপার ফোন-
-তুমি কখন বেরোবে অফিস থেকে?
-পাঁচটায়।
-ঠিক আছে, আমি থাকবো আগের জায়গায়।
এখন ওকে স্রেফ অসহ্য লাগছে। দেখতেও অনেক সুন্দরী। ভালোও বাসি সম্ভবত। সম্ভবত বলছি এই কারণে, তানি ম্যাডামকে দেখলে আমার ভিতরে যে বোধ জেগে উঠে, শিপার জন্যে কোনদিনই আমি সেরকম অনুভব করিনি। সে এক অন্যরকম ভালোবাসা জেগে উঠে আমার ভিতরে বাহিরে, শুধুই তানি ম্যাডামের জন্যে! এই যে সামনে ঈদ, শিপার জন্যে এখনও কিছুই কেনা হয়নি, অথচ তানির জন্যে কতকিছু কেনার কথা ভেবে ফেলেছি। হয়তো কিনেও ফেলবো, কিন্তু দেবো কিভাবে? আমাদের কোম্পনীর মোস্ট ভ্যালুয়েড ক্লায়েন্ট তালিকার শীর্ষ নামটি তানির বাবার। বাবার সহযোগিতায় এই বয়সেই স্টার ব্যবসার জগতে। জেনে গেলে তো আমার চাকরিই থাকবে না। আমাকে হ্যালো পার করে শরীরের যত্ন নিতে বলেছে, এই তো আমার রাজ কপাল!
আমি কি অসুস্থ? হলেও হতে পারি। তবে এই অসুখটা সত্যিই বেশ উপভোগ্য। শিপা, অফিস, টিভি, সিনেমা, ক্রিকেট, ফুটবল, বাবা-মা, ভাই-বোন, বাসা, এই চক্রের বাইরেও একটা একান্ত স্বপ্নের জগৎ আমার। ত্রিশ বছরের এক ব্যাচেলর, যে কিনা একটি প্রাইভেট কোম্পানীর সামান্য এক্সিকিউটিভ অফিসার, তাকে নিয়ে ভাবছে যে কিনা এই শহরের হাজার পয়সাওয়ালা তরুণের স্বপ্ন। সাহসই বলতে হয়। কম কিসে!
-হ্যালো, তানি ম্যাডাম আছেন?
-জ্বি বলছি, কে বলছেন প্লিজ।
- সাংবাদিক।
মিথ্যে অজুহাতে কথা চলতে থাকে। দিন যায়, নতুন ভোর আসে। ম্যাডামের মুড বুঝে কথা চলে বাধাহীন খুউব সতর্কে।
নিজের পেশা ভুলে যাবার মতো ঘোরে দিন কাটে, সাংবাদিক পেশার আড়ালে। বাসায় একদিন বেভুলে বলেই বসি মাকে, সাংবাদিক আজকে পোলাউ খাবে উইথ চিকেন! মা জিজ্ঞাসা করেন, সাংবাদিক কে রে? লজ্জা পাই! মাকে নয় ছয় বুঝিয়ে মুখ লুকাই।
আবার শিপার ফোন-
-তুমি এতো ব্যস্ত কেন ইদানীং? এক সপ্তাহ দেখা হয়নি আমাদের। ফোন করলেও হুঁ-হ্যাঁ ছাড়া কিছুই বলো না। মোবাইলেও অনীহা। আগেতো তুমি এমন ছিলে না। আগামী মাসে আমাদের বিয়ে, মনে আছেতো? কোন কেনাকাটাই তো করলে না আমাকে নিয়ে।
-করে ফেলবো শিপা। ডোন্ট ওরি।
এনগেজমেন্ট এর আংটি টা ছুঁড়ে ফেলে মুক্ত হতে ইচ্ছে করে। প্রায়ই ভাবি এমন ভয়ঙ্কর ভাবনা।
আজকে আমার ত্রিশতম জন্মদিন। ঠিক দশদিন পর আমার বিয়ে। আমি এখনও তানি আপুকে খুউব মিস করছি। উনি জানেন না উনার সেই সুপ্রিয় সাংবাদিক আমি ছাড়া আর কেউ নয়। আচ্ছা উনাকে আমার বিয়ের কার্ড দিলে কেমন হয়! এলেতো এলো, না এলে কি আর আসে যায়......
-ম্যাডাম, আমার শুভ বিবাহ। এলে খুউব খুশি হবো।
ওয়েডিং রিসেপশন। গেট দিয়ে পাঁচ ফুট ছয় এক নারী মূর্তি আসছে, দেখতে থাকি। এইতো স্টেজের একেবারে কাছে। আমি চমকে উঠি। ভিতরে জেগে উঠে সেই অন্যরকম ভালোবাসা।
-কী সুন্দর বউ তোমার কৌশিক। সুখী হও ভাই।
বলতে পারি না "আপনার কাছে কিচ্ছু না"। আমার হাতে তাঁর দেয়া উপহার এর ছোট্ট খাম।
উপরে লিখা-
ভাইটির জন্যে অজস্র শুভকামনা!
সুপ্রিয় তানি আপু।
বদলে যায় সময়ের প্রয়োজনে সম্ভোধনের সুর। সেখানে বেজে চলে স্বাভাবিক সম্পর্কের নৈতিক কথামালা।
আমি আর শিপা ভালো আছি, আমাদের সুখের সাজানো গোছানো সংসারে।
সুখবরঃ আমাদের সংসারে নতুন অতিথি আসছে খুব শীঘ্রই।
-ঠিক আছে কৌশিক, এবার তুমি আসতে পারো।
উফফ! বসের কথায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমি আর দাঁঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না।
এইবার সে জিজ্ঞেস করলো-
-কী খবর! শরীর খারাপ?
-জ্বি ম্যাডাম, আমার খবর ভালো। আপনি কেমন আছেন?
এটুকুতেই আমার কথা বলার ক্ষমতা শেষ! সব ভুলে গেছি।
-তোমার শরীর এমন ভেঙ্গে যাচ্ছে কেন?
-এইতো ম্যাডাম ভীষণ কাজের চাপ, তাই......
-যত্ন নাও।
বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো-আপনার জন্যে আমার এই অবস্থা! শরীরের প্যাঁচাল ছাড়েন! জাহান্নামে যাক আমার শরীর! আপনি আবার কবে আসবেন? আপনাকে নিয়মিত চোখের সামনে দেখতে পেলেই শরীর ঠিক হয়ে যাবে।
আমার হবু স্ত্রী শিপার ফোন-
-তুমি কখন বেরোবে অফিস থেকে?
-পাঁচটায়।
-ঠিক আছে, আমি থাকবো আগের জায়গায়।
এখন ওকে স্রেফ অসহ্য লাগছে। দেখতেও অনেক সুন্দরী। ভালোও বাসি সম্ভবত। সম্ভবত বলছি এই কারণে, তানি ম্যাডামকে দেখলে আমার ভিতরে যে বোধ জেগে উঠে, শিপার জন্যে কোনদিনই আমি সেরকম অনুভব করিনি। সে এক অন্যরকম ভালোবাসা জেগে উঠে আমার ভিতরে বাহিরে, শুধুই তানি ম্যাডামের জন্যে! এই যে সামনে ঈদ, শিপার জন্যে এখনও কিছুই কেনা হয়নি, অথচ তানির জন্যে কতকিছু কেনার কথা ভেবে ফেলেছি। হয়তো কিনেও ফেলবো, কিন্তু দেবো কিভাবে? আমাদের কোম্পনীর মোস্ট ভ্যালুয়েড ক্লায়েন্ট তালিকার শীর্ষ নামটি তানির বাবার। বাবার সহযোগিতায় এই বয়সেই স্টার ব্যবসার জগতে। জেনে গেলে তো আমার চাকরিই থাকবে না। আমাকে হ্যালো পার করে শরীরের যত্ন নিতে বলেছে, এই তো আমার রাজ কপাল!
আমি কি অসুস্থ? হলেও হতে পারি। তবে এই অসুখটা সত্যিই বেশ উপভোগ্য। শিপা, অফিস, টিভি, সিনেমা, ক্রিকেট, ফুটবল, বাবা-মা, ভাই-বোন, বাসা, এই চক্রের বাইরেও একটা একান্ত স্বপ্নের জগৎ আমার। ত্রিশ বছরের এক ব্যাচেলর, যে কিনা একটি প্রাইভেট কোম্পানীর সামান্য এক্সিকিউটিভ অফিসার, তাকে নিয়ে ভাবছে যে কিনা এই শহরের হাজার পয়সাওয়ালা তরুণের স্বপ্ন। সাহসই বলতে হয়। কম কিসে!
-হ্যালো, তানি ম্যাডাম আছেন?
-জ্বি বলছি, কে বলছেন প্লিজ।
- সাংবাদিক।
মিথ্যে অজুহাতে কথা চলতে থাকে। দিন যায়, নতুন ভোর আসে। ম্যাডামের মুড বুঝে কথা চলে বাধাহীন খুউব সতর্কে।
নিজের পেশা ভুলে যাবার মতো ঘোরে দিন কাটে, সাংবাদিক পেশার আড়ালে। বাসায় একদিন বেভুলে বলেই বসি মাকে, সাংবাদিক আজকে পোলাউ খাবে উইথ চিকেন! মা জিজ্ঞাসা করেন, সাংবাদিক কে রে? লজ্জা পাই! মাকে নয় ছয় বুঝিয়ে মুখ লুকাই।
আবার শিপার ফোন-
-তুমি এতো ব্যস্ত কেন ইদানীং? এক সপ্তাহ দেখা হয়নি আমাদের। ফোন করলেও হুঁ-হ্যাঁ ছাড়া কিছুই বলো না। মোবাইলেও অনীহা। আগেতো তুমি এমন ছিলে না। আগামী মাসে আমাদের বিয়ে, মনে আছেতো? কোন কেনাকাটাই তো করলে না আমাকে নিয়ে।
-করে ফেলবো শিপা। ডোন্ট ওরি।
এনগেজমেন্ট এর আংটি টা ছুঁড়ে ফেলে মুক্ত হতে ইচ্ছে করে। প্রায়ই ভাবি এমন ভয়ঙ্কর ভাবনা।
আজকে আমার ত্রিশতম জন্মদিন। ঠিক দশদিন পর আমার বিয়ে। আমি এখনও তানি আপুকে খুউব মিস করছি। উনি জানেন না উনার সেই সুপ্রিয় সাংবাদিক আমি ছাড়া আর কেউ নয়। আচ্ছা উনাকে আমার বিয়ের কার্ড দিলে কেমন হয়! এলেতো এলো, না এলে কি আর আসে যায়......
-ম্যাডাম, আমার শুভ বিবাহ। এলে খুউব খুশি হবো।
ওয়েডিং রিসেপশন। গেট দিয়ে পাঁচ ফুট ছয় এক নারী মূর্তি আসছে, দেখতে থাকি। এইতো স্টেজের একেবারে কাছে। আমি চমকে উঠি। ভিতরে জেগে উঠে সেই অন্যরকম ভালোবাসা।
-কী সুন্দর বউ তোমার কৌশিক। সুখী হও ভাই।
বলতে পারি না "আপনার কাছে কিচ্ছু না"। আমার হাতে তাঁর দেয়া উপহার এর ছোট্ট খাম।
উপরে লিখা-
ভাইটির জন্যে অজস্র শুভকামনা!
সুপ্রিয় তানি আপু।
বদলে যায় সময়ের প্রয়োজনে সম্ভোধনের সুর। সেখানে বেজে চলে স্বাভাবিক সম্পর্কের নৈতিক কথামালা।
আমি আর শিপা ভালো আছি, আমাদের সুখের সাজানো গোছানো সংসারে।
সুখবরঃ আমাদের সংসারে নতুন অতিথি আসছে খুব শীঘ্রই।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইদুর রহমান ০৮/০৩/২০১৬বরাবরের মতই সুন্দর।
-
হাসান কাবীর ০৪/০৩/২০১৬সুন্দর।বর্ণনার ভঙ্গিটা ভালো হয়েছে।
-
অ ২৯/০৭/২০১৫দারুন হয়েছে ......।
-
স্বপ্নীল মিহান ১৪/০৭/২০১৫ভালো লিখেছেন।
-
মোবারক হোসেন ১১/০৭/২০১৫খুব ভাল।
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ১০/০৭/২০১৫জীবনের কিছু চাওয়া ...
হয়না কখনও পাওয়া ...
না পেলেও চলে না মন্দ
কাটে না সুর আর ছন্দ ।। -
অগ্নিপক্ষ ০৯/০৭/২০১৫তাও রক্ষে যে ভাইপো বলেনি!