একটি অমীমাংসিত কিশোর প্রেম
ছোট বেলায় নাকের নিচে রোম গজানোর বয়সে, যখন কাজী আনোয়ার হোসেনের "মাসুদ রানা" অথবা সত্যাজিত রায়ের "ফেলুদা" পড়ে, চোখ বড় করে জীবনের প্রান্তে প্রান্তে রহস্য খুঁজেছি, ঠিক তখন যৌবন জানান দিয়ে যাচ্ছিলো দেহে। দেহের দুর্বোধ্য ভাষা জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছিলো তুমি বড় হচ্ছো আর তুমি বেড়েও উঠছো।
আমি বড় হলাম, বয়স বাড়লো। একে একে জানলাম যৌবন, প্রেম, অতঃপর একটি অমীমাংসিত ভালোবাসা। ঠিক সেই বয়সে আল্পনা নামের একটি মেয়ের সাথে আমার খানিকটা প্রেম হয়। ভীষণ উচ্ছ্বল ছিলো সে আর স্পষ্ট করে কথা বলতো। ঢাকায় পড়ার পুলক চেপে বহুবার বলেছি যাবো না ঢাকায়, পারবো না ছেড়ে থাকতে। প্রথম ঢাকায় আসার পর আহ, কী বিরহ কষ্ট!
মেয়েটাকে বোধ হয় বিয়েও করতাম আমি। তো, সেই আল্পনার হুট করে একদিন বিয়ে হয়ে গেলো! বর ব্যবসা করে, বেশ খানদানী পরিবার। বিয়ের দিন তো আমি ছিলাম না, শুধু শুনেছি আল্পনা নাকি একটুও কাঁদেনি। একেবারে হাসতে হাসতে আমার আঁকা প্রেমের আল্পনার উপর দিয়ে শ্বশুর বাড়ী চলে গেছে। কতো সহজে একটা বিরাট প্রেমের সুরাহা হয়ে গেলো!
আমি ভেবেছিলাম, হয়তো দুঃখে দুঃখে মরেই যাবো। কিন্তু কিছুই হলো না। একটু কাঁদা ভীষণ দরকার ছিলো । চেষ্টাও করলাম অনেক। অনেক রাতের স্মৃতি, বৈশাখী মেলার সেদিন! নাহ, তাও হলো না। কেবল গলার কাছে কান্নার মতো কি একটা এসে আটকে রইলো। এ আমার অক্ষমতা! ছোট বেলায় কত সহজে কাঁদতে পারতাম। একবার খুব কষ্ট করে ধরা শালিক পাখি উড়ে গিয়েছিলো বলে সে কী কান্না! "দুই পয়সার আলতা" ছবি দেখে কেঁদেছিলাম খুব একদিন। এমন বহুবার। কিন্তু সেদিন কেন পারলাম না! আসলে চোখের জল বড় বেঈমান জিনিস, সময় মতো আসে না। কেন এমন হয়! কেন আমি সেদিন কাঁদতে পারলাম না! আল্পনা না হয় আমাকে ভালোবাসতো না, কিন্তু আমিতো ওকে ভালোবাসতাম। তবে আমি কেন কাঁদিনি? আসলে ইট পাথর, সোডিয়াম আলোর নগরে এসে আমিও বদলে গেছি। যদি তাই না হবে, তবে মনের গোপন কষ্ট কেমন করে চেপে যেতে পারলাম আমি! কেন দুঃখ বুঝলো না আল্পনা! যাকে আমি রাত জেগে জেগে ভালোবেসেছি। একবার দেখবো বলে উঠোনেই জেগে বসে কেটে গেছে রাত্রি। রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষিত অপেক্ষা! সেই আল্পনা চলে যাবার আগে একবারও জানালো না।
আল্পনার সাথে ওর বিয়ের পর দেখা হয়েছিলো একদিন। ও জানতে চাইলোঃ কেমন আছো বন্ধু? ভালো আছো তো!
ভীষণ কষ্ট হয়েছিলো সেদিন। আমি কি ওর স্রেফ বন্ধু ছিলাম! আর কিছু না! এমন তো কথা ছিলো না, তবে এমন কেন হলো? কথা বলো পাথরের নগরী! উত্তর দাও আকাশের তারা।
আল্পনা এখন আর নেই। রেখে গেছে ওর সন্তান, ওর অস্তিত্ব, ওর মেয়ে। আল্পনা মরে গেলো ডেলিভারী এক্সিডেন্টে। কত সহজে গল্পের আল্পনা বিদায় নিলো। ওর মেয়ের নাম রেখে গেছে পুঁথি। এখনো আল্পনার কিশোর বেলার একটা ছবি আছে আমার কাছে। আমার অবাক লাগে এই কি আমার আল্পনা! যাকে একদিন আল্পস বলেছিলাম বলে সে কী কান্না! পরে মান ভাঙ্গাতে গিয়ে বলেছিলাম 'আমাদের যদি মেয়ে হয়, নাম রাখবো পুঁথি। আর যদি ছেলে হয় তবে..................আল্পনা আমার মুখে হাত চাপা দিয়ে বলেছিলো 'কাব্য'। তারপর হেসেই খুন!
আল্পনা তুই কি জানিস আজও তোকে আমি ভালোবাসি। যেটুকু সময় তুই আমার ছিলি, আমি তোকে চাইলেই ছুঁতে পারতাম। আমরা চাইলেই এক পুকুরে ঝাঁপ, কিংবা সাঁতার। আমি তোকে সত্যিই খুব ভালোবাসতাম রে। তুই কি মরার আগে বুঝতে পেরেছিলি আমার প্রতি তোর অবিচার হয়েছে! হয়তো বুঝেছিলি তাই মেয়ের নাম দিয়ে গেলি পুঁথি।
ইদানীং বাড়ীতে বিয়ের জন্যে চাপ দিচ্ছে। আমার একটা শেষ অনুরোধ রাখবি তুই! তোর সেই কিশোরীর রূপ ধরে আমার সামনে আয় না। তুই একবার শুধু আয়, শুধু তোকে একবার দেখবো।
তোর ছবিটা ঘোলাটে হয়ে গেছে, ঝকঝকে আলোয় তোকে দেখতে চাই। একে একে স্মৃতিগুলিও যে ঝাপসা!
পুনশ্চঃ আমার বউ আমাকে একটি ছেলে উপহার দিয়েছে, যার নাম রেখেছি "কাব্য"!
আমি বড় হলাম, বয়স বাড়লো। একে একে জানলাম যৌবন, প্রেম, অতঃপর একটি অমীমাংসিত ভালোবাসা। ঠিক সেই বয়সে আল্পনা নামের একটি মেয়ের সাথে আমার খানিকটা প্রেম হয়। ভীষণ উচ্ছ্বল ছিলো সে আর স্পষ্ট করে কথা বলতো। ঢাকায় পড়ার পুলক চেপে বহুবার বলেছি যাবো না ঢাকায়, পারবো না ছেড়ে থাকতে। প্রথম ঢাকায় আসার পর আহ, কী বিরহ কষ্ট!
মেয়েটাকে বোধ হয় বিয়েও করতাম আমি। তো, সেই আল্পনার হুট করে একদিন বিয়ে হয়ে গেলো! বর ব্যবসা করে, বেশ খানদানী পরিবার। বিয়ের দিন তো আমি ছিলাম না, শুধু শুনেছি আল্পনা নাকি একটুও কাঁদেনি। একেবারে হাসতে হাসতে আমার আঁকা প্রেমের আল্পনার উপর দিয়ে শ্বশুর বাড়ী চলে গেছে। কতো সহজে একটা বিরাট প্রেমের সুরাহা হয়ে গেলো!
আমি ভেবেছিলাম, হয়তো দুঃখে দুঃখে মরেই যাবো। কিন্তু কিছুই হলো না। একটু কাঁদা ভীষণ দরকার ছিলো । চেষ্টাও করলাম অনেক। অনেক রাতের স্মৃতি, বৈশাখী মেলার সেদিন! নাহ, তাও হলো না। কেবল গলার কাছে কান্নার মতো কি একটা এসে আটকে রইলো। এ আমার অক্ষমতা! ছোট বেলায় কত সহজে কাঁদতে পারতাম। একবার খুব কষ্ট করে ধরা শালিক পাখি উড়ে গিয়েছিলো বলে সে কী কান্না! "দুই পয়সার আলতা" ছবি দেখে কেঁদেছিলাম খুব একদিন। এমন বহুবার। কিন্তু সেদিন কেন পারলাম না! আসলে চোখের জল বড় বেঈমান জিনিস, সময় মতো আসে না। কেন এমন হয়! কেন আমি সেদিন কাঁদতে পারলাম না! আল্পনা না হয় আমাকে ভালোবাসতো না, কিন্তু আমিতো ওকে ভালোবাসতাম। তবে আমি কেন কাঁদিনি? আসলে ইট পাথর, সোডিয়াম আলোর নগরে এসে আমিও বদলে গেছি। যদি তাই না হবে, তবে মনের গোপন কষ্ট কেমন করে চেপে যেতে পারলাম আমি! কেন দুঃখ বুঝলো না আল্পনা! যাকে আমি রাত জেগে জেগে ভালোবেসেছি। একবার দেখবো বলে উঠোনেই জেগে বসে কেটে গেছে রাত্রি। রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষিত অপেক্ষা! সেই আল্পনা চলে যাবার আগে একবারও জানালো না।
আল্পনার সাথে ওর বিয়ের পর দেখা হয়েছিলো একদিন। ও জানতে চাইলোঃ কেমন আছো বন্ধু? ভালো আছো তো!
ভীষণ কষ্ট হয়েছিলো সেদিন। আমি কি ওর স্রেফ বন্ধু ছিলাম! আর কিছু না! এমন তো কথা ছিলো না, তবে এমন কেন হলো? কথা বলো পাথরের নগরী! উত্তর দাও আকাশের তারা।
আল্পনা এখন আর নেই। রেখে গেছে ওর সন্তান, ওর অস্তিত্ব, ওর মেয়ে। আল্পনা মরে গেলো ডেলিভারী এক্সিডেন্টে। কত সহজে গল্পের আল্পনা বিদায় নিলো। ওর মেয়ের নাম রেখে গেছে পুঁথি। এখনো আল্পনার কিশোর বেলার একটা ছবি আছে আমার কাছে। আমার অবাক লাগে এই কি আমার আল্পনা! যাকে একদিন আল্পস বলেছিলাম বলে সে কী কান্না! পরে মান ভাঙ্গাতে গিয়ে বলেছিলাম 'আমাদের যদি মেয়ে হয়, নাম রাখবো পুঁথি। আর যদি ছেলে হয় তবে..................আল্পনা আমার মুখে হাত চাপা দিয়ে বলেছিলো 'কাব্য'। তারপর হেসেই খুন!
আল্পনা তুই কি জানিস আজও তোকে আমি ভালোবাসি। যেটুকু সময় তুই আমার ছিলি, আমি তোকে চাইলেই ছুঁতে পারতাম। আমরা চাইলেই এক পুকুরে ঝাঁপ, কিংবা সাঁতার। আমি তোকে সত্যিই খুব ভালোবাসতাম রে। তুই কি মরার আগে বুঝতে পেরেছিলি আমার প্রতি তোর অবিচার হয়েছে! হয়তো বুঝেছিলি তাই মেয়ের নাম দিয়ে গেলি পুঁথি।
ইদানীং বাড়ীতে বিয়ের জন্যে চাপ দিচ্ছে। আমার একটা শেষ অনুরোধ রাখবি তুই! তোর সেই কিশোরীর রূপ ধরে আমার সামনে আয় না। তুই একবার শুধু আয়, শুধু তোকে একবার দেখবো।
তোর ছবিটা ঘোলাটে হয়ে গেছে, ঝকঝকে আলোয় তোকে দেখতে চাই। একে একে স্মৃতিগুলিও যে ঝাপসা!
পুনশ্চঃ আমার বউ আমাকে একটি ছেলে উপহার দিয়েছে, যার নাম রেখেছি "কাব্য"!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অ ২৯/০৭/২০১৫ভালো লাগল গল্পটি ।
-
অভিষেক মিত্র ২০/০৭/২০১৫Khub sundor laglo.
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ০৮/০৭/২০১৫গল্পটি খুব ভাল হয়েছে, আর " চোখের জল বড় বেইমান, সময় মতো আসে না " কথাটা কি গুরুত্বপূর্ণ, বলে বোঝানও যায় না।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা। -
সাইদুর রহমান ০৬/০৭/২০১৫ভালো হয়েছে গল্পটি।
-
কিশোর কারুণিক ০৫/০৭/২০১৫কাব্য
-
দীপঙ্কর বেরা ০৫/০৭/২০১৫দারুণ
-
জহরলাল মজুমদার ০৪/০৭/২০১৫আমি কেঁদে ফেলেছি পড়তে পড়তে।
-
T s J ০৪/০৭/২০১৫Sed story