www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নারী নিয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ভাবনা প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

মল্লিকাদির নিস্তব্ধ পল্লী থেকে গণভবন পর্যন্ত আজকে সর্বত্রই নারীর পদচারণায় মুখরিত। কারখানা, ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী প্রতিরক্ষা বাহিনী, বিমান চালনা, দেশের সর্বোচ্চ আদালত, কোথায় নেই আজকে নারীর সাফল্য গাঁথা। ব্যাকরণ থেকে আজকে অনেক স্ত্রীবাচক শব্দ বিলুপ্তপ্রায়। কেননা নারী কেবল এখন শুধুই একটি জনগোষ্ঠী নয়, বরং অনেকাংশে সুপ্রতিষ্ঠিত সামাজিক অংশ। ব্যাকরণে দিনকে দিন উভলিঙ্গবাচক শব্দের আধিক্যতা লক্ষনীয় হারে বেড়ে চলেছে। ব্যবসায়ী, মন্ত্রী, বিচারপতি, উকিল, ডাক্তার, পাইলট, সভাপতি, নেতা ইত্যাদি। এসব শব্দের স্ত্রীবাচক শব্দ এখন হাসির খোরাক! আর একজন সচেতন পুরুষ নিজেই লজ্জিত হবেন এসব শব্দের স্ত্রীবাচক শব্দের ব্যাবহার করলে! অতএব নতুন শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এসে নারী সকল সংকীর্ণতার উর্দ্ধে এসে নিজেকে আর অধিকার বঞ্চিত না ভাবুক সেটাই আমাদের কাম্য।

একটি সংসারে নারী একাধারে মা, বোন, বউ ও কন্যা। আজকের ছোট্ট কন্যা শিশুটি আগামীতে পর্যায়ক্রমে বউ, মা, শাশুড়ীতে পরিনত হয়। অথচ যে মেয়ে বউ হয়ে নারী অধিকার সচেতন, সেই পরে শাশুড়ী হয়ে আচরণ বদলে বিপরীত অবস্থানে গিয়ে, বাংলার চিরপরিচিত বউ শাশুড়ী দ্বন্দ্ব জন্ম দেয়! মেয়ের মা হলেই যৌতুক বিরোধী আন্দোলনের শরীক আর ছেলের মা চুপিচুপি মনে মনে যৌতুক মনোবাসনা পোষণ করেন। অথচ দুজনই কিনা সচেতন নারী সমাজের অংশ। তাহলে নারী কি আসলেই অধিকার নিয়ে একাত্ম! না দ্বিধাগ্রস্ত !

আমার বাংলার নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলি সারা বিশ্বের যত প্রতিযশা নারী আছেন (মাদাম কুরি, মাদার তেরেসা, মার্গারেট থ্যাচার, গোল্ডমেয়ার কিংবা ভারতের ইন্দিরা গান্ধী, আমাদের বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল) তাদেরকে কেউ অধিকার কিংবা ক্ষমতা দেয়নি বরং নিজেরাই তা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কেবল বংশানুক্রমেই প্রাপ্য হননি। আমার দেশে যেখানে অর্ধাংশের বেশী নারী, সেখানে নিজেদের পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর উন্নতিক্রম পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।

নারী অধিকারের নামে আন্দোলন উচ্ছৃংখলতা না হোক, না হোক কারও করুণা বরং নারী নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি বিবেক বিবেচনাবোধ, কর্মের যোগ্যতা বলেই এগিয়ে চলুক। এর বিকল্প নেই বলেই বোধ করি।

প্রেক্ষিত বাংলাদেশ আর নারী অধিকার কতটা কার্যকর! সেটা অবশ্যই ভাবনার বিষয়। যেখানে হামেশাই এসিড নিক্ষেপ আর ধর্ষিত হচ্ছে চার বছরের শিশু! সিমি, মিমি, তৃষা, কেন নারী অধিকার বঞ্চিত! এরকম আমাদের কারোরই কাম্য নয়। আদিকাল থেকেই নারী এই ধরনের অবস্থার সম্মুখীন কালে কালে। লজ্জার কারণে অনেকেই অপ্রকাশিত থেকে যান। মিডিয়া বা রাজপথে নারী অধিকারে স্লোগান না দিয়ে, আসুন নিজের ঘরে আর মনে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করি, (পুরুষ তথা আমাকেই বলছি)। এই কাজ নারীর আর এই কাজ পুরুষের তা না ভেবে আসুন একসাথে সব করে নিই ভাগাভাগি। (বাচ্চা ধারণ না করতে পারি লালন করতে বাধা নেই, হে পুরুষ! আরও আপনার বিবেচনাধীন)

অধিক নারী সচেতন নারীর সংখ্যাও কম নেই দেশে, যারা অশালীন পোষাক, আর লাগামহীনে আচরণে আসলে উল্টো পুরুষ নির্যাতন করেন প্রতি নিয়ত। মনে রাখতে হবে বেহায়াপনা আর বিরোধপূর্ণ আচরণ কখনই শুভ ফল বয়ে আনবে না। বরং উদ্ভট ঘটনা আর শিষ্টাচারহীন প্রজন্মের জন্ম দিবে। বিনয় নারীর নয় সকল মানুষের ভূষণ হোক।


প্রাকৃতিকভাবে যেটুকু বৈষম্যের শিকার নারী, তা যদি পুরুষ সহযোগিতার মনোবাসনা নিয়ে এগিয়ে আসে সব ল্যাঠা গেলো চুকে। গঠনমূলক হোক সমালোচনা কিংবা কাজ।

বিভেদ নয় বরং যোগ্যতা সামর্থ দিয়ে এগিয়ে আসুন নারী। নারী অধিকার কিংবা ক্ষমতায়ন নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে না। জগতের নিয়মের রেশ ধরে নারী আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবেন। সবাইকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা। শুভকামনা সকল নারীর জন্যে।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ১২২৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০৩/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast