জামদানি শাড়ীতে বাঙালি বধূ
এখন চারিদিকেই বেজে চলছে বিয়ের সানাই। চলছে উৎসবের আমেজ। বিয়ে বাড়িতে নানা ধরনের ব্যস্ততা থেকে থাকে। এর মধ্যে অনেকই কনের সাজগোজ কিংবা পরিপাটি করা নিয়ে সমস্যায় পড়েন। কী পরব, কী সাজব-কনে এ নিয়ে যেন ঘুম হারাম হবার উপক্রম। আর বিয়ে মানেইতো ৪ থেকে ৫ টি প্রোগ্রামের আয়োজন এনগেজমেন্ট থেকে শুরু করে বৌভাত তারপর ফিরতি প্রোগ্রাম সহ আরো কত কি এবং এই সব ধরনের প্রগ্রামের জন্য প্রস্তুতি। আজকাল আবার সব প্রগ্রামেই থিম বেজড কাপড় রাখা হয়।এই সব প্রগ্রামের যেকোনো একটাতে বিশেষ করে বিয়ের থিম এ জামদানী রাখা হয় তাহলে কেমন হবে বলুন ত? আর জামদানিতে বিয়ে ভাবতেই কেমন জন একটা রাজকীয় ভাব আসে তাই না?
হুম তাই কারণ একটা সময় ছিল যখন শুদু রানীদের জন্য বানানো হতো মসলিন কাপড়ের পোশাক। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে চলে এসেছে জামদানি যা এখন প্রায় হাতের নাগালেই। নিজের মধ্যে সৌখিনতা ফুটিয়ে তুলতে একটি জামদানি যথেষ্ট হোক সেটা শাড়ী বা লেহেঙ্গা অথবা রানী এলিজাবেথের মতো গাউন।
বিয়ে প্রতিটি মেয়ের জীবনেই অনেক বিশেষ একটি দিন। তাই এই দিনকে গিরে চলে নানা পরিকল্পনা-জল্পনা। তবে এখন দেখা যায় ইন্ডিয়ান শাড়ী বা লেহেঙ্গার দিকে বেশিরভাগ কনেদের নজর খুব বেশি। তাদের বাজেট ও থাকে অনেক বেশি ইন্ডিয়ান শাড়ী বা লেহেঙ্গা কেনার জন্য। এর জন্য আসলে দায়ী কে? হুম দায়ী আসলে আমরাই যারা আমাদের এই ঐতিহ্যময় জামদানি শাড়ীর ঠিক মতো প্রচার করতে পারিনি বা পারছিনা যা একসময় রাজকীয় পোশাক হিসেবেই জানতো মানুষ।
আপনি জানেন কি একটি জামদানি শাড়ীর মূল্য দেড় থেকে ২ লক্ষ টাকাও হয়ে থাকে যা এখন ইট-পাথরের শহরে অনেকেই ইন্ডিয়ান শাড়ী বা লেহেঙ্গাতে খরচ করে। আসলে এর চেয়েও বেশি থাকে অনেকের বাজেট। তবে কখনো ভেবে দেখেছেন এর চেয়ে অর্ধেক মূল্যেরও একটি শাড়ী পড়ার পর একজন রমণীকে কেমন লাগতে পারে? এর জন্য জামদানি পড়া কিছু বৌয়ের ছবি আমি অ্যাড করেছি অবশ্যই তা দেখে নিবেন!
জামদানি শাড়ী অনেকটাই আরামদায়ক এবং যা আর দশটা গর্জিয়াস শাড়ী বা লেগেঙ্গার মতো ক্যারি করতেও কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়না । আমিতো অলরেডি সিলেক্ট করে ফেলেছি জামদানির লেহেঙ্গা তৈরিতে কোন ডিজাইন এবং কত কাউন্টের সুতো দিবো সেই কাজ ও চলছে আমার তাঁতি ভাইয়ের তাতে।
বিয়ে আমাদের জীবনের অতি মূল্যবান একটা অংশ।আর এই দিনটিকে স্মরণ করে রাখা বা নিজের মধ্যে একটা রাজকীয় ভাব আনার জন্য মাথায় রাখতে পারেন একটি এক্সক্লুসিভ জামদানির সাথে একটি এক্সক্লুসিভ দুপাট্টা। এটাতে যেমন বিয়ের রাজকীয়তা ফুটে উঠবে,তেমনি আপনার রুচির প্রচার হবে। বিয়ের প্রোগ্রামে বর পক্ষের এমন অনেক আত্নীয় স্বজন উপস্তিত হোন যারা কনেকে ঐদিনই প্রথম দেখেন এবং তার ব্যাপারে একটা প্রাথমিক ধারণা নিয়ে যান। একটি এক্সক্লুসিভ জামদানীতে একদিকে বিয়ের কন্যা যেমন তৃপ্তি পান চলাফেরায় তেমনি বিয়ে বাড়ির মেহমানরাও মেয়েটির সৌখিনতার তারিফ করতে থাকেন মনে মনে।
বিয়েতে কি ধরনের জামদানি পড়া যেতে পারে!
বিয়ে মানেই একটা জমকালো পরিবেশ সাথে এক্সক্লুসিভ মেকাপ তাই তাই আপনার শাড়ী বা লেহেঙ্গাটিও হতে পারে একটি এক্সক্লুসিভ জামদানি ওয়েবের। এমন হতে পারে আপনার জামদানি শাড়ীটির সাথে মিল রেখে আপনার জীবনসঙ্গীর শেরোয়ানিতেও রাখতে পারেন জামদানির কাজ যেটা এখন কাপল ড্রেস নাম বিখ্যাত।
কি কালারের জামদানী রাখতে পারেন আপনার বিয়ের দিনটিতে!
একটা সময় ছিল যখন বিয়ে মানেই ছিল লাল বেনারসি বা লাল রঙের কোনো শাড়ী। কিন্তু এখন এটা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন থাকে বা কনফিউস্ড থাকে যে এই স্পেসিয়াল দিনটিতে কি কালার বেছে নিবে নিজেকে বিয়ের রঙে রাঙাতে। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি বিয়ের শাড়িটি এমন হওয়া উচিত যেটাতে জমকালো লাইটের আলো পড়লে শাড়ির রংগের রিফ্লেকশন মুখে পড়ে।কারন বিয়েতে আমরা সাধারণত গর্জিয়াস মেকওভার করে থাকি।সেজন্য শাড়ির কালারটা খুব ইম্পর্টেন্ট।
বিয়ের এর জন্য বেবি পিঙ্ক,লাল-অরেঞ্জের কম্বিনেশন, অফ হোয়াইট, মেজেন্ডা, গোল্ডেন কালারের জামদানী হতে পারে বেস্ট চয়েস। বিয়ের জন্য শাড়িটি নিতে পারেন আপনার বাজেটের মধ্যেই। চাইলে কাস্টমাইজ ও করে নিতে পারেন সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে কমপক্ষে এক থেকে দেড় মাস টাইম হাতে রাখবেন তারপর অর্ডার দিবেন। কারণ আমি আমার আগের পোস্টগুলোতে বলেছি একটা শাড়ী তৈরিতে কেমন টাইম বা বা কেন এতো টাইম লাগে! ৮,০০০ টাকা থেকে শুরু করে এক লক্ষ,শাড়ির বাজেট যাইহোক না কেনো সৌন্দর্য্যের কমতি হবেনা উল্লেখ কালারের একটি জামদানি পড়লে।
বিয়ের জামদানির সাথে গহনা!
বিয়ের শাড়ীর সাথে বিয়ের গহনাটিও কিন্তু মূল আকর্ষণের বস্তু। একটা বেবি পিঙ্ক,লাল-অরেঞ্জের কম্বিনেশন, অফ হোয়াইট, মেজেন্ডা, গোল্ডেন কালারের জামদানীর সাথে সোনার তৈরী সিম্পল ডিজাইনের গহনা যেমনটা ইমরোজ তৃষা আপু পড়েছিল ওনার বিয়েতে আর খোপায় বেলি/ গাজরা/ গোলাপ ফুলে আপনি হয়ে যেতে পারেন অনন্যা। আপনার দেখা-দেখি একেতো সবাই দেশি ঐতিহ্যের গুরুত্ব বুঝবে অন্যদিকে নিজেকে দিতে পারবেন একটি এলিগেন্ট লুক আর। এই উপলক্ষে কনের পরিবারের বাকি সদস্যারা পরতে পারেন হাল্কা রংগের জামদানী শাড়ি / পাঞ্জাবি। তাহলেই বাঙালিয়ানা একটা ভাব পাবেন অনায়াসে।
সবশেষে এটাই বলবো আমার এ পোস্টটি পরে যদি একজন মানুষও সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি এবার বিয়েতে জামদানি শাড়ী পড়বেন তবেই আমার লিখাটি সার্থক!
দেশকে ভালোবাসুন, দেশি পণ্য ব্যবহার করুন আর সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন আমাদের ঐতিহ্যকে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
অওনার অফ
ঐতিহ্যবাহী অরিজিনাল ঢাকাই জামদানি - Original Handloom Dhakai jamdani
Jute Root BD - জুট রুট বিডি
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২৮/০২/২০২২সুন্দর
-
পলাশ ০৮/১১/২০২১জামদানি কে অন্য ভাবে চিনলাম আপনার দৃষ্টিকোণ দিয়ে।
-
রেদওয়ান আহমেদ বর্ণ ১২/০৭/২০২১সুন্দর
-
এম এম হোসেন ২৮/০৪/২০২১চমৎকার ল
-
ধূসর প্রাচীর (তাহসিন নাবিল) ২৪/১১/২০২০অসামান্য উপস্থাপন!
অত্যন্ত মুগ্ধ হলাম। -
আব্দুর রহমান আনসারী ০৬/০৮/২০২০প্রীত হলাম
-
সেলিম রেজা সাগর ০৯/০৫/২০২০দারুণ
-
এম জহির ১৪/০৪/২০২০Very much relevant and appreciative outline for us.
Any way, thanks a lot for nice a blog. -
সেলিম রেজা সাগর ০৫/০৪/২০২০দারুণ
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ০৪/০৪/২০২০জামদানী শাড়ীর ব্যপক ব্যবহার কামনা করি।
-
এম এম হোসেন ২৭/০৩/২০২০চমৎকার
-
সাইকান ১৮/০২/২০২০ভালো লিখছো আপু😍
-
দীপঙ্কর বেরা ০৭/০২/২০২০দারুণ
-
সেলিম রেজা সাগর ০৭/০২/২০২০দারুণ। ছবি পোস্ট করার নিয়ম জানাবেন ?
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২১/১২/২০১৯ভালো লিখেছেন।
একটা কথা আপু: এখানে ছবি পোস্ট করবো কীভাবে?
নিয়মটা বলা যাবে? -
ফয়জুল মহী ২১/১২/২০১৯অনুপম সৃজন ।