এসি কেনার আগে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন
উফ! এই গরমে বাসায় এসে মনে হলো ফ্রীজে যেয়ে বসে থাকি। গ্রীষ্মের হাড়ভাঙ্গা গরমে ভর দুপুরে বাহিরে যাওয়ার কথা মনে হলেই ভয় লাগে আমার।আর সেই সাথে অনেকদিন ধরেই ঘরের এসিটি ঠিকমতো কাজ করছেনা, কারণ এর বয়স প্রায় ৮ এর কোঠায় এসে ঠেকেছে। তাই চিন্তা করছিলাম নতুন এসি কেনার কথা। তাই বলে কি হুট্ করেই কিনে ফেলবো? না! এরকম মানুষ আমি নই বাবা!
বাজারে বিভিন্ন ধরণের অত্যাধুনিক ফিচার সম্পন্ন এসি পাওয়া যায় এবং সবাই বলে যে তাদের এসিটাই সেরা। সেক্ষেত্রে কতটুকু দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগতে হয় সেটা আমরা কাস্টমাররা খুব ভালো ভাবেই জানি। তাই কিছু কেনার আগে সেই পণ্যটির খুঁটিনাটি না জানা পর্যন্ত আমি শান্তি পাইনা। এই অভ্যাসটি একদিক থেকে আমাকে বেস্ট পণ্য পেতে সাহায্য করে অন্যদিক থেকে সেই পণ্যটির বাজার সম্পর্কেও ভালো আইডিয়া পেতে হেল্প করে।
তাই আজ সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আপনাদের এসি কেনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিবো যা আপনাদেরও কাজে লাগতে পারে!
ক্যাপাসিটি: এয়ার কন্ডিশনারের ক্যাপাসিটি বাছাই করতে হয় ঘরের মাপের ওপর। যে ঘরে এসিটি লাগানো হবে তার মেঝে বা ছাদের ক্ষেত্রফলের ওপর নির্ভর করে তার ক্যাপাসিটি। যদি আপনার ঘরের মাপ ১৩০ বর্গফুট হয় তবে ১ টন এসি লাগালেই কাজ চলে যাবে।
১৩০ থেকে ১৭০ বর্গফুট হলে লাগাতে হবে ১.৫ টন এসি। ১৭০ থেকে ২২০ বর্গফুটের ঘরের জন্য দরকার ২ টন এসি। তবে এই মাপের কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে যদি আপনার ঘরটি টপ ফ্লোরে হয় বা একেরবারে দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকের ঘর হয় তাহলে। অথবা ঘরে জানালা বেশি থাকলে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয় ক্ষমতা: দিন দিন যেভাবে গরম আর বিদ্যুতের বিল পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাতে এসির বিদ্যুৎ সাশ্রয় ক্ষমতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখন সমস্ত বৈদ্যুতিক পণ্যের গায়েই এনার্জি এফিসিয়েন্সি মার্ক থাকে। এক থেকে পাঁচ স্টার দিয়ে মাপা হয় এনার্জি এফিসিয়েনসি।
এই মার্কিং ঠিক করে ব্যুরো অফ এনার্জি এফিসিয়েন্সি বা BEE. এসির গায়ে যত বেশি স্টার থাকবে, সেই এসি তত কম বিদ্যুৎ খরচ করবে। একটি ফাইভ স্টার এসির থেকে একটি ওয়ান স্টার এসি প্রায় ৫০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ খরচ করে।
স্প্লিট এসি কিনবেন না উইন্ডো: এখন উইন্ডো এসির চল প্রায় উঠেই গিয়েছে। উইন্ডো এসির দাম কম হলেও তাতে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। যেমন, উইন্ডো এসির হাওয়া গোটা ঘরে ছড়ায় না। উইন্ডো এসিতে আওয়াজ হয় ফলে ঘুমাতে অনেকের সমস্যা হয়।
কখনো উইন্ডো এসি থেকে ছিটকে জল বা বরফ বেরোতে থাকে। কখনো এসি থেকেই চুঁইয়ে জল পড়ে ঘরের ভিতরে। ফলে স্প্লিট এসি কেনাই ভাল।
বাজারে এসির দরদাম:
এখন বাজারে ২৫-৩০ হাজার টাকায় ১ টন এসি পাওয়া যায়, ১.৫ টন এসির দাম শুরু ৩৫ হাজার থেকে। তবে আপনি যদি ব্র্যান্ডের দিকে যেতে চান তাহলে আপনার পকেট থেকে খসে যাবে বেশ ভালো অংকের টাকা। তবে প্রতি স্টার রেটিং বৃদ্ধিতে ২,৫০০ টাকা করে বাড়ে এসির দাম।
তার ওপর সাধারণ এসি থেকে ইনভার্টার এসির দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হতে পারে। সেক্ষেত্রে HITACHI, SAMSUNG, WIRLPHOOL অথবা TRANSTEC ইনভার্টার এসির ১ টনের জন্যই লাগবে যথাক্রমে ৬৮,০০০, ৬৪,০০০, ৫৮,০০০, ও ৫২,০০০ টাকা।
এয়ার কোয়ালিটি: আপনার এলাকায় বায়ুদূষণের হাল কেমন বুঝে এসি কেনা উচিত। যদি বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ খুব বেশি হয় তবে ভাল ফিল্টারওয়ালা এসি কেনা উচিত। ভাল ফিল্টার শুধু ধুলো দূর করে না, এসির কুলিং ক্ষমতাও বাড়ায়।
ইন্সটলেশন: উইন্ডো এসিতে একটাই ইউনিট তাই জায়গা অনেক কম লাগে। কিন্ত স্প্লিট এসিতে ঘরের ভিতরে ও বাইরে দু’টো ইউনিট থাকে। ফলে অনেক বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া স্প্লিট এসির কমপ্রেসর ইউনিট কী ভাবে লাগানো হচ্ছে তার ওপরেও তার এফিসিয়েন্সি নির্ভর করে।
দক্ষিণ দিকের দেওয়ালে যেখানে সারাদিন রোদ পড়ে বা বদ্ধ জায়গা যেখানে হাওয়া খেলে না, এমন জায়গায় কমপ্রেসর ইউনিট লাগালে বিদ্যুতের বিল আসতে পারে কয়েক গুণ।
সার্ভিসিং: গাড়ির মতো এসিও নিয়মিত মেরামত করতে হয়। নইলে ভয়ঙ্কর সব কাণ্ড ঘটতে পারে। এসি মেরামতিতে গাফিলতির জন্য প্রতি বছর প্রচুর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তাছাড়া স্প্লিট এসির কমপ্রেসর ইউনিটে নিয়মিত নজরদারি করা উচিত। কোনও অস্বাভাবিক শব্দ ও কম্পন অনুভব করলেই খবর দেওয়া উচিত সার্ভিস পার্সনকে।
আফটার সেলস সার্ভিস:যে কোনও বৈদ্যুতিক পণ্যের জন্যই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর এসির জন্য তো বটেই। যে ব্র্যান্ডের এসি কিনছেন আপনার এলাকায় তার পরিষেবার রেকর্ড কেমন জেনে নিন আগে থেকে। জেনে নিন তার জন্য খরচপাতি। নইলে পরে ফাঁপড়ে পড়তে পারেন।
অন্যান্য ফিচার: অধিকাংশ এয়ার কন্ডিশনারেই ডিহিউমিডিফিকেশন ফাংশন থাকে। এই ফিচারটি বাতাসের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ঘরের পরিবেশ আরও আরামদায়ক হয়ে ওঠে। এসিটিতে কতটা আওয়াজ হয় সেটাও দেখে নেওয়া দরকারি। সাধারণত ১৯ থেকে ৬০ ডেসিবেলের মধ্যে ঘোরাফেরা করে এই পরিসংখ্যান।
এসিতে স্লিপ মোড ফিচারটিও বেশ কার্যকরী। এতে রাতে ঘর খুব ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। এছাড়া অটো রিস্টার্স্ট ফিচারটিও কার্যকরী। এই ফিচার থাকলে লোডশেডিংয়ের পর ফের কারেন্ট এলে এসি নিজে থেকেই আগের সেটআপে চলতে শুরু করে দেয়। ফলে বার বার এসি সেট করার ঝামেলা থেকে মুক্তি মেলে।
এসি কেনার সব থেকে বড় সমস্যা হল tons, efficiency and price কে ব্যালেন্স করা। ছোট্ট একটা ঘরের জন্য অহেতুক একটা দেড় বা দু’টন এসি কেনা জাস্ট টাকার অপচয়। সেজন্য একটা রূপরেখা ছকে দেওয়া রইল। এটা ধরে এগোতে পারেন।
যদি বছরে ৩ বা ৪ মাস দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা এসি চালান তাহলে থ্রি স্টার রেটেড এসিই যথেষ্ট। যদি আপনার এলাকায় ৫ থেকে ৭ মাস এসি চালাতে হয় তবে ৫ স্টার রেটেড এসি কেনাই ভাল। আর যদি সারা বছরই থাকেন এসির ভরসায় তবে কড়ি খসিয়ে কিনতে হবে একটা ইনভার্টার এসি।
কি সবকিছু জানা হয়েছে তো? এবার তাহলে ঢু মেরে আসুন এসির বাজারে। আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে ফেলুন নিচের কমেন্ট সেকশনে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সেলিম রেজা সাগর ১৩/০৪/২০২১দারুণ
-
পি পি আলী আকবর ১৯/০৪/২০১৯ভালোই
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৬/০৪/২০১৯ভালো লাগলো।