কোটা পদ্ধতির দৌরাত্ম্যে বিপন্ন হতে বসেছে বিপুলসংখ্যক মেধাবীর ভবিষ্যৎ।
প্রায় সব স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ সরকারের বিভিন্ন চাকরিতে যোগ্যতার মানদণ্ডে ওপরের সারিতে থেকেও কোটার মারপ্যাঁচে ছিটকে পড়ছে এসব মেধাবী।
বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনি, নারী, জেলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (উপজাতি), প্রতিবন্ধী, আনসার ও ভিডিপি, পোষ্য, খেলোয়াড়, এলাকা ও বোনসহ ২৫৭ ধরনের কোটা বিদ্যমান। এসব কোটা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ (বিসিএস) সরকারি চাকরি এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে প্রয়োগ করা হয় এসব কোটা।
বিসিএসে মেধা তালিকা থেকে ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ আসে কোটা থেকে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য (ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনি) ৩০, মহিলা ১০, জেলা ১০ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (উপজাতি) ৫। এছাড়া এসব কোটা পূরণ না হলে, সেখানে ১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রতিবন্ধীর জন্য। আর যদি সংশ্লিষ্ট চাকরির ক্ষেত্রে এসব প্রাধিকার কোটা পূরণ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে মেধা তালিকা থেকে প্রতিবন্ধীর কোটা পূরণ করা হয়। এছাড়া নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও একই কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মেধাতালিকা থেকে ৩০ শতাংশ এবং বাকি ৭০ শতাংশ পূরণ করা হয় কোটা থেকে। এই কোটার মধ্যে শতাংশ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ৩০, মহিলা ১৫, আনসার ও ভিডিপি ১০, অনাথ ও প্রতিবন্ধী ১০ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫।
এর বাইরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্যসহ অন্যান্য কোটা রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে রয়েছে এলাকা কোটা, পোষ্য, বোন, বিশেষ কোটাসহ নানা ধরনের কোটা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসনের ৬ শতাংশ ভর্তি হয় কোটায়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ৩ শতাংশ, প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মেধাবী ৩ শতাংশ/ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যদের কোটা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সংযুক্ত প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান কোটা ২ শতাংশ। ঢাকার স্কুলগুলোতে চালু হয়েছে ৪০ শতাংশ ‘এলাকা কোটা’। এ কোটায় ভর্তি হতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক, সরকারি বাসার বরাদ্দপ্রাপ্ত এবং ভাড়াটিয়া হতে হবে। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলে অন্যান্য কোটার সঙ্গে রয়েছে বোন কোটা। কোনো শিক্ষার্থীর সহোদর বোন এ কোটায় ভর্তি হতে পারবে। এছাড়া বেসরকারি মেডিকেল কলেজে রয়েছে পরিচালনা পরিষদের ১০ শতাংশ এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই কোটা আছে, তবে তা অন্যভাবে। যুক্তরাষ্ট্রে কোটাধারীদের আগেই একটা নম্বর দেয়া হয়। এরপর ওপেন পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় কোটাধারীদের। আর ভারত তো কোটাকে একটা সুন্দর পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সেখানে কোটা আছে, তবে তা উপার্জনের ভিত্তিতে। উচ্চ আয়ের মানুষরা কোটা পায় না। এক্ষেত্রে তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকেও ছাড় দেয় না। একবার যে কোটার সুবিধা পাবে, সে আর কখনও কোটার সুবিধা পাবে না। অর্থাৎ বাবা যদি কোটা সুবিধা পায় তার সন্তানরা কোনো কোটা সুবিধা পাবে না। কেউ যদি কোটা দিয়ে কলেজে ভর্তি হয়, তাহলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা পাবে না। আর সে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটায় ভর্তি হয়েছে, সে কখনও চাকরিতে কোটা সুবিধা পাবে না।
কোটার কারণে প্রশাসনে হাজার হাজার পদ খালি থাকছে। ২৮ থেকে ৩২তম ৫টি বিসিএসের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যোগ্য প্রার্থী না থাকায় প্রাধিকার কোটার ৪ হাজার ২৮৭টি পদ খালি রাখতে হয়েছে। এর মধ্যে ২৮তম বিসিএসে ৮১৩টি, ২৯তম বিসিএসে ৭৯২টি, ৩০তম বিসিএসে ৭৮৪টি, ৩১তম বিসিএসে ৭৭৩টি পদ শূন্য ছিল। কোটার শূন্যপদগুলো পূরণ করতে মুক্তিযোদ্ধা, আদিবাসী ও মহিলাদের জন্য ৩২তম বিশেষ বিসিএস নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি। ওই বিসিএসেও এক হাজার ১২৫টি পদ শূন্য রাখতে হয়। শেষ পর্যন্ত ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে তা পূরণের সিদ্ধান্ত হয়। অথচ ৩২তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ৯১২ জনই চাকরির সুযোগ পাননি। কারণ এক কোটা থেকে আরেক কোটায় নিয়োগ দেয়া যায় না। এর আগে ২০০৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৮৩৩টির মধ্যে ৭৭৮টি, ২০০৫ সালে এক হাজার ৮৫৪টির মধ্যে এক হাজার ৫০৮টি, ২০০৬ সালে ৭৫৪টির মধ্যে ৫৯৮টি এবং ২০০৭ সালে ৭০৯টির মধ্যে ৬৩৭টি পদ খালি রাখতে হয়েছিল এই কোটার কারণেই।
কোটাকে বৈষম্যের হাতিয়ার উল্লেখ করে পিএসসির সাবেক একজন চেয়ারম্যান বলেন, কোনো একজন প্রার্থীর বাড়ি জামালপুরে। তার মেধাক্রম ১৫। কিন্তু ওই জেলা কোটায় নেয়া যাবে তিনজন। ১৫ পর্যন্ত যাওয়ার আগেই যদি জামালপুরের কোটায় তিনজন পাওয়া যায়, তাহলে ১৫তম হয়েও চাকরি পাবেন না। বিপরীতে ১৫০তম হয়েও মেহেরপুরের একজন প্রার্থী কোটা খালি থাকলে চাকরি পেতে পারেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রেও ঘটে একই ধরনের ঘটনা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ১৭ জনকে পোষ্য কোটায় ভর্তি করা হয়। এদের প্রায় সবাই ভর্তি পরীক্ষায় ১০০-র মধ্যে ৪০ নম্বর পায়। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান, ভাই-বোন হওয়ায় তারা এ সুযোগ পান। অথচ তাদের চেয়ে দ্বিগুণ নম্বর পেয়েও ভর্তি হতে পারেনি মেধাবীরা।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারও মনে করেন, বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা অবশ্যই সংস্কার হওয়া উচিত। তিনি যুগান্তরকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকা উচিত। তাও সব মিলিয়ে ২০ শতাংশের বেশি নয়।
এরপর ২০০৮ সালে শামসুল হক কমিশনের অন্যতম সদস্য ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান ও বর্তমান সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে কোটা পদ্ধতির অসঙ্গতি দূর করতে একটি সমীক্ষা চালায় পিএসসি। ‘কোটা সিস্টেম ফর সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সমীক্ষা প্রতিবেদন ওই বছরের ৬ মার্চ তৎকালীন পিএসসির চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইনের কাছে জমা দেয়া হয়। এই সমীক্ষা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেধা কোটা পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ এবং জেলা কোটার পরিবর্তে বিভাগীয় কোটা প্রবর্তনের সুপারিশ করে পিএসসি। ৬১ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনটি ২০০৮ সালের ২০ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে আকবর আলি খান কোটাব্যবস্থাকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে বলেন, অধিকাংশ কোটাই অসাংবিধানিক ও ন্যায়নীতির পরিপন্থী। কোনো কোটাই চিরদিন থাকতে পারে না। প্রত্যেক কোটার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯(১) ধারায় বলা আছে-‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।’ ২ ধারায় বলা আছে- ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।’
বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনি, নারী, জেলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (উপজাতি), প্রতিবন্ধী, আনসার ও ভিডিপি, পোষ্য, খেলোয়াড়, এলাকা ও বোনসহ ২৫৭ ধরনের কোটা বিদ্যমান। এসব কোটা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ (বিসিএস) সরকারি চাকরি এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে প্রয়োগ করা হয় এসব কোটা।
বিসিএসে মেধা তালিকা থেকে ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ আসে কোটা থেকে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য (ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনি) ৩০, মহিলা ১০, জেলা ১০ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (উপজাতি) ৫। এছাড়া এসব কোটা পূরণ না হলে, সেখানে ১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রতিবন্ধীর জন্য। আর যদি সংশ্লিষ্ট চাকরির ক্ষেত্রে এসব প্রাধিকার কোটা পূরণ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে মেধা তালিকা থেকে প্রতিবন্ধীর কোটা পূরণ করা হয়। এছাড়া নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও একই কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মেধাতালিকা থেকে ৩০ শতাংশ এবং বাকি ৭০ শতাংশ পূরণ করা হয় কোটা থেকে। এই কোটার মধ্যে শতাংশ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ৩০, মহিলা ১৫, আনসার ও ভিডিপি ১০, অনাথ ও প্রতিবন্ধী ১০ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫।
এর বাইরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্যসহ অন্যান্য কোটা রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে রয়েছে এলাকা কোটা, পোষ্য, বোন, বিশেষ কোটাসহ নানা ধরনের কোটা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসনের ৬ শতাংশ ভর্তি হয় কোটায়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ৩ শতাংশ, প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মেধাবী ৩ শতাংশ/ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যদের কোটা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সংযুক্ত প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান কোটা ২ শতাংশ। ঢাকার স্কুলগুলোতে চালু হয়েছে ৪০ শতাংশ ‘এলাকা কোটা’। এ কোটায় ভর্তি হতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক, সরকারি বাসার বরাদ্দপ্রাপ্ত এবং ভাড়াটিয়া হতে হবে। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলে অন্যান্য কোটার সঙ্গে রয়েছে বোন কোটা। কোনো শিক্ষার্থীর সহোদর বোন এ কোটায় ভর্তি হতে পারবে। এছাড়া বেসরকারি মেডিকেল কলেজে রয়েছে পরিচালনা পরিষদের ১০ শতাংশ এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই কোটা আছে, তবে তা অন্যভাবে। যুক্তরাষ্ট্রে কোটাধারীদের আগেই একটা নম্বর দেয়া হয়। এরপর ওপেন পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় কোটাধারীদের। আর ভারত তো কোটাকে একটা সুন্দর পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সেখানে কোটা আছে, তবে তা উপার্জনের ভিত্তিতে। উচ্চ আয়ের মানুষরা কোটা পায় না। এক্ষেত্রে তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকেও ছাড় দেয় না। একবার যে কোটার সুবিধা পাবে, সে আর কখনও কোটার সুবিধা পাবে না। অর্থাৎ বাবা যদি কোটা সুবিধা পায় তার সন্তানরা কোনো কোটা সুবিধা পাবে না। কেউ যদি কোটা দিয়ে কলেজে ভর্তি হয়, তাহলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা পাবে না। আর সে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটায় ভর্তি হয়েছে, সে কখনও চাকরিতে কোটা সুবিধা পাবে না।
কোটার কারণে প্রশাসনে হাজার হাজার পদ খালি থাকছে। ২৮ থেকে ৩২তম ৫টি বিসিএসের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যোগ্য প্রার্থী না থাকায় প্রাধিকার কোটার ৪ হাজার ২৮৭টি পদ খালি রাখতে হয়েছে। এর মধ্যে ২৮তম বিসিএসে ৮১৩টি, ২৯তম বিসিএসে ৭৯২টি, ৩০তম বিসিএসে ৭৮৪টি, ৩১তম বিসিএসে ৭৭৩টি পদ শূন্য ছিল। কোটার শূন্যপদগুলো পূরণ করতে মুক্তিযোদ্ধা, আদিবাসী ও মহিলাদের জন্য ৩২তম বিশেষ বিসিএস নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি। ওই বিসিএসেও এক হাজার ১২৫টি পদ শূন্য রাখতে হয়। শেষ পর্যন্ত ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে তা পূরণের সিদ্ধান্ত হয়। অথচ ৩২তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ৯১২ জনই চাকরির সুযোগ পাননি। কারণ এক কোটা থেকে আরেক কোটায় নিয়োগ দেয়া যায় না। এর আগে ২০০৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৮৩৩টির মধ্যে ৭৭৮টি, ২০০৫ সালে এক হাজার ৮৫৪টির মধ্যে এক হাজার ৫০৮টি, ২০০৬ সালে ৭৫৪টির মধ্যে ৫৯৮টি এবং ২০০৭ সালে ৭০৯টির মধ্যে ৬৩৭টি পদ খালি রাখতে হয়েছিল এই কোটার কারণেই।
কোটাকে বৈষম্যের হাতিয়ার উল্লেখ করে পিএসসির সাবেক একজন চেয়ারম্যান বলেন, কোনো একজন প্রার্থীর বাড়ি জামালপুরে। তার মেধাক্রম ১৫। কিন্তু ওই জেলা কোটায় নেয়া যাবে তিনজন। ১৫ পর্যন্ত যাওয়ার আগেই যদি জামালপুরের কোটায় তিনজন পাওয়া যায়, তাহলে ১৫তম হয়েও চাকরি পাবেন না। বিপরীতে ১৫০তম হয়েও মেহেরপুরের একজন প্রার্থী কোটা খালি থাকলে চাকরি পেতে পারেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রেও ঘটে একই ধরনের ঘটনা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ১৭ জনকে পোষ্য কোটায় ভর্তি করা হয়। এদের প্রায় সবাই ভর্তি পরীক্ষায় ১০০-র মধ্যে ৪০ নম্বর পায়। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান, ভাই-বোন হওয়ায় তারা এ সুযোগ পান। অথচ তাদের চেয়ে দ্বিগুণ নম্বর পেয়েও ভর্তি হতে পারেনি মেধাবীরা।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারও মনে করেন, বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা অবশ্যই সংস্কার হওয়া উচিত। তিনি যুগান্তরকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকা উচিত। তাও সব মিলিয়ে ২০ শতাংশের বেশি নয়।
এরপর ২০০৮ সালে শামসুল হক কমিশনের অন্যতম সদস্য ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান ও বর্তমান সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে কোটা পদ্ধতির অসঙ্গতি দূর করতে একটি সমীক্ষা চালায় পিএসসি। ‘কোটা সিস্টেম ফর সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সমীক্ষা প্রতিবেদন ওই বছরের ৬ মার্চ তৎকালীন পিএসসির চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইনের কাছে জমা দেয়া হয়। এই সমীক্ষা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেধা কোটা পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ এবং জেলা কোটার পরিবর্তে বিভাগীয় কোটা প্রবর্তনের সুপারিশ করে পিএসসি। ৬১ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনটি ২০০৮ সালের ২০ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে আকবর আলি খান কোটাব্যবস্থাকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে বলেন, অধিকাংশ কোটাই অসাংবিধানিক ও ন্যায়নীতির পরিপন্থী। কোনো কোটাই চিরদিন থাকতে পারে না। প্রত্যেক কোটার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯(১) ধারায় বলা আছে-‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।’ ২ ধারায় বলা আছে- ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।’
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সোলাইমান ২৩/১০/২০১৬ভাল কথা।
-
মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান ২৩/১০/২০১৬আইনের কথা কে শুনেরে ভাই।