www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মাতলার বিজয়া

নিমাইবাবু প্রতিদিন সকাল সকাল কাজে বেরিয়ে যান । ফেরেন অনেক রাতে । ওনার স্ত্রী অমলাদেবী ও স্কুলের রান্নার কাজ করেন । এদের এক কন্যা আছে , নাম তার বিজয়া । খুব সাধ করে নিমাইবাবু এই নামকরণ করেছেন । বিজয় দশমীর দিন জন্ম হয়েছিল বলে তার এমন নাম দিয়েছেন। নিমাইবাবুর একমাত্র আদরের কন্যা । নিমাইবাবুর নয়নের মনি । কাজ থেকে বাড়ি ফরে মেয়েকে না দেখে জল ও পান করেন না । বিজয়া ও তার বাবাকে বেশি ভালোবাসে । মাকে যে ভালোবাসে না তা নয়, আসলে মাকে সবসময় কাছে পায় বলে একটু অবহেলা করে ।
বিজয়ার তেমন কোনো সঙ্গী ছিল না । তাদের বাড়ি দূর মাতলার তীরে । সেখানে জনবসতি খুবই কম । তাই তার ছোটো বেলার খেলার সাথি ছিল নিমাইবাবু কাঁধ আর মাতলা নদীর কোল । মাতলা নদীর সঙ্গে তার সখ্যতা দিনের পর দিন বাড়তে থাকে । মাতলাকে সে মা বলে ডাকত । মাতলা ও যেন সেই ডাকে সারা দিত । এ যেন কেমন পরিচিতি, কেমন টান । মানুষের হৃদয়ের আঙিনায় বাস করে তার মনের মানুষ । কিন্তু বিজয়ার মনকে দখল করে নিয়েছে সকলের অকপটে মাতলা নদী ।
বিজয়া মানুষের সান্নিধ্য খুব কম পায় । তাই মাতলা তটের যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তা যেন তার চিত্তকে গ্রাস করেছে । তাই সে মানুষের সান্নিধ্য আর চায় না । নিমাইবাবু তাই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায় বিজয়ার নদী প্রেম দেখে । সে তার বাবাকে প্রশ্ন করে "বাবা, আমাদের বাড়িটা নদীর মাঝে নয় কেন ? " এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে চাইত না নিমাইবাবু । বাইরে যে একটা জগৎ আছে তা বিজয়ার জানার আগ্রহ ছিল না । নিমাইবাবু যে তাকে জানানোর চেষ্টা করে নি তা নয় । বিজয়াকে পাশের গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন , তখন তার বয়স পাঁচ শেষ হয়ে ছয়ে পরেছে । তখন তার কি আগ্রহ, নতুন জামা পড়ে কি নাচ স্কুলে যাবে । কিন্তু তার এই আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয় নি । একদিন খবর এল তার মা হাসপাতালে ভর্তি । নিমাইবাবু বিজয়াকে নিয়ে হাসপাতালে হাজির হতেই সব শেষ । সে জানতে পারল শহরের পথ দূর্ঘটনায় তার মায়ের এই করুণ পরিণতি । নিমাইবাবু আর থাকতে পারলেন না দুচোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল ঝরছে । বিজয়া কিন্তু এতটুকুও চোখের জল ফেলেনি । সে বাকরূদ্ধ হয়ে গেছে । সে শুধু একটা কথা বলল... মা, তুমি চোখ খোলো না আমি এসেছি ।
তার চোখের সামনে তার মায়ের চিতা সাজানো হয় মাতলার তটে । নিমেষে সেই চিতাভস্ম মাতলার জলে বিলিন হয়ে যায় । সে বাবাকে বলে " মা কোথায় গেছে?" নিমাইবাবু তার অশ্রু গোপন করে জানায়, মাতলা নদী নিয়ে গেছে । ওখানে আছে । আমি যাব । না মা ওখানে ছোটোদের যেতে নেই । এই নদী তো তোর মা । সেই থেকে মাতলা তার কাছে মা হয়ে ওঠে ।
বিজয়া বড়ো হয়ে ওঠে । বিয়ের বয়স । নিমাইবাবুকে অনেকে বলে মেয়েকে বিয়ে দেবেন না? আর কত দিন বাড়িতে বসিয়ে রাখবেন । নিমাইবাবু কোনো কথায় কান দিতেন না । একদিন রাতে নিমাইবাবু বিজয়াকে বলল , মা তোর এবার বিয়ে দিতে হবে । বিয়ে করবি তো! বিজয়া কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর বলল ... আমি কি তোমার কাছে বোঝা ! নিমাইবাবু আর কোনো কথা বললেন না । কিছুদিন এই ভাবে যাওয়ার পর বিজয়া লক্ষ করল তার বাবা কোনো কিছু নিয়ে খুব চিন্তায় আছেন । রাতে বেশি ঘুমান না । খাওয়া ও।কমিয়ে দিয়েছেন । বিজয়া বোঝে ব্যাপারটা । তার পর সে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় । নিমাই নিমাইবাবুখুব খুশি হয় ।
পাত্রপক্ষ থেকে বিজয়াকে দেখতে আসে এবং পছন্দ ও হয় । কেনবা পছন্দ হবে না , বিজয়া রূপে গুনে লক্ষ্মী স্বরূপা । যথারীতি বিজয়ার বিয়ে হয় বাবা ও মাতলাকে ছেড়ে তাকে চলে যেতে হয় স্বামীর ঘরে । তখন ও তার চোখে জল নেই । এটাই হয়তো বিধাতার লিখন । নিমাইবাবু বরপণের টাকা যতটা সামর্থ দিয়েছেন কিন্তু পুরো দিতে পারেন নি । নিমাইবাবু ভেবেছিলেন বিবাহের পর মেয়ে খুব সুখী হবে । কিন্তু বিধাতা হয়তো তার জীবন থেকে সুখ শব্দটা মুছে দিয়েছেন । বিবাহের মাসখানেক পর থেকে পনের টাকা চাইতে শুরু করে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন । তার ওপর অশিক্ষিত হওয়ায় তাকে প্রতিনিয়ত কথা শুনতে হয় । বিজয়া তার বাবাকে কিছু জানাতে পারে না , বাবা কষ্ট পাবে ভেবে ।
ছয় মাস কষ্ট সহ্য করার পর সে বাধ্য হয়ে বাপের বাড়িতে আসে পণের টাকা চাইতে বাবার কাছে । কিন্তু এসে দেখে বাবা অসুস্থ । কিছু আর বলতে পারলো না । বাবাকে সুস্থ করার অনেক চেষ্টা করলো । একদিন প্রভাত বেলায় মেয়ের হাত বুকের কাছে রেখে নিমাইবাবু বললেন...... মা , আমায় ক্ষমা করে দিস । তখন নিমাইবাবুর দুচোখের কোন দিয়ে জলরাশি গড়িয়ে বিজয়ার হাত স্পর্শ করল । সব শেষ । বিজয়া তার মায়ের মতো বাবার ও সাজানো চিতা ভষ্মীভূত হতে দেখল মাতলার কোলে । বিজয়ার দুনয়ন সিক্ত হল । কেদে ফেলল বিজয়া । সব বেদনা যেন পুঞ্জীভূত হতে লাগল মাতলার বুকে । সেদিন রাতে বেদনা ভাতাক্রান্ত মাতলা অন্য রূপ নিল । যা আগে কখনো বিজয়া দেখেনি । চারিদিকে মাতলার স্রোতের গর্জন , ফেনিল স্রোত, সুউচ্চ ঢেউ যেন বেদনায় বারবার মাথা ঠুকছে ত
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৯৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/০৭/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • মধু মঙ্গল সিনহা ২৩/০৮/২০১৮
    সুন্দর
  • মোশতাক সাব্বির২ ১০/০৭/২০১৮
    চলমান বাস্তব... দারুন
  • মহিউদ্দিন রমজান ১০/০৭/২০১৮
    সুন্দর 👍👍
  • বেশ লিখেছেন কবি।
  • খুব দ্রুত শেষ হয়েছে।
 
Quantcast