কুয়াশা
খুব অল্প সময়ে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হলো। একবারে শেষের দিনগুলোতে, যখন ফিরে আসবার সময় ঘনিয়ে এল। কিন্তু বন্ধুত্বটা অতো ঠুনকো হলো না।
বাইরে ভীষণ শীত। তাপমাত্র মাইনাস ৬ থেকে দশের মধ্যে ওঠা-নামা করছে। সাধারণতঃ আকাশ পরিষ্কার থাকে, ঝকঝকে রৌদ্রোজ্জ্বল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, করিডোর, লবি, সেমিনার রূম, গ্যাঙওয়ে বা ডাইনিং হলে চলাফেরা; বুঝার উপায় নেই বাইরে কেমন শীত। শুধু বেরোলেই টের পাওয়া যায়। ফলে সেমিনারের পর অবশিষ্ট সময়গুলো কাটে লবিতে। কেউ গান শোনে, কেউ তাস খেলে, কেউ মোবাইলে চ্যাট করে...স্কাইপ, হোয়াটস্ এ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদি ব্যস্ত। দেশে পরিবারের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়। কেউ এরি মধ্যে বেরিয়ে যাচ্ছে সুইমিং পুলে হট বাথ আর সুইমিং এর জন্য।
ইকরাম কিন্তু লবিতেই পার করছে তার সময়। অধিকাংশ সময় মোবাইলে। জুহাই থেকে ফিরে আসার পর বিদায়ের সুর বাজছে একুশ দিনের সফরের। সবার ভিতরে শেষ সময়ের কেনাকাটার ঝোঁক। ইকরাম সে দিকে নেই।
তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা অদ্ভূত। সে বিবাহিত কি না জানতে পারিনি। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, উত্তর দিয়েছে বুঝে নাও। কথাটা তামির বা রবিকে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করেনি। তার দেশে, মানে ফিলিস্তীনে প্রতিদিন রক্ত ঝরছে, কিন্তু তাকে কখনো সে সব নিয়ে কথা বলতে শুনিনি। বরং রবি সারাক্ষণ তার দেশ নিয়ে কথা বলতো। ইকরাম সে আলোচনার পাশ দিয়েও যেত না, যদিও সে ছিল পেশায় আইনজীবি। সারাক্ষণ হাসি আনন্দ আর উচ্ছ্বলতার ভিতরে পার করতো। গান শুনত। গান গাইতো। নাচতো। নিঃসংকোচে। শপিং এ গেলে শুধু পরিধেয় পোশাক কিনতো, এবং বলা প্রয়োজন, কেবল নিজের জন্য। কয়েক ধরণের চাইনীজ ট্রেডিশনাল ড্রেস সে কিনেছিল। বিভিন্ন সময় সে সে সব পরতো। আর ছিল প্রসাধনের আধিক্য। সাজ-সজ্জা ও প্রসাধন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও আনন্দ আয়োজন এই ছিল তার কাজ।
চলে আসবার দু’দিন আগে সার্বিয়ার ছেলে আদি একটা লেজার লাইটার কিনেছে। সেটা নিয়ে লবিতে অনেক নাচানাচি হলো।তবে সবচে মধুর হলো তামিরের বাঁশিতে। সে বাঁশি বাজাতো আর আদি, রবি, ইকরাম এবং সময়ে সময়ে আমি বা আরো দু’একজন গোল হয়ে নাচি। নাচতে নাচতে অনেক রাত হয়ে যায়। এক এক সবাই চলে যায় যার যার কক্ষে। কিন্তু ইকরাম যায় না। আমরা পাশাপাশি অনেক রাত অব্দি বসে থাকি, আরবী গান শুনি। কথা খুব কম হয়, কিন্তু বসেছি অনেক ঘনিষ্ঠ ভাবে। সে রাতে তাকে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া একটা উপহার দিই। সে খুবই উল্লসিত হয়।
তারপর দিন আমাদের সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। এরপর এক এক করে সবাই বিভিন্ন সময়ে বেজিং/আিইবো ত্যাগ করি। ইকরামের সঙ্গে আর দেখা হয়নি।
হঠাৎ তাকে ফেসবুকে পাই। এখন তার সাথে প্রতি সপ্তাহে কথা হয়। ভালবাসার কথা, কবিতার মতো শব্দময়তার কথা। তার অধিকাংশ পোস্ট থাকে ফিলিস্তীনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা নিয়ে। কিভাবে তার শিক্ষককে হ্যা করেছে ইজরা্ইলী সেনারা। কিভাকে একটি পরিবারের পুরুষসহ নারীদের উপর ইজরাইলী সৈন্যরা নির্যাতন চালাচ্ছে, এসবই থাকে তার ফেসবুকের পাতা জুড়ে। এই ইকরামকে আমি চিনতে পারি না। কিন্তু তার সঙ্গে আমার যে কথোপকথন যেন ফলিং ইন লাভ। কিন্তু বাস্তবে তার ধারে কাছে নয়, চিন্তারও অতীত।
আসলে মানুষই একমাত্র প্রাণী যে একই সাথে রং রূপ গন্ধ লুকিয়ে রাখতে পারে, পারে দুঃখ বোধের চেতনাকে বুকের খুব গভীরে লুকিয়ে রেখে মুখে হাসি ছড়িয়ে রাখতে। ইকরাম হাজমীর তেমনই এক মেয়ে, যাকে আমি আজও বুঝিনি, যে আমার কাছে কুয়াশা হয়ে আছে।
আরশাদ:alien: আপনালয়: শয়ন কক্ষ
১৩ নভেম্বর ২০১৫: শুক্রবার: ঢাকা।
বাইরে ভীষণ শীত। তাপমাত্র মাইনাস ৬ থেকে দশের মধ্যে ওঠা-নামা করছে। সাধারণতঃ আকাশ পরিষ্কার থাকে, ঝকঝকে রৌদ্রোজ্জ্বল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, করিডোর, লবি, সেমিনার রূম, গ্যাঙওয়ে বা ডাইনিং হলে চলাফেরা; বুঝার উপায় নেই বাইরে কেমন শীত। শুধু বেরোলেই টের পাওয়া যায়। ফলে সেমিনারের পর অবশিষ্ট সময়গুলো কাটে লবিতে। কেউ গান শোনে, কেউ তাস খেলে, কেউ মোবাইলে চ্যাট করে...স্কাইপ, হোয়াটস্ এ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদি ব্যস্ত। দেশে পরিবারের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়। কেউ এরি মধ্যে বেরিয়ে যাচ্ছে সুইমিং পুলে হট বাথ আর সুইমিং এর জন্য।
ইকরাম কিন্তু লবিতেই পার করছে তার সময়। অধিকাংশ সময় মোবাইলে। জুহাই থেকে ফিরে আসার পর বিদায়ের সুর বাজছে একুশ দিনের সফরের। সবার ভিতরে শেষ সময়ের কেনাকাটার ঝোঁক। ইকরাম সে দিকে নেই।
তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা অদ্ভূত। সে বিবাহিত কি না জানতে পারিনি। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, উত্তর দিয়েছে বুঝে নাও। কথাটা তামির বা রবিকে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করেনি। তার দেশে, মানে ফিলিস্তীনে প্রতিদিন রক্ত ঝরছে, কিন্তু তাকে কখনো সে সব নিয়ে কথা বলতে শুনিনি। বরং রবি সারাক্ষণ তার দেশ নিয়ে কথা বলতো। ইকরাম সে আলোচনার পাশ দিয়েও যেত না, যদিও সে ছিল পেশায় আইনজীবি। সারাক্ষণ হাসি আনন্দ আর উচ্ছ্বলতার ভিতরে পার করতো। গান শুনত। গান গাইতো। নাচতো। নিঃসংকোচে। শপিং এ গেলে শুধু পরিধেয় পোশাক কিনতো, এবং বলা প্রয়োজন, কেবল নিজের জন্য। কয়েক ধরণের চাইনীজ ট্রেডিশনাল ড্রেস সে কিনেছিল। বিভিন্ন সময় সে সে সব পরতো। আর ছিল প্রসাধনের আধিক্য। সাজ-সজ্জা ও প্রসাধন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও আনন্দ আয়োজন এই ছিল তার কাজ।
চলে আসবার দু’দিন আগে সার্বিয়ার ছেলে আদি একটা লেজার লাইটার কিনেছে। সেটা নিয়ে লবিতে অনেক নাচানাচি হলো।তবে সবচে মধুর হলো তামিরের বাঁশিতে। সে বাঁশি বাজাতো আর আদি, রবি, ইকরাম এবং সময়ে সময়ে আমি বা আরো দু’একজন গোল হয়ে নাচি। নাচতে নাচতে অনেক রাত হয়ে যায়। এক এক সবাই চলে যায় যার যার কক্ষে। কিন্তু ইকরাম যায় না। আমরা পাশাপাশি অনেক রাত অব্দি বসে থাকি, আরবী গান শুনি। কথা খুব কম হয়, কিন্তু বসেছি অনেক ঘনিষ্ঠ ভাবে। সে রাতে তাকে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া একটা উপহার দিই। সে খুবই উল্লসিত হয়।
তারপর দিন আমাদের সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। এরপর এক এক করে সবাই বিভিন্ন সময়ে বেজিং/আিইবো ত্যাগ করি। ইকরামের সঙ্গে আর দেখা হয়নি।
হঠাৎ তাকে ফেসবুকে পাই। এখন তার সাথে প্রতি সপ্তাহে কথা হয়। ভালবাসার কথা, কবিতার মতো শব্দময়তার কথা। তার অধিকাংশ পোস্ট থাকে ফিলিস্তীনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা নিয়ে। কিভাবে তার শিক্ষককে হ্যা করেছে ইজরা্ইলী সেনারা। কিভাকে একটি পরিবারের পুরুষসহ নারীদের উপর ইজরাইলী সৈন্যরা নির্যাতন চালাচ্ছে, এসবই থাকে তার ফেসবুকের পাতা জুড়ে। এই ইকরামকে আমি চিনতে পারি না। কিন্তু তার সঙ্গে আমার যে কথোপকথন যেন ফলিং ইন লাভ। কিন্তু বাস্তবে তার ধারে কাছে নয়, চিন্তারও অতীত।
আসলে মানুষই একমাত্র প্রাণী যে একই সাথে রং রূপ গন্ধ লুকিয়ে রাখতে পারে, পারে দুঃখ বোধের চেতনাকে বুকের খুব গভীরে লুকিয়ে রেখে মুখে হাসি ছড়িয়ে রাখতে। ইকরাম হাজমীর তেমনই এক মেয়ে, যাকে আমি আজও বুঝিনি, যে আমার কাছে কুয়াশা হয়ে আছে।
আরশাদ:alien: আপনালয়: শয়ন কক্ষ
১৩ নভেম্বর ২০১৫: শুক্রবার: ঢাকা।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শাহানাজ সুলতানা (শাহানাজ) ০১/১২/২০১৫ভালো
-
জয় ২৬/১১/২০১৫ভাল
-
এস, এম, আরশাদ ইমাম ১৪/১১/২০১৫দুঃখিত। আমি নতুন এই ব্লগে। বিশেষ কিছু জানি না।
-
সহিদুল ইসলাম ১৪/১১/২০১৫ভাল লিখেছেন। আপনি নিয়মিত লেখক বলে আপনাকে একটা প্রশ্ন করছি, আমি কোন মতেই আমার পুরানো আইডিতে লগ ইন করতে পারছি না। বেশ কয়েকবার মেইল করেও জবাব পাচ্ছি না।কেন, বলতে পারবেন?