www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আহ্ ভুলো মন আমার

বেশ কয়েক বছর আগের কথা। হয়তো এরকমই একটি শীতকাল তখন, হয়তো না! অতো পুঙ্খানুপুঙ্খ আজ আর মনে নেই। ঢাকা শহর। আমি লোকাল বাসে ফার্মগেট থেকে উত্তরায় বাড়ি ফিরছিলাম। রাত তখন আনুমানিক আটটা বেজে থাকবে। বাস চলছে। বাসের ভিতর দাঁড়িয়ে, বাদুড়ঝোলা হয়ে মহাখালীতে আসার পর দেখলাম যে, আমার কাছে আমার মোবাইল ফোনটি নেই। শার্ট প্যান্টে যতো পকেট আছে সব তন্নতন্ন করে খুঁজলাম। বাসের মেঝে, সিটের কোণা সবখানে যথাসাধ্য খুঁজলাম। কিন্তু নেই! ভয়ের এক শীতল শিহরণ থেকে থেকে বয়ে যেতে লাগলো শিরদাঁড়া বেয়ে। হৃদ স্পন্দন দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে লাগলো অনবরত। বাসে আমার তখন অমন ছটফটে অবস্থা দেখে সহযাত্রীরা স্বাভাবিকভাবেই বেশ কৌতূহলী হয়ে উঠেছিলো, বিষয়টা কি জানার জন্য। তাদের জানালাম যে, আমার মোবাইল ফোনটা হারিয়ে গেছে। একথা শোনার পর যাত্রীদের অনেকেই তখন বাসের মধ্যে উহ আহ হায় হায় করতে লাগলো, নানাভাবে আমাকে শান্তনা দিতে লাগলো। সবাই যে শান্তনা দিয়েছিল, তা নয়। এর মধ্যে দুয়েকজন বেশ বিরক্তিভরে মন্তব্যে জানালো যে, খুজে আর লাভ নেই, ওই মোবাইল আর কোনওদিন পাওয়া যাবে না; ফার্মগেট ফুট ওভার ব্রিজে উঠে থাকলে নির্ঘাত ওখান থেকেই স্থানীয় ধূর্ত পকেটমারদের কেউ পিক পকেটিং করেছে; আমার দেখে শুনে চলাফেরা করা উচিৎ ছিল, এখন বাসে লম্ফঝম্প করে কোনও লাভ নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। একজন পরামর্শ দিল, আমি যেন বাস থেকে নেমে তৎক্ষণাৎ থানায় যেয়ে একটি জেনারেল ডায়েরি করি। যাই হোক মোবাইল ফোন হারানো ও আর ফিরে না পাবার ভয়, সংশয়, নিরাশা সব মিলেমিশে আমার তখন বাসের ভিতরে একদম কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। অতো মানুষের মাঝে মোবাইল হারিয়ে নিজেকে কেমন যেন একজন জোকার জোকার লাগছিল। বাসে সবার কাছেই দিব্যি তাদের মোবাইল ঠিকঠাক আছে, আমিই বেমক্কা...
আমার মনে পড়ে গেল যে, বাসে ওঠার আগে আমি ফার্মগেটে একটি হোটেলে চা নাস্তা খেয়েছিলাম। খুব সম্ভবত ওখানে ফোনটা টেবিলের ওপরে রেখেছিলাম, পরে ফিরে আসবার সময় হতে পারে নিতে ভুলে গেছি! ফোনটা হয়তো এখনও ওখানেই আছে! ভাবলাম। আমি ঠিক নিশ্চিত ছিলাম না এ ব্যাপারে। ওখানে খাবার পরও রাস্তাঘাটে বিস্তর ঘোরা ফেরা করেছি, ফোনটা পকেটমারের পকেটেও যেয়ে থাকতে পারে! যাই হোক ঢিপঢিপ কাঁপা বুকে রাজ্যের হতাশা নিয়ে মহাখালীতে বাস থেকে নামলাম আমি। সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছিলাম প্রতিনিয়ত। ফোনটা আমি যেন ওই হোটেলেই ফেলে আসি, আর গেলে আবার যেন ওটা ফিরেও পাই! আমি উল্টো পথে আবার ফার্মগেটের বাস ধরলাম। ফোন ফিরে পাওয়ার শেষ ও এক মাত্র চেষ্টা, আবার যাবো সেই হোটেলটিতে। পেলে ভালো, না পেলে কিছু করার নেই। মোবাইল নিয়ে থানা পুলিশ, জেনারেল ডায়েরি টায়েরি করার প্রশ্নই আসে না! কী সর্বনাশা কথাবার্তা বাবা! পুলিশকে এমনিতেই আমি খুব ভয় পাই। কে জানে থানায় জেনারেল ডায়েরি করতে যেয়ে, কথাবার্তা পছন্দ না হলে পুলিশরা আবার আমাকেই না গারদে ঢুকিয়ে দেয়! হা হা হা। আসলে বেশ ছোট ছিলাম। হয়তো টিন এজেই ছিল বয়সটা তখন। বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। ভাবছিলাম যে, বাড়িতে বাবা এটা নিয়ে নির্ঘাত তুলকালাম বাধাবে!
যাই হোক দুরুদুরু কাঁপা বুকে আবার বাসে করে ফিরে এলাম ফার্মগেটের সেই হোটেলটিতে। ইশ, তখনকার আমার সেই চেহারা যদি আমার নিজেরই এখন একবার দেখার কোনও সুযোগ থাকতো! ঠিক কি রকম দেখাচ্ছিল আমার মুখটা সেই মুহূর্তে! হোটেলে যেয়ে একজন ওয়েটারকে বললাম, 'ভাই, আমি ঘণ্টা খানেক আগে এখানে খেয়ে, আমার মোবাইল ফোনটা ভুল করে ফেলে রেখে গেছি।'
সেদিন রাতে সেই ওয়েটার বোধহয় কিঞ্চিত হেসেছিল সেখানে আমার সেই উদভ্রান্ত পাগলপ্রায় অবস্থা দেখে, হয়তো হাসেনি! মনে নেই। আগেই বলেছি, বেশ ক'বছর আগের কথা। হয়তো শূন্য দশকের মাঝের একটি ঘটনা। আর এই লেখা ইতোমধ্যেই কিছুটা রঞ্জিত করে ফেলেছি। তবে অতি নয়! হা হা হা। সেই ওয়েটার হোটেলের কাউন্টার বরাবর তর্জনী উঁচিয়ে দিক নির্দেশনা করলে, আমি গেলাম সেখানে। কাউন্টারে বসা ক্যাশিয়ারের হাতে আমার সেই বড় বড় কি বোর্ডের মটোরোলা ফিচার ফোনটি দেখে, ধরে যেন অবশেষে প্রাণ ফিরে পেলাম আমি। আহা কী শান্তি! কী শান্তি! ফোন ফিরে পাবার আনন্দের আতিশয্যে হয়তো সেখানে বিগত মোবাইল ফোনটি হারানোর সব শঙ্কা, সংশয়, নিরাশা ভুলে যেয়ে আমি স্মিত হেসেছিলাম, হয়তো হাসিনি! অতো বিস্তারিত আজ আর কিছুতেই মনে করতে পারছি না! পারার কথাও নয়। তারপর মোবাইলটি কাউন্টারে বসা ক্যাশিয়ার ভদ্রলোক আমার সামনে বাড়িয়ে ধরলেন। আমি নিলাম।
'ধুর, আপনার ফোনে মিনিট প্রতি পাঁচ টাকা করে কাটে!' বললো ক্যাশিয়ার।
আমি হাসি মুখে ফোন নিয়ে যেতে যেতে ফোনের এ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স চেক করে দেখলাম, শূন্য। কিছু টাকা নিশ্চয়ই ছিল ব্যালেন্সে। ক্যাশিয়ার ভদ্রলোক কথা বলে সব শেষ করেছে। ব্যাপারটা খুশি মনেই মেনে নিলাম। যদি লাগে তবে না হয় আরও কিছু টাকা ভরিয়ে তাকে কথা বলার সুযোগ করে দিবো, কোনও সমস্যা নেই, তবু ফোনতো ফিরে পেলাম! যেতে যেতে ভাবলাম। এসবে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১১১২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২০/১২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast