www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রিয় বন্ধু আমার ভালো থাকিস সবসময় ভাল থাকিস

বেশ অনেকদিন আগের কথা। আজ মনে পড়লে মনে হয়, সে যেন আমার আরেক জীবনের গল্প। ২০০০ সালের পরের কোনও এক সময়ের একটি ঘটনা। একেবারে কিশোর তখন; তের চোদ্দ বছর বয়স। ছোটবেলায় আমি ভিডিও গেমসে দারুণ আসক্ত ছিলাম। খুব খেলতাম। মোস্তাফা, কিং অফ ফাইটার, দ্যা বিগ ফাইট, এক্স মেন ইত্যাদি প্রচুর খেলেছি। একটাকা, দুটাকা ছিল কয়েন। যারা খেলেছেন, তারা বুঝতে পারবেন। একসময় দারুণ প্রচলন ছিল এইসব ভিডিও গেমসের। প্রত্যেক পাড়া মহল্লার অলিতে গলিতে ভিডিও গেমসের দোকান ছিল। এখন স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার সহজলভ্য হওয়ায়, ভিডিও গেমসের রমরমা বাজার আর নেই আগের মতো।
এরকম একদিনের ঘটনা। ভিডিও গেমসের ছোটো একটি দোকানে আমি আর আমার বন্ধু আব্দুর রশিদ গেমস খেলছিলাম। ও বোধহয় তখন ঠিক খেলছিল না! আমার পাশে শুধু দাঁড়িয়ে দেখছিল। ওর মোটেও আমার মতো ভিডিও গেমসে আসক্তি ছিল না। 'মোস্তাফা'র মতো সহজ গেমেও দেখতাম প্রথম বসের কাছেই দু' দুটো লাইফ খুইয়ে বসতো। তেমন পছন্দও করতো না। নিতান্তই আমার কারণে, মানে বন্ধুর কারণে বেচারাকে ভিডিও গেমসের দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়াতে হতো। আমরা দুজন ছিলাম মানিকজোড়। সবসময় একসাথে থাকতাম। সত্যি বন্ধু রশিদের সাথে দারুণ সুন্দর ঝলমলে একটি শৈশব কাটিয়েছি! কতো মজার স্মৃতি যে জমে আছে! এসব নিয়ে লিখতে গেলে তা হয়তো একজীবনে আর শেষ করা যাবে না। লিখতে লিখতেই জীবন ফুরিয়ে যাবে, তারপরও অনেক কিছুই বলা হবে না! কীইনা করেছি দুজন! সেসব গল্পের কোনও শেষ নেই! বেশ ভাবুক হয়ে পড়ছি পুরনো স্মৃতি রোমন্থনে। কতো সড়ক, কতো হাঁটা হাঁটি, কতো হাট বাজার, সিনেমাহল, মেলা, পূজাপার্বণ, রোজা, ঈদ, শবে বরাত আমরা দুই বন্ধু কাটিয়েছি একসাথে। কতো মৌসুম; কতো গনগনে রোদ, ঝর বৃষ্টি, কনকনে শীতের রাত এসে চলে গেছে। আমি, রশিদ ও আরও অন্যান্য বন্ধুরাও। দারুণ সুন্দর, অবিস্মরণীয় কিছু দিন জীবনের। আমার শৈশব। প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াবার দিন। সেসব রঙিন, ঝলমলে স্মৃতি কোনদিন ভোলার নয়! ভুলবোও না!
যাই হোক সেদিন ভিডিও গেমসের দোকানে গেমস খেলছিলাম দুই বন্ধু। আমাদের মহল্লা থেকে খানিকটা দূরের একটি মহল্লায়। সেটা ছিল একটা বাজার। খুব ছোট্ট স্পেস ছিল ভিডিও গেমসের দোকানটার। দুটো বা তিনটি মনিটর ছিল। তখন আরও কয়েকজন সমবয়সী ছেলে খেলছিল আমাদের সাথে। পড়ন্ত বিকেলবেলা। এখন আর অতো বিস্তারিত মনে নেই। কোনও এক কারণে গেমস খেলতে খেলতে ওখানকার কারও সাথে কোনকিছু নিয়ে আমার বচসা হয়েছিল। সেই সূত্রে এক পর্যায়ে ধুন্ধুমার মারামারি। আগেই বলেছি খবু ছোটো স্পেস ছিল দোকানটার। মারামারি লেগে যাওয়ায় একেবারে নরক গুলজার! বন্ধু রশিদ ছিল বেশ বেটে। যাই হোক সেটা কোনও বিষয় নয়। ও যখন দেখলো যে আমি দোকানের অন্য ছেলেদের সাথে এলোপাথাড়ি মারপিট শুরু করেছি, তখন ও তো আর চুপচাপ দাঁড়িয়ে মজা দেখতে পারে না! হাজার হোক বন্ধু বিপদগ্রস্ত, সাহায্য দরকার। লেজ গুটিয়ে পালানোর সময় এটা নয়। রশিদও ওর কর্তব্য থেকে পিছু হটলো না। ওকেও দেখলাম তখন আমার সাথে সাথে বেপরোয়া কিল ঘুসি মারতে লাগলো সংখ্যায় বেশি শত্রুপক্ষকে। ছবির মতো ঝলমল করে চোখের সামনে ভাসছে সেই স্মৃতিগুলো। আমরা দুজন আর ওরা তিন চার জন। সাধারণভাবে আমাদের সুবিধা করতে পারার কথা নয়। তারমধ্যে আব্দুর রশিদও ছিল বেশ ছোটখাটো ও খানিকটা দুর্বলও। ওকে ভূপাতিত করা মোটেও কঠিন কিছু নয়। কিন্তু এখানে দোকানের ছোট স্পেসটা আমাদের দু'বন্ধুর জন্য শাপে বর হয়ে উঠলো। সংখ্যায় দ্বিগুণ হয়েও আমাদের সাথে ঠিক সুবিধা করতে পারছিল না ওরা পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে। ফ্রি হ্যান্ড স্ট্রিট ফাইটিং চলছে। এলোপাথাড়ি ঘুসাঘুসি। ভিডিও গেমসের মতোই, ধুমধাম ধুমধাড়াক্কা। আমরা মারি ওরা মারে, ওরা মারে আমরা মারি; চলছে চলছে চলছেই। থামার নাম নাই।
ভিডিও গেমসের দোকানদার ছিল আমাদের থেকে বেশ বয়স্ক; পচিশের ওপরে বয়স হবে। ওকে দেখলাম অহেতুক চেয়ারে বসে 'অই হই' করে চিৎকার চেঁচামিচি করছে। যে হারে কিল ঘুসি চলছিল, তাতে সে নিজেও সেখানে সুরক্ষিত বোধ করছিল না হয়তো! কখন ওর মুখেও না জানি আবার কার বজ্র মুষ্টি পড়ে! হা হা হা।
এমতাবস্থায় বাইরে থেকে সিনিয়র লোকজন এসে আমাদের শান্ত করলো। প্রতিপক্ষের একজনের দেখলাম ঠোঁট ফুলে উঠেছে, একটু রক্তও বোধহয় দেখেছিলাম। জানি না কার কাজ; আমার না রশিদের! বোধকরি আমার বক্সিংয়েই, কারণ রশিদ ছোটখাটো গড়নের ও একটু শারীরিকভাবেও দুর্বল, তা আগেই বলেছি। আমিই হয়তো সেদিন বেচারার ঠোট ফাঁটিয়েছিলাম।
শিশু কিশোরদের কাজ। লোকজনও আর এটা নিয়ে কোনও বাড়াবাড়ি করলো না। শান্তি বজায় রেখে মিলেমিশে খেলাধুলা করার সৎ পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দিল আমাদের। আমরা দু'বন্ধু সেখান থেকে আসছিলাম। চলার পথে দেখলাম যাদের সাথে গেমসের দোকানে মারপিট করেছিলাম, তাদের মধ্যে দুজন খুব উদ্বিগ্নচিত্তে শলাপরামর্শ করতে করতে রাস্তায় চলাচল করছে। পরিষ্কার বুঝতে পারলাম, আরও কিছু বন্ধু বান্ধব জোগাড় করে আমাদের মারার পরিকল্পনা করছে ওখানে।
'তাড়াতাড়ি চল রশিদ। পরিস্থিতি বিশেষ সুবিধার নয় এখানে। এলাকাটা ওদের।' হাঁটতে হাঁটতে হয়তো সেদিন বলেছিলাম প্রিয় বন্ধু রশিদকে, হয়তো বলিনি। অতো মনে নেই। পরবর্তীতে আর কোনও বিপদ হয়নি আমাদের। দিব্যি বাড়ি ফিরে এসেছিলাম।
বেচারা রশিদ সেদিন মারপিট শেষে পথ চলতে চলতে কি যে ভাবছিল আমাকে নিয়ে, জানি না! শুধুমাত্র আমার কারণেই এসবের মধ্যে জড়াতে হয়েছিল ওকে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে আমাদের বিন্দুমাত্র কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বরং ওদেরই একজনের ঠোট ফাটিয়ে দিয়ে রক্তাক করে এসেছিলাম। বন্ধু তো এমনই হয় না! শুধু বন্ধুর জন্য এসব অকারণ বিড়ম্বনা পোহানো। ওই একটাই শুধু নয়, এরকম আরও; আমার কারণে, শুধু আমার কারণেই এরকম আরও বেশ কয়েকবার নানান বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়েছে ওকে। কিন্তু কোনদিন ও আমাদের এই বন্ধুত্ব ভাঙ্গেনি। কখনও কোনও অভিযোগও করেনি এসব নিয়ে।
প্রিয় বন্ধু আব্দুর রশিদ, ভালো থাকিস। অনেক ভালো থাকিস। তোর নিটোল বন্ধুত্ব আমার জীবনের একটি অমূল্য অর্জন। ধন্য হয়েছি, ঋদ্ধ হয়েছি তোর সঙ্গে শৈশব কৈশোর কাটাতে পেরে। তোকে যদি বন্ধু হিসেবে না পাই, তবে আমি আর কোনও পুনর্জন্ম চাই না। আমার দরকার নেই আর কোনও ছেলেবেলা।
ভালো থাকিস বন্ধু। সবসময় খুব ভালো থাকিস। হাসি, গান, আনন্দে মুখরিত হয়ে থাক তোর জীবনের প্রতিটি দিন। কখনও অজান্তেও যদি তোর মনে কোনও কষ্ট দিয়ে থাকি। আমি জানি, দিয়েছিও। যদি পারিস বন্ধু, আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১০৮২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/০৭/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast