তনুর ভালোবাসার গল্প( দ্বিতীয় অংশ)
তনু ফোনটা কেটে দেবে না ধরবে ভাবছে।ঘরে কেউ নেই। এখন বখাটেকে কতগুলো গরম বাক্য শুনিয়ে দেয়া যায়।ওর জন্য আজ স্যারের বাসায় পড়াটা হলো না।তাই সে ফোনটা রিসিভ করলো।
বখাটে ছেলেটা একটা কাঁশি দিয়ে বলল,
"হ্যালো, কেমন আছেন আপনি?"
তনু-কে আপনি?আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?আর আমাকে ফোন করেছেন কেন?আমি কি আপনার পরিচিত?
বখাটে-আমাকে চিনবেন না।তবে আমি আপনাকে চিনি।আর নাম্বার স্বপ্নে পেয়েছি।
তনু-শুনুন, পরিচিত হলে নাম বলুন। আর স্বপ্নে কেউ নাম্বার পায়?মেয়ে পটানোর ডায়লগ বাদ দিন।এসব কোনো ভদ্র মানুষের কাজ না।আর কখনো ফোন দিবেন না।দিলে,আমাকেও অভদ্র হতে হবে।
বখাটে -আপনার নাম তনু।ঠিক বললাম।
ভাইরে! রাগ করেন কেন। আমার বড় পরিচয় আমি মানুষ।
তনু- তো!আমি কী করব?
বখাটে-আপাতত, আমার সাথে কথা বললেই চলবে।হাহাহা
তনু-শুনুন,ফাজলামি রাখেন।ভালো ভাবে বলছি আর ফোন দিবেন না।
বখাটে-চিন্তা করে দেখব।এসএসএম তো দেওয়া যাবে।হাহাহা
তনু-আমাকে তো চেনেন না।তাই ফাজলামি করছেন।চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ব।
বখাটে-আমি আপনার পনের গোষ্ঠী উদ্ধার করব।হাহাহা
তনু-এই বেটা।ছোট লোক, ইতর,অভদ্র,বেহায়া।জুতা পেটা করব।
বখাটে- এই বেটি।বড় লোক, সুন্নতি,ভদ্র,সহায়া। জুতা নিয়ে দৌড় মারব।
তনু-কুত্তা,ছাগল,বলদ ,ভেড়া,বান্দর।
বখাটে-কুত্তি,ছাগলি,গাভি,ভেড়ী,বান্দরনি।
তনু ফোনটা কেটে দিলো।রাগে সে ফুপাচ্ছে।বখাটেটা আবার ফোন দিলো ।তনু কেটে দিলো।আবার দিলো ।তনু এবার কেটে ফোনটা অফ করে দিলো।এক গ্লান পানি খাওয়ার পর তার মেজাজ কিছুটা ঠান্ডা হলো।
তনুর মেজাজটা পুরোপুরি ঠান্ডা হতে বেশ খানিকটা সময় লাগলো।এবার সে বখাটের সাথে কী কী কথা বলল তা মনে করার চেষ্টা করলো।আর তাতে মেজাজটা আবার চেতে উঠল।কিন্তু বখাটের পাল্টা গালিগুলোর কথা মনে হতেই হাসি পেল।বখাটেটা ফাজিলও বটে।
ঘন্টা খানিক পরে ফোনটা অন করতেই এসএমএস আসলো ।
তনু তা দেখলো।লেখা: I m extremely sorry.plz don't mind.forgive me.I'll never call u again.but I will wish u on every special days.keep well.Ur's well-wisher.
তনু জোকারটার কথা ভেবে বেশ অনুতপ্ত হলো। ওভাবে খারাপ কথাগুলো না বললেও সে পারতো।নিশ্চয় ছেলেটা বেশ শিক্ষিত। নির্ভুল ইংরেজি এসএমএস করেছে।আরো ভালোভাবে বুঝিয়ে না করা যেতো।সে যদি আবার ফোন দেয় তবে সরি বলে নেবে।
তনুর আজ জন্মদিন।রাত ০০.০০ টা। একটা sms এলো । "আপনি জানেন কি?গতকাল রাতে ফুলেরা মিটিং ডেকেছিল।সেখানেই সিদ্ধান্ত হলো সবগুলো গোলাপ তাদের সুরভি আপনাকে দেবে,গন্ধরাজ তাই মান করেছে।শুভ জন্মদিন।"
তনুতো অবাক! জোকারটা কাব্যিকতাও জানে!কিন্তু কে সে? আমার জন্মদিনের খবরও রাখে। নিশ্চয়, আমার কোনো ক্লাসমেট।নতুবা কোনো আত্মীয়।
সাথে সাথে আরো একটা sms ।"আমার ঐ sms টা আমাকে দিন।যেটাতে বলেছিলাম আর ফোন দেবো না।ওটাতে কিছু সংশোধনী প্রয়োজন। একটা বাক্যে ভুল ছিল। "I'll never call u again." এটা ভুল লিখেছিলাম। "চাইলেই কিছু কথা, না বলা যায় না,কিছু আবেগ মনে পুষে, ভালো থাকা যায় না।"
তনু কবিতা খুব ভালো বোঝে।হেলাল হাফিজ তার প্রিয় কবি।কবিতার প্রতি ভীষণ ঝোক।বান্ধবীরা তাই তাকে "ব্যাকডেটেড" বলে।তাই এ দু লাইনের ভাবসম্প্রসারনটা মনে মনে লিখল।
জোকারটা তাহলে ক্লাসমেট বা আত্মীয় কেউ না।তবে কে সে? তাহলে কি সে আবারো ফোন দেবে?
না,এবার আর উত্তেজিত হয়ে না, ছলে -বলে -কলে -কৌশলে তার পরিচয়টা জেনে নেবো। তনু কন্টাক্ট লিস্ট থেকে নাম টা খুঁজে বের করে এডিট করলো। বখাটে হলো জোকার। কিন্তু জোকারটা কে?? ভাবতে ভাবতে তনু ঘুমিয়ে গেলো।
রাত ১:২০।মোবাইলের ভাইব্রেশনে তনুর ঘুম ভেঙ্গে গেলো।তনুর মন বলছিল জোকারটা ফোন দেবে। তাই সে ফোনটা সাইলেন্ট মুডে রেখেছিল।তনু মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো জোকারটার ফোন।কিন্তু এখন কথা বলা সম্ভব না । তাই সে কলটা কেটে পাওয়ার অফ করে নিলো।
তনুর ঘুম ভাঙল মোবাইলের এলার্মে।স্যারের বাসায় পড়া আছে।
মোবাইলটা অন করতেই একটা sms এলো ।"আজ দেখা হবে।" ব্যস, এটুকুই।
তনু আজ হলুদ একটা ড্রেস পরবে।ড্রেসটা তার খুব প্রিয়।তার ধারনা এটাতে তাকে পরীর মতো লাগে।আজ তার জন্মদিন, তাই সে পরী সাজবে।
তনু রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিল।একটা sms এলো।" বাহ্,বেশ লাগছেতো!নজর না লাগে যেন চান্দের গায়!"
তনু চারদিকে ঘুরেঘুরে তাকাল।
তনুর মা আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে জেগেছেন।আজ তনুর জন্মদিন।মেয়ের জন্য পছন্দের পায়েস রেঁধেছেন।
"এই তনু....তনু.. মা ওঠ্।ছয়টা বাজে।আর কতো ঘুমাবি।পড়তে যাবি না? "
রাত সাড়ে ১১ টায় ঘুমিয়েছিল তনু।মার ডাকে তনুর স্বপ্নটা ভেঙে গেল।ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়।তনু মোবাইলটা হাতে নিল। চারটি sms এসেছে।
তনুর বান্ধবী ইরা,সম্পা,লিপি আর মেঘলা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে sms পাঠিয়েছে।বখাটে তাহলে তনুর জন্মদিনটা জানে না।
তনু স্বপ্নের কথা মনে করে হাসছে।"বখাটেটা মগজে ঠাই নিয়েছে।তা না হলে স্বপ্নে এলো কেন?"
বেশ.... কয়েকদিন পর।
তনুর পরীক্ষা চলছে। তাই সে রাত জেগে অঙ্ক কষছে।দিনটা অাগস্ট মাসের প্রথম রবিবার। তনুর মোবাইলে sms এলো।বখাটের sms।
"আমাকে চিনতে পেরেছেন?সেই রাতের বিশ টাকার টকটাইমের দাবিতে ফিরে আসলাম।হয় বিশ টাকা দিন,নয়তো বন্ধু করে নিন।"HAPPY FRIENDSHIP DAY"....(নীল)
"জোকারটার নাম নীল।এটা কেমন নাম? লাল মিয়া,কালা মিয়া শুনেছি,কিন্তু নীল মিয়া!"
আজ FRIENDSHIP DAY । তনু বন্ধুদের সাথে কলেজে আড্ডা দিচ্ছে।হঠাৎ একটা sms এলো।
"সুনীল বন্ধু ;তোর চিরায়িত সুখের নীড়ে ঠাঁই দিবি আমায়?আমি এক ক্লান্ত পথিক, পাড়ি দিয়েছি কতো বিষাদি প্রান্তর,সহেছি কতো অযাচিত কষ্ট,ভেঙেছে ক্ষণে ক্ষণে হৃদদর্পন।(নীল)"
তনুর খুব ভালো লাগলো কথাগুলো।আর ভালো লাগবেই না কেন,তনু যে কাব্যপ্রেমী।বখাটে আসলে কী চায়? সেদিনের পর আর তো ফোনও দিলো না।আজ রাতে তনু তাকে ফোন করবে।
তনুর পুরো নাম তানিশা তাবাসসুম তনু।চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট।
ইমিডিয়েট বড় বোনটা অসুস্থ। ক্লাস ফোরে পড়ার সময় একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।পরীক্ষা করিয়ে জানা যায় সে বিটা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত । অনেক চিকিৎসা করিয়েও কোনো লাভ হয় নি।নিয়মিত রক্ত নিতে হয়।বোনটির নাম মাইমুনা মেহজাবিন মুন্নি।
দু'বোনের বড় দু'ভাই।ছোট ভাইটা বিসিএস দিয়ে পুলিশে আছেন আর বড় ভাই কলেজের প্রভাষক।তনুর বাবা সরকারি প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
তনু কলেজ থেকে ফেরার সময় মোবাইলে রিচার্জ করে এসেছে।আজ রাতে নীল মিয়ার রহস্য উন্মোচন করবে।
রাত ৯.০০ টা।রাতের খাবার খাওয়া শেষ।তনু নিজের রুমে। মুন্নি আজ বাড়িতে নেই।সকালে মামাতো বোনের সাথে তাদের বাড়িতে গিয়েছিল। মামা আসতে দেয় নি।তনু ফোনটা হাতে নিল।নীল মিয়া sms করেছে।
" যদি অনুমতি পেতাম, ফোন দিতাম।"
তনু টেক্সট করলো, " অনুমতি দিলাম।"
সাথে সাথে স্ক্রিনে "বখাটে" লেখা ভেসে উঠলো।তনু ফোনটা রিসিভ করলো।
তনু:হ্যালো!
নীল :ভালো আছেন?
তনু:ভালো আর থাকতে দিলেন কই?কে রে ভাই আপনি?
নীল :আমার পরিচয় দিলে আপনি আমাকে চিনবেন কিনা সিওর না। তাই বলছি না।
তনু:আপনি কি আমাকে চেনেন?
নীল :জ্বি, চিনি।তবে দেখি নি।
তনু:আমার নাম্বারটা আপনাকে কে দিল?
নীল :সেটা বলা যাবে না।টপ সিকরেট।
তনু:আমাকে ফোন করেন কেন?
নীল :ভালো লাগে,তাই।
তনু: আমাকে?
নীল : না,ফোন করতে।
তনু:আমার খুব বিরক্ত লাগে।
নীল :তাহলে আর ফোন করব না।
তনু:ধন্যবাদ।আমি খুশি হব।
নীল :আমি খুব কষ্ট পাব।
তনু:কেন?
নীল :সত্যিটা বললে,আপনি রেগে যাবেন।
তনু:আচ্ছা বলুন,আমি রাগব না।
নীল :না,থাক্।
তনু:আপনি বলুন।বললাম তো, আমি রাগব না।
নীল :আমি আপনাকে........
তনু:আপনি আমাকে কী?বলেন?
নীল :আমি আপনাকে.....
তনু:আরে কী শুরু করলেন, পুরোটা বলেন,আপনি আমাকে কী?
নীল :আমার লজ্জা করছে বলতে।
তনু:কেন?কী এমন কথা যে বলতে লজ্জা করছে? আর আপনিতো পুরুষ।লজ্জা কিসের?বলেন?
নীল :আমাকে কয়েকদিন সময় দিতে হব।লজ্জাটা ভেঙে গেলেই বলবো।
তনু:ও! তাই!আপনার সময় লাগবে?
নীল :জ্বি।
তনু:সময় পাবেন না। যা বলার আজকেই বলুন।
তনু ভেতরে ভেতরে ফুলছে।বখাটে আসলেই বখাটে।বলে কিনা,"আমি আপনাকে..."আরে বেটা! বাকিটা কী তা জানি।কাছে পেলে বুঝাতাম,তনু কী জিনিস।
জানা নেই, চেনা নেই,আর বলে, "আমি আপনাকে...".।বখাটেটা মনে হয় বাংলা ছবি বেশি দেখে।
নীল :আমি আপনাকে.. অনেক বিরক্ত করেছি।অনেক মন্দ মন্দ কথা বলেছি।আমাকে ক্ষমা করবেন।
তনু:এই কথা।এটা বলতেই আপনার লজ্জা লাগছিল।কয়েকদিন সময়ের দরকার ছিল।
নীল:আসলে কখনো কোন মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইনি তো, তাই লজ্জা করছিল।আর আপনি বললেন না, আমি পুরুষ!
তনু:বুঝলাম।কিন্তু আমি এ কথা শুনে রাগ করব কেন?
নীল : আমি আপনাকে বিরক্তও করলাম,আবার বলছি আর ফোন না করতে পারলে কষ্ট পাব।এ কথা শুনেতো রাগই করবেন,তাই না?আবার ক্ষমা চাইতেও লজ্জা লাগছে।
তনুর বুঝতে বাকি রইল না,বেটা একটা ফাজিল নাম্বার ওয়ান।মজা নিচ্ছে।নিজেকে খুব সেয়ানা ভাবে।
তনু:সবই বুঝলাম।আসলেই দুঃখজনক।কিন্তু ফোন না দিতে পারলে কষ্ট পাবেন কেন?
নীল : আসলে আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে বাজি ধরেছি, আপনার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করবো।এখন হেরে গেলে বাঁচা মরা সমান।
তনু: বাজিটা কি টাকার?
নীল : জ্বি।
তনু: কত টাকার?
নীল :৫০০।
তনু:আমার কাছ থেকে নিয়ে তাকে দিয়ে দিয়েন।
নীল :আসলে টাকাটা ব্যাপার না।ইজ্জতই আসল।
তনু:আপনিতো শিক্ষিত।আচ্ছা বলুন তো, এগুলো কি ঠিক?অপরিচিত কাউকে বিরক্ত করা,বন্ধুর সাথে তাকে নিয়ে বাজি ধরা।
নীল : অর্ধেক ঠিক,অর্ধেক ভুল।
তনু: বুঝলাম না।
নীল :আমার যা বয়স, আমি এসব করতেই পারি। আর দোষের মধ্যে এটা লঘুদোষ।এখনইতো চ্যালেঞ্জ নেওয়ারই বয়স।
তনু: আপনার সাথে কথায় পারব না।রাখি। আমি পড়তে বসব।
নীল :আমি কি বন্ধুটার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নেব?
তনু: আগে পরিচয়টা দেন।
নীল:আমি নীল। বাবার নাম লাল, মায়ের নাম গোলাপী,দাদার নাম কালা মিয়া। দ্যাটস অল।
তনু:বাহ্,ইউনিক।নানা রঙের বাহারি নাম।
নীল:জ্বি,আমরা সবাই রংবাজ।হাহাহা।
তনু:থাকেন আপনার রঙিন দুনিয়ায়।রাখছি।
নীল:হ্যালো,,,, হ্যালো,,,,
তনু ফোনটা কেটে দিল।বাবারে বাবা!এটাতো জোকারের জাহাজ।কথা বলার চেয়ে হাসায় বেশি।পাত্তা দিলে ঘাড়ে চড়বে।
তনু খুব সাদাসিধে একটা মেয়ে।এ যুগের সাথে অনেকটায় বেমানান।তার কবিতা ভালো লাগে।পুরোনো দিনের গান ভালো লাগে।তার স্বপ্নের পরিধিও খুব ছোট।এমন একজনকে মনের মানুষ হিসেবে পেতে চায়,যে তাকে সবসময় বুঝবে।তার ভালো লাগা, মন্দ লাগা কে গুরুত্ব দেবে।না থাক তার অঢেল টাকা পয়সা।সুন্দর একটা মন থাকবে। তবে ছেলেটাকে অবশ্যই লম্বা হতে হবে।তনু তার বুকে মাথা গুজে হাসবে,কাঁদবে।
তনুর একটা স্বপ্ন ।তার সাথে যার বিয়ে হবে তার নিজের একটা ছোট্ট বাড়ি থাকবে।সেই বাড়ির উঠোনে একটা দোলনা থাকবে।তনু তাতে বসে কবিতা,গল্প, উপন্যাস পড়বে।
সেই বাড়িতে ফুলের বাগান থাকবে।বাগানের ফুলের সুবাস তার শোয়ার ঘরে ঢুকবে।
তনু আজ আর পড়াতে মন বসাতে পারছে না।স্বপ্নের জগতে বারবার মনটা উড়াল দিচ্ছি।বখাটেটার জন্য আগামী পরীক্ষাটা খারাপ হবে।আর মাত্র দুদিন বাকি।সিলেবাসের অর্ধেকটাও শেষ করতে পারে নি তনু।খাওয়া দাওয়া শেষ করে সে শুয়ে পড়ল।
রাত ১১ টা।তনুর দুচোখের পাতায় ছিঁটেফোটা ঘুমের লেশমাত্র নেই।মোবাইলটা হাতে নিয়ে বখাটের sms গুলো পড়তে লাগল।আর ভাবতে লাগল,
"কে হতে পারে ছেলেটা?গলাটা বেশ পরিচিত মনে হলো।"ছোট ভাইয়্য়াকে নাম্বারটা দেব কি?না থাক,পরে ছেলেটার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে।আর সে কী এমন করেছে?এখন মোবাইলে হরহামেশায় এমন হয়।আমি পাত্তা না দিলেই হচ্ছে।"
পরের দিন সকাল ৬টা।যথারীতি তনু স্যারের বাসায় পড়তে যাবে।লিপি ফোন দিল।জানালো আজ স্যার অসুস্থ, তাই পড়াবে না।লিপি তনুকে তাদের বাড়িতে আসতে বলল।
তনুর এই বান্ধবীটা তনুকে খুব ভালোবাসে।সবসময় হেল্প করে।অনার্সের শুরু থেকে তাদের বন্ধুত্ব। দুজনের বাড়ি একই ইউনিয়নে। কিন্তু তনুর কখনো তাদের বাড়িতে যাওয়া হয় নি। লিপি কিন্তু কয়েকবার তনুদের বাড়িতে এসেছে। তনুর বড় ভাইয়ের বিয়েতে এসেছে,বড় ভাইয়ের বড় মেয়ের জন্মদিনে এসেছে।আসলে লিপিদের বাড়িতে যাওয়ার মতো কোনো উপলক্ষ্য তৈরি হয় নি,আর এমনিতেও যাওয়া হয় নি।আজকে কেনো যেতে বলল তাও জিজ্ঞেস করা হয়নি।হয়ত স্যারের বাসায় পড়া নেই, আবার কলেজও নেই, তাই যেতে বলেছে।
তনু তাদের বাড়িটাও চেনে না।তবে লিপির বড় ভাইকে সবাই চেনে।উনার নাম বললেই যে কেউ দেখিয়ে দেবে।কিন্তু উনার নামটা কী? বেশ কয়েকবার লিপির মুখে শুনেছে কিন্তু এখন মনে করতে পারছে না।তবে "আ"দিয়ে নামটা, এটা নিশ্চিত।
সকাল ১০ টায় তনু বাড়ি থেকে বের হল।লিপিকে ফোন দিয়ে তার বড় ভাইয়ের নাম জেনে নিল।
লিপিদের বাড়িটা পাকা রাস্তার খুব কাছেই।গাড়ি থেকে নেমে ৫ মিনিট মতো লাগল।পাচিলে ঘেরা ছোট একটা বাড়ি।গেইটের দু'ধারে বাগান বিলাসের ঝোপ।বাড়িটার নামটা বেশ ইউনিক। গেইটের পাশে লেখা "আতুর ঘর"।
লিপি এসে গেইট খুলে তনুকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল।ভেতরে দু'পাশে ফুলের বাগান।উঠোনে করমচা আর বাতাবিলেবু গাছ।
তনুকে নিয়ে লিপি সোজা তার রুমে বসাল।বাড়িতে মনে হয় কেউ নেই।কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।লিপি জানালো যে খুব সকালে তার বড় ভাই কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতে চলে যান। ছোট ভাইটা স্যারের বাসায় পড়তে গেছেন।আর তার মা আজ খুব সকালে মামার বাড়িতে গেছেন।লিপিকেও সাথে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সে যেতে চায়নি।তাছাড়া ভাইদের খাবারের ব্যবস্থাও করতে হবে।
তনু সবগুলো রুম ঘুরে ঘুরে দেখছে।বেশ পরিপাটি করে সাজানো -গোছানো।লিপি মেয়েটা খুব সংসারি।যার ঘরে ঘরনী হয়ে যাবে, সে বেটা খুবই ভাগ্যবান।
লিপি তনুর জন্য নাস্তা তৈরি করে নিয়ে এল।দু' বান্ধবী একসাথে বসে গল্প করে নাস্তা খাচ্ছে।বখাটের কথা লিপিকে এখনো বলা হয় নি।কথায় কথায় তনু লিপিকে বলতে শুরু করল।
তনু:তোকে একটা কথা বলা হয়নি।
বেশ ক'দিন থেকে একটা ছেলে ফোনে খুব জ্বালাচ্ছে।
প্রায় সময় sms করে।
আবার ফোনও দেয়।
নাম্বার কোথায় পেল জিজ্ঞেস করলে একেক বার একেক কথা বলে।
লিপি: তাই নাকি!
u r so lucky.
কই,আমাদের তো কেউ ফোন দেয় না।
আসলে তোর মতো সুন্দরি নাতো,
তাই কেউ পছন্দ করে না।
ইস্,আমাকে কেউ যদি এভাবে ফোন করতো।
তনু:ফাজলামি ছাড়।
আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না,ছেলেটা কে হতে পারে।
লিপি:নাম জিজ্ঞেস করিস নি?
তনু: সে তো বলে নীল।কয়েকটা sms এর শেষে এ নামটা লিখেছে।
লিপি: বাহ্।সুন্দর নামতো।নীল-তনু।শুনতে ভালোই লাগছে।
তনু: ধুর!তবে ছেলেটা বেশ শিক্ষিত ও রুচিশীল।
লিপি: তুই তা কী করে বুঝলি?
তনু: কথা বলার ধরন,sms লেখা,আর গানের রুচি দেখে।
লিপি: তোকে গানও গেয়ে শুনিয়েছে।ডুবে ডুবে এত জল খেয়েছো বন্ধু।
তনু: আরে না।
রেকর্ডিং শুনিয়েছে।
আর sms গুলো কবিতার মতো করে লিখেছে।
লিপি: তুই কি তার প্রেমে পড়ে গেলি নাকি?
তনু: মার খাবি।
যাকে দেখি নি, তার প্রেমে পড়ব কেন?
তবে সে আমার মগজে ঘুরঘুর করছে।
পড়ায় মন বসাতে পারছি না।
লিপি: সর্বনাশ! তুই তো দেখি সত্যি সত্যি তার প্রেমের সাগরে সাঁতরাচ্ছিস।
তনু: ও তাই! তুইতো আমাকে ভাল করেই চিনিস।আমি কী চিজ।ওত সহজ না।
তনু দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে তবেই বাড়িতে ফিরেছে।
বিকাল ৪.১৫ টা।
তনু বিছানায় শুয়ে শুয়ে থিয়োরি পড়ছে।তনুর মোবাইলটা বেজে উঠল।বখাটে ফোন করেছে।আজ পিক আওয়ারে ফোন।
তনু ফোনটা রিসিভ করল।
তনু:হ্যালো
নীল:কেমন আছেন?
তনু:যেমন থাকার তেমন।(তনু মনে মনে বলল,আপনি কেমন আছেন?)
নীল:জ্বি, ভালো আছি।
তনু: আমি কি আপনাকে ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করেছি?
নীল:ও। করেন নি?আসলে নেটওয়ার্কের সমস্যা । ঠিকমত শুনতে পাই নি।
তনু: কেন ফোন করেছেন সেটা বলুন?
নীল: একটা নিউজ দিতে।
তনু: কিসের নিউজ?
নীল:বাজির নিউজ।
তনু: আপনার বন্ধুর সাথে বাজির?
নীল: জ্বি। সে আমাকে ৫০০টাকা দিয়েছে।
তনু: কেন? আপনি কি জিতেছেন?
নীল: হ্যাঁ।সে আমার কললিস্টে আপনার নাম্বার দেখেছে এবং কতক্ষণ আলাপ তাও দেখেছে।তারপর হার মেনেছে।৫০০ টাকা ফিফটি ফিফটি।আপনার অংশ আপনার মোবাইলে পোঁছে গেছে।
তনু:মানে কি? ফিফটি ফিফটি।আমার মোবাইলে পৌঁছে গেছে।
নীল:আপনাকে ফ্লাক্সিলোড করেছি।
তনু: এটা চরম বাড়াবাড়ি।আমি কখন আপনার বন্ধুত্ব কবুল করলাম।দেখুন,সবকিছুর একটা লিমিট আছে।
নীল:আমার কী দোষ!বন্ধুটা টাকা দিলো।
তনু:এ যুগে এভাবে একটা মেয়েকে বিরক্ত করা বাহাদুরির কাজ নয়।আমি কিন্তু হার্ড লাইনে যেতে বাধ্য হবো।
নীল:"তোমার জন্য না হয় আমি, খাটলাম ক'দিন জেল।
বন্ধুত্বের দাবিতে অনড় আমি, মেরেই যাবো তেল।"হাহাহ্হা
তনু:আবারো ফাজলামি করছেন।যদি পরিচিত কেউ হন,তবে পরিচয়টা দেন।তা না হলে ফোন দিবেন না।
নীল:আমিতো পরিচয় দিয়েছি।আর কাকে ভয় দেখান?আপনারতো জানা, আমি রংবাজ।হাহাহা।
তনু:আল্লাহ।কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম।
গো টু হেল।
তনু ফোনটা কেটে দিল।(চলবে)
বখাটে ছেলেটা একটা কাঁশি দিয়ে বলল,
"হ্যালো, কেমন আছেন আপনি?"
তনু-কে আপনি?আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?আর আমাকে ফোন করেছেন কেন?আমি কি আপনার পরিচিত?
বখাটে-আমাকে চিনবেন না।তবে আমি আপনাকে চিনি।আর নাম্বার স্বপ্নে পেয়েছি।
তনু-শুনুন, পরিচিত হলে নাম বলুন। আর স্বপ্নে কেউ নাম্বার পায়?মেয়ে পটানোর ডায়লগ বাদ দিন।এসব কোনো ভদ্র মানুষের কাজ না।আর কখনো ফোন দিবেন না।দিলে,আমাকেও অভদ্র হতে হবে।
বখাটে -আপনার নাম তনু।ঠিক বললাম।
ভাইরে! রাগ করেন কেন। আমার বড় পরিচয় আমি মানুষ।
তনু- তো!আমি কী করব?
বখাটে-আপাতত, আমার সাথে কথা বললেই চলবে।হাহাহা
তনু-শুনুন,ফাজলামি রাখেন।ভালো ভাবে বলছি আর ফোন দিবেন না।
বখাটে-চিন্তা করে দেখব।এসএসএম তো দেওয়া যাবে।হাহাহা
তনু-আমাকে তো চেনেন না।তাই ফাজলামি করছেন।চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ব।
বখাটে-আমি আপনার পনের গোষ্ঠী উদ্ধার করব।হাহাহা
তনু-এই বেটা।ছোট লোক, ইতর,অভদ্র,বেহায়া।জুতা পেটা করব।
বখাটে- এই বেটি।বড় লোক, সুন্নতি,ভদ্র,সহায়া। জুতা নিয়ে দৌড় মারব।
তনু-কুত্তা,ছাগল,বলদ ,ভেড়া,বান্দর।
বখাটে-কুত্তি,ছাগলি,গাভি,ভেড়ী,বান্দরনি।
তনু ফোনটা কেটে দিলো।রাগে সে ফুপাচ্ছে।বখাটেটা আবার ফোন দিলো ।তনু কেটে দিলো।আবার দিলো ।তনু এবার কেটে ফোনটা অফ করে দিলো।এক গ্লান পানি খাওয়ার পর তার মেজাজ কিছুটা ঠান্ডা হলো।
তনুর মেজাজটা পুরোপুরি ঠান্ডা হতে বেশ খানিকটা সময় লাগলো।এবার সে বখাটের সাথে কী কী কথা বলল তা মনে করার চেষ্টা করলো।আর তাতে মেজাজটা আবার চেতে উঠল।কিন্তু বখাটের পাল্টা গালিগুলোর কথা মনে হতেই হাসি পেল।বখাটেটা ফাজিলও বটে।
ঘন্টা খানিক পরে ফোনটা অন করতেই এসএমএস আসলো ।
তনু তা দেখলো।লেখা: I m extremely sorry.plz don't mind.forgive me.I'll never call u again.but I will wish u on every special days.keep well.Ur's well-wisher.
তনু জোকারটার কথা ভেবে বেশ অনুতপ্ত হলো। ওভাবে খারাপ কথাগুলো না বললেও সে পারতো।নিশ্চয় ছেলেটা বেশ শিক্ষিত। নির্ভুল ইংরেজি এসএমএস করেছে।আরো ভালোভাবে বুঝিয়ে না করা যেতো।সে যদি আবার ফোন দেয় তবে সরি বলে নেবে।
তনুর আজ জন্মদিন।রাত ০০.০০ টা। একটা sms এলো । "আপনি জানেন কি?গতকাল রাতে ফুলেরা মিটিং ডেকেছিল।সেখানেই সিদ্ধান্ত হলো সবগুলো গোলাপ তাদের সুরভি আপনাকে দেবে,গন্ধরাজ তাই মান করেছে।শুভ জন্মদিন।"
তনুতো অবাক! জোকারটা কাব্যিকতাও জানে!কিন্তু কে সে? আমার জন্মদিনের খবরও রাখে। নিশ্চয়, আমার কোনো ক্লাসমেট।নতুবা কোনো আত্মীয়।
সাথে সাথে আরো একটা sms ।"আমার ঐ sms টা আমাকে দিন।যেটাতে বলেছিলাম আর ফোন দেবো না।ওটাতে কিছু সংশোধনী প্রয়োজন। একটা বাক্যে ভুল ছিল। "I'll never call u again." এটা ভুল লিখেছিলাম। "চাইলেই কিছু কথা, না বলা যায় না,কিছু আবেগ মনে পুষে, ভালো থাকা যায় না।"
তনু কবিতা খুব ভালো বোঝে।হেলাল হাফিজ তার প্রিয় কবি।কবিতার প্রতি ভীষণ ঝোক।বান্ধবীরা তাই তাকে "ব্যাকডেটেড" বলে।তাই এ দু লাইনের ভাবসম্প্রসারনটা মনে মনে লিখল।
জোকারটা তাহলে ক্লাসমেট বা আত্মীয় কেউ না।তবে কে সে? তাহলে কি সে আবারো ফোন দেবে?
না,এবার আর উত্তেজিত হয়ে না, ছলে -বলে -কলে -কৌশলে তার পরিচয়টা জেনে নেবো। তনু কন্টাক্ট লিস্ট থেকে নাম টা খুঁজে বের করে এডিট করলো। বখাটে হলো জোকার। কিন্তু জোকারটা কে?? ভাবতে ভাবতে তনু ঘুমিয়ে গেলো।
রাত ১:২০।মোবাইলের ভাইব্রেশনে তনুর ঘুম ভেঙ্গে গেলো।তনুর মন বলছিল জোকারটা ফোন দেবে। তাই সে ফোনটা সাইলেন্ট মুডে রেখেছিল।তনু মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো জোকারটার ফোন।কিন্তু এখন কথা বলা সম্ভব না । তাই সে কলটা কেটে পাওয়ার অফ করে নিলো।
তনুর ঘুম ভাঙল মোবাইলের এলার্মে।স্যারের বাসায় পড়া আছে।
মোবাইলটা অন করতেই একটা sms এলো ।"আজ দেখা হবে।" ব্যস, এটুকুই।
তনু আজ হলুদ একটা ড্রেস পরবে।ড্রেসটা তার খুব প্রিয়।তার ধারনা এটাতে তাকে পরীর মতো লাগে।আজ তার জন্মদিন, তাই সে পরী সাজবে।
তনু রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিল।একটা sms এলো।" বাহ্,বেশ লাগছেতো!নজর না লাগে যেন চান্দের গায়!"
তনু চারদিকে ঘুরেঘুরে তাকাল।
তনুর মা আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে জেগেছেন।আজ তনুর জন্মদিন।মেয়ের জন্য পছন্দের পায়েস রেঁধেছেন।
"এই তনু....তনু.. মা ওঠ্।ছয়টা বাজে।আর কতো ঘুমাবি।পড়তে যাবি না? "
রাত সাড়ে ১১ টায় ঘুমিয়েছিল তনু।মার ডাকে তনুর স্বপ্নটা ভেঙে গেল।ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়।তনু মোবাইলটা হাতে নিল। চারটি sms এসেছে।
তনুর বান্ধবী ইরা,সম্পা,লিপি আর মেঘলা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে sms পাঠিয়েছে।বখাটে তাহলে তনুর জন্মদিনটা জানে না।
তনু স্বপ্নের কথা মনে করে হাসছে।"বখাটেটা মগজে ঠাই নিয়েছে।তা না হলে স্বপ্নে এলো কেন?"
বেশ.... কয়েকদিন পর।
তনুর পরীক্ষা চলছে। তাই সে রাত জেগে অঙ্ক কষছে।দিনটা অাগস্ট মাসের প্রথম রবিবার। তনুর মোবাইলে sms এলো।বখাটের sms।
"আমাকে চিনতে পেরেছেন?সেই রাতের বিশ টাকার টকটাইমের দাবিতে ফিরে আসলাম।হয় বিশ টাকা দিন,নয়তো বন্ধু করে নিন।"HAPPY FRIENDSHIP DAY"....(নীল)
"জোকারটার নাম নীল।এটা কেমন নাম? লাল মিয়া,কালা মিয়া শুনেছি,কিন্তু নীল মিয়া!"
আজ FRIENDSHIP DAY । তনু বন্ধুদের সাথে কলেজে আড্ডা দিচ্ছে।হঠাৎ একটা sms এলো।
"সুনীল বন্ধু ;তোর চিরায়িত সুখের নীড়ে ঠাঁই দিবি আমায়?আমি এক ক্লান্ত পথিক, পাড়ি দিয়েছি কতো বিষাদি প্রান্তর,সহেছি কতো অযাচিত কষ্ট,ভেঙেছে ক্ষণে ক্ষণে হৃদদর্পন।(নীল)"
তনুর খুব ভালো লাগলো কথাগুলো।আর ভালো লাগবেই না কেন,তনু যে কাব্যপ্রেমী।বখাটে আসলে কী চায়? সেদিনের পর আর তো ফোনও দিলো না।আজ রাতে তনু তাকে ফোন করবে।
তনুর পুরো নাম তানিশা তাবাসসুম তনু।চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট।
ইমিডিয়েট বড় বোনটা অসুস্থ। ক্লাস ফোরে পড়ার সময় একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।পরীক্ষা করিয়ে জানা যায় সে বিটা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত । অনেক চিকিৎসা করিয়েও কোনো লাভ হয় নি।নিয়মিত রক্ত নিতে হয়।বোনটির নাম মাইমুনা মেহজাবিন মুন্নি।
দু'বোনের বড় দু'ভাই।ছোট ভাইটা বিসিএস দিয়ে পুলিশে আছেন আর বড় ভাই কলেজের প্রভাষক।তনুর বাবা সরকারি প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
তনু কলেজ থেকে ফেরার সময় মোবাইলে রিচার্জ করে এসেছে।আজ রাতে নীল মিয়ার রহস্য উন্মোচন করবে।
রাত ৯.০০ টা।রাতের খাবার খাওয়া শেষ।তনু নিজের রুমে। মুন্নি আজ বাড়িতে নেই।সকালে মামাতো বোনের সাথে তাদের বাড়িতে গিয়েছিল। মামা আসতে দেয় নি।তনু ফোনটা হাতে নিল।নীল মিয়া sms করেছে।
" যদি অনুমতি পেতাম, ফোন দিতাম।"
তনু টেক্সট করলো, " অনুমতি দিলাম।"
সাথে সাথে স্ক্রিনে "বখাটে" লেখা ভেসে উঠলো।তনু ফোনটা রিসিভ করলো।
তনু:হ্যালো!
নীল :ভালো আছেন?
তনু:ভালো আর থাকতে দিলেন কই?কে রে ভাই আপনি?
নীল :আমার পরিচয় দিলে আপনি আমাকে চিনবেন কিনা সিওর না। তাই বলছি না।
তনু:আপনি কি আমাকে চেনেন?
নীল :জ্বি, চিনি।তবে দেখি নি।
তনু:আমার নাম্বারটা আপনাকে কে দিল?
নীল :সেটা বলা যাবে না।টপ সিকরেট।
তনু:আমাকে ফোন করেন কেন?
নীল :ভালো লাগে,তাই।
তনু: আমাকে?
নীল : না,ফোন করতে।
তনু:আমার খুব বিরক্ত লাগে।
নীল :তাহলে আর ফোন করব না।
তনু:ধন্যবাদ।আমি খুশি হব।
নীল :আমি খুব কষ্ট পাব।
তনু:কেন?
নীল :সত্যিটা বললে,আপনি রেগে যাবেন।
তনু:আচ্ছা বলুন,আমি রাগব না।
নীল :না,থাক্।
তনু:আপনি বলুন।বললাম তো, আমি রাগব না।
নীল :আমি আপনাকে........
তনু:আপনি আমাকে কী?বলেন?
নীল :আমি আপনাকে.....
তনু:আরে কী শুরু করলেন, পুরোটা বলেন,আপনি আমাকে কী?
নীল :আমার লজ্জা করছে বলতে।
তনু:কেন?কী এমন কথা যে বলতে লজ্জা করছে? আর আপনিতো পুরুষ।লজ্জা কিসের?বলেন?
নীল :আমাকে কয়েকদিন সময় দিতে হব।লজ্জাটা ভেঙে গেলেই বলবো।
তনু:ও! তাই!আপনার সময় লাগবে?
নীল :জ্বি।
তনু:সময় পাবেন না। যা বলার আজকেই বলুন।
তনু ভেতরে ভেতরে ফুলছে।বখাটে আসলেই বখাটে।বলে কিনা,"আমি আপনাকে..."আরে বেটা! বাকিটা কী তা জানি।কাছে পেলে বুঝাতাম,তনু কী জিনিস।
জানা নেই, চেনা নেই,আর বলে, "আমি আপনাকে...".।বখাটেটা মনে হয় বাংলা ছবি বেশি দেখে।
নীল :আমি আপনাকে.. অনেক বিরক্ত করেছি।অনেক মন্দ মন্দ কথা বলেছি।আমাকে ক্ষমা করবেন।
তনু:এই কথা।এটা বলতেই আপনার লজ্জা লাগছিল।কয়েকদিন সময়ের দরকার ছিল।
নীল:আসলে কখনো কোন মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইনি তো, তাই লজ্জা করছিল।আর আপনি বললেন না, আমি পুরুষ!
তনু:বুঝলাম।কিন্তু আমি এ কথা শুনে রাগ করব কেন?
নীল : আমি আপনাকে বিরক্তও করলাম,আবার বলছি আর ফোন না করতে পারলে কষ্ট পাব।এ কথা শুনেতো রাগই করবেন,তাই না?আবার ক্ষমা চাইতেও লজ্জা লাগছে।
তনুর বুঝতে বাকি রইল না,বেটা একটা ফাজিল নাম্বার ওয়ান।মজা নিচ্ছে।নিজেকে খুব সেয়ানা ভাবে।
তনু:সবই বুঝলাম।আসলেই দুঃখজনক।কিন্তু ফোন না দিতে পারলে কষ্ট পাবেন কেন?
নীল : আসলে আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে বাজি ধরেছি, আপনার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করবো।এখন হেরে গেলে বাঁচা মরা সমান।
তনু: বাজিটা কি টাকার?
নীল : জ্বি।
তনু: কত টাকার?
নীল :৫০০।
তনু:আমার কাছ থেকে নিয়ে তাকে দিয়ে দিয়েন।
নীল :আসলে টাকাটা ব্যাপার না।ইজ্জতই আসল।
তনু:আপনিতো শিক্ষিত।আচ্ছা বলুন তো, এগুলো কি ঠিক?অপরিচিত কাউকে বিরক্ত করা,বন্ধুর সাথে তাকে নিয়ে বাজি ধরা।
নীল : অর্ধেক ঠিক,অর্ধেক ভুল।
তনু: বুঝলাম না।
নীল :আমার যা বয়স, আমি এসব করতেই পারি। আর দোষের মধ্যে এটা লঘুদোষ।এখনইতো চ্যালেঞ্জ নেওয়ারই বয়স।
তনু: আপনার সাথে কথায় পারব না।রাখি। আমি পড়তে বসব।
নীল :আমি কি বন্ধুটার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নেব?
তনু: আগে পরিচয়টা দেন।
নীল:আমি নীল। বাবার নাম লাল, মায়ের নাম গোলাপী,দাদার নাম কালা মিয়া। দ্যাটস অল।
তনু:বাহ্,ইউনিক।নানা রঙের বাহারি নাম।
নীল:জ্বি,আমরা সবাই রংবাজ।হাহাহা।
তনু:থাকেন আপনার রঙিন দুনিয়ায়।রাখছি।
নীল:হ্যালো,,,, হ্যালো,,,,
তনু ফোনটা কেটে দিল।বাবারে বাবা!এটাতো জোকারের জাহাজ।কথা বলার চেয়ে হাসায় বেশি।পাত্তা দিলে ঘাড়ে চড়বে।
তনু খুব সাদাসিধে একটা মেয়ে।এ যুগের সাথে অনেকটায় বেমানান।তার কবিতা ভালো লাগে।পুরোনো দিনের গান ভালো লাগে।তার স্বপ্নের পরিধিও খুব ছোট।এমন একজনকে মনের মানুষ হিসেবে পেতে চায়,যে তাকে সবসময় বুঝবে।তার ভালো লাগা, মন্দ লাগা কে গুরুত্ব দেবে।না থাক তার অঢেল টাকা পয়সা।সুন্দর একটা মন থাকবে। তবে ছেলেটাকে অবশ্যই লম্বা হতে হবে।তনু তার বুকে মাথা গুজে হাসবে,কাঁদবে।
তনুর একটা স্বপ্ন ।তার সাথে যার বিয়ে হবে তার নিজের একটা ছোট্ট বাড়ি থাকবে।সেই বাড়ির উঠোনে একটা দোলনা থাকবে।তনু তাতে বসে কবিতা,গল্প, উপন্যাস পড়বে।
সেই বাড়িতে ফুলের বাগান থাকবে।বাগানের ফুলের সুবাস তার শোয়ার ঘরে ঢুকবে।
তনু আজ আর পড়াতে মন বসাতে পারছে না।স্বপ্নের জগতে বারবার মনটা উড়াল দিচ্ছি।বখাটেটার জন্য আগামী পরীক্ষাটা খারাপ হবে।আর মাত্র দুদিন বাকি।সিলেবাসের অর্ধেকটাও শেষ করতে পারে নি তনু।খাওয়া দাওয়া শেষ করে সে শুয়ে পড়ল।
রাত ১১ টা।তনুর দুচোখের পাতায় ছিঁটেফোটা ঘুমের লেশমাত্র নেই।মোবাইলটা হাতে নিয়ে বখাটের sms গুলো পড়তে লাগল।আর ভাবতে লাগল,
"কে হতে পারে ছেলেটা?গলাটা বেশ পরিচিত মনে হলো।"ছোট ভাইয়্য়াকে নাম্বারটা দেব কি?না থাক,পরে ছেলেটার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে।আর সে কী এমন করেছে?এখন মোবাইলে হরহামেশায় এমন হয়।আমি পাত্তা না দিলেই হচ্ছে।"
পরের দিন সকাল ৬টা।যথারীতি তনু স্যারের বাসায় পড়তে যাবে।লিপি ফোন দিল।জানালো আজ স্যার অসুস্থ, তাই পড়াবে না।লিপি তনুকে তাদের বাড়িতে আসতে বলল।
তনুর এই বান্ধবীটা তনুকে খুব ভালোবাসে।সবসময় হেল্প করে।অনার্সের শুরু থেকে তাদের বন্ধুত্ব। দুজনের বাড়ি একই ইউনিয়নে। কিন্তু তনুর কখনো তাদের বাড়িতে যাওয়া হয় নি। লিপি কিন্তু কয়েকবার তনুদের বাড়িতে এসেছে। তনুর বড় ভাইয়ের বিয়েতে এসেছে,বড় ভাইয়ের বড় মেয়ের জন্মদিনে এসেছে।আসলে লিপিদের বাড়িতে যাওয়ার মতো কোনো উপলক্ষ্য তৈরি হয় নি,আর এমনিতেও যাওয়া হয় নি।আজকে কেনো যেতে বলল তাও জিজ্ঞেস করা হয়নি।হয়ত স্যারের বাসায় পড়া নেই, আবার কলেজও নেই, তাই যেতে বলেছে।
তনু তাদের বাড়িটাও চেনে না।তবে লিপির বড় ভাইকে সবাই চেনে।উনার নাম বললেই যে কেউ দেখিয়ে দেবে।কিন্তু উনার নামটা কী? বেশ কয়েকবার লিপির মুখে শুনেছে কিন্তু এখন মনে করতে পারছে না।তবে "আ"দিয়ে নামটা, এটা নিশ্চিত।
সকাল ১০ টায় তনু বাড়ি থেকে বের হল।লিপিকে ফোন দিয়ে তার বড় ভাইয়ের নাম জেনে নিল।
লিপিদের বাড়িটা পাকা রাস্তার খুব কাছেই।গাড়ি থেকে নেমে ৫ মিনিট মতো লাগল।পাচিলে ঘেরা ছোট একটা বাড়ি।গেইটের দু'ধারে বাগান বিলাসের ঝোপ।বাড়িটার নামটা বেশ ইউনিক। গেইটের পাশে লেখা "আতুর ঘর"।
লিপি এসে গেইট খুলে তনুকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল।ভেতরে দু'পাশে ফুলের বাগান।উঠোনে করমচা আর বাতাবিলেবু গাছ।
তনুকে নিয়ে লিপি সোজা তার রুমে বসাল।বাড়িতে মনে হয় কেউ নেই।কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।লিপি জানালো যে খুব সকালে তার বড় ভাই কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতে চলে যান। ছোট ভাইটা স্যারের বাসায় পড়তে গেছেন।আর তার মা আজ খুব সকালে মামার বাড়িতে গেছেন।লিপিকেও সাথে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সে যেতে চায়নি।তাছাড়া ভাইদের খাবারের ব্যবস্থাও করতে হবে।
তনু সবগুলো রুম ঘুরে ঘুরে দেখছে।বেশ পরিপাটি করে সাজানো -গোছানো।লিপি মেয়েটা খুব সংসারি।যার ঘরে ঘরনী হয়ে যাবে, সে বেটা খুবই ভাগ্যবান।
লিপি তনুর জন্য নাস্তা তৈরি করে নিয়ে এল।দু' বান্ধবী একসাথে বসে গল্প করে নাস্তা খাচ্ছে।বখাটের কথা লিপিকে এখনো বলা হয় নি।কথায় কথায় তনু লিপিকে বলতে শুরু করল।
তনু:তোকে একটা কথা বলা হয়নি।
বেশ ক'দিন থেকে একটা ছেলে ফোনে খুব জ্বালাচ্ছে।
প্রায় সময় sms করে।
আবার ফোনও দেয়।
নাম্বার কোথায় পেল জিজ্ঞেস করলে একেক বার একেক কথা বলে।
লিপি: তাই নাকি!
u r so lucky.
কই,আমাদের তো কেউ ফোন দেয় না।
আসলে তোর মতো সুন্দরি নাতো,
তাই কেউ পছন্দ করে না।
ইস্,আমাকে কেউ যদি এভাবে ফোন করতো।
তনু:ফাজলামি ছাড়।
আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না,ছেলেটা কে হতে পারে।
লিপি:নাম জিজ্ঞেস করিস নি?
তনু: সে তো বলে নীল।কয়েকটা sms এর শেষে এ নামটা লিখেছে।
লিপি: বাহ্।সুন্দর নামতো।নীল-তনু।শুনতে ভালোই লাগছে।
তনু: ধুর!তবে ছেলেটা বেশ শিক্ষিত ও রুচিশীল।
লিপি: তুই তা কী করে বুঝলি?
তনু: কথা বলার ধরন,sms লেখা,আর গানের রুচি দেখে।
লিপি: তোকে গানও গেয়ে শুনিয়েছে।ডুবে ডুবে এত জল খেয়েছো বন্ধু।
তনু: আরে না।
রেকর্ডিং শুনিয়েছে।
আর sms গুলো কবিতার মতো করে লিখেছে।
লিপি: তুই কি তার প্রেমে পড়ে গেলি নাকি?
তনু: মার খাবি।
যাকে দেখি নি, তার প্রেমে পড়ব কেন?
তবে সে আমার মগজে ঘুরঘুর করছে।
পড়ায় মন বসাতে পারছি না।
লিপি: সর্বনাশ! তুই তো দেখি সত্যি সত্যি তার প্রেমের সাগরে সাঁতরাচ্ছিস।
তনু: ও তাই! তুইতো আমাকে ভাল করেই চিনিস।আমি কী চিজ।ওত সহজ না।
তনু দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে তবেই বাড়িতে ফিরেছে।
বিকাল ৪.১৫ টা।
তনু বিছানায় শুয়ে শুয়ে থিয়োরি পড়ছে।তনুর মোবাইলটা বেজে উঠল।বখাটে ফোন করেছে।আজ পিক আওয়ারে ফোন।
তনু ফোনটা রিসিভ করল।
তনু:হ্যালো
নীল:কেমন আছেন?
তনু:যেমন থাকার তেমন।(তনু মনে মনে বলল,আপনি কেমন আছেন?)
নীল:জ্বি, ভালো আছি।
তনু: আমি কি আপনাকে ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করেছি?
নীল:ও। করেন নি?আসলে নেটওয়ার্কের সমস্যা । ঠিকমত শুনতে পাই নি।
তনু: কেন ফোন করেছেন সেটা বলুন?
নীল: একটা নিউজ দিতে।
তনু: কিসের নিউজ?
নীল:বাজির নিউজ।
তনু: আপনার বন্ধুর সাথে বাজির?
নীল: জ্বি। সে আমাকে ৫০০টাকা দিয়েছে।
তনু: কেন? আপনি কি জিতেছেন?
নীল: হ্যাঁ।সে আমার কললিস্টে আপনার নাম্বার দেখেছে এবং কতক্ষণ আলাপ তাও দেখেছে।তারপর হার মেনেছে।৫০০ টাকা ফিফটি ফিফটি।আপনার অংশ আপনার মোবাইলে পোঁছে গেছে।
তনু:মানে কি? ফিফটি ফিফটি।আমার মোবাইলে পৌঁছে গেছে।
নীল:আপনাকে ফ্লাক্সিলোড করেছি।
তনু: এটা চরম বাড়াবাড়ি।আমি কখন আপনার বন্ধুত্ব কবুল করলাম।দেখুন,সবকিছুর একটা লিমিট আছে।
নীল:আমার কী দোষ!বন্ধুটা টাকা দিলো।
তনু:এ যুগে এভাবে একটা মেয়েকে বিরক্ত করা বাহাদুরির কাজ নয়।আমি কিন্তু হার্ড লাইনে যেতে বাধ্য হবো।
নীল:"তোমার জন্য না হয় আমি, খাটলাম ক'দিন জেল।
বন্ধুত্বের দাবিতে অনড় আমি, মেরেই যাবো তেল।"হাহাহ্হা
তনু:আবারো ফাজলামি করছেন।যদি পরিচিত কেউ হন,তবে পরিচয়টা দেন।তা না হলে ফোন দিবেন না।
নীল:আমিতো পরিচয় দিয়েছি।আর কাকে ভয় দেখান?আপনারতো জানা, আমি রংবাজ।হাহাহা।
তনু:আল্লাহ।কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম।
গো টু হেল।
তনু ফোনটা কেটে দিল।(চলবে)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কামরুজ্জামান সাদ ২৫/০১/২০১৮শেষটা করুণ হবে বলে মনে হচ্ছে।
-
মধু মঙ্গল সিনহা ২২/০১/২০১৮ভালো লাগলো।