তুমি ভালো আছো তো
বেশ কিছুদিন ধরে নিজের কাছে একটা অপরাধবোধ কাজ করছে। কাউকে বলতে পারছিনা আবার না বলেও থাকতে পারছিনা। আজকাল নিজেকে খুবই স্বার্থপর মনে হচ্ছে। ভালোবাসা কি আমি এতোসেতো বুঝিনা তবে এটুকু বুঝেছি যে, সবাইকে নিয়ে ভালো থাকাটাই ভালোবাসা। যদিও অনেকেই আমাকে অকর্মা অপদার্থ বলতো। কেউ কেউ পাগলা অনিক বলে ডাকতো। সেই অনিক কিনা নিজের স্বার্থেই রিয়াকে জীবনসঙ্গী করে এনেছে? সেটাই ভাবছি। রিয়ার সাথে আমার খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে পরিচয় ঘটে। আমি পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিলাম আর রিয়া ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য হন্যে হয়ে বিভিন্ন ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিচ্ছিলো। আমার বাসার বিপরীতে তাঁর বাসা হলেও একই পথে যাতায়াতে প্রতিদিন দেখা হতো। কিন্তু কথা হতো না। আমি আসলে চাকরি না পাওয়ার হতাশায় বিভোর ছিলাম তাই তার অসাধারণ সৌন্দর্য আমার নজরে আসেনি। আমি হতাশায় অসুস্থ হয়ে পড়লে হটাৎ তার অপ্রত্যাশিত আগমন ঘটে আমার এই বেকার মানুষের দরজায়। আমি বুঝে উঠার আগেই আমার বিষয় সে গড় গড় করে বলে যেতে লাগল। খুবই সঙ্গোপনে আমাকে তাঁর অবুঝ মনে লুকিয়ে রেখেছিল সেটা তখন খুবই সুক্ষভাবে তুলে ধরলো। আমি বিষ্মিত হলাম তবুও কিছু বললাম না, বেকার মানুষের এতোসেতো বুঝে কাজ নাই। না বুঝার ভান করে শুধু মিষ্টি কথার ফুলঝুরিতে হারিয়ে গেলাম। অসাধারণ মেধাবী হওয়ায় সে ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পেল। কিছুদিন পর চাকরি নামের সোনার হরিণটা আমার কাছে ধরা দিলো। অকর্মা অপদার্থ ছেলেটা অবশেষে কাজে কর্মে প্রশংসার জোয়ারে ভেসে যেতে লাগলো। চাকরির সুবাদে আমার চিরচেনা শহর ছেড়ে ঢাকা শহরের যান্ত্রিক জীবন বেছে নিতে হলো । কিছুতেই এই শহরে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। মাঝে মাঝে নিজেকে একা মনে হতো। মনে হতো কেউ যদি আমার সঙ্গ দিতো, আমাকে কেউ একটু আধটু ভালোবাসতো। এভাবে কিছুদিন চলতে থাকলো। হটাৎ মনে মনে খোঁজা চিরচেনা অনন্যা সুন্দরী রিয়া নামটি মনে পড়ে গেল। ছুটে গেলাম তাঁর প্রিয় ক্যাম্পাস ঢাকা ভার্সিটিতে। এবার আমিই তাঁকে চমকে দিয়ে বলে ফেললাম ভালোবাসি তোমাকে। তাঁর চোখের চাহনি আর মিষ্টি হাঁসিতে বুঝলাম সে আনন্দিত, উচ্ছাসিত, উদ্ভাসিত। সে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না যে, তাঁর সেই চিরচেনা মন হরণ করা প্রিয় মানুষটি তাঁর কাছে এভাবে ধরা দিবে, এতো সহজে ভালোবেসে এভাবেই আপন করে নেবে। আমি তাঁকে বললাম, পারবে কি একান্ত আপন করে ভালোবাসতে? পারবে কি আমার সুখ দুঃখের সাথী হতে? সে মাথা নাড়িয়ে বললো, ‘হু’। আমরা সময়ক্ষেপণ না করে পরিবারের সম্মতিতে জমকালো আয়োজনে দুজন দুজনার জীবনসঙ্গী হয়ে গেলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে দুজনে কিছুদিন দেশের এ প্রান্ত হতে ঐ প্রান্ত ছুটে বেড়াবো। যেই কথা সেই কাজ। দেশের বিভিন্ন দর্শণীয় স্থান ঘুরে আপন নিড়ে ফিরে এসে নিজের চাকরিতে মনোনিবেশ দিলাম। আর রিয়া তো পুরো ঘরণী হয়ে গেল। তাঁর প্রিয় ক্যাম্পাস ছেড়ে আমাদের সংসারে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকলো। আমার জন্য তাঁর নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা বিসর্জন দিতে থাকে। তাঁর ভালো লাগা মন্দ লাগা যেন আমার ভালো লাগা মন্দ লাগার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। কিছু কিছু বিষয় নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে যেটা সে অপছন্দ করতো। যে ব্যক্তি কখনো মিথ্যা কথা বলতো না , আমাকে খুশি রাখার জন্য মাঝে মাঝে মিথ্যা কথা বলা শুরু করছে। আমি আর আমাদের সংসার ছাড়া তাঁর মস্তিষ্কে আর কোন চিন্তা এখন আর ঘুরপাক খায় না। তাঁর প্রিয় ক্যাম্পাস আর কাঙ্খিত স্বপ্ন বেমালুম ভুলে বসে আছে। আমি নাকি এখন তাঁর স্বপ্ন, আমি নাকি তাঁর সবকিছু। আমার নিজের অবচেতন মনে বোধদয় হলো যে সে আসলে নিজের ব্যক্তিগত চাহিদা ভুলে যান্ত্রিক শক্তিতে রুপান্তরিত হয়েছে। হবেই বা না কেন? আমি তাঁকে কতটুকু বুঝেছি বা বুঝবার চেষ্টা করেছি। সবসময় নিজেরটা কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিয়েছি। অভ্যাসের বাইরে কোন আবদার করলে তো কতই না অহেতুক বকাঝকা করেছি। সবসময় তো আমার ইচ্ছাই প্রধান্য দিয়েছি। এতকিছু কিছুর পরেও কখনো তাঁর ইচ্ছা অনিচ্ছার কথা জানতেই চাইনি, জানতে চাইনি তোমার মনটা এত খারাপ কেনো। আজ মন থেকে একটি কথা জানতে চাই “তুমি ভালো আছো তো?”
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৬/০৮/২০২৩চমৎকার সুন্দর
-
মোঃ বুলবুল হোসেন ০৮/০৬/২০২১চমৎকার গল্প