ভুলের মাশুল
ভুলের মাশুল
শেখ আপন আফ্রিদী
শহরের রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে ইয়া বড় গাড়ি।কিছু দূরে একটা বিরাট বাড়ির সামনে থামল গাড়িটি থামল। কিছুক্ষণ পর গাড়ির সামনে হাজারো মানুষের ভিড় এসে উপস্থিত হল।ভিড়ের মধ্যে সবার উদ্দেশ্য একটাই, গাড়ির ভেততের মানুষকে একবার দেখা।তখনি গাড়ির দরজা খুলল, গাড়ি হতে বেরিয়ে আসছে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল তারকা আরিয়ান। লক্ষ্য লক্ষ্য লোক দাড়িয়ে আছে তার সাথে একবার দেখা করবে বলে। গাড়ি থেকে নামল আরিয়ান,আরিয়ান এগিয়ে চলেছে তার বড় বাড়িটির দিকে,হাজারো মানুষের ভিড় উপেক্ষা করে।
কিছুক্ষণ পর আরিয়ান নিজের কোমরে ব্যাথা অনুভব করল। পরক্ষণেই সে নিজেকে তার রুমের মেঝেতে আবিষ্কার করল। আসলে সে সপ্ন দেখছিল, আর কয়েকটা মানুষের মতই আরিয়ান একটা মধ্য-বৃত্ত পরিবারের একটি অতি সাধারণ মানুষ। আরিয়ানের বাবা নেই। তার মা এবং সে থাকে তাদের কুষ্টিয়ার একটি বাসায়। আরিয়ানদের আর্থিক অবস্থা ততোটা ভাল নয়।বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন,তা দিয়েই কাটত ওদের,কিন্তু এখন খানিকটা অভাবের সংসার।আর কয়েকদিন পরেই আরিয়ান এস এস সি পরীক্ষা দেবে। সবথেকে বড় কথা হল আরিয়ান সবথেকে ভাল গান করতো, ওর কণ্ঠ যেন ছিল কুদরত প্রদত্ত এবং গান ও ছিল আরিয়ানের নেশা,
যাই হোক, স্বপ্নটা ভেঙ্গে আরিয়ান বুঝতে পারল যে ও খাট থেকে পরে গিয়েছে,তাই ও কোমরে ব্যাথা পেয়েছে। স্বপ্ন টা দেখে ওর একটু খারাপ লাগলো, আবার মনের অজান্তেই হেসে ফেলল। এরপর সে তার রুম থেকে বের হল, ঘড়ির দিকে চোখ পরতেই সে বুঝল যে তার ঢাকার উদ্দেশ্যে গাড়িটি ছাড়তে আর এক ঘণ্টা মত বাকি।পরীক্ষার আগের ৩ মাস সে কাটাবে ঢাকাতে, তার মামার বাসায়, কারণ ওখানে একটি কোচিং এ সে তার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবে। তাই সে খুব তাড়াতাড়ি বিদায় পর্ব শেষ করে,তার সকল সামগ্রীর সাথে তার প্রিয় গীটার নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঢাকায় পৌঁছানোর পর তাকে মামা বাড়ির সবাই অতি আনন্দে গ্রহণ করে নিল, আরিয়ানের মামা-মামী নিঃসন্তান। তাই তাঁরা আরিয়ানকে নিজের ছেলের মতই ভালবাসে। কিছুদিন পর কোচিং এর একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গেয়ে সবার নজর কাড়ে আরিয়ান। আর এইভাবেই সে পেল তার বন্ধু, রাত্রি,শাকিল, সিলভিয়া এবং মেহেদী কে নিয়ে তার বন্ধুমহল। এভাবেই দিন কাটতে লাগলো তার। কিন্তু সে এখনো জানতো না কি হতে চলেছে তার জীবনে, জানতো না সেই ঝড়টির কথা যেটি খুব অধীরভাবে অপেক্ষা করছে তার জন্য
কিছুদিন পর কোচিং এ একটি মেয়ে এল। খুব রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। সবসময় বোরখা পরে থাকত। এবং এইজন্যই তার চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখা যেত না। তাই আরিয়ন ও মেয়েটার দিকে বিশেষভাবে খেয়াল করে নি। দুইদিন পরে কিছু কারণে আরিয়ান কোচিং শুরুর আধা ঘণ্টা আগে এসে পড়ল। এবং এসে দেখল, যথারীতি এখনো কেও আসে নি। তাই সে কিছুটা সময় কাটানোর জন্যই একটি গান শুরু করল। একসময় সে খেয়াল করল তার পেছনে সেই বোরখা পড়া মেয়েটি দাড়িয়ে আছে, তাকে দেখেই আরিয়ান বলল, "হ্যালো, আমি আরিয়ান, আপনি????" মেয়েটি উত্তর দিল, "আমি মিমি। আপনি খুব সুন্দর গান করেন।" আরিয়ান বলল,"ধন্যবাদ, আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পার, friends????" মিমি বলল, "ঠিক আছে," খুব অল্প দিনের মধ্যে মিমির সাথে ভাব জমে উঠল আরিয়ানের।
একদিন মিমি কোচিং এ আসলো না।খুব কৌতূহল নিয়ে সে মিমির খুব কাছের বন্ধু নাসরিনের কাছে গেল, এবং জানতে পারল যে, মিমি খুলনার একটি গ্রামের খুব সাধারণ মেয়ে। মিমির যখন ৮ মাস বয়স, তখন একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা ইন্তেকাল করে, গত ২ বসর আগে মিমির মা ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়ে মারা জান, তখন থেকেই মিমি তার চাচার বাসায় থাকে এবং খুব কষ্টের সাথে দিন পার করে। আজ তার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী, তাই সে গ্রামে গিয়েছে। কথা গুলো শুনে আরিয়ান এর খুব কষ্ট লাগলো,এবং সে বুঝতে পারল যে সে মিমিকে পাগলের মত ভালবেসে ফেলেছে। এইকথাটি সে তার বন্ধুদের বলল। ওর কথা শুনে সবাই অবাক, ৩ দিন পর মিমি এল, আর এভাবেই আরিয়ান শুরু করল মিমিকে আরও কাছের করে নিতে।
দেখতে দেখতে ২ মাস কেটে গেল।আরিয়ানের ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পালা। সব বন্ধুদের সাথে বিদায়কালের সময় আরিয়ান বলল, "ভাবছি, মাকে নিয়ে ঢাকাতে চলে আসব।" এমন সময় সিলভিয়া বলে উঠল, "ঠিক আছে তাহলে,আমাদের কারোর ফোন নম্বর তুই নিবি না,যদি ফিরে না আসিস,তবে চির জীবনের মত হারাবি, রাজি???"মুখে হাসি নিয়ে আরিয়ান বলল, "তোদের ভুলে যাব, হতেই পারে না। আমি রাজি"। সবার থেকে বিদায় নিয়ে সে চলে আসলো মিমির কাছে , আজ সে মনের কথা মিমিকে বলবে। তাই প্রথমেই সে মিমিকে বলল, "আচ্ছা, তোমার কি আজীবন সিঙ্গেল থাকতে ভাল লাগবে??"মিমি বলল, "এটাই তো আমার ভাগ্য, কারণ আমি মায়ের কাছে কথা দিয়েছি যে আমার চাচারা যাকে বলবেন তাকেই বিয়ে করব, তাই দেখ, একজন কে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালবেসেও তাকে বলতে পারছি না,অসহায়ের মত বন্দী রয়েছি, হ্যাঁ , আরিয়ান আমি তোমাকে খুব বেশি ভালবাসি কিন্তু আজ আমার কোন পথ নেই"কথাগুলো শুনে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আরিয়ান। কি বলবে সে কিছু বুঝতে পারে না, হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে, সে মিমিকে বলে,"চিন্তা করো না, তুমি আমারি হবে, আমি তোমার কাছে ৫ বছর সময় চাই, আমি নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তোমার বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাব। তুমি কি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবে????"মিমি বলল, "কেন পারবো না,তোমার জন্য এটুকুও করতে পারবো না ,তা কি হয়?ঠিক ৫ বছর পর ঠিক এই সময়ে এই যায়গায় আমি অপেক্ষা করব তোমার জন্য" "তাহলে আমি আজ আসি, দেখা হবে ঐদিন",বলে আরিয়ান বিদায় নিল।
ঢাকায় পৌছাল আরিয়ান। খুব ভাল ভালোভাবে পরীক্ষা দিল, তারপর ঘটল এক চমকপ্রদ ঘটনা। একদিন সে তার এক বন্ধুর বড় বোনের বিয়েতে গান গাচ্ছিল।ঠিক তখনি সে এ দেশের এক জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক শাহরিয়ার এর নজরে পড়ল। তিনি আরিয়ানের গানের কণ্ঠ খুব পছন্দ করলেন এবং তাকে প্রস্তাব দিলেন সূদূর অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে তার সাথে কাজ করার। আরিয়ান তার স্বপ্ন পূরণ করার এক পথ পেল। তখন কোন কিছু চিন্তা না করে সে হ্যাঁ বলে দিল, কারণ সে জানতো এভাবে প্রতিষ্ঠা পেলে মিমির পরিবার তাকে কখনই ফিরিয়ে দেবে না। তাই সে শাহরিয়ারের সাথে পাড়ি জমাল স্বপ্নের শহর অস্ট্রেলিয়া। সেখানে ২ বছর থাকল সে, সঙ্গীতের ব্যাপারে অনেক পড়াশোনা করল, তারপর দেশে ফিরে একটি মিশ্র অ্যালবামে "নীল ময়ূর" শিরোনামে একটি গান করে সে। যা তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার কিছুদিন পর "দোলনা" শিরোনামে তার একটি একক অ্যালবাম বের হয় যা থাকে খ্যাতির এক শিখরে পৌঁছে দেয়। দেখতে দেখতে আরও ৩ বছর কেটে যায়। আরিয়ান এখন বাংলাদেশের সবথেকে সফল তারকা। তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, শুধু তাই নয়, আগামি ১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আমেরিকাতে কোটি-কোটি দর্শকের সামনে তার একটি শো আছে। এর মধ্যে তার মিমির সাথে কোন যোগাযোগ নেই, কিন্তু তার বিশ্বাস মিমি তাকে ভুলে যায় নি। তার সাফল্য দেখে নিশ্চয় সে আনন্দিত। তাই ঠিক ৫ বছর পরের ঐ দিন সেই জায়গাতে আরিয়ান মিমির জন্য অপেক্ষা করতে থাকল, কিন্তু অনেক সময় অতিবাহিত হল, মিমি আসলো না। তাই খুব মন খারাপ করে সে তার অতি প্রিয় রেস্টুরেন্টে গেল, খাবার অর্ডার দিতেই খুব পরিচিত কিছু কণ্ঠ কানে এল তার। তার পেছনের টেবিলেই আড্ডা মারছে তার প্রিয় বন্ধুরা রাত্রি,শাকিল,সিলভিয়া এবং মেহেদী । খানিকটা অপরাধ বোধ নিয়েই তাদের সামনে হাজির হল আরিয়ান। ওকে দেখে সবাই খুব খুশি হল, এবং মন খারাপ অবস্থা দেখে রাত্রি তাকে জিজ্ঞাসা করল যে তার কি হয়েছে? সব কথা খুলে বলতেই মেহেদী বলল, "যেই মেয়েটার খালি চোখ ছাড়া কিছুই দেখিস নি তুই, তার জন্য এত ভালোবাসা???" আসলেই তো আরিয়ান মিমির মুখ কোনদিন দেখিনি, বোরখা পরা থাকত বলে শুধু তার চোখই দাখা যেত। "ভালোবাসা তো মন দিয়ে হয়", বলল আরিয়ান। তখনি সিলভিয়া বলে উঠল, "আসলেই তোদের ভালোবাসা অমর, ও আজও অপেক্ষা করছে তোর জন্য।কাল তোকে ওর কাছে নিয়ে যাব আমরা।" কথা শুনে খুব খুশি হল আরিয়ান, যথারীতি পরদিন সবাই রওয়ানা হল মিমির উদ্দেশ্যে, কিন্তু আরিয়ান কিছুই বুঝল না যখন গাড়িটি একটি কারাগারের বাইরে থামল। আস্তে আস্তে তার ভেতরে ঢুকল সে, লোহার রডের ঐ পাশে সে দেখতে পেল খুব পরিচিত দুইটি চোখ, যেটি এখন অশ্রু সিক্ত। হ্যাঁ, চোখ দুইটি মিমির, এই প্রথম তার চেহারা দেখল আরিয়ান। হঠাৎ মিমি বলে উঠল, "অবাক হচ্ছ?? তাহলে শোন, পরীক্ষা শেষে তোমার সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করি আমি, কিন্তু পরে জানতে পারি, তুমি অস্ট্রেলিয়াতে। এর মধ্যেই চাচা আমার বিয়ে ঠিক করে গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে, আমি তাতে রাজি হই না। তাই ছেলেটি আমাকে জোর করে পাওার চেষ্টা করে, আমাকে নষ্ট করতে চেষ্টা করে। কিন্তু আমি তো তোমার আমানত, তাই নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে আমার হাতে খুন হয়ে যায় ছেলেটি, চেয়ারম্যানের ছেলে, তাই আমার ওপর খুনের মামলা করে ওর বাবা,আর সেটি প্রমাণিত হওয়ার পর আগামি ১৪ই ফেব্রুয়ারী আমার ফাঁসির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।" কোন কথা না বলে বের হয়ে আসে আরিয়ান। তার মনের মধ্যে কোন ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো, তা সবারই জানা। কিন্তু আরিয়ান দমার পাত্র নয়। মিমি ছাড়া তো সে বেমানান, তার সব স্বপ্ন তো মিমিকে ঘিরেই
আস্তে আস্তে চলে আসে "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস"। আমেরিকাতে কোটি-কোটি দর্শকের সামনে স্টেজে ওঠে আরিয়ান, আর ওদিকে বাংলাদেশে প্রস্তুত হতে থাকে মিমির ফাঁসির মঞ্চ। স্টেজে গান গাওয়ার শেষ মুহূর্তে স্টেজে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় আরিয়ান, হসপিটালে নিয়েও কোন লাভ হয় নি, দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছে সে। পোস্ট-মর্টাম রিপর্টে লেখা হয়, অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ এবং ক্ষতিকারক দ্রব্য সেবনে মৃত্যু হয় দেশ বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী আরিয়ানের। আর ঐ দিকে?????? এদেশে ট্রেন লেট হলেও ফাঁসি ঠিক ঘড়ির কাঁটা দেখে দেওয়া হয়.........................................................
আর এভাবেই শেষ হল ভুলের চরম মাশুলের গল্প। আরিয়ানের ভুলটা কোথায় ছিল, সে জানে না, কিন্তু মাশুল গুণতে হল তাকে। হয়তো, স্বপ্নকে সত্যিতে রূপান্তরিত করার ইচ্ছা ছিল তার ভুল, কিংবা হয়তো মিমিকে ভালোবাসা ছিল তার ভুল। কিন্তু এইগুলো যদি আসলেই তার ভুল হয়,তবে ভুলটি বারবার করতে প্রস্তুত আরিয়ান।
শেখ আপন আফ্রিদী
শহরের রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে ইয়া বড় গাড়ি।কিছু দূরে একটা বিরাট বাড়ির সামনে থামল গাড়িটি থামল। কিছুক্ষণ পর গাড়ির সামনে হাজারো মানুষের ভিড় এসে উপস্থিত হল।ভিড়ের মধ্যে সবার উদ্দেশ্য একটাই, গাড়ির ভেততের মানুষকে একবার দেখা।তখনি গাড়ির দরজা খুলল, গাড়ি হতে বেরিয়ে আসছে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল তারকা আরিয়ান। লক্ষ্য লক্ষ্য লোক দাড়িয়ে আছে তার সাথে একবার দেখা করবে বলে। গাড়ি থেকে নামল আরিয়ান,আরিয়ান এগিয়ে চলেছে তার বড় বাড়িটির দিকে,হাজারো মানুষের ভিড় উপেক্ষা করে।
কিছুক্ষণ পর আরিয়ান নিজের কোমরে ব্যাথা অনুভব করল। পরক্ষণেই সে নিজেকে তার রুমের মেঝেতে আবিষ্কার করল। আসলে সে সপ্ন দেখছিল, আর কয়েকটা মানুষের মতই আরিয়ান একটা মধ্য-বৃত্ত পরিবারের একটি অতি সাধারণ মানুষ। আরিয়ানের বাবা নেই। তার মা এবং সে থাকে তাদের কুষ্টিয়ার একটি বাসায়। আরিয়ানদের আর্থিক অবস্থা ততোটা ভাল নয়।বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন,তা দিয়েই কাটত ওদের,কিন্তু এখন খানিকটা অভাবের সংসার।আর কয়েকদিন পরেই আরিয়ান এস এস সি পরীক্ষা দেবে। সবথেকে বড় কথা হল আরিয়ান সবথেকে ভাল গান করতো, ওর কণ্ঠ যেন ছিল কুদরত প্রদত্ত এবং গান ও ছিল আরিয়ানের নেশা,
যাই হোক, স্বপ্নটা ভেঙ্গে আরিয়ান বুঝতে পারল যে ও খাট থেকে পরে গিয়েছে,তাই ও কোমরে ব্যাথা পেয়েছে। স্বপ্ন টা দেখে ওর একটু খারাপ লাগলো, আবার মনের অজান্তেই হেসে ফেলল। এরপর সে তার রুম থেকে বের হল, ঘড়ির দিকে চোখ পরতেই সে বুঝল যে তার ঢাকার উদ্দেশ্যে গাড়িটি ছাড়তে আর এক ঘণ্টা মত বাকি।পরীক্ষার আগের ৩ মাস সে কাটাবে ঢাকাতে, তার মামার বাসায়, কারণ ওখানে একটি কোচিং এ সে তার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবে। তাই সে খুব তাড়াতাড়ি বিদায় পর্ব শেষ করে,তার সকল সামগ্রীর সাথে তার প্রিয় গীটার নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঢাকায় পৌঁছানোর পর তাকে মামা বাড়ির সবাই অতি আনন্দে গ্রহণ করে নিল, আরিয়ানের মামা-মামী নিঃসন্তান। তাই তাঁরা আরিয়ানকে নিজের ছেলের মতই ভালবাসে। কিছুদিন পর কোচিং এর একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গেয়ে সবার নজর কাড়ে আরিয়ান। আর এইভাবেই সে পেল তার বন্ধু, রাত্রি,শাকিল, সিলভিয়া এবং মেহেদী কে নিয়ে তার বন্ধুমহল। এভাবেই দিন কাটতে লাগলো তার। কিন্তু সে এখনো জানতো না কি হতে চলেছে তার জীবনে, জানতো না সেই ঝড়টির কথা যেটি খুব অধীরভাবে অপেক্ষা করছে তার জন্য
কিছুদিন পর কোচিং এ একটি মেয়ে এল। খুব রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। সবসময় বোরখা পরে থাকত। এবং এইজন্যই তার চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখা যেত না। তাই আরিয়ন ও মেয়েটার দিকে বিশেষভাবে খেয়াল করে নি। দুইদিন পরে কিছু কারণে আরিয়ান কোচিং শুরুর আধা ঘণ্টা আগে এসে পড়ল। এবং এসে দেখল, যথারীতি এখনো কেও আসে নি। তাই সে কিছুটা সময় কাটানোর জন্যই একটি গান শুরু করল। একসময় সে খেয়াল করল তার পেছনে সেই বোরখা পড়া মেয়েটি দাড়িয়ে আছে, তাকে দেখেই আরিয়ান বলল, "হ্যালো, আমি আরিয়ান, আপনি????" মেয়েটি উত্তর দিল, "আমি মিমি। আপনি খুব সুন্দর গান করেন।" আরিয়ান বলল,"ধন্যবাদ, আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পার, friends????" মিমি বলল, "ঠিক আছে," খুব অল্প দিনের মধ্যে মিমির সাথে ভাব জমে উঠল আরিয়ানের।
একদিন মিমি কোচিং এ আসলো না।খুব কৌতূহল নিয়ে সে মিমির খুব কাছের বন্ধু নাসরিনের কাছে গেল, এবং জানতে পারল যে, মিমি খুলনার একটি গ্রামের খুব সাধারণ মেয়ে। মিমির যখন ৮ মাস বয়স, তখন একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা ইন্তেকাল করে, গত ২ বসর আগে মিমির মা ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়ে মারা জান, তখন থেকেই মিমি তার চাচার বাসায় থাকে এবং খুব কষ্টের সাথে দিন পার করে। আজ তার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী, তাই সে গ্রামে গিয়েছে। কথা গুলো শুনে আরিয়ান এর খুব কষ্ট লাগলো,এবং সে বুঝতে পারল যে সে মিমিকে পাগলের মত ভালবেসে ফেলেছে। এইকথাটি সে তার বন্ধুদের বলল। ওর কথা শুনে সবাই অবাক, ৩ দিন পর মিমি এল, আর এভাবেই আরিয়ান শুরু করল মিমিকে আরও কাছের করে নিতে।
দেখতে দেখতে ২ মাস কেটে গেল।আরিয়ানের ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পালা। সব বন্ধুদের সাথে বিদায়কালের সময় আরিয়ান বলল, "ভাবছি, মাকে নিয়ে ঢাকাতে চলে আসব।" এমন সময় সিলভিয়া বলে উঠল, "ঠিক আছে তাহলে,আমাদের কারোর ফোন নম্বর তুই নিবি না,যদি ফিরে না আসিস,তবে চির জীবনের মত হারাবি, রাজি???"মুখে হাসি নিয়ে আরিয়ান বলল, "তোদের ভুলে যাব, হতেই পারে না। আমি রাজি"। সবার থেকে বিদায় নিয়ে সে চলে আসলো মিমির কাছে , আজ সে মনের কথা মিমিকে বলবে। তাই প্রথমেই সে মিমিকে বলল, "আচ্ছা, তোমার কি আজীবন সিঙ্গেল থাকতে ভাল লাগবে??"মিমি বলল, "এটাই তো আমার ভাগ্য, কারণ আমি মায়ের কাছে কথা দিয়েছি যে আমার চাচারা যাকে বলবেন তাকেই বিয়ে করব, তাই দেখ, একজন কে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালবেসেও তাকে বলতে পারছি না,অসহায়ের মত বন্দী রয়েছি, হ্যাঁ , আরিয়ান আমি তোমাকে খুব বেশি ভালবাসি কিন্তু আজ আমার কোন পথ নেই"কথাগুলো শুনে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আরিয়ান। কি বলবে সে কিছু বুঝতে পারে না, হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে, সে মিমিকে বলে,"চিন্তা করো না, তুমি আমারি হবে, আমি তোমার কাছে ৫ বছর সময় চাই, আমি নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তোমার বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাব। তুমি কি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবে????"মিমি বলল, "কেন পারবো না,তোমার জন্য এটুকুও করতে পারবো না ,তা কি হয়?ঠিক ৫ বছর পর ঠিক এই সময়ে এই যায়গায় আমি অপেক্ষা করব তোমার জন্য" "তাহলে আমি আজ আসি, দেখা হবে ঐদিন",বলে আরিয়ান বিদায় নিল।
ঢাকায় পৌছাল আরিয়ান। খুব ভাল ভালোভাবে পরীক্ষা দিল, তারপর ঘটল এক চমকপ্রদ ঘটনা। একদিন সে তার এক বন্ধুর বড় বোনের বিয়েতে গান গাচ্ছিল।ঠিক তখনি সে এ দেশের এক জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক শাহরিয়ার এর নজরে পড়ল। তিনি আরিয়ানের গানের কণ্ঠ খুব পছন্দ করলেন এবং তাকে প্রস্তাব দিলেন সূদূর অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে তার সাথে কাজ করার। আরিয়ান তার স্বপ্ন পূরণ করার এক পথ পেল। তখন কোন কিছু চিন্তা না করে সে হ্যাঁ বলে দিল, কারণ সে জানতো এভাবে প্রতিষ্ঠা পেলে মিমির পরিবার তাকে কখনই ফিরিয়ে দেবে না। তাই সে শাহরিয়ারের সাথে পাড়ি জমাল স্বপ্নের শহর অস্ট্রেলিয়া। সেখানে ২ বছর থাকল সে, সঙ্গীতের ব্যাপারে অনেক পড়াশোনা করল, তারপর দেশে ফিরে একটি মিশ্র অ্যালবামে "নীল ময়ূর" শিরোনামে একটি গান করে সে। যা তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার কিছুদিন পর "দোলনা" শিরোনামে তার একটি একক অ্যালবাম বের হয় যা থাকে খ্যাতির এক শিখরে পৌঁছে দেয়। দেখতে দেখতে আরও ৩ বছর কেটে যায়। আরিয়ান এখন বাংলাদেশের সবথেকে সফল তারকা। তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, শুধু তাই নয়, আগামি ১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আমেরিকাতে কোটি-কোটি দর্শকের সামনে তার একটি শো আছে। এর মধ্যে তার মিমির সাথে কোন যোগাযোগ নেই, কিন্তু তার বিশ্বাস মিমি তাকে ভুলে যায় নি। তার সাফল্য দেখে নিশ্চয় সে আনন্দিত। তাই ঠিক ৫ বছর পরের ঐ দিন সেই জায়গাতে আরিয়ান মিমির জন্য অপেক্ষা করতে থাকল, কিন্তু অনেক সময় অতিবাহিত হল, মিমি আসলো না। তাই খুব মন খারাপ করে সে তার অতি প্রিয় রেস্টুরেন্টে গেল, খাবার অর্ডার দিতেই খুব পরিচিত কিছু কণ্ঠ কানে এল তার। তার পেছনের টেবিলেই আড্ডা মারছে তার প্রিয় বন্ধুরা রাত্রি,শাকিল,সিলভিয়া এবং মেহেদী । খানিকটা অপরাধ বোধ নিয়েই তাদের সামনে হাজির হল আরিয়ান। ওকে দেখে সবাই খুব খুশি হল, এবং মন খারাপ অবস্থা দেখে রাত্রি তাকে জিজ্ঞাসা করল যে তার কি হয়েছে? সব কথা খুলে বলতেই মেহেদী বলল, "যেই মেয়েটার খালি চোখ ছাড়া কিছুই দেখিস নি তুই, তার জন্য এত ভালোবাসা???" আসলেই তো আরিয়ান মিমির মুখ কোনদিন দেখিনি, বোরখা পরা থাকত বলে শুধু তার চোখই দাখা যেত। "ভালোবাসা তো মন দিয়ে হয়", বলল আরিয়ান। তখনি সিলভিয়া বলে উঠল, "আসলেই তোদের ভালোবাসা অমর, ও আজও অপেক্ষা করছে তোর জন্য।কাল তোকে ওর কাছে নিয়ে যাব আমরা।" কথা শুনে খুব খুশি হল আরিয়ান, যথারীতি পরদিন সবাই রওয়ানা হল মিমির উদ্দেশ্যে, কিন্তু আরিয়ান কিছুই বুঝল না যখন গাড়িটি একটি কারাগারের বাইরে থামল। আস্তে আস্তে তার ভেতরে ঢুকল সে, লোহার রডের ঐ পাশে সে দেখতে পেল খুব পরিচিত দুইটি চোখ, যেটি এখন অশ্রু সিক্ত। হ্যাঁ, চোখ দুইটি মিমির, এই প্রথম তার চেহারা দেখল আরিয়ান। হঠাৎ মিমি বলে উঠল, "অবাক হচ্ছ?? তাহলে শোন, পরীক্ষা শেষে তোমার সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করি আমি, কিন্তু পরে জানতে পারি, তুমি অস্ট্রেলিয়াতে। এর মধ্যেই চাচা আমার বিয়ে ঠিক করে গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে, আমি তাতে রাজি হই না। তাই ছেলেটি আমাকে জোর করে পাওার চেষ্টা করে, আমাকে নষ্ট করতে চেষ্টা করে। কিন্তু আমি তো তোমার আমানত, তাই নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে আমার হাতে খুন হয়ে যায় ছেলেটি, চেয়ারম্যানের ছেলে, তাই আমার ওপর খুনের মামলা করে ওর বাবা,আর সেটি প্রমাণিত হওয়ার পর আগামি ১৪ই ফেব্রুয়ারী আমার ফাঁসির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।" কোন কথা না বলে বের হয়ে আসে আরিয়ান। তার মনের মধ্যে কোন ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো, তা সবারই জানা। কিন্তু আরিয়ান দমার পাত্র নয়। মিমি ছাড়া তো সে বেমানান, তার সব স্বপ্ন তো মিমিকে ঘিরেই
আস্তে আস্তে চলে আসে "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস"। আমেরিকাতে কোটি-কোটি দর্শকের সামনে স্টেজে ওঠে আরিয়ান, আর ওদিকে বাংলাদেশে প্রস্তুত হতে থাকে মিমির ফাঁসির মঞ্চ। স্টেজে গান গাওয়ার শেষ মুহূর্তে স্টেজে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় আরিয়ান, হসপিটালে নিয়েও কোন লাভ হয় নি, দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছে সে। পোস্ট-মর্টাম রিপর্টে লেখা হয়, অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ এবং ক্ষতিকারক দ্রব্য সেবনে মৃত্যু হয় দেশ বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী আরিয়ানের। আর ঐ দিকে?????? এদেশে ট্রেন লেট হলেও ফাঁসি ঠিক ঘড়ির কাঁটা দেখে দেওয়া হয়.........................................................
আর এভাবেই শেষ হল ভুলের চরম মাশুলের গল্প। আরিয়ানের ভুলটা কোথায় ছিল, সে জানে না, কিন্তু মাশুল গুণতে হল তাকে। হয়তো, স্বপ্নকে সত্যিতে রূপান্তরিত করার ইচ্ছা ছিল তার ভুল, কিংবা হয়তো মিমিকে ভালোবাসা ছিল তার ভুল। কিন্তু এইগুলো যদি আসলেই তার ভুল হয়,তবে ভুলটি বারবার করতে প্রস্তুত আরিয়ান।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সবুজ আহমেদ কক্স ১৮/০২/২০১৫golpo is nice
-
জাহিদুর রহমান ১১/০২/২০১৫Nice
-
অ ১১/০২/২০১৫ভালো ।
প্রথম বলেই ছক্কা মেরে দিয়েছেন আফ্রিদী । -
অ ১১/০২/২০১৫পড়লাম ।
দারুণ গল্প । -
জহির রহমান ১১/০২/২০১৫প্রিয়তে রাখলাম।
শুভেচ্ছা লেখককে। -
সবুজ আহমেদ কক্স ১১/০২/২০১৫darun golpo @@@@@@