বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের গোড়াপত্তনের ইতিহাস
যে কয়েকটি কারণে বাংলাদেশের নাম সারা বিশ্বে পরিচিত তার মধ্য পোষাক শিল্প অন্যতম। পোষাক রপ্তানীর মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদিশিক মুদ্রা আয় করে। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ পরিবারের জীবন নির্ভর করে এই গার্মেন্টস শিল্পের উপর। কিন্তু বাংলাদেশের এই পোশাক শিল্পের শুরুর ইতিহাস আমরা ক’জনা জানি? আজ আপনাদেরকে সঙ্গে শেয়ার করব, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের পথ প্রদর্শক এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
এই যে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ নারী শ্রমিক দেখেন, এত এত গার্মেন্টস দেখেন, এই শিল্পের সঙ্গে রিলেটেড কত কাজ কর্ম দেখেন, কিন্তু এর শুরুর ইতিহাস কি জানেন? আপনি কি জানেন বাংলাদেশের প্রথম গার্মেন্টস কোনটি? অথবা এই শিল্প শুরু করতে গিয়ে একজন মানুষকে কি পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে? আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব এমনই এক সত্যি ঘটনা।
বাংলাদেশের প্রথম গার্মেন্টস সম্পর্কে দুই রকম তথ্য পাওয়া যায়। কোথাও পাওয়া যায় রিয়াজ গার্মেন্টস, আবার কোথাও দেশ গার্মেন্টস। বাংলাদেশ থেকে প্রথম দেশের বাইরে পোশাক রপ্তানী করে রিয়াজ গার্মেন্টস। তাও সেটা ১৯৭৮ সালের কথা। ১৯৭৮ সালে পোশাক রপ্তানী করে দেশে এক হুলস্থুল ব্যাপার ঘটিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু দেশ গার্মেন্টসকে প্রথম গার্মেন্টস বলা হয় কেননা দেশ গার্মেন্টস প্রথম ১০০% এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড গার্মেন্টস। রিয়াজ গার্মেন্টস তখন দেশের চাহিদাও মেটাত, সেই সাথে বিদেশেও রপ্তানী করত। এই কারণে প্রথম গার্মেন্টস সম্পর্কে দুই রকম তথ্য পাওয়া যায়। যাই হোক, আমরা না হয় প্রথম-দ্বিতীয়র প্রতিযোগিতাই না নামি। আমরা বরং ইতিহাস জানি।
১৯৬৩ সালে পুরোনো ঢাকার উর্দূ রোডে রিয়াজ ষ্টোর নামে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের প্রথম গার্মেন্টস। ১৯৬৫ সালে রিয়াজ ষ্টোর এর মালিক জনাব রিয়াজ উদ্দিন করাচি ভ্রমণকালে একটি গার্মেন্টসকে মাসে ১লক্ষ পিস পোশাক রপ্তানী করতে দেখেন। ভখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার বিদেশে পোষাক রপ্তানীর স্বপ্ন দেখতে থাকেন। শুরুতে তাঁরা শুধু দেশের চাহিদাই পুরণ করত। এরপর ১৯৭৩ সালে রিয়াজ ষ্টোর এর নাম পরিবর্তন করে রিয়াজ গার্মেন্টস রাখেন এবং বিদেশে পোষাক রপ্তানীর জন্য কাজ শুরু করেন। অবশেষে আসে সেই স্বপ্ন পূরণের দিন। ১৯৭৮ সালের ২৫শে জুলাই টিসিবির সহায়তায় বাংলাদেশ থেকে সর্বপ্রথম ৪ লক্ষ টাকা মূল্যের পুরুষদের শার্ট রপ্তানী করা হয় ফ্রান্সে। এই পোষাক রপ্তানী নিয়ে বিখ্যাত কার্টুনিষ্ট রণবী কার্টুন পর্যন্ত একে ছিলেন। “৪ লক্ষ টাকার পোষাক রপ্তানী করা হয়েছে ফ্রান্সে” এই শিরোনামে যে কার্টুনটি এঁকে ছিলেন, সেখানে একজন টোকাই আরেকজনকে বলছে, “আরে চিন্তা করিস না, ওই পোশাকগুলো পুরোনো হয়ে আবার আমার দেশেই ফেরৎ আসবে”।
যাই হোক, সেই সময় কিন্তু নারী শ্রমিকের কথা ভাবাই যেতনা। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানে নারী শ্রমিক নিয়োগের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হোন। এরপর রিয়াজ গার্মেন্টস এর মালিক জনাব রিয়াজ উদ্দিন সর্বপ্রথম নিজের মেয়েকেই রিয়াজ গার্মেন্টেসে পোশাক তৈরির কাজে লাগিয়ে দেন। তাঁর মেয়েকে দেখে আরও কিছু নারী এই পেশায় আসতে আগ্রহী হন এবং আস্তে আস্তে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর বর্তমানে পোশাকে শিল্পে নারী শ্রমিকের সংখ্যাতো একটি ইতিহাস।
এর মধ্য একটা কথা বলে রাখি, তাদের তৈরি পোষাক কিন্তু খুবই বিখ্যাত ছিল। বিশ্বের কিছু প্রখ্যাত মানুষ তাদের তৈরি পোষাক পড়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন পর্যন্ত করেছে। এর মধ্য ১৯৬৯ সালে যখন ৩ জন নভোচারী নীল আমর্ষ্ট্রং, এডউইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স তাদের পোষাক পেয়ে লিখেছিল, “We wish to thank you for your thoughtful gift of three shirts which was presented to us during our visit to Dacca. We will long cherish the memory of the enthusiasm, hospitality end goodwill accorded us by the citizens of Pakistan.
এছাড়াও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন, তৎকালীন মোহনবাগানের খেলোয়াড় চুনী গোস্বামী।
রিয়াজ উদ্দিন সাহেব দেখতেন পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে হেয় করত। পূর্ব পাকিস্তানের পোশাক শিল্পে সহায়তা করত না। তখন থেকেই তাঁর মনে এক প্রকার জেদ চেপে উঠে। তারা যদি বাইরে পোষাক রপ্তানি করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারবনা? সেই জেদ থেকেই শুরু করেন রিয়াজ গার্মেন্টস এবং প্রথম পোষাক রপ্তানি করেন। মজার কথা ভদ্রলোক সেই সময় প্রচুর পেপার এ্যাড দিতেন। তখনকার এ্যাড হয়ত এত ক্রিয়েটিভ ছিলনা, তবে বিজ্ঞাপন দিতেন। নায়ক রাজ্জাক এক সময় তাদের ব্রান্ড এ্যাম্বাসিডর ছিলেন। ৮০ দশকে তাদের এ্যাড বিটিভিতে প্রচারিত হতো। আপনারা তাদের লোগোটি লক্ষ্য করে থাকবেন, সেই সময় কত ক্রিয়েটিভ একটি লোগো। লোগোর মধ্য রিয়াজ লেখাটি বাংলা ও ইংরেজি R অক্ষর সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে।
পরবর্তীতে দেশের অনেক মানুষের প্রচেষ্টায় গার্মেন্টস শিল্প মাথা উচুঁ করে দাড়িয়েছে। গার্মেন্টস শিল্পের কারণে সারা বিশ্বের মানুষ আজ বাংলাদেশকে চিনে। কিন্তু একজন পাইওনিয়ার হিসেবে রিয়াজ গার্মেন্টস এর কর্ণধার রিয়াজ উদ্দিনের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
এই যে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ নারী শ্রমিক দেখেন, এত এত গার্মেন্টস দেখেন, এই শিল্পের সঙ্গে রিলেটেড কত কাজ কর্ম দেখেন, কিন্তু এর শুরুর ইতিহাস কি জানেন? আপনি কি জানেন বাংলাদেশের প্রথম গার্মেন্টস কোনটি? অথবা এই শিল্প শুরু করতে গিয়ে একজন মানুষকে কি পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে? আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব এমনই এক সত্যি ঘটনা।
বাংলাদেশের প্রথম গার্মেন্টস সম্পর্কে দুই রকম তথ্য পাওয়া যায়। কোথাও পাওয়া যায় রিয়াজ গার্মেন্টস, আবার কোথাও দেশ গার্মেন্টস। বাংলাদেশ থেকে প্রথম দেশের বাইরে পোশাক রপ্তানী করে রিয়াজ গার্মেন্টস। তাও সেটা ১৯৭৮ সালের কথা। ১৯৭৮ সালে পোশাক রপ্তানী করে দেশে এক হুলস্থুল ব্যাপার ঘটিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু দেশ গার্মেন্টসকে প্রথম গার্মেন্টস বলা হয় কেননা দেশ গার্মেন্টস প্রথম ১০০% এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড গার্মেন্টস। রিয়াজ গার্মেন্টস তখন দেশের চাহিদাও মেটাত, সেই সাথে বিদেশেও রপ্তানী করত। এই কারণে প্রথম গার্মেন্টস সম্পর্কে দুই রকম তথ্য পাওয়া যায়। যাই হোক, আমরা না হয় প্রথম-দ্বিতীয়র প্রতিযোগিতাই না নামি। আমরা বরং ইতিহাস জানি।
১৯৬৩ সালে পুরোনো ঢাকার উর্দূ রোডে রিয়াজ ষ্টোর নামে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের প্রথম গার্মেন্টস। ১৯৬৫ সালে রিয়াজ ষ্টোর এর মালিক জনাব রিয়াজ উদ্দিন করাচি ভ্রমণকালে একটি গার্মেন্টসকে মাসে ১লক্ষ পিস পোশাক রপ্তানী করতে দেখেন। ভখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার বিদেশে পোষাক রপ্তানীর স্বপ্ন দেখতে থাকেন। শুরুতে তাঁরা শুধু দেশের চাহিদাই পুরণ করত। এরপর ১৯৭৩ সালে রিয়াজ ষ্টোর এর নাম পরিবর্তন করে রিয়াজ গার্মেন্টস রাখেন এবং বিদেশে পোষাক রপ্তানীর জন্য কাজ শুরু করেন। অবশেষে আসে সেই স্বপ্ন পূরণের দিন। ১৯৭৮ সালের ২৫শে জুলাই টিসিবির সহায়তায় বাংলাদেশ থেকে সর্বপ্রথম ৪ লক্ষ টাকা মূল্যের পুরুষদের শার্ট রপ্তানী করা হয় ফ্রান্সে। এই পোষাক রপ্তানী নিয়ে বিখ্যাত কার্টুনিষ্ট রণবী কার্টুন পর্যন্ত একে ছিলেন। “৪ লক্ষ টাকার পোষাক রপ্তানী করা হয়েছে ফ্রান্সে” এই শিরোনামে যে কার্টুনটি এঁকে ছিলেন, সেখানে একজন টোকাই আরেকজনকে বলছে, “আরে চিন্তা করিস না, ওই পোশাকগুলো পুরোনো হয়ে আবার আমার দেশেই ফেরৎ আসবে”।
যাই হোক, সেই সময় কিন্তু নারী শ্রমিকের কথা ভাবাই যেতনা। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানে নারী শ্রমিক নিয়োগের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হোন। এরপর রিয়াজ গার্মেন্টস এর মালিক জনাব রিয়াজ উদ্দিন সর্বপ্রথম নিজের মেয়েকেই রিয়াজ গার্মেন্টেসে পোশাক তৈরির কাজে লাগিয়ে দেন। তাঁর মেয়েকে দেখে আরও কিছু নারী এই পেশায় আসতে আগ্রহী হন এবং আস্তে আস্তে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর বর্তমানে পোশাকে শিল্পে নারী শ্রমিকের সংখ্যাতো একটি ইতিহাস।
এর মধ্য একটা কথা বলে রাখি, তাদের তৈরি পোষাক কিন্তু খুবই বিখ্যাত ছিল। বিশ্বের কিছু প্রখ্যাত মানুষ তাদের তৈরি পোষাক পড়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন পর্যন্ত করেছে। এর মধ্য ১৯৬৯ সালে যখন ৩ জন নভোচারী নীল আমর্ষ্ট্রং, এডউইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স তাদের পোষাক পেয়ে লিখেছিল, “We wish to thank you for your thoughtful gift of three shirts which was presented to us during our visit to Dacca. We will long cherish the memory of the enthusiasm, hospitality end goodwill accorded us by the citizens of Pakistan.
এছাড়াও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন, তৎকালীন মোহনবাগানের খেলোয়াড় চুনী গোস্বামী।
রিয়াজ উদ্দিন সাহেব দেখতেন পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে হেয় করত। পূর্ব পাকিস্তানের পোশাক শিল্পে সহায়তা করত না। তখন থেকেই তাঁর মনে এক প্রকার জেদ চেপে উঠে। তারা যদি বাইরে পোষাক রপ্তানি করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারবনা? সেই জেদ থেকেই শুরু করেন রিয়াজ গার্মেন্টস এবং প্রথম পোষাক রপ্তানি করেন। মজার কথা ভদ্রলোক সেই সময় প্রচুর পেপার এ্যাড দিতেন। তখনকার এ্যাড হয়ত এত ক্রিয়েটিভ ছিলনা, তবে বিজ্ঞাপন দিতেন। নায়ক রাজ্জাক এক সময় তাদের ব্রান্ড এ্যাম্বাসিডর ছিলেন। ৮০ দশকে তাদের এ্যাড বিটিভিতে প্রচারিত হতো। আপনারা তাদের লোগোটি লক্ষ্য করে থাকবেন, সেই সময় কত ক্রিয়েটিভ একটি লোগো। লোগোর মধ্য রিয়াজ লেখাটি বাংলা ও ইংরেজি R অক্ষর সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে।
পরবর্তীতে দেশের অনেক মানুষের প্রচেষ্টায় গার্মেন্টস শিল্প মাথা উচুঁ করে দাড়িয়েছে। গার্মেন্টস শিল্পের কারণে সারা বিশ্বের মানুষ আজ বাংলাদেশকে চিনে। কিন্তু একজন পাইওনিয়ার হিসেবে রিয়াজ গার্মেন্টস এর কর্ণধার রিয়াজ উদ্দিনের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অ ২৯/০৪/২০১৫দারুন তথ্যমূলক ।
-
সবুজ আহমেদ কক্স ২৭/০৪/২০১৫ভাল লিখেছেন
সুন্দর ভাবনার প্রকাশ -
তরুন ইউসুফ ২৭/০৪/২০১৫ভাল লিখেছেন