অবেলার কাব্য
১.
ক্লাসের ভাব মেরে বসে থাকা ছেলেটা যে রূপন্তীকে পছন্দ করে, এ কথা সে ভুলেও ভাবেনি। ভার্সিটির ছেলেরা যখন তাদের পছন্দ আর ভাল লাগা নিয়ে কনফেশন করে যাচ্ছিল, তখনও ছেলেটা মুখ খোলেনি।
রূপন্তী ভার্সিটিতে পড়ে অথচ তার বয়ফ্রেন্ড নাই, এ কথাটাও কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। তার মতো রূপবতীকে যে কেউ প্রেমের অফার দেয়নি তা নয়! তবে তাদের বেশির ভাগই প্রথম দেখাতে নয়ত অল্প পরিচয়ে প্রেম নিবেদন করেছে। রূপন্তীর বিশ্বাস, এত অল্প পরিচয়ে কারো মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি হয় না। সৃষ্টি হয় মোহ। আর মোহ কেটে গেলে জীবন হয় দুর্বিষহ।
তাই সে কারো ফাদে পা দেয়নি।
২.
বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। মুষলধারে বৃষ্টি। মাহাদীর বাসার সামনের কদম গাছগুলো ভিজে একাকার। বারান্দায় বসে তন্দ্রচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিল সে। আর মোবাইলে বাজছে, ’এসো নিপবনে ছায়াবীথি তলে এসো করো স্নান নবধারা জলে...’
এ সময় তার বন্ধু আসলামের ফোন। মাহাদী ফোন ধরে বলল, হ্যা,বল।
অপর পাশ থেকে আসলাম বলল, দোস্ত,কাহিনী তো ঘইট্যা গেছে। রূপন্তী তো আমারে প্রপোজ করে ফেলছে। আমিও হে বলে দিছি।
কথাটা তার কিছুতেই বিশ্বাস হল না। তাই সে আবার জিজ্ঞাসা করল, সত্যি বলছিস তো??
আসলাম দিব্যি কেটে বলল, তোর সাথে মিথ্যে বলে আমার কী লাভ!!
এ কথা শুনে মাহাদী ফোনটা কেটে দিল। আসলাম আবার ফোন করে ইনিয়ে বিনিয়ে আরো কথা শোনাতে চাইলো কিন্তু কথাগুলো তার কাছে বিষের মতো মনে হলো!
মাহাদী ফোন বন্ধ রেখে পর পর দুই দিন আর ভার্সিটিতে গেল না।রূপন্তী কেমন করে আসলামের মতো ছেলেকে পছন্দ করল বুঝতে পারল না! আসলামের সাথে রূপন্তীকে দেখে তার ভার্সিটি লাইফ কাটাতে হবে, এ জিনিসটা তার কাছে দুঃসহ মনে হল।
বৃষ্টির সাথে সেও যেন কোথায় ভেসে গেল।
৩.
দু’দিন পর মাহাদী যখন ভার্সিটিতে গেল সব বন্ধুরা তাকে ঘিরে ধরল। “ফোন বন্ধ রেখে দু’দিন কোথায় ছিলি?”, সবার এক প্রশ্ন। রূপন্তীও তাকে প্রশ্ন করল। সে কারো কোন প্রশ্নের উত্তর দিল না। আর আসলামসহ কয়েকজন এ বিষয়টায় খুব মজা পাচ্ছে বলে মনে হল।
বিরতিতে ক্যান্টিনে আসলাম হাসতে হাসতে মাহাদীকে বলল,মামা,তুমি এত সিরিয়াস সেইডা তো আগে বুঝি নাই!!
-মানে কী??
-আমি একটা ফান করলাম আর সেইডা তুমি সিরিয়াস মনে কইরা দুইদিন আইলা না, এইডা কিছু হইলো!!
-তার মানে রূপন্তী তোকে প্রপোজ করেনি!!
-না, এইডা ফান ছিল।
এ কথা শুনে সে যেন ধড়ে পানি পেল। আসলামের সাথে যোগ দিল পিয়াল আর নাদিম।
পিয়াল বলল, এতই যখন ভালবাস বলতাছস না কেন??
মেহেদী উত্তর দিল, সময় হলে ঠিক ই কমু।
৪.
রূপন্তীকে মনের কথা বলতে না পেরে মাহাদীর কেমন হাসফাস লাগছে। ক্রমেই তার মনের ভেতর যেন একটা পাহাড় জমে যাচ্ছে। তাই সে ঠিক করল যেভাবেই হোক রূপন্তীকে তার ভালবাসা জানাবে।
অনেক ভেবে চিন্তে সে একটা দীর্ঘ চিঠি লিখে ফেলল।পরদিন ক্লাস শেষে চিটিটা রূপন্তীর হাতে দিয়ে দৌড়ে বাসে উঠে গেল। চিঠিটা পেয়ে তার এক্সপ্রেশন কী হতে পারে এটা দেখারও অপেক্ষা করল না।
মাহাদী ভেবেছিল পরদিন হয়ত সে কিছু একটা উত্তর পাবে। কিন্তু না, রূপন্তী তো তাকে কিছু জানায়নি বরং এবোয়েড করে যাচ্ছে! কিছুদিন যখন এভাবে গেল, এটা তার ভুল হয়ে গেছে। রূপন্তী তাকে মোটেও পছন্দ করে না। সে কেমন যেন হতাশা অনুভব করল।
এভাবে চার বছর কেটে গেল। তাদের বিএসসি শেষ। এ দীর্ঘ সময়ে রূপন্তী তার সাথে একটা কথাও বলেনি। সে অনেকবার মেসেজ করে সরি বলেছিল কিন্তু কোন রিপ্লাই পায়নি। হাজারবার ফোন দেয়ার পরও রিসিভ করেনি। তাই সে এ সমযটাতে পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়েছে।
৫.
বিএসসি শেষ করে ফুল ফ্রি স্কলারশীপ নিয়ে মাহাদী বিদেশ চলে যাচ্ছে। এয়ারপোর্টে তার বন্ধুরা বিদায় জানাতে এসেছে। সবাই তার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে এসেছে। রূপন্তীও তার জন্র একটা খামে করে কিছু একটা এনেছে। সে দেখেই চিনতে পারল চার বছর আগে এ রকম একটা খামেই রূপন্তীকে চিটি দিয়েছিল সে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও খামটা নিতে হল তাকে। সে ভাবল, বিদেশে গিয়েও তাকে কষ্ট পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে মেয়েটা। সে ঠিক করল, একবার বিদেশ গিয়ে আর এ মুখো হবে না। এদেশের কোন মেয়েকে বিয়ে করবে না বলেও জিদ করল।
বিমানে উঠে রূপন্তীর খামটা একবার খুলে দেখতে ইচ্ছে হল তার। কামটা ছিঁড়ে ভেতরে একটা চিঠি দেখতে পেল সে, তাতে লেখা...
“বড় ভালবাসি তোমায়। এই কথাটুকু বলার জন্য দীর্ঘ সময় নিলাম, যেনো আমাদের ভালবাসা দীর্ঘ হয়....”
মাত্র এতটুকু পড়েই মেহেদীর ইচ্ছা হল লাফ দিয়ে বিমান থেকে নেমে পড়তে। রূপন্তীর কাছে গিয়ে বলবে,তোমার জন্য আমি হাজার বছর অপেক্ষা করতে রাজি।
কিন্তু তা আর সম্ভব নয়, ততক্ষণে বিমান ছেড়ে দিয়েছে.....
ক্লাসের ভাব মেরে বসে থাকা ছেলেটা যে রূপন্তীকে পছন্দ করে, এ কথা সে ভুলেও ভাবেনি। ভার্সিটির ছেলেরা যখন তাদের পছন্দ আর ভাল লাগা নিয়ে কনফেশন করে যাচ্ছিল, তখনও ছেলেটা মুখ খোলেনি।
রূপন্তী ভার্সিটিতে পড়ে অথচ তার বয়ফ্রেন্ড নাই, এ কথাটাও কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। তার মতো রূপবতীকে যে কেউ প্রেমের অফার দেয়নি তা নয়! তবে তাদের বেশির ভাগই প্রথম দেখাতে নয়ত অল্প পরিচয়ে প্রেম নিবেদন করেছে। রূপন্তীর বিশ্বাস, এত অল্প পরিচয়ে কারো মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি হয় না। সৃষ্টি হয় মোহ। আর মোহ কেটে গেলে জীবন হয় দুর্বিষহ।
তাই সে কারো ফাদে পা দেয়নি।
২.
বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। মুষলধারে বৃষ্টি। মাহাদীর বাসার সামনের কদম গাছগুলো ভিজে একাকার। বারান্দায় বসে তন্দ্রচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিল সে। আর মোবাইলে বাজছে, ’এসো নিপবনে ছায়াবীথি তলে এসো করো স্নান নবধারা জলে...’
এ সময় তার বন্ধু আসলামের ফোন। মাহাদী ফোন ধরে বলল, হ্যা,বল।
অপর পাশ থেকে আসলাম বলল, দোস্ত,কাহিনী তো ঘইট্যা গেছে। রূপন্তী তো আমারে প্রপোজ করে ফেলছে। আমিও হে বলে দিছি।
কথাটা তার কিছুতেই বিশ্বাস হল না। তাই সে আবার জিজ্ঞাসা করল, সত্যি বলছিস তো??
আসলাম দিব্যি কেটে বলল, তোর সাথে মিথ্যে বলে আমার কী লাভ!!
এ কথা শুনে মাহাদী ফোনটা কেটে দিল। আসলাম আবার ফোন করে ইনিয়ে বিনিয়ে আরো কথা শোনাতে চাইলো কিন্তু কথাগুলো তার কাছে বিষের মতো মনে হলো!
মাহাদী ফোন বন্ধ রেখে পর পর দুই দিন আর ভার্সিটিতে গেল না।রূপন্তী কেমন করে আসলামের মতো ছেলেকে পছন্দ করল বুঝতে পারল না! আসলামের সাথে রূপন্তীকে দেখে তার ভার্সিটি লাইফ কাটাতে হবে, এ জিনিসটা তার কাছে দুঃসহ মনে হল।
বৃষ্টির সাথে সেও যেন কোথায় ভেসে গেল।
৩.
দু’দিন পর মাহাদী যখন ভার্সিটিতে গেল সব বন্ধুরা তাকে ঘিরে ধরল। “ফোন বন্ধ রেখে দু’দিন কোথায় ছিলি?”, সবার এক প্রশ্ন। রূপন্তীও তাকে প্রশ্ন করল। সে কারো কোন প্রশ্নের উত্তর দিল না। আর আসলামসহ কয়েকজন এ বিষয়টায় খুব মজা পাচ্ছে বলে মনে হল।
বিরতিতে ক্যান্টিনে আসলাম হাসতে হাসতে মাহাদীকে বলল,মামা,তুমি এত সিরিয়াস সেইডা তো আগে বুঝি নাই!!
-মানে কী??
-আমি একটা ফান করলাম আর সেইডা তুমি সিরিয়াস মনে কইরা দুইদিন আইলা না, এইডা কিছু হইলো!!
-তার মানে রূপন্তী তোকে প্রপোজ করেনি!!
-না, এইডা ফান ছিল।
এ কথা শুনে সে যেন ধড়ে পানি পেল। আসলামের সাথে যোগ দিল পিয়াল আর নাদিম।
পিয়াল বলল, এতই যখন ভালবাস বলতাছস না কেন??
মেহেদী উত্তর দিল, সময় হলে ঠিক ই কমু।
৪.
রূপন্তীকে মনের কথা বলতে না পেরে মাহাদীর কেমন হাসফাস লাগছে। ক্রমেই তার মনের ভেতর যেন একটা পাহাড় জমে যাচ্ছে। তাই সে ঠিক করল যেভাবেই হোক রূপন্তীকে তার ভালবাসা জানাবে।
অনেক ভেবে চিন্তে সে একটা দীর্ঘ চিঠি লিখে ফেলল।পরদিন ক্লাস শেষে চিটিটা রূপন্তীর হাতে দিয়ে দৌড়ে বাসে উঠে গেল। চিঠিটা পেয়ে তার এক্সপ্রেশন কী হতে পারে এটা দেখারও অপেক্ষা করল না।
মাহাদী ভেবেছিল পরদিন হয়ত সে কিছু একটা উত্তর পাবে। কিন্তু না, রূপন্তী তো তাকে কিছু জানায়নি বরং এবোয়েড করে যাচ্ছে! কিছুদিন যখন এভাবে গেল, এটা তার ভুল হয়ে গেছে। রূপন্তী তাকে মোটেও পছন্দ করে না। সে কেমন যেন হতাশা অনুভব করল।
এভাবে চার বছর কেটে গেল। তাদের বিএসসি শেষ। এ দীর্ঘ সময়ে রূপন্তী তার সাথে একটা কথাও বলেনি। সে অনেকবার মেসেজ করে সরি বলেছিল কিন্তু কোন রিপ্লাই পায়নি। হাজারবার ফোন দেয়ার পরও রিসিভ করেনি। তাই সে এ সমযটাতে পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়েছে।
৫.
বিএসসি শেষ করে ফুল ফ্রি স্কলারশীপ নিয়ে মাহাদী বিদেশ চলে যাচ্ছে। এয়ারপোর্টে তার বন্ধুরা বিদায় জানাতে এসেছে। সবাই তার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে এসেছে। রূপন্তীও তার জন্র একটা খামে করে কিছু একটা এনেছে। সে দেখেই চিনতে পারল চার বছর আগে এ রকম একটা খামেই রূপন্তীকে চিটি দিয়েছিল সে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও খামটা নিতে হল তাকে। সে ভাবল, বিদেশে গিয়েও তাকে কষ্ট পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে মেয়েটা। সে ঠিক করল, একবার বিদেশ গিয়ে আর এ মুখো হবে না। এদেশের কোন মেয়েকে বিয়ে করবে না বলেও জিদ করল।
বিমানে উঠে রূপন্তীর খামটা একবার খুলে দেখতে ইচ্ছে হল তার। কামটা ছিঁড়ে ভেতরে একটা চিঠি দেখতে পেল সে, তাতে লেখা...
“বড় ভালবাসি তোমায়। এই কথাটুকু বলার জন্য দীর্ঘ সময় নিলাম, যেনো আমাদের ভালবাসা দীর্ঘ হয়....”
মাত্র এতটুকু পড়েই মেহেদীর ইচ্ছা হল লাফ দিয়ে বিমান থেকে নেমে পড়তে। রূপন্তীর কাছে গিয়ে বলবে,তোমার জন্য আমি হাজার বছর অপেক্ষা করতে রাজি।
কিন্তু তা আর সম্ভব নয়, ততক্ষণে বিমান ছেড়ে দিয়েছে.....
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
אולי כולנו טועים ০৯/১২/২০১৩darun. : )
-
প্রবাসী পাঠক ০৯/১২/২০১৩চমৎকার বর্ণনা। ভাল লাগল আপনার লেখা ।
তারুন্যে স্বাগতম।