www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রক্তাক্ত মেহেদী

বাংলাদেশে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপন শুরু হয় ১৯৯০ সালে  এটা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছ। বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপন নৈতিকতা কী? হাজার হাজার দম্পতি, প্রেমিক যুগল একত্রিত হন বিভিন্ন পার্কে, বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাম্পাসে যেখানে মজা, কৌতুক ও উৎসবের বায়ু মণ্ডলে একে অপরের ভালোবাসার অনুভুতি প্রকাশ করে থাকে।উপহার সামগ্রী বিক্রেতারা ছাড় দিয়ে থাকেন, এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য অনেক, হোটেল, রেস্তরা দম্পতি যুগলদের জন্য আকর্ষণীয় ছাড় দিয়ে থাকেন।
যাই হোক এমন অনেকের আছেন যারা ভালবাসা দিবস পালনের বিপক্ষে নানা কারনে। আবার অনেকেই আছেন যারা সঙ্গত কারনেই ভালবাসা দিবস উদযাপনের বিপক্ষে।  
ভালবাসা পরিবেষ্টন করে থাকে- আনন্দ, কৃতজ্ঞতা, প্রশান্তি, আগ্রহ, প্রত্যাশা এবং গর্ব । কাউকে ভালবাসার মানে বা কোন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার মানে এই যে উৎসবমুখর পরিবেশে উপস্থিত হয়ে সবাইকে জানান দেয়া। জানান দিতে গিয়ে নানাবিধ অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া, অপসংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে দেয়া।
অথচ ১৪ই ফেরব্রুয়ারী বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিরাট গুরুত্ব বহন কর। যারা আজ আমরা নিজেকে গণতন্ত্রের লড়াকু সৈনিক বলে দাবি করে, দাবি করি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে তারা বেমালুম ভুলে বসে আছি সেই রক্তাক্ত ইতিহাস। স্বাধীন বাংলাদেশের গন্ততন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র সফল আন্দোলনটির সূচনা হয়েছিল যে আশির দশকে, সেই আন্দলনের প্রথম রক্তপাতের দিনটির আজ ৩৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে। শহীদ জাফর, জয়নাল, দীপালী সাহা, মোজাম্মেল, আইয়ুবসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের রক্তে রঞ্জিত ছাত্র আন্দলনের এক গৌরবময় দিন ১৪ ফেব্রুয়ারী। গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র বাবস্থার এক অভিন্ন,লক্ষ্য নিয়ে সেদিন যে আন্দলনের সূচনা হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় কয়েক বছর নব্বইয়ের ছাত্র জনতার গন-অভুথানে ক্ষমতাচ্যুত হন সামরিক স্বৈরশাসক হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ।১৪ ফেব্রুয়ারীর বেলা সাড়ে ১১ টা বা ১২ টার দিকে হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রীর মিছিল শিক্ষা ভবনের কাছে পৌঁছানোর পর পুলিশের কাঁটাতারের প্রতিবন্ধক ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গুলি ছোড়ে। সেই ঘাতক বুলেট প্রাণ কেড়ে জাফর, জয়নাল, দীপালী সাহা, মোজাম্মেল, আইয়ুবসহ আরও অনেকের।
এরই মধ্যে দুর্দান্ত সাহসী কয়েকজন ছাত্র পুলিশের ছহবল পড়ার আগেই শহীদ জাফরঅ জয়নালের মরদেহ নিয়ে আসে কলা ভবনে। অন্যদের মরদেহ পুলিশ নিয়ে গুম করে ফেলে শনা যায়, জল কামানের পানির তোড়ে ধোয়া হয়ে যায় রক্ত স্নাত রাজপথ। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে অবস্থান নেয় পুলিশ, শুরু হয় সাঁড়াশি অভিযান। কিন্তু তার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে অবস্থান নিয়ে পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালায়। পুলিশের প্রথম লক্ষ্য মরদেহগুলো উদ্ধার, যাতে লাশ নিয়ে কোন মিছিল বেরোতে না পারে। এরই মধ্যে একজনের লাশ নিয়ে একদল ছাত্র রেজিস্টার বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে চারপাশে সেনাসদস্যরা অবস্থান নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বেরনোর সব পথ বন্ধ করে দেয়। সন্ধ্যার পর শহরে কারফিউ জারি করা হয়। পরদিন ঢাকার অন্যান্য কলেজের ছাত্ররা বিক্ষোভ করতে গেলে সেগুলোও নির্দয়ভাবে দমন করে পুলিশ। তিতুমির কলেজের একদল ছহাত্রকে কোমরে দড়ি বেঁধে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই  আবার সবাই সংঘটিত হতে শুরু করে। ১৯৮৪ এর ২৮ ফেব্রুয়ারীতে ছাত্রদের মিছিলের উপর পুলিশের ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে হত্যা করে আরও দুজন ছাত্র সেলিম ও দেলোয়ারকে। পরের বছর ১৫ ফেব্রুয়ারীতে হত্যা করা হয় ছাত্রলীগ নেতা রাউফুন বসুনিয়াকে। এরপর ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকার পাশাপাশি মৃত্যুর সারিও দীর্ঘতর হতে থাকে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিকতায় আরও অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে শহীদ ডাক্তার মিলন, নুর হোসেন, জেহাদসহ মায়ের কোলের শিশুও রেহাই পায়নি।
এতসব মৃত্যুর দায়-দায়িত্ব অস্বীকার করার ঔদ্ধত দেখিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনও টিকে আছেন সেই স্বৈরশাসক। তার সবচেয়ে বড় কারণ বোধ হয় রাজনৈতিক আপোষ বা ক্ষমতার লোভ।
এখনও প্রতিবছর ১৪ই ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পালিত হয় স্বৈরাচার বিরধী দিবস। কিন্তু সেটা প্রচার করা হয়না বাপকভাবে কারণ এই কর্ম সূচীতে অংশগ্রহণ নেই বড় দলের। এখনও যারা জাফর, জয়নাল, দীপালী সাহা, মোজাম্মেল, আইয়ুবের হত্যার বিচার চায় স্যালুট তাদের।      
আমরাও ভুলে গেছি সেই সব তাজা প্রাণ, তাজা রক্ত। হাতে রক্তের দাগ এখনও মুছেনি অথচ মেহেদী লাগিয়ে পালন করছি ভালবাসা দিবস।
আর কতকাল এই রক্তের মেহেদী পড়ে মেতে থাকব ভালবাসায়......।
(অনাদী রহমান-মুক্ত চিন্তার লেখক)
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৮৫৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/০২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast