www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অপ্রকাশ

মেঘ মুক্ত নীল আকাশ যদিও বর্ষাকাল তবুও বর্ষন নেই। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। আকাশের ঐ সুর্য্য লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আলো আর আধারের খেলায় মেতেছে ধরায়। মেঘের প্রতিটি স্তর নতুন নতুন রূপ লাভ করেছে। কেউ লাল কেউ নীল কেউ বা আবার হলুদ সাদা ধূসর। এখন পর্যন্ত অপেক্ষায় অপেক্ষমান যার জন্য তার দেখা পেল না, এখন কি বরবে? তা ভেবে সে ব্যাকুল। আধার নেমে এলো, একাকী কোন যুবতীরই ঠিক নয়। এভাবে কোন এক ছাত্র হোসটেলের সামনে বসে থাকা। একসময় সে তা ভেবে বাড়ীর দিকে রওনা দিল। তার মনটা এখন ভাল নেই। যার সাথে সে দেখা করতে গিয়েছিল তার দেখা সে পেলনা। কলেজে স্যারের মুখে তার কথা শুনে তার সাথে দেখা ও পরিচয় হবার জন্য মনটা ব্যাকুল। সারা রাত একটুও পলক পড়েনি, ঘুম আসেনি দুচোখে। তন্দ্রা বিহীন শুধু তারই কথা ভেবেছে। তার দেখা পাবে বলেই সে কলেজে যাই। ভাগ্য খারাপ তার দেখা মেলে না। ক্লাসে বুঝি আনন্দ মোহন আসেনি। পরে একসময় শ্রাবনী আনন্দ মোহনের ছাত্রাবাসে যায়। তবুও তার দেখা মেলে না। দিন আসে দিন যায়, রজনী আসে প্রভাত হয়। শ্রাবনী মনে মনে তাকে খুজে ফেরে। তার দেখা পায় না। পাবেই বা কি করে? যদিও বা তারা একই ডিপার্টমেন্টের ছাত্র কিন' কেউ কাউকে চেনে না। পরিচয়ও নেই তাদের। ক্লাস শেষ হঠাৎ কে যেন হাত ইশারা করে দেখাল ঐ দেখ আনন্দ মোহন যাচ্ছে। তার হাতের দিক ইশারাকে নির্দেশ করে শ্রাবনী বুঝে নিল, পেছন থেকে তাকে ডাকতে লাগল কিন' তিনি তার ডাকে সাড়া না দিয়ে হেটে চলেছে। সে শুনতে পাচ্ছে না , নাকী শুনেও না শুনার ভান করছে? শ্রাবনী পেছন থেকে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল । আসলে অবাক ব্যাপার।
শ্রাবণী ঃ এই যে আমি আপনাকে ডাকছিলাম, তা কি শুনতে পাননি নাকি !
আনন্দ ঃ জ্বি! আমি কালা আমি শুনতে পায়না।
শ্রাবণী ঃ তা নয়তো কি?
আনন্দ ঃ বেশ, এবার বলুন আমাকে কেন ডাকছিলেন?
শ্রাবণী ঃ আপনি আনন্দ মোহন মূখার্জী, জাতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনীতে আপনি কি প্রথম স'ান অধিকার করেছেন?
আনন্দ ঃ অ্যা আপনি কি তাহলে আমাকে না চিনেই এভাবে ডাকছিলেন।
শ্রাবণী ঃ না মানে
আনন্দ ঃ তাহলে বলুন কেন ডাকছিলেন?
শ্রাবণী ঃ আপনিই কি সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি?
আনন্দ ঃ জ্বি হ্যা, কৃপা করে বলবেন কি আপনার আসল কথা নাকী-
শ্রাবণী ঃ এই যে, চলে যাচ্ছেন যে স্যারের মুখে যখন প্রথম আপনার কথা শুনলাম তখন থেকেই আমার মন উদ্বিগ্ন , চঞ্চল। আপনার সাথে দেখা করার জন্য পরিচিত হবার জন্য, দেখুন তো একই ডিপার্টমেন্টের ছাত্র আমরা। কিন্তু সেদিন আপনার সাথে দেখা করতে আপনার হলে গিয়েছিলাম। দূর্ভাগ্য দেখা পায়নি। যদিও বা দেখা পেলাম, কিন্তু এমনটি আশা করিনি। প্রথমে আপনার কাছ থেকে এমন আচরণ পাব।
আনন্দ ঃ দেখুন, আমি যে এর চেয়ে, ভাল আচরণ করতে যানি না।
শ্রাবণী ঃ তাই নাকি, তাহলে আপনার সাথে আমার কথা বলাটাই ভূল হয়ে গেছে।
ওকথা বলতে না বলতেই আনন্দ ছুট দিল। একটুও না পিছু ফিরে তাকাল। বাকহীন অপলক নয়নে শ্রাবণী চেয়ে রইল তার দিকে। আর মনে মনে ভাবে বা! এ কমন লোক?
ওদিকে আনন্দ মনে মনে ভাবতে থাকে কে এই মেয়ে, কি ওর পরিচয়, আমি কি ভূল করলাম, ওনার নামটাই বা কি তাও জানা হল না, সারাটা দিন সকল সময়, সকল মূহুর্তে তার কথা ভাবতে থাকে, চোখের সামনে ভাসে তার মুখচ্ছবি। ভূলতে চাইলেও ভূলতে পারে না। ক্লাসে গেলে শ্রাবনী কেন যেন, তার দিকে অপলক নয়নে চেয়ে রই। মনে হয় কি যেন বলবে। কিন্তু সাহস করে বলে উঠতে পারে না। ভাবে, আবার যদি কিছু বলে। আনন্দ বেশ কিছুদিন ধরে শ্রাবনীর উপর দৃষ্টি দেয়। জানবার চেষ্টা করে তার সম্বন্ধে। ব্যাংক অফিসার লোকনাথ বাবুর একমাত্র কণ্যা শ্রাবণী। মিল পাড়ায় থাকে ওরা, ছাত্রী হিসাবেও বেশ। দেখতে অপরূপা সুন্দরী। আনন্দ মোহন মূখার্জী জাতীয় চিত্রকলা প্রদর্শণী প্রতিযোগীতায় প্রথম স্থান অধিকার করে, অর্জন করে বিশ্ব চিত্র প্রদর্শনী প্রতিযোগীতায় অংশ নেবার যোগ্যতা। তাই, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ তাকে সম্বর্ধনা জানানোর জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই অনুষ্ঠানে শ্রাবণী একটি গান পরিবেশন করে। যেমন কণ্ঠ তেমনই তার সুর, মুগ্ধ করে সকলের মন, জয় করে আনন্দের হৃদয়। হলুদ শাড়ি চোখে কাজল, চুলে বেনি, দুধে আলতা দেহখানী একপলক দেখরেই হৃদয় নদীতে ঢেউ ওঠে। ফেরানো যায়না নয়ন।
আনন্দ মোহন তো হতবাক হয়ে যায় ভাবে কি ব্যাপার আমি সেদিন যাকে অপমান করলাম আর আজ সেকিনা আমাকে সম্ভাষণ জানিয়ে গান গাইছে। আসলে কতটা উদার মনে মানুষ হলে এটা সম্ভব। তার মনে সে নিয়ে কোন রাগ/ক্ষোভ নেই, নেই কোন অভিমান। আনন্দ মন স্থির করে, তার আচরণের জন্য তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে। কিন্তু তার পর থেকে আর শ্রাবণীর দেখা পাই না। আজ বেশ কদিন শ্রাবণী কলেজে আসেনা। তার কলেজে না আসার কারণ তারই বান্ধবী সুষ্মিতার কাছে জানতে চায়। কিন্তু সে তা বলতে পারে না। এমনই হঠাৎ একদিন তার সাথে দেখা, আনন্দ তার সামনে যায়, শ্রাবণী আনন্দকে দেখেই ক্ষিপ্ত, বলে সেদিন বুঝি আপমান করে সাধ মেটেনি।
আনন্দ ঃ না, আসলে তা নয়। সেদিনের সেই আচরণের জন্য আমি অনুতপ্ত, ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ক্ষমা করে দিন।
শ্রাবণী ঃ এইতো আপনাদের মত মানুষের স্বভাব। অপরাধ করতেও সময় লাগেনা আবার ক্ষমা চায়তেও না।
ওকথা বলে শ্রাবণী চলে গেল। আনন্দ বিষন্ন মনে দাঁড়িয়ে রইল। বিবেকের দংশনে পুড়ে মরে অপরাধবোধ মন তাকে তাড়া করে ফেরে। একটুও স্বস্তি পায় না। একসময় সে মনরঞ্জনকে সাথে করে শ্রাবণীর বাড়ি যায়। দুয়ারে কড়া নাড়তেই শ্রাবণী দুয়ার খুলে দেয়। আনন্দ মোহনকে দেখে শ্রাবণী অবাক, কি দিয়ে তাকে আপ্যায়ন করবে শ্রাবণী তা নিয়ে ব্যস্থ হয়ে উঠে।
আনন্দ ঃ আপনি এত ব্যস্থ হচ্ছেন কেন? অপমান করার আয়োজন করছেন বুঝি। করুন অপমান! প্রতিশোধ নিন, নিয়েইত ক্ষমা করবেন।
শ্রাবণী ঃ আপনি না!
আনন্দ ঃ জানেন, আমি সেদিন আপনার সাথে ঐরূপ আচরণ করে, আমার অপরাধবোধ মন আমাকে সব সময় তাড়া করে ফিরছিল। একটুও স্বস্থি পাচ্ছিলাম না।
শ্রাবণী ঃ তাই বুঝি !
আনন্দ ঃ জ্বি হ্যা, আসলে সেদিন গ্রাম থেকে এসে মনটা ভাল ছিল না।
শ্রাবণী ঃ কেন? গ্রামে গেলে মনটাতো ভাল হয়।
আনন্দ ঃ ঠিকই বলেছেন। পাওয়া যায় বাবা-মা, ঠাকুমা-ঠাকুরদার আদর ভালবাসা। কিন্তু আমার কে আছে? বাবা সেতো জন্মের আগেই চলে গেছে। আর মা! সেতো জন্ম দিয়েই বিদায়! আছে শুধু একমাত্র দাদা। যে দাদা আমাকে আদার, স্নেহ, ভালবাসা দিয়ে মানুষ করেছেন। বুঝতে দেয়নি বাবা-মায়ের অভাব। তিনি আমার কথা ভেবে আজ পর্যন্ত বিয়েও করেননি। তাকে দেখলে বড় অপরাধী লাগে নিজেকে। জানি না ভগবান কেন আমার মত হতভাগার জন্ম দিল।
শ্রাবণী লোকনাথ বাবুর একমাত্র কণ্যা। আরাধনার ধন। শ্রাবণীর জন্মের পর পরই তার মায়ের মৃত্যু হয়। লোকনাথ বাবু তাকে মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি। অপূর্ণ রখেনি তার কোন স্বপ্ন-শখকে । শতকর্ম ব্যস্ততার মাঝে শুধু একটি শখ তার রয়ে যায়। তা পূরণের জন্য আনন্দ মোহনকে প্রস্তাব দেয়। তাকে ছবি আকাঁ শেখানোর জন্য। আনন্দ প্রথমে তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। পরে কোন একদিন তার প্রস্তাবে রাজি হয়। এমনি ভাবে কেটে যায় বেশ কিচু দিন। হঠাৎ একদিন আনন্দ শ্রাবণীকে ছবি একেঁ দেখানোর জন্য বলেন। শ্রাবণী বেশ কয়েকদিন পর তাকে একটি ছবি একেঁ দেখান। তা দেখলে আনন্দ খুব খুশি হয়। ছবিটি ছিল আনন্দ মোহনের । আনন্দ মোহন শিল্পি বটে। কিন্তু এতদিনেও সে তার নিজের ছবি এত সুন্দর করে আঁকতে পারেনি। আনন্দ তার থেকে তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে। নিরবে নিরবে ভালবসে ফেলে। এদিকে শ্রাবণীও মনে মনে ভাল বেশে ফেলে কিন্তু কেউ কাউকে সাহস করে বলতে পারেনা। তাদের ভালবাসার কথা। আনন্দ শুধু এই ভেবেই তাকে বলেনি।
সে জানতো যে শ্রাবনী আর জয়দেবে দু’জন দু’জনকে ভালবাসে তাই সে চাইনি তাদের ভালবাসার মাঝে বাধ সাধতে। সে জানতো না যে জয়দেব আর শ্রাবণীর বাবা লোকনাথ বাবুর একমাত্র বন্ধু পার্থ মজুমদারের ছেলে । এই সুত্রে জয়দেব ও তার নিছক বন্ধু মাত্র । একই সাথে সেই ছোট্ট্র বেলা থেকে ভাই বোনের মত বড় হয়েছে। শ্রাবণীর বাবা লোকনাথ বাবু আর জয়দেবের বাবা পার্থ মজুমদার তাদের অন্নপ্রাশনের সময় কাশিনাথপুর মন্দিরে, মনসি করেছিল জয়দেব আর শ্রাবনী বড় হলে একই দিন তারিখে নির্ধারণ করে এই মন্দিরে দুজনের বিয়ে দেবে। জয়দেবের জন্য সেতো মেয়ে ঠিকই আছে। এখন শুধু শ্রাবণীর। জয়দেবের বাবা শ্রাবণীর জন্য ভাল একটা সমন্ধ এনেছে। লোকনাথ বাবু মনে মনে রাজি এখন শুধু শ্রাবণীর মতামত। তারই জন্য শ্রাবনীর বাবা শ্রাবণীর সাথে কথা বলে। শ্রাবণীর জবাবে শুধু এটুকুই বলে বাবা দুদিন পরে জানাব। শ্রাবণী তা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। সে তো একজনকে মনে প্রাণে ভালবাসে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। যে কথা বলি বলি করে বলা হয়ে উঠেনি, বুকের মাঝে সে কথা আজ ছায় চাপা আগুন হয়ে ফুসে উঠেছে। শ্রাবণী আনন্দকে সব খুলে বলবে বলে তার হলে যায়। কিন্তু তার দেখা পাই না। সে বুঝি কারো কাছ থেকে শুনেছে শ্রাবণীর বিয়ের কথা। সে জানত তার বিয়ের দাওয়াত শ্রাবণী তাকে দিতে আসবে। সে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে ভালবাসে আর সেই তার বিয়ের দাওয়াত দিতে এলে তা সইতে পারবে না। তা ভেবে আনন্দ হল ছেড়ে চলে যায়। শুণ্য বিছানা এলোমলো সব কিছু আগোছালো টেবিল। হঠাৎ শ্রাবণী চোখ গেল চার দেওয়ালের দিকে চেয়ে দেখে সারিবদ্ধ করে টাঙ্গানো আছে তার ছবি। যেখানে এক সময় গ্রাম প্রল্লীর চির অবহেলিত রুপচিত্র টাঙ্গানো থাকতো। তা দেখে শ্রাবণীর হৃদপিন্ডের পিন বেড়ে যায়। শ্রাবণী একবার তার বান্ধবী সুস্মিতার ছবি একে নেবার জন্য তার কাছে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু সে তার ছবি একে দেইনি। বলেছিল আমি কোন নারীর ছবি আঁকি না । তবে আকঁব তার ছবি যে আমার প্রিয়জন হবে। মুগ্ধ করবে যার রুপ চরিত্র। চলাফেরা যে আমার একমাত্র ভালবাসার মানুষ হবে। তাহলে আমি কি তার প্রিয়জন, ভালবাসার মানুষ ছিলাম। তা ভেবে শ্রাবণীর চোখ দিয়ে আলিনা ঝরে পড়ে। আনন্দ যাবার সময় বিছানার উপর রেখে গেছে একটি গিফ্ট বক্স তার উপহার হিসাবে। সে বক্সটি শ্রাবণী খুলে দেখে তার মধ্যে আছে আনন্দ মোহনের অব্যক্ত কথা স্বরলিপি করা। কেন সে বলতে পারিনি তার ভালবাসার কথা। সে চায়নি তারই কারণে কেউ কষ্ট পাক। তারই সামান্য ব্যবহারে কারও স্বপ্ন ভেঙ্গে যাক। তা জেনে শ্রাবণী ব্যথায় ভেঙ্গে পড়ে। উলট পালট হয়ে যায় সব কিছু । বুকের মাঝে বইতে থাকে কাল বৈশাখী ঝড়। যাকে সে মন প্রাণ উজাড় করে ভালবাসতো আর সে কিনা তাকে চিনতে পারল না। শ্রাবনী বাড়ী গিয়ে তার বাবাকে বলল তার ভালবাসার কথা। ব্যথাহত কন্ঠে মা তুই জানিস ওর বাড়ী কোথায়?
শ্রাবণী ঃ না বাবা না।
বাবা ঃ তবে বলত মা, তুই কেমন মেয়ে যাকে তুই মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসিস আর তার ঠিকানা জানিস না। ওই বা কেমন ছেলে, যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে যাকে সে ভালবাসে তাকে তার ভালবাসার কথা বলতে পারে না।
শ্রাবণী ঃ বলতে চেয়েছিল, কিন্তু আমার কথা ভেবে, আমার সুখের কথা ভেবে সে বলেনি।
বাবা ঃ এখন তুই কি করতে চাস।
শ্রাবণী ঃ বাবা যে আমাকে এত ভালবাসে তাকে আমি তার ভালবাসার মূল্য দিতে পারিনি। একদিন না একদিন ওর দেখা তো পাবই। সে দিনের আশায় আমি!

বাবা ঃ আবেগে তো আর জীবন চলে না। জীবন বড় বাস্তব বড়ই নির্মম।
লোকনাথ বাবু চান না তার একমাত্র কণ্যার জীবন আবেগের বসে বসুভূতো হয়ে নষ্ট হয়ে যাক। পৃথিবীটা গোল যেহেতু সে তার দেখা একদিন পাবেই। কিন্তু সেদিন আর এই আনন্দ সেই আনন্দ থাকবে না। তার সাথে থাকবে তার স্ত্রী ও সন্তান। শ্রাবণী বাবার আকুতি ও মিনতিতে রাজি হয়ে যায় তার বিয়ের প্রস্তাবে।
ওদিকে আনন্দ দিশেহারা হয়ে বাড়ী ফিরে দেখে উৎসবের জোয়ার বইছে। বাড়ীতে তেমন কেউ নেই এক পিয়াদার কাছে জিজ্ঞাসা করে যান্তে পেল উৎসবের কারণ। তা জেনে আনন্দ শত দুঃখ কষ্ট ভূলে গিয়ে আনন্দে আন্দলিত হল। পরে জানতে পারল তার দাদা মিত্র মোহন মুখার্জীর নাকি বিয়ে কুষ্টিয়াই হচ্ছে।
আনন্দ ঃ কুষ্টিয়া কোথায়?
পেয়াদা ঃ মিল পাড়ায়।
আনন্দ ঃ আপনি কি জানেন মেয়ের বাবার নাম কি?
পেয়াদা ঃ আপনি চিনবেন ছোট সাব
আনন্দ ঃ আহা বলুনতো। চিনতে পারি কিনা দেখি।
পেয়াদা ঃ লোকনাথ বাবুর একমাত্র কণ্যা শ্রাবণীর সাথে। শুনেছি মেয়েটা নাকি শিক্ষিত। দেখতে শুনতেও বেশ। তা শুনে আনন্দ থমকে গেল। বজ্রপাত হানল তার মাথার উপর। এলোমেলো হয়ে গেল তার সব কিছু। হূদয় আকাশে মেঘের আনাগোনা ।
আনন্দ ঃ একি শুনলাম ভগবান! একি শুনলাম! যাকে আমি মনপ্রাণ দিয়ে ভলোবাসতাম সে কিনা আজ, আমার দাদার ঘরনী হতে যাচ্ছে, তাহলে কি আমার ধারণা ভুল। তাদের ভালবাসা কি নিছস বন্ধু মাত্র আর কিছু নয়।

আমাকে যে তার সর্বস্য দিয়ে মানুষ করেছে ত্যাগ করেছে তার জন্য সব কিছু। সে তাকে সব খুলে বলবে। তা শুনে তার দাদা নিশ্চয় এ বিয়ে করবে না। আনন্দ সিদ্ধান্ত নেয় সে এক্ষুনি যাবে ঐ বিয়ের আসরে। তার দাদাকে সব খুলে বলবে।
বিয়ের বরিতি বেশীক্ষন আগে যাইনি। পথিমধ্যে হয়তো তাদের ধরা যাবে। আনন্দ তার দাদার মোটর বাইক নিয়ে ছুটে চলে। আনন্দ বাইক খুব জোড়ে চালাতে থাকে এমন সময় একটি বাস দ্রুত গতিতে ছুটে আসছিল। তাকে সাইড দিতে মোটর বাইক ব্রেক করে গতিরোধ করতে যায়, কিন্তু ব্রেক এ কোন কাজ হয় না। তৎক্ষনাৎ আঘাত হানে বাসের সাথে। এক নিমিশেই শেষ হয়ে যায়, নিভে যায় প্রাণ প্রদীপ। ঝরে যায় ফুল, রক্তে রঙ্গিন হয়ে যায় পিচ ঢালা রাস্তা। আমি অনেক দূর্ঘটনা দেখেছি কিন্তু এমনটি না। ওদিকে মিত্রমোহন মূখার্জী বিয়ে করে বাড়ী ফিরছে এসে দেখে তার বাড়ীর সামনে একটি লাশ। তা দেখে তার হৃদয় আতকে ওঠে। দেখা মাত্রই সে উচ্চস্বরে কেঁদে ফেলে। নতুন বউ এই বাড়ীতে আসতে না আসতেই!

মিত্র না ও ঘরে উঠবে না। ও অপয়্যা ও কুপয়্যা ওর কারণেই আমার ভাই এর মৃত্যু হল। ওর মত বউ আমি চাই না। শ্রাবণী তৎক্ষনাৎ পালকি থেকে নেমে তার পা চেপে ধরে কাঁদতে লাগল আর বলতে লাগল না আমি অপয়্যা কুপয়্যা নই। আমাকে এমন অপবাদ দিবেন না। মিত্র তার কোন কথাই শুনল না। যার মৃত্যুর কারণে তাকে অপয়্যা কুপয়্যা অপবাদের বোঝা মাথায় নিতে হল তাকে একটি বারের জন্য দেখতে চাই শ্রাবণী। কিন্তু তার আকুতি মিনতি মন গলাতে পারলো না করো, কেউ তাকে দেখতে দিল না। মৃত্য দেহ সৎকার শেষে গ্রাম পঞ্চায়েতের সকলে সিদ্ধান্ত নিল , শ্রাবণীকে গ্রাম থেকে বের করে দেবে। ও অপয়্যা ও কুপয়্যা ও আসতে না আসতেই এই পরিবারের একজনের মৃত্যু হল ও থাকলে এই গ্রামের আরো দূর্ঘটনা ঘটবে। শ্রাবণী এখন কি করবে কোথায় যাবে কে ওকে ঠাঁই দেবে এক সময় একজন বৃদ্ধ মহিলা জল আনতে গিয়ে দেখে একটি মেয়ে বৌ বেশে একাকী কাঁদছে, কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে তার কান্নার কারণ । তা জেনে বৃদ্ধ মহিলা বলে তাতে তোমার দোষ কি? তুমিই বা অপয়্যা কুপয়্যা হতে যাবে কেন? এত সবই ভগবানের ইচ্ছা। চল মা তুমি আমার বাড়ীতে ওখানে থাকবে। শ্রাবণী যায় তার বাড়ীতে বৃদ্ধ মহিলার আপন বলে কেউ নেই আছে শুধু একটি মাত্র সন্তান। তাও অসুখে অনেক দিন ধরে ভুগছে। সন্ধ্যা শেষে রাত্রি আসে সেই রাত্রিই তার সন্তান মারা যায়। তখনি সেই বৃদ্ধ মহিলার মনে সন্দেহের বীজ দানা বাধে সত্যই বুঝি ও অপয়্যা ও কুপয়্যা। এতদিন তো তার সন্তান জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে ছিল আর ও আসতে না আসতেই সসন্তানটি মারা গেল। বৃদ্ধ মহিলা শ্রাবণীকে বেদম প্রহার করে বাড়ী থেকে বের করে দিল। শ্রাবণীর বাবা শ্রাবণীকে কয়েকদিন পরে নিতে এসেছে। এসেই দেখে বাড়িতে কেউ নেই। এক সময় সে একজন ব্যক্তি (পথচারীর) কাছে সমস্ত কিছু জানতে পেল। তার মেয়ের কারণে নাকি মিত্র মোহন মূখার্জীর ছোট ভাইয়ের মৃত্যু ঘটে। তাই গ্রামবাসী তাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়। তা শুনে শ্রাবণীর বাবা বিষন্ন মনে পাগলে বেশে গ্রামের প্রত্যেকটি জায়গায় খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোথায় খুঁজে পাবে তাকে সে তো শ্বশান ঘাটে যেখানে আনন্দ মোহনের মৃত দেহ পোড়ানো হয়েছিল ঠিক সেখানেই পড়ে আছে লাল শাড়ি পড়া তার মৃত দেহখানী যা কুকুর শিয়াল ও কাকে ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৬৩৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৬/০৪/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast